॥ শাহ্ আব্দুল হান্নান ॥
দাওয়াত অর্থ আহ্বান করা। ইসলামী দাওয়াত অর্থ ইসলামের দিকে আহ্বান করা। ইসলামের অগ্রগতির জন্য দাওয়াত অপরিহার্য। কেবল অগ্রগতি নয়, ইসলামী সমাজকে তার ভিত্তির ওপর সঠিকভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য ইসলামী দাওয়াত জরুরি।
তিনটি কাজ ইসলামী সমাজ গঠনের জন্য অত্যন্ত জরুরিÑ একটি হচ্ছে পড়া। সমাজে অনেক যোগ্য লোকের দরকার। যাদের পড়াশোনার মান ভালো। দ্বিতীয়ত, যোগ্য লোকদের লিখতে হবে। কারণ সমাজ গঠনের জন্য লেখার অনেক প্রয়োজন। লেখার মাধ্যমে সমাজের লোকদের তৈরি করা যায়। তৃতীয়ত, হচ্ছে দাওয়াত বা ইসলামের দিকে আহ্বান। আমি বিশ বছর আগে স্লোগান দিয়েছিলাম জবধফ, জবধফ, জবধফ, ডৎরঃব, ডৎরঃব, ডৎরঃব অহফ উধধিয, উধধিয, উধধিয. অর্থাৎ আমি স্লোগান দিয়েছিলাম সব কর্মীর জন্য পড়ুন, পড়ুন, পড়ুন, লিখুন, লিখুন, লিখুন এবং দাওয়াত দিন, দাওয়াত দিন, দাওয়াত দিন। আমার মনে পড়ে এ স্লোগানটি আমি লন্ডনের কর্মীদের বিশ-পঁচিশ বছর আগে দিয়েছিলাম।
আরেকটি বিষয় সমাজকে সঠিক পথে রাখার জন্য প্রয়োজন। সেটি হচ্ছে কুরআনের ভাষায় আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার। সমাজ যাতে সঠিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, সেজন্য এটা জরুরি। সৎকাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ সবসময় চালু থাকতে হবে। সমাজের অধিকাংশ লোক যদি এ কাজটি করে, তাহলে সমাজ কখনো বেশি খারাপ হতে পারবে না। কুরআন মোতাবেক আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার সবার ওপর ফরজ। এখন আমি দাওয়াতের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। দাওয়াত এখনো সব সংগঠনই করে যাচ্ছে, কম বা বেশি। তবে দাওয়াতের মানের ওপর নির্ভর করবে ইসলামের অগ্রগতি। সব সংগঠনের উচিত দাওয়াত বৃদ্ধি করা এবং দাওয়াতের মান বৃদ্ধি করা।
দাওয়াতের অন্যতম প্রধান পদ্ধতি হচ্ছে ব্যক্তিগত যোগাযোগ। ইসলামের প্রত্যেক কর্মীর দায়িত্ব হচ্ছে অন্তত দশ-পনেরোজনের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করা ও দাওয়াত দেয়া। এরা যখন এগিয়ে যাবে, তখন নতুনদের ওপর কাজ করতে হবে। এভাবেই চলতে থাকবে। ব্যক্তিগত যোগাযোগের সময় ইসলামের জীবনবিধান তুলে ধরতে হবে। দাঈর ব্যবহার ভালো হতে হবে। তাহলে ফল বেশি হবে। তাড়াহুড়ো করা যাবে না। সময় নিয়ে কাজ করতে হবে। দাওয়াতের দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে পুস্তক-পুস্তিকা বিলি করা। অন্তত পুস্তক না পারলেও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ছোট ছোট লেখা বিলি করা। পুস্তিকার গুরুত্বপূর্ণ লেখাও বিলি করা যেতে পারে।
তৃতীয় পদ্ধতি হচ্ছে, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ক্লাস করা। এক ব্যক্তি এক বা দুই বা তিন ক্লাস চালাতে পারে। সবার জন্য মিলিত ক্লাস হতে পারে। অথবা বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের জন্য আলাদা ক্লাস হতে পারে। কম বয়স্ক ও বেশি বয়স্ক লোকদের জন্য আলাদা ক্লাস হতে পারে।
ক্লাসে প্রথমত কুরআন থাকবে। কুরআনের এক দুই রুকু পড়ে ব্যাখ্যা করতে হবে। কিছু হাদিসও থাকতে পারে। বিশেষ করে বুখারি ও মুসলিম হতে রাসূলের জীবনী ক্লাসে আলোচনা করা যায়। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বই একের পর এক ক্লাসে পড়িয়ে যেতে হবে। একটি ক্লাস দুই বা তিন বছর চলতে পারে। সেটি সাপ্তাহিক হতে পারে। দুই-তিন বছরে পাঁচ-সাতটি বই পড়িয়ে দেয়া অসম্ভব কিছু নয়। আমি এরকম দশ-বারোটা ক্লাস নিয়েছি। কোনো কোনো ক্লাস কয়েক বছর চলেছে। আমি ড. জামাল বাদাবির ইসলামী শিক্ষা সিরিজ ব্যবহার করেছি। এছাড়া ইউসুফ আল কারজাভির, মাওলানা মওদূদীর কিছু কিছু বই ব্যবহার করেছি। আপনারা আপনাদের পছন্দমতো বই ব্যবহার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে বইয়ের মান যেন উন্নত হয়। আমার ক্লাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল প্রশ্নোত্তর। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ইসলামের সব বিষয় ক্লাসের অংশীদারদের বোঝাতাম। প্রশ্ন-উত্তরে সাবধান হতে হবে। যদি কোনো ফিকহের বিষয়ে দুই বা তিন মত থেকে থাকে, তাহলে সব মতই তুলে ধরতে হবে এবং ক্লাসের অংশীদারদের তাদের জ্ঞান-বুদ্ধিমতো বাছাই করার সুযোগ করে দিতে হবে। দাওয়াতের আরো অনেক পদ্ধতি আছে। আপনারা দাওয়াতের ওপর বিভিন্ন রকমের বই পড়বেন।
লেখক: মরহুম শাহ্ আব্দুল হান্নান, সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম : আধুনিকায়ন ও স্বাধীনতা
- আল্লামা ইকবাল পুনর্পাঠ
- দেশের কল্যাণে দেশের পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার অপরিহার্য
- আল্লাহর বিশেষ দুটি নিয়ামত
- হাসিও না পুষ্পের হাসি
- যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো এবং ইসরাইলের গণহত্যা
- দেশ এখন নেই দেশে
- শরীফ আবদুল গোফরানের গান
- জীবনের রংতুলি
- ফিলিস্তিনে রক্ত ঝরে
- দাওয়াতি কাজ
- জায়নামাজ
- নওজোয়ান
- আমি ফিলিস্তিন থেকে বলছি