সংবাদ শিরোনামঃ

সার্বভৌমত্ব এখন ঝুঁকির মুখে ** ত্রিমুখী লড়াই জমে ওঠেছে ** বাংলাদেশ ভারতের পানি আগ্রাসনের শিকার : মির্জা ফখরুল ** সারাদেশে জামায়াতের বিক্ষোভ ** জনবিচ্ছিন্ন সরকারের উদ্বিগ্নতা বাড়ছে ** মাওলানা নিজামী ও সাঈদীকে বিচারের নামে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলুন : নূরুল ইসলাম বুলবুল ** রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি : শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা ** বিজেপি নেতার খায়েশ : কান টানলে কিন্তু মাথাও আসবে! ** ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফির ছোবলে যুব সমাজ ** ২২৬ এমপি কোটিপতি কর দেন না ৪২ জন ** সরকার জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করতেই বিচারের নামে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে ** ঝিড়ি-ঝর্ণা, নদী-ছড়ার দূষিত পানি ব্যবহার করছে অধিবাসীরা **

ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪২১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৩৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৪

॥ সৈয়দ খালিদ হোসেন ॥
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে দেওয়া ওয়াদা পূরণ না করায় ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন  হয়ে পড়ে। বিশেষ করে দেশ পরিচালনার চাইতে মামলা পরিচালনায় বেশি ব্যস্ত হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদেরই সমালোচনার মুখে পরে সরকার। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী হওয়ায় আগে ঢাকার এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছেন সরকারের কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে এ সরকার মামলা পরিচালনায়ই বেশি ব্যস্ত। আর বিরোধী দলের উপর হামলা আর বিরোধীমত দমনের জন্য মামলায় জড়াতে গিয়ে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কাছ থেকে ছিকটে পড়েছে। বিশেষ করে দেশী-বিদেশী সব মতকে উপেক্ষা করে গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন দেওয়ায় জনগণের কাছ থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সরকার। আর সরকার বিরোধী জোটের জনসম্পৃক্ততা ও সম্ভাব্য আন্দোলনের ভয়ে অনেকটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে সরকার। যদিও সরকারের কিছু মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলছেন সরকার ক্ষমতায় থাকবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। তবে বিদেশী দাতারা ও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যত দ্রুত সম্ভব আরেকটি নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়মিতই বলে আসছে।  গত ৫ জানুয়ারি একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনা করলেও ঠিক কত দিন তারা চালাতে পারবে তা নিজেরাও জানে না। যদিও আওয়ামী লীগের কিছু হাইব্রিড নেতা ও করুণারমন্ত্রী বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বলে বেড়াচ্ছে ৫ বছরই এ সরকার ক্ষমতায় থাকবে। অবশ্য পূরো ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাইতে বেশি আগ্রহী সুবিধাভোগীরা। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ জানুয়ারির পর কখনোই কোনো সভা-সমাবেশে তার বর্তমান সরকারের মেয়াদ নিয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। কারণ, তিনি নিজেই কেবল জানেন যে এ নির্বাচনটি দিতে তার কী ধরণের ঝুঁকি নিতে হয়েছিল। আর সরকারের কিছু মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছার কথা বললেও তারা নিজেরাও জানেন যে দেশের মানুষ তাদেরকে আর ক্ষমতায় রাখতে ও দেখতে চায় না। আর আগামী ৫ বছর আওয়ামী লীগের রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো সামর্থ্য যে নেই তা ৫ জানুয়ারির পর পরই স্পষ্ট করে বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছিলেন, কেউ আন্দোলন করুক বা না করুক আগামী এক বছরের মধ্যে আবারো নির্বাচন দিতে হবে। কারণ, তিনি ভালো করেই জানেন যে দেশ এখন চরম আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে। আর গত ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তুত করতেই তার হিমশিম খেতে হয়েছে। আর এ জন্য জেনে-বুঝেই কথা বলেছেন মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ও তার রাজনৈতিক মিত্ররা ক্রমেই শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। আর সরকার বিরোধী এ জোটের জনপ্রিয়তা দেখে আওয়ামী লীগের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে। সাম্প্রতিকালে বিএনপির ও ১৮ দলের বাকী শরিকরা যেসব সভা-সমাবেশ আয়োজন করেছে তাতে কর্মীদের চাইতে সাধারণ মানুষই বেশি অংশ নিচ্ছে। বিশেষ করে গত ২২ এপ্রিল তিস্তায় পানির দাবিতে বিএনপির ডাকা লংমার্চে সাধারণ মানুষের যে ঢল নেমেছে তাতেও হতবাক হয়েছে আওয়ামী লীগ। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখিয়ে ও পথে পথে বাধা না দিলে লংমার্চে আরো কয়েকগুণ বেশি লোকের সমাগম হতো।

সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও দলীয় পর্যালোচনায় কোথায়ও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার খবর নেই। বরং গত ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে একতরফা নির্বাচন দেওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়েছে বলে মনে করেন তৃণমূল নেতা ও কর্মীরা। তারা বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূলে এখনো শেখ মজিবুর রহমানের সহকর্মী ও সহযোদ্ধারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তারা চায় একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ টিকে থাকুক। কিন্তু সাম্প্রতিকালে আওয়ামী লীগ যেসব কার্মকাণ্ড করছে তাতে এ দলের জনপ্রিয়তা যে শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে তা তৃণমূলদের বুঝতে আর বাকী নেই। তৃণমূলদের মতো আওয়ামী লীগের মধ্যম ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই রয়েছে অজানা আতঙ্কে। তারা মনে করছে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাদ দিয়ে আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা এখন আখের গুছাতে বেশি ব্যস্ত রয়েছে। কারণ, বেশিরভাগ নেতারাই মনে করছে, দল বা সরকারে কোনো বিপর্যয় সৃষ্টির আগেই সব কিছু ঠিক করে নিতে হবে।

তাছাড়া আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ক্যাম্পাস ছেড়ে ছাত্রলীগ টেন্ডারবাজীতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে যাচ্ছে টেন্ডার ছাড়াই। আওয়ামী লীগের বিতর্কিত এ অঙ্গ সংগঠনের গত ৫ বছরের কর্মকাণ্ডেও দেশের সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। হেন কোনো কাজ নেই যেকাজ করেনি ছাত্রলীগ। গত ২১ এপ্রিল ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি গল্পচ্ছলে বলেন, আওয়ামী লীগ চেষ্টা করবে ৫ বছরই ক্ষমতায় থাকতে। যদি না পারে তাহলে যাতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখবে আওয়ামী লীগ। কারণ, আওয়ামী লীগে প্রধান টার্গেট ক্ষমতায় থাকা আর দ্বিতীয় ইচ্ছা হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট যাতে ক্ষমতায় না আসতে পারে তা ঠেকাতে সচেষ্ট থাকা। ছাত্রলীগের এ নেতাকে এখন কী করেন এমন প্রশ্নর করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন গণপূর্ত বিভাগে ঠিকাদারি করছি। আওয়ামী লীগের টার্গেট যাই থাকুন না কেন আমার টার্গেট এক বছর। এ বছরটাই হয়তো ভালো যাবে আওয়ামী লীগের জন্য। সামনের দিনগুলো হয়তো বেশি ভালো নাও হতে পারে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাই এক বছরকে টার্গেট করে সব ধরনের কাজ করছে। আগামীর দিনগুলো বন্ধুর নাও হতে পারে এমন আশঙ্কা আওয়ামী লীগের সব নেতার মধ্যেই কাজ করে। আর সেই আশঙ্কা থেকেই সব ধরনের কাজ গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করছে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

তাছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন সারির নেতারা কেউ কেউ পরবর্তী পরিস্থিতিতে পিঠ বাঁচাতে কথিত সাংবাদিকতার আইডি কার্ড সংগ্রহ করছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের চাইতে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী ও ঢাকা মহানগরের কিছু নেতাকর্মীরা বিভিন্ন অখ্যাত অনলাইন মিডিয়া ও আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার আইডি কার্ড সংগ্রহ করেছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো বিভিন্ন সমস্যায় পড়লে এসব আইডি কার্ড ব্যবহার করার নজিরও রয়েছে। এসবই করা হচ্ছে হতাশা ও অজানা আতঙ্ক থেকে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠিানে বিএনপির চেয়ারপারসমন ও ১৮ দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, বর্তমান সরকার এমন সব কার্যক্রম করছে যে এ সরকারের পতনের জন্য দিনক্ষণ ঠিক করে কোনো আন্দোলন করতে হবে না। সরকারের অসৎ কার্যক্রমে সাধারণ মানুষ যেকোনো সময় এমনিতেই রাস্তায় নেমে পড়বে। আর এ অবস্থার সৃষ্টি হলে তা ঠেকাতে পারবে না বর্তমান সরকার। দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের এ বক্তব্য হালকাভাবে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ যদিও বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বলে বেড়াচ্ছে বিএনপির পক্ষে কোনো আন্দোলন করা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যানির্বাহী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ও ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সব সময়ই বক্তৃতা দিয়ে বলেন, বিএনপির আন্দোলনের কোনো মুরদ নেই। সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করে কখনোই আন্দোলন করতে পারবে না বিএনপি। আর সেকারণে সরকার বিএনপির কথাবার্তাকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া আওয়ামী লীগের নেতা ছাড়াও তিনি সরকারের একজন মন্ত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত কাছের লোক হিসেবে আলোচিত। আর ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগের লোকেরা চৌধুরী মায়াকে ঢাকায় সফল নেতা হিসেবে বিবেচনায় রাখে। সেকারণে চৌধুরী মায়ার বক্তৃতাকে অনেকেই হয়তো গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের কথায় ধোপে টিকেনা চৌধুরী মায়ার বক্তব্য। মোহাম্মদ নাসিম গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ধামণ্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। ওই সময় তিনি বলেন, কোনো আন্দোলন বা কর্মসূচিকেই হালকা করে দেখছে না তার দল আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে তিনি বিএনপির লংমার্চের সমালোচনা করে বলেছেন বিএনপি ২২ এপ্রিল যা করেছে তা কোনো লংমার্চ নয়, এটি হচ্ছে গাড়ি মার্চ। তিনি তার বক্তব্যে বুঝানো চেষ্টা করেছেন তা হচ্ছে বিএনপির এ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে তিনি এও বলেছেন শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচি পালনে  বাধা দিবে না আওয়ামী লীগ ও সরকার। কিন্তু কর্মসূচির নামে কোনো ধরনের অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে ছড়াও দেবে না সরকার। আর বিএনপি কোনো ধরণের সহিংসতা সৃষ্টি করতে চাইলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলেও জানান তিনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচন দিয়ে একতরফাভাবে ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ আগের চাইতেও বেশি বেপোরোয়া হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে উদ্ভট আচরণ করছে। বিশেষ করে যারা টেন্ডারবাজীর সঙ্গে জড়িত তারা কাজ পাওয়ার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যা-তা আচরণ করে বেড়াচ্ছে। এমন কী সরকারের মন্ত্রীর পদে থেকেই অপ্রত্যাশিত আচরণ করছে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চনীতি নির্ধারণী ফোরামের সদস্য অর্থাৎ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। আওয়ামী লীগ সরকারের সীমাহীন দুরাবস্থা ও দেশের ভোটারদের মনের ভাব বুঝে তিনি ২০১৩ সালের বাজেট বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে বলেছিলেন ভবিষ্যতে তিনি আর কোনো নির্বাচনে যাবেন না। কারণ, তিনি বুঝতে পারেছেন আওয়ামী লীগের এসব অপকর্মের পর তার এলাকার ভোটাররা তাকে আর ভোট দেবেন না। তাই শেষ বয়সে তিনি পরাজয়ের গ্লানি নিতে চাননি। কিন্তু গত (বিতর্কিত) দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট অংশ না নেওয়ায় ভোটারবিহীন নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে তিনি সংসদে দেওয়া বক্তব্য রক্ষা করেননি। গত সরকারের সময়ে পাটমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকলেও এবার রয়েছে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। ২০১৩ সালের সেপ্টম্বরের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তিনি এক সভায় বলেছিলেন-হরতালকারীদের ঘরে ঢুকে খুন করতে হবে। আর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মন্ত্রীর এ ধরনের বক্তৃতায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠেছিল। আর এবার মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি নিজের হাতেই লাঠি নিলেন। প্রথম শ্রেণীর এক সরকারি কর্মকর্তাকে নিজ এলাকায় লাঠি দিয়ে পেটালেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যবহার করেন তুই-তোকারি করে। আর তার পরিচালনাধীন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সব সময়ই থাকে নির্যাতন আতঙ্কে। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার এটাও একটি কারণ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, রাজনৈতিক মাঠে একে অন্যের বিরোধীতা করে বক্তব্য দিবে ঠিকই কিন্তু দায়িত্বশীল কোনো পদে থেকে যা-তা বলা যায় না। এতে ওই দলের ও নিজেরই জনপ্রিয়তা কমে।

এদিকে সরকারকে দেশ পরিচালনার দীর্ঘ আশা বাদ দিয়ে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার তাগিদ করে আসছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। একই সঙ্গে বিদেশীরাও একটি অর্থবহ ও সকলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচন দেওয়া তাগিদ অব্যাহত রেখেছেন। সম্প্রতি জাতীয় প্রেস কাবে সুজনের এক সেমিনারে সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। জনগণের ভোটে নির্বাচতরাই দেশ পরিচালনা করা উচিত বলে সুজনের সভায় অংশ নেওয়া বক্তারা উল্লেখ করেছেন। আর সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাাকালে বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না থাকলেও ওই সরকার বেপোরোয়া হয় এবং জনগণের কাছে তাদের কোনো কমিটমেন্ট থাকে না। এ ধরনের সরকার  প্রকৃতপক্ষে দেশের সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসে না।

 à¦…ন্যদিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট ইউসূফ হোসেন হুমায়ুন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বিরোধী দলতো তাদের নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতেই পারে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে আওয়ামী লীগের কাছে এখন কাজ হচ্ছে দুটি। এক, নিজেদের দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো মিটিয়ে দলকে আরো শক্তিশালী করা। দুই. যতটা সম্ভব জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্ট করা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ও প্রবীণ এ নেতা যে বলেছেন, আওয়ামী সরকার চেষ্টা করছে জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার। তাহলেও এমন প্রশ্ন তৈরি হতে পারে আওয়ামী লীগ এখন জনগণের কতটা দূরে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিজয় হওয়ার পর আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে দেওয়া ওয়াদা রক্ষা করেননি। তাছাড়া গত সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অপরাধ দমনের চাইতে বিরোধী দল দমনের কাজে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে দেশের খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন ও ইসলামী চিন্তাবিদদের অন্যায়ভাবে জেলে রাখা হয়েছে। এসব কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা ব্যাপকহারে কমেছে। আর সব দল ও মতকে উপেক্ষা করে গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন দেওয়ায় দেশের মানুষের কাছ থেকে একেবারেই ছিটকে পরেছে আওয়ামী লীগ। আর এতো সবের মধ্যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে যেসব অপকৌশল করছে তা কোনো দিনই সফল হবে না বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞমহল।    

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির এক সহ-সম্পাদক এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সরকার ভালোভাবেই জানে যে কত শতাংশ মানুষ গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। কীভাবে সরকার ক্ষমতায় আছে এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিক ভালোভাবেই জানেন। আর এটা জানেন বলেও এবার ক্ষমতায় এসেই তিনি কাজে বেশি মনোযোগী হয়েছেন। বিভিন্ন সভা সেমিনারে কথাবার্তা কম বলার চেষ্টা করেন। তিনি চাচ্ছেন দলের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে। আর সরকারের কার্যক্রমে মানুষের দৃষ্টি-ভঙ্গি বদলাতে চান।

 

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।