৬ মাস ঘরোয়া কর্মসূচির পর
রাজপথে নামছে বিরোধীদল
॥ সৈয়দ খালিদ হোসেন ॥
দ্রুতই রাজপথে স্বরূপে ফিরছে বিএনপি-জামায়াতসহ আন্দোলনে থাকা বিরোধীদলগুলো। তারা ইতোমধ্যে প্রস্তুতিপর্ব শেষ করেছে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্তে এসেছে। নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত ও ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে মাঠে থাকবে দলগুলো। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে আপসহীন ভূমিকা রাখবে বিরোধীদলগুলো।
দেশের সবচেয়ে বৃহত্তর এবং গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য বড় দুটি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। বিএনপি গত ২৮ অক্টোবরের পর রাজপথে দলীয় বৃহত্তর কোনো কর্মসূচি পালন করেনি। সম্প্রতি দলটি ঘোষণা দেয় ২৬ এপ্রিল শুক্রবার ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ করতে চায় তারা। সবকিছু ঠিকঠাক হয়েও ছিল, কিন্তু দেশের অস্বাভাবিক গরমের কারণে আপাতত ওই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি এক যৌথ বৈঠকে কর্মসূচি স্থগিতের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমাবেশের পরবর্তী তারিখ চূড়ান্ত হলে জানানো হবে দেশবাসীকে। বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি গত ১৯ এপ্রিল ঢাকার এক অনুষ্ঠানে এমন ঘোষণা দেন। আমীরে জামায়াত বলেন, আল্লাহর দীন বিজয়ের জন্য বিল্পবী কর্মী বাহিনী দরকার। অনলাইনে কর্মসূচি পালন করা হলে আরামপ্রিয় কর্মী তৈরি হবে, বিল্পবী নয়। সে কারণে আমাদের অনলাইনের পরিবর্তে এখন প্রকাশ্যে প্রোগ্রাম করতে হবে। ওই অনুষ্ঠানে আমীরে জামায়াত বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীর কথাবার্তা, লেনদেন, সামাজিক কাজকর্ম আল্লাহর দীন অনুযায়ী বা কুরআন অনুযায়ী হতে হবে। যতই বাধা আসুক, আমরা ইকামতে দীনের (দীন প্রতিষ্ঠার) কাজ চালিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ। মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতে হবে। জনকল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। তাহলেই আমাদের দাওয়াত কার্যকর হবে।’ গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করেনি। জামায়াতের নির্বাচনী তহবিলের এ টাকা জনকল্যাণে ব্যয় করা হবে। ব্যাপকভাবে সামাজিক কার্যক্রম চালাতে হবে। আমাদের হালাল রুজির ওপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে।’
রাজপথে থাকা বিরোধীদলগুলো মনে করছে, দেশের মানুষ এখন কঠিন দুঃসময় অতিক্রম করছে। রাজনীতি-অর্থনৈতিক সংকট ভয়াবহভাবে আক্রমণ করছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা জীবন দিচ্ছে, তারপরও সরকার সরছে না। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার বিকল্প নেই। এখন প্রয়োজন সমগ্র জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়া। যারা দেশকে ভালোবাসেন, মানুষের কল্যাণের কথা ভাবেন, তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেসব রাজনৈতিক দল দেশকে একটি গণতান্ত্রিক অবস্থায় দেখতে চায়, তাদের সবাইকে এখন এক হয়ে সোচ্চার কণ্ঠে, শুধু রাজপথে বেরিয়ে নয়, সব রাষ্ট্রযন্ত্রকে ঝাঁকি দিতে হবে। দেশ ভয়াবহ শাসনের মধ্যে পড়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবলীলায় এখানে হত্যা, খুন করা হয়। অনেকের বাবা-ভাই, স্বামী গুম হয়ে গেছে। আর তারা (সরকারকে ইঙ্গিত করে) বলে, এরা পালিয়ে গেছে। নাগরিকের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় এ সরকারকে বিদায় না করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
সম্প্রতি তৃণমূল্য সংগঠনকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম। তিনি বলেন, তৃণমূল সংগঠন যত মজবুত হবে, উপজেলা ও জেলা সংগঠনও তত বেশি শক্তিশালী হবে। তাই তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন সভাপতিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ছোট অর্জনের মাধ্যমেই বড় অর্জন সম্ভব। তাই কোনো কাজকে ছোট মনে করার যেমন কারণ নেই, একইভাবে নিজেদেরও ছোট মনে করার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের পর বাংলাদেশের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনা। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ দেশের বিরোধীদলের প্রধান নেতাসহ লাখ লাখ নেতাকর্মীর ওপর নেমে আসা জেল-জুলুম, অত্যাচার আর অবিচারের প্রকটতা দেখে বিশ^ সম্প্রদায় বিচলিত হলেও তাতে প্রধানমন্ত্রীর কোনো যায়-আসে না।