সংবাদ শিরোনামঃ

সার্বভৌমত্ব এখন ঝুঁকির মুখে ** ত্রিমুখী লড়াই জমে ওঠেছে ** বাংলাদেশ ভারতের পানি আগ্রাসনের শিকার : মির্জা ফখরুল ** সারাদেশে জামায়াতের বিক্ষোভ ** জনবিচ্ছিন্ন সরকারের উদ্বিগ্নতা বাড়ছে ** মাওলানা নিজামী ও সাঈদীকে বিচারের নামে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলুন : নূরুল ইসলাম বুলবুল ** রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি : শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা ** বিজেপি নেতার খায়েশ : কান টানলে কিন্তু মাথাও আসবে! ** ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফির ছোবলে যুব সমাজ ** ২২৬ এমপি কোটিপতি কর দেন না ৪২ জন ** সরকার জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করতেই বিচারের নামে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে ** ঝিড়ি-ঝর্ণা, নদী-ছড়ার দূষিত পানি ব্যবহার করছে অধিবাসীরা **

ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪২১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৩৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৪

বান্দরবানে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট

ঝিড়ি-ঝর্ণা, নদী-ছড়ার দূষিত পানি ব্যবহার করছে অধিবাসীরা

বান্দরবান পার্বত্য জেলায় পাহাড়ের ঝিরির পানি নিতে উপজাতীয় নারীদের ভিড়

শহীদুল ইসলাম বাবর, বান্দরবান থেকে ফিরে : বান্দরবানে খোদ পৌর শহরের পানির তীব্র সংকট বিরাজ করছে। সর্বত্র চলছে পানির জন্য হাহাকার। বান্দরবান পৌর পানি সরবরাহ কেন্দ্রের নাজুক অবস্থার কারণে শহরে খাবার পানির সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। তীব্র গরম, বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সঙ্কটের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শহরবারী। লোকজন পানির জন্য এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছুটে যাচ্ছে। এরপরও মিলছে না বিশুদ্ধ খাবার পানি। ফলে পুকুর ও সাঙ্গু নদীর দূষিত পানি খাবারসহ নানা কাজে ব্যবহার করছে। এদিকে বান্দরবানে দূর্গম পাহাড়ীজনপদগুলোতে খাবার-ব্যবহারে পানির সঙ্কট ক্রমশ আরো প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব এলাকার মানুষ পানির চাহিদা মেঠাতে ঝিড়ি-ঝর্ণা, নদী-ছড়ার দূষিত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে আক্রান্ত হচ্ছে পানি বাহিত নানা রোগে।

জানা গেছে, পাহাড়ের ঘেরা বান্দরবান পর্যটন নগরীর ২৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৌরশহরে পর্যটকসহ লাধিক মানুষের পানির চাহিদা প্রতিদিন ৬৫ লাখ লিটারেরও বেশি। কিন্তু পৌরপানি সরবরাহ কেন্দ্রে প্রতিদিন উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে মাত্র ২৮ লাখ লিটার। ফলে লোকজন পাইপ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপো করে চাহিদা মত পানি না পেয়ে পুকুর, নদীর দূষিত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। শহরের টাউন হল, উজানী, পাড়া, মধ্যমপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয়রা পানির জন্য এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছুটে যাচ্ছে। এ সময় টাউন হল সংলগ্ন মারমা পাড়ায় দেখা গেছে, পাইপ লাইনের ধারে অসংখ্য মানুষ পনির জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় মালা চিং মার্মা জানান, তিন-চার দিন পর পর পানি সরবরাহ কেন্দ্র থেকে যাও পানি পাওয়া যাচ্ছে। তাও চাহিদার তুলনায় অনেক কম, আর যেসব পানি দেয়া হচ্ছে ময়লা-আবজনা যুক্ত, খাবারের অনুপযোগী। তিনি জানান, পানি আসলেও দুই-একজন নেয়ার পর পরই পানি চলে যাচ্ছে। এতে সবাই পানি পায় না। ফলে পানির চাহিদা মিটাতে লোকজন পুকুরের দূষিত পানি খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করছে। একই এলাকার বাসিন্দা উ মং চিং মারমা জানান, পৌর এলাকায় পানির খুবই সঙ্কট, পানি সরবরাহ কেন্দ্র থেকে চাহিদা অনুযায়ী পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তিন-চার দিন পর পর পানি সরবরাহ কেন্দ্রে পানি দেয়া হয়। তাও কেউ পায় এবং কেউ পায় না। পানির জন্য খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছে। পানির অভাবে ঠিকমত রান্নাবান্না করতে পারছে না। তাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে।

