সংবাদ শিরোনামঃ

গণআন্দোলনের ডাক ** সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি ও ব্যর্থতার কারণে দেশজুড়ে গণঅসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে ** বিচারপতিদের অভিশংসন, সম্প্রচার নীতিমালা গণতন্ত্রের ওপর ডেমোকিসের ছুরি ** ইরাকে পশ্চিমাদের হোলি খেলা ** অবিলম্বে গাজায় গণহত্যা বন্ধ করুন ** সরকার স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ভিত্তিমূলে আঘাত করছে ** বন্যাকবলিতদের দুর্দশা লাঘবে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ প্রয়োজন ** হীনম্মন্যতাবোধ এবং সেবাদাসদের দৌরাত্ম্য ** সাম্রাজ্যবাদ ও কাজী নজরুল ইসলাম ** পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেভাবে উদযাপিত হলো ঈদুল ফিতর ** উপমহাদেশে রেল দুর্ঘটনার শীর্ষে বাংলাদেশ, ক্ষয়ক্ষতিতে ভারত ** বন্যাপরিস্থিতির চরম অবনতি ** মুসলমানদের অনৈক্যের কারণেই ইসরাইল গাজায় নির্বিচার গণহত্যা চালাচ্ছে **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ভাদ্র ১৪২১, ২৫ শাওয়াল ১৪৩৫, ২২ আগস্ট ২০১৪

ইসরাইলি হামলায় ক্ষত-বিক্ষত গাজার মুসলমানরা ঈদুল-ফিতরের নামাজ আদায় করেন

হারুন ইবনে শাহাদাত
সারা বিশ্বের মুসলমানদের আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছিলো ঈদুল ফিতর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা দিনটি উদযাপন করেছেন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতার সাথে। এই আনন্দকে বর্ণিল করতে নিজ নিজ দেশের সংস্কৃতির নির্মল প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। মুসলিম দুনিয়ার কয়েকটি দেশের ঈদুল ফিতর উদযাপনের চিত্র তুলে ধরা হলো।

সৌদি আরব

সৌদি আরবে মহা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদ উপলক্ষে সুন্দর করে বাড়ি-ঘর সাজানো হয়। সৌদি আরবে অঞ্চল ভেদে ঈদের অনুষ্ঠান ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। তবে ঈদ উদযাপনে তাদের উদারতা ও আতিথেয়তা নজর কাড়ার মতো। ঈদের নামাজ শেষে সন্তানরা মা-বাবার বাড়িতে একত্রিত হয়। সেখানে বিশেষ ভোজনের পর পরস্পরের মধ্যে উপহার বিনিময় করা হয়, বিশেষ করে ছোটরা কেউ এই উপহার থেকে বাদ পড়ে না।

ঈদের সময় অনেক দোকানি ক্রেতাদের বিভিন্ন জিনিস উপহার দিয়ে থাকেন। রাস্তাঘাটে পথচারীরা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এমনকি অচেনা শিশুদের মধ্যেও খেলনা ও বিভিন্ন ধরনের উপহার বিতরণ করা হয়।

সৌদি আরবের অনেক এলাকার অবস্থাপন্নরা প্রচুর খাবার কিনে অসহায় দরিদ্র মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে বিলি করেন। আল কাসিম প্রদেশে ঈদের দিন সকালে সবাই বাড়ির বাইরে বিশাল কম্বল বিছিয়ে দেয় । প্রতিটি বাড়িতে খাবার রান্না করা হয়। এরপর সবাই যার যার খাবার নিয়ে একত্রে বসে খাবার গ্রহণ করে। তারা খাবার ভাগাভাগি করে খায়। কোনো কোনো পরিবার নুডুলস বা ভাত, শুকনো আখরোট, খেজুর আর বাদাম ঠাসা আস্ত ঝলসানো ভেড়া দিয়ে দিনটি উদযাপন করে। কোনো কোনো পরিবার বছরের এই সময়ে অবকাশ যাপনে যায়।

ইরান

ইরানে ঈদ উদযাপন হয় অনেকটা নীরবে। অনুষ্ঠানের ঘটা থাকে ব্যক্তিগত সব আয়োজনে। ঈদে দান করাটা তাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রতিটি মুসলিম পরিবার গরিবদের মধ্যে খাবার বিলিয়ে থাকে।

মিসর

মিসরীয়রা ঘরবাড়ি রঙ করে বা সাজিয়ে, ঈদ কার্ড পাঠিয়ে এবং নতুন কাপড় কিনে ঈদুল ফিতর উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়। ঈদের সকালে পুরুষ ও ছেলেরা ঘুম থেকে উঠে মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। মহিলা ও মেয়েরা সাধারণত বাড়িতেই থাকে, তবে কেউ কেউ মসজিদেও যায়। বহু পরিবার নীল নদের কিনারে, পার্কে বা বিভিন্ন মেলায় দিনের কিছু অংশ কাটিয়ে থাকে। বাবা-মা প্রায়ই বাচ্চাদের ক্যান্ডি আর অন্যান্য টুকটাক খাবার কিনতে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে থাকেন। বহু পরিবার ঈদের বিশেষ খাবার হিসেবে কাহক (অরিক অর্থে কেক) নামে এক ধরনের কুকি (পিঠা) কেনে বা বানায়। এই কুকি দশম শতাব্দীর মিসরের রাজপ্রাসাদের চুল্লিতে ছিল বলে জানা যায়, সেখানে বাবুর্চিরা কুকির ভেতর সোনার মুদ্রা পুরে দিত। আজকের দিনে এগুলো খালি রেখে দেয়া যেতে পারে বা খেজুর ভর্তা, বাদাম বা টার্কিশ ডিলাইটের (জেলির মতো এক ধরনের ক্যান্ডি) পুরে দেয়া হতে পারে। কাতায়েফ আরেকটি জনপ্রিয় ঈদের মিষ্টি। দিন উদযাপনে বেরোনো আত্মীয়দের সঙ্গে খাওয়ার মতো একটা চমৎকার খাবার।

ময়দা আর মসলা চালুনি দিয়ে মেলান। একটা পাত্রে মাখন নিয়ে উতরানো পর্যন্ত গরম করুন। ময়দা ও মসলা মেশান, ভালো করে না মেশা পর্যন্ত কাঠের খুন্তি দিয়ে নাড়তে থাকুন। কিংবা উত্তপ্ত মাখন ও ময়দার মিশ্রণ ফুড প্রসেসরে না মিশে যাওয়া পর্যন্ত নাড়তে পারেন।

দুধে চিনি ও ইস্ট দিয়ে গুলে না যাওয়া পর্যন্ত নাড়–ন। ময়ানটুকু রুটি বেলার পিঁড়িতে নিয়ে আনুমানিক পাঁচ মিনিটের মতো মলুন। ময়দাকে ছোট ছোট বলে পরিণত করে হাতের তালুতে নিয়ে চ্যাপ্টা করুন। অথবা চ্যাপ্টা করার আগে গোল বলের ভেতরে খেজুরের ভর্তা পুরে দিন। কুকিগুলো একটা তেল মাখানো চাদরের ওপর রাখুন। তিল ছিটান, তারপর আনুমানিক আধা ঘণ্টা কোনো গরম স্থানে রেখে দিন। ওভেন আগে থেকেই ৩৫০ ডিগ্রিতে গরম রাখুন। আনুমানিক পনের মিনিট পরে কুকি বের করুন। ওভেন থেকে বের করে গুঁড়া চিনি ছিটিয়ে দিন।

মিসরে তিন দিন ধরে ঈদের উৎসব উদযাপিত হলেও দেশটিতে এক দিনের জন্য সরকারি ছুটি থাকে। এই দিনে স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি অফিস এমনকি কিছু দোকান ও খাবারের দোকান বন্ধ থাকে। হালকা খাবারের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ঈদের সকাল। এরপর নামাজের পর সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে। ঈদের পরের দুই দিন অনেকে পার্কে বা অন্য কোনো জায়গায় বেড়াতে যায়। অনেকে নীলনদ ভ্রমণে বের হয়। অনেকে সিনাই উপত্যকায় শারম এল শেখ শহরে ছুটি কাটাতে যায়। শিশুদের দেয়া হয় নতুন পোশাক। মা, স্ত্রী, বোন ও মেয়েরা তাঁদের ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে বিশেষ উপহার পেয়ে থাকেন। ছোটরা বড়দের কাছ থেকে সালামি পায়, যাকে ঈদ-ইএ-ইয়াহ বলা হয়। ঈদে রান্না করা হয় প্রিয় খাবার ফাতা।

ইন্দোনেশিয়া

ইন্দোনেশীয়রা ঈদুল ফিতরকে ‘লেবারান’ বলে থাকে। রমজান মাসের শেষ দিনে (কৌশলগতভাবে পরের মাসের প্রথম দিন, কেননা সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম দিন শুরু হয়) সন্ধ্যা মেলানো মাত্র ঢোল বাজানো, নাচ, গান, নামাজ আর বয়ানের ভেতর দিয়ে উৎসব শুরু হয়ে যায়। বহু মুসলিম বাড়িঘর পরিষ্কার করে, গোসল সেরে শরীরে গোলাপ জল বা অন্য কোনো ধরনের সৌরভ ছিটিয়ে ঈদের দিন শুরু করে। অনেকে আবার পরদিন ভোরে জেগে উঠে নতুন কাপড় পরে মসজিদ বা বিশেষভাবে আয়োজিত খোলা জায়গা, যেমন মাঠ, পার্ক বা মূল সড়কে নামাজ আদায় করে। দিনের বাকি সময়টুকু পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করে এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে খাবার বিনিময় করে কেটে যায়। নারকেল পাতার ভেতর ভাঁপে দেয়া চালের গুঁড়ার পিঠা কেতুপাত জনপ্রিয় লেবারান খাবার।