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টেও বাংলাদেশের গুম, খুন, গুপ্তহত্যা, কারানির্যাতনসহ ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেখানে আরও বলা হয়েছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে নাগরিকদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টের ব্রিফিংয়ে মিঃ গিলক্রিস্ট মানবাধিকার পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলেছেন। বর্তমান ডামি সরকারের ‘অভিন্ন হৃদয় বড় বন্ধু’ হচ্ছে পাশর্^বর্তী দেশ ভারত। মনে হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা শেখ হাসিনা তাদের দিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের সকল অপকর্মের একমাত্র চৎড়ঃবপঃড়ৎ হিসেবে তারা একমাত্র ভারতকেই মনে করে। তাই প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বিএসএফ কর্তৃক বধ্যভূমি বানানো হলেও আওয়ামী নিপীড়ক সরকারকে নিশ্চুপ থাকতে হয়। হিউমানিস্ট শূন্য বিএসএফের রক্তপিপাসু ভূমিকায় গোটা জাতি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উৎকণ্ঠিত। বিএসএফের নরহত্যার দায় দখলদার আওয়ামী সরকারের ওপরও বর্তায়। তাদের নতজানু নীতির কারণে বিএসএফ আশকারা পাচ্ছে। রিজভী বলেন, দখলদার আওয়ামী সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ ক্যাডারদের দিয়ে নিজস্ব সেনাদল গঠন করে নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত চালাচ্ছে সাঁড়াশি অভিযান। কিন্তু ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন দখলদার আওয়ামী সরকার বিএসএফের বর্গীর ভূমিকার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করতে পারেনি। এমন সরকারকে বিদায়ের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বিরোধীদল দমনে সরকার খুবই ব্যস্ত প্রতিদিনই মামলা আর গ্রেফতার চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অন্তর্গত ওয়ারী থানাধীন ৩৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল লিটনকে ২২ এপ্রিল গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া লালমনিরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম মমিনুল হক ও সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর খান একটি মিথ্যা মামলায় উচ্চ আদালতের জামিন থাকা সত্ত্বেও ২২ এপ্রিল জেলা আদালতে জামিন চাইতে গেলে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। গত ১৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম মহানগর তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও আকবর শাহ থানা তাঁতী দলের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এভাবে বিরোধীদলকে দমন করেতে চায় সরকার। তিনি বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে মাঠে নামা ছাড়া উপায় নেই।
মাঠে বড় কর্মসূচি সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আমরা অলরেডি কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। তাপপ্রবাহের কারণে সেটি স্থগিত করা হয়েছে। আবহওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নতুন তারিখ জানানো হবে। তিনি এও বলেন, গণতন্ত্রকামী সবাইকে কর্মসূচি বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবরের পর ঢাকায় বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি বা শোডাউন করেনি বৃহত্তর বিএনপি। ওই সমাবেশে সরকারের পক্ষ থেকে চালানো গুলিতে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। ওই রাতেই গ্রেফতার করা হয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলামগীর, মির্জা আব্বাসসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। ওই ঘটনয় হাজার হাজার নেতাকর্মীও বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি গ্রেফতারও করা হয়েছিল কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে। গত ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ সফল হওয়ায় এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার বিএনপিসহ বিরোধীদলের ওপর জুলুম-নির্যাতানের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষনেতাদের জেলে রেখেই ৭ জানুয়ারির নির্বাচন করিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। প্রায় ছয় মাস ঘরোয়া কর্মসূচির পর এবার প্রকাশ্যে কর্মসূচি নিয়ে আসছে বিরোধীদল।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- আধিপত্যের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়ছে
- শতকোটি টাকার মাফিয়া বাণিজ্য
- মালদ্বীপের সংসদ নির্বাচনে মুইজ্জুর দলের নিরঙ্কুশ জয় ভারতের প্রতি কী বার্তা দিচ্ছে
- বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
- পিপাসার্ত পথিকদের মাঝে এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের পানি ও স্যালাইন বিতরণ
- আল্লামা ইকবাল ছিলেন মুসলিম মিল্লাতের ঐক্যের দিশারী
- রাজধানীতে তৃষ্ণার্তদের মাঝে শিবিরের বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ
- পিটিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনায় জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেলের উদ্বেগ্ন
- আ’লীগের সিদ্ধান্ত মানছেন না প্রার্থীরা
- ঈমান ও ইখলাসের সাথে কাজ অব্যাহত রাখতে হবে
- ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জামায়াতের
- প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের গুলি জামায়াতের নিন্দা
- ফরিদপুরের হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ছাত্রশিবিরের
- আল ইমাম ইসলামিক সেন্টারের সেলাই মেশিন বিতরণ