তাদের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে পানির সঙ্কট বিরাজ করলেও কর্তৃপ একই অজুহাত দেখিয়ে যাচ্ছে। সঙ্কট নিরশনের কোনো কার্যকর পদপে নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার উপ সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ও পৌরপানি সরবরাহ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মনজেল হোসেনের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং ও জনবলেও অভাবে ঠিকমত পানি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জানান, পৌর এলাকায় মোট জনসংখ্যা ৬৫ হাজার, প্রতিদিন জনপ্রতি পানির চাহিদা ১শ’ লিটার করে। এসব মানুষের প্রতিদিন ৬৫ লাখ লিটারেও চেয়ে বেশি চাহিদা থাকলেও সারাদিনে যে সময়টা বিদ্যুৎ থাকে ঐ সময়ে পানি যেই পরিমাণ উৎপাদন করা যায় তা মাত্র ২৮ লাখ লিটার। তা বতর্মান চাহিদা ৪৩% মাত্র। তাও  বিদ্যুৎ সমস্যা কারণে অনেক সময় সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তিনি জানান, পৌরপানি সরবরাহ কেন্দ্রে ভিআইপি লাইন থেকে বিদ্যুৎ প্রদান করা হলে এ ৪৩% সঠিক সময়ে সরবরাহ করা সম্ভব হতো।

অপরদিকে জানা গেছে, বান্দরবানের সাড়ে ৩ লাখ পাহাড়ী-বাঙালির অধিকাংশই দূর্গম পাহাড়ী জনপদে বসবাস করে। এসব মানুষের পানির চাহিদা মেঠাতে জেলা পরিষদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থার বিগত ১০ বছরের স্থাপিত প্রায় লাধিক রিংওয়েল-নলকূপ খনন করে। অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদার, কর্তৃপ রিংওয়েল-নলকূপগুলো খননে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির আশ্রয় নেয়ায় শুস্ক মওসুমে পানি ওঠে না, অধিকাংশ অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। দূর্গম এলাকার পাহাড়ী-বাঙ্গালীরা বাধ্য হয়ে ঝিড়ি-ঝর্ণা, ছড়ার দূষিত পানি ব্যবহার করছে। এতে ডায়রিয়াসহ নানা পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিবছর শত শত লোকজন মারা যাচ্ছে। গতবছর লামা ও আলীকদম উপজেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ৬৭ জন ম্রো-মারমা আদিবাসী মারা যায়।

সুয়ালকের মাঝেপাড়া আতলতী তংঞ্চঙ্গ্যার পাড়ার বাসিন্দা শান্তলাল তঞ্চঙ্গ্যা জানান, পাড়ায় ৬৮টি তঞ্চঙ্গ্যা পরিবারের রয়েছে। এদের পাড়ায় দুইটি রিংওয়েল থাকলেও খনেন পর থেকে অকেজো অবস্থা পড়ে রয়েছে। পাড়ায় বিশুদ্ধ পানির খুবই অভাব রয়েছে। লোকজন বাধ্য হয়ে পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়ার ছড়া পানি খাবার ও ব্যবহারের কাজের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। তিনি জানান, এসব দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে লোকজন নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বিভিন্ন সংস্থার হিসাব মতে জেলা সদর, লামা, আলীকদম, নাই্যংছড়ি, রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানছিতে বিভিন্ন ধরনের পানির উৎস হিসেবে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার নলকূপ এবং প্রায় ৩ হাজার পাতকুয়া। অন্যান্য সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের উদ্যোগে নির্মিত নলকূপ, রিংওয়েল সংখ্যা কমপে ৮ হাজার। এসব নলকূপের ৫%পরিমাণও মাঠ পর্যায়ে সচল নেই।

পাহাড়ি দূর্গম এলাকার পাহাড়ী ও বাঙালি লোকজন অভিযোগ করেন, বিষুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ এখন বিভিন্ন নদী-খাল ও ঝিরি-ঝর্ণার দূষিত পানি ব্যবহার করে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় ও জন্ডিসসহ নানা সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সোহরাব হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ওয়াটার সাপ্লাই এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে থাকে। গত ২০০৩ সালের বেইজ লাইন সার্ভে অনুযায়ী পানি সরবরাহের অবস্থা ২৬% এবং স্যানিটেশনের কভারেজ ২৩.৫০% ছিল। বনাঞ্চল উজাড় ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে পানির উৎসগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, পানি সঙ্কট নিরশনে চলতি অর্থবছরে বিশেষ গ্রামীণ পানি সরবাহ প্রকল্পের আওতায় জেলা সদরসহ ৬টি উপজেলায় ৬৩ লাখ টাকা ব্যায়ে ১০৫টি গভীর নলকূপ, ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যায়ে ১২০টি রিংওয়েল এবং জিওবি ইউনিসেফ প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৪টি উপজেলায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যায়ে ৬০টি গভীর নলকূপ, ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যায়ে ২২৪টি রিংওয়েল, ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যায়ে ১৯টি জিএফএস এবং ৯৫টি পাতকুয়া সংস্কারের কাজ চলছে। এছাড়াও সদর উপজেলায় সদর পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ৪টি উৎপাদক নলকূপ ৫কোটি ৮৭লাখ টাকার প্রকল্পের মধ্যে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ছাড় পাওয়া গেছে। এসব প্রকল্প কাজ শেষ হলে পানি সঙ্কট কমে আসবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে বনাঞ্চল উজাড়, পাথর উত্তোলন বন্ধ, অকেজো রিংওয়েল-নলকুপগুলো সংস্কার করে দূর্গম পাহাড়ী জনপদে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হলে পানি সঙ্কট কমে আসবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।