বহু ইন্দোনেশীয় সকালের নামাজের পর ঘরে ফেরার পথে পড়শি বা বন্ধুদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। প্রায়ই সংপ্তি এইসব সফরে তাদের বিরুদ্ধে অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো অপরাধের জন্য মা চাওয়ার ব্যাপার জড়িত থাকে। সত্যিই আগের বছর আহত বা কষ্ট দেয়া হয়েছিল এমন আত্মীয় ও বন্ধুর কাছে মা চাওয়া এই ছুটির দিনের বৈশিষ্ট্য। ইন্দোনেশিয়ায় প্রচলিত লেবারান সম্ভাষণ হচ্ছে সালামাত ঈদুল ফিতরি লাহির বাতিন, যার মানে ‘শুভ ঈদুল ফিতর, আমাদের সব পাপের জন্য মা করো।’ বেশিরভাগ ইন্দোনেশীয় মুসলিম বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে দিন শুরু করে, তারপর বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করে। মার আবেদনসহ বেড়ানোর এই পালা শেষ হতে কয়েক দিন লেগে যেতে পারে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লেবারান কাজের ভেতর রয়েছে বিভিন্ন পার্ক ও অন্যান্য জায়গায় বেড়ানো। এসব জায়গায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ওমান

ওমানের মুসলিমরা রমজান মাসের শেষ ও ঈদের সূচনাকারী নতুন চাঁদ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপো করে। ওমানিরা বহু মুসলিম দেশের মতোই তিন দিন ধরে ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। নতুন চাঁদ ওঠার সন্ধ্যায় বহু ওমানি পর দিনের কাজকর্মের জন্য তৈরি হতে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। পুরুষরা প্রায়ই ভেড়ার গোশত আর শাদা চালের ভর্তার একটা মিশেল আরসীয়াহ নামে এক বিশেষ ধরনের খাবার রান্নার দায়িত্ব হাতে নেয়। মহিলা ও শিশুরা পরদিন পরার জন্য নতুন পোশাক তৈরি করে এবং মেহেদিতে হাত রাঙায়।

পরদিন সকালে বিভিন্ন পরিবার নতুন পোশাক পরে ফজরের নামাজ আদায় করে এবং আরসীয়াহ দিয়ে নাশতা সারে। বাচ্চারা পড়শি ও প্রবীণদের শুভেচ্ছা জানায় এবং বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে টাকা পায়। এরপর পুরুষ ও পরিবারের কর্তা ছেলেরা কেবল ঈদের সময় ব্যবহৃত খোলা জায়গায় বিশেষ নামাজে যোগ দিতে বেরিয়ে যায়। পরে ঈদুল ফিতরকে মা ও বিরোধ মিটমাটের জন্য বছরের আশীর্বাদপুষ্ট সময় বলে মনে করা হয় বলে সবাই পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলায়। এরপর পুরুষ ও ছেলেরা স্থানীয় শেখকে অনুসরণ করে এক বিরাট হলঘরে যায়, এখানে সমবেত খাবার পরিবেশন করা হয়। খাবারের ভেতর সাধারণত আরসীয়াহ, ফল, হালুয়া আর কফি থাকে। দিনের বাকি অংশ কাটাতে পরিবারগুলো বেড়ায় বা খাবার আর বাচ্চাদের খেলনা বিক্রির বাজারে যায়। ওমানিরা লোকসঙ্গীত ও নাচ আর ফাঁকা গুলি করেও ঈদ উদযাপন করে থাকে।

