সারা দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, তাপমাত্রা ৭৬ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। খুলনা বিভাগের কিছু অংশ, পাবনা ও রাজশাহী জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের বাকি অংশের ওপর দিয়ে বইছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। তীব্র তাপপ্রবাহের মাত্রা কোথাও কোথাও ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে প্রকাশ, আবহাওয়াবিদ এবং নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে আগামী কয়েক বছরে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা এমন বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। আর তার ফলে বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে- এমন আশঙ্কা আছে তাদের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রধান ভূমিকা রেখেছে। সেই সাথে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে তাপমাত্রার এমন বৈরি আচরণের জন্য অপরিকল্পিত নগরায়নেরও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। দেশি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া তথ্যানুযায়ী, শুধু ঢাকাতেই বছরে অসহনীয় গরম দিনের সংখ্যা গত ছয় দশকে অন্তত তিনগুণ বেড়েছে। আর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এ গরম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে বলছে, গত ২৮ বছরে ঢাকা থেকে ২৪ বর্গকিলোমিটারের সমআয়তনের জলাধার ও ১০ বর্গকিলোমিটারের সমপরিমাণ সবুজায়ন কমে গেছে। ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ আদিল খান মনে করেন, এটা শুধু ঢাকার চিত্র নয়। জেলা-উপজেলা পর্যায়েও পুকুর বা জলাধার ভরাট করে পরিকল্পনাহীন ভবন উঠেই চলেছে। নগরগুলোর প্রতিটি ভবন পরিকল্পিত না হলে এবং এলাকাগুলোয় সবুজের ভারসাম্য আনা না হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে। বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে দাবদাহ বা তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও নতুন নতুন রেকর্ড হয়েই চলেছে। আবহাওয়া ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, তাপমাত্রা ক্রমেই বৃদ্ধির প্রধান কারণ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, যার জন্য উন্নত বিশ্বের; বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলোকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ বৈশ্বিক কারণ ছাড়াও অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং পরিবেশের অযৌক্তিক ক্ষতি করাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। খাল-পুকুর সব ভরাট হয়ে গেছে। জলাধার নেই। এগুলোই তো সাময়িকভাবে তাপমাত্রা কমাতে দরকার হয়। আমাদের উজানের দেশ ভারত আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আমরা মনে করি, আমাদের নদীমাতৃক সবুজ-শ্যামল দেশকে মরুকরণ প্রক্রিয়া থেকে বাঁচাতে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নগরায়ণের পাশাপাশি শহরগুলোকে কীভাবে আরো বেশি পরিবেশবান্ধব করা যায়, সে পরিকল্পনার ওপর জোর দেয়ার বিশেষজ্ঞদের দেয়া মতামতের আলোকে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সরকারের দায়িত্ব দলমত-নির্বিশেষে সকল নাগরিককে সাথে নিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক দুুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা। তবেই নদী, খাল, বিল দখল ও দূষণ বন্ধ হবে। কলকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিবেশবান্ধব করার উদ্যোগ রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, বন্ধ পরিবেশ সচেতনতা ও দেশপ্রেম ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ বাস্তবতা বুঝে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নেবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এ পাতার অন্যান্য খবর
এ বিভাগ বা পাতায় আর কোন সংবাদ, কবিতা বা অন্যকোন ধরণের লেখা পাওয়া যায়নি।