ভেড়া, ছাগল কিংবা গরু কোরবানির ভেতর দিয়ে শুরু হয় ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন। বিকেলে তান্নুর আল শোয়া নামে পরিচিত তন্দুরে ঝলসানো গোশত তৈরির বিশেষ আয়োজন শুরু হয়। মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বানানো তান্নুর নামে পরিচিত মহল্লার চুল্লিতে এই খাবারটি ঝলসানো হয়। মহল্লার লোকজন গর্ত সাফ করে অঙ্গার বানাতে লাকড়ি পোড়ানো শুরু করে, তারপর গোশতের জুতসই টুকরো বাছাই করে। মসলা মাখানোর পর প্রত্যেক পরিবারের গোশত বস্তায় ভরে উত্তপ্ত অঙ্গারের ওপর বসিয়ে দেয়া হয়। এরপর চুল্লিটি সম্পূর্ণ ভরাট করে তার ওপর ফেলনা জিনিস স্তূপ করে রাখা হয়, ফলে বস্তায় ভরা গোশত আগুন লাগা থেকে রা পায়। আয়োজন চলার সময় চুল্লির চারপাশে উল্লাসমুখর জনতা ভিড় জমায়। এভাবে পরদিন পর্যন্ত গোশত রেখে দেয়া হয়। ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিনে তান্নুর আল-শোয়া সেদ্ধ হওয়ার সময় ওমানিরা সুবাসিত লাকড়ি থেকে তৈরি অঙ্গারের ওপর তাল পাতায় গাঁথা ঝলসানো গোশত দিয়ে খাবার সারে। শিক কাবাবের মতো এই খাবারটিকে ওমানিরা মাশাকিক বলে। ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিনকে এই উৎসবের খাবারের সম্মানে আল-মাশাকিক বলে ডাকা হয়। বহু ওমানি এই দিনে মধু আর ডিম দিয়ে তৈরি এক ধরনের ডিজার্ট উপভোগ করে।

এইদিনে চুল্লি থেকে ধীরে ধীরে ঝলসানো গোশত বের করে খাওয়া হয় বলে ঈদুল ফিতরের তৃতীয় দিনকে অনেক ওমানি আল-শোয়া ডাকে।

কাতার

কাতারে তোপধ্বনি দিয়ে বা সাইরেন বাজিয়ে রমজান মাসের শেষ ও নতুন মাস শাওয়ালের সূচনাকারী নতুন চাঁদ দেখার সংবাদ ঘোষণা করা হয়। কাতারিরা তিন দিন ধরে ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। সাজগোজ করে ছুটির দিনটিকে স্বাগত জানাতে তৈরি হয় তারা। মহিলারা তাদের শরীর পরিষ্কার করে এবং হাত-পায়ে মেহেদি লাগায়। কাতারে এই রেওয়াজটি এত নৈমিত্তিক যে নতুন চাঁদ দেখার ব্যাপারটিকে প্রায়ই ‘মেহেদি রাত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মহিলারা নতুন জুতো আর প্রায়শই সোনালি বা রুপালি সুতোয় নকশা করা কাফতান পরে। পুরুষরাও নিজেদের সাজগোজের দিকে বিশেষ নজর দেয়। তারা শরীরে সৌরভ মাখে বা পোশাকে আতর লাগায়।

ঈদের প্রথম সকাল শুরু হয় বুলালিত (সেদ্ধ ডিমে ঢাকা মিষ্টি নুডলস), ছুটির মিষ্টি রুটি আর অন্যান্য মিষ্টি খাবার দিয়ে বিশেষ নাশতা করে। বাচ্চারা ঈদের গান গায়, বাবা-মা এবং প্রবীণরা বাচ্চাদের টাকা ও খাবার দিয়ে থাকে। নামাজ ও নাশতার পর দিনের বাকি অংশ পরিবারের সঙ্গে দেখা করার ভেতর আবর্বিত হয়। মেহমানদের দারুচিনি দেয়া কফি, গোলাপজলের সুবাসঅলা চা, বাকলাভা, ফল আর অন্যান্য মিষ্টি পরিবেশন করা হয়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব আর প্রতিবেশীরা ঘন ঘন উপহার হিসেবে মিষ্টি খাবার বিনিময় করে।

দুপুরের খাবার সময় বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা সদ্য জবাই করা ভেড়া আর ভাত খেতে কোনো প্রবীণ আত্মীয়ের বাড়িতে জড়ো হয়। প্রায়ই ২০ থেকে ৫০ জন লোকের এই বড় আকারের সমাবেশে একটা বিরাট টেবিলে খাবার রাখা হয় এবং লোকজন খাওয়ার জন্য মেঝেতে বসে। নারী-পুরুষ আলাদাভাবে বসতে পারে।

রাজধানী দোহায় বিভিন্ন প্রকাশ্য স্থানে তলোয়ার যুদ্ধ ও ঢোল বাজানোর মাধ্যমে জনতাকে আমোদ জোগানো হয়। উৎসবে অপোকৃত সাম্প্রতিক সংযোজন হলেও আতশবাজি পোড়ানো সন্ধ্যায় দর্শকদের চমকিত ও অনন্দিত করে তোলে।

তুরস্ক

তুরস্কে রাষ্ট্রীয়ভাবে যেসব ছুটি পালন করা হয়, তা ‘বায়রামা’ বলে পরিচিত। ঈদুল ফিতরের ছুটিকে বলা হয় ‘সেখার বায়রামা’ বা ‘রমজান বায়রামা’। ইস্তাম্বুল নগর কর্তৃপরে প থেকে ঐতিহ্য অনুযায়ী বায়রামার শুভেচ্ছা জানানো হয়। নগরের ব্লু মসজিদের মিনার থেকে শুরু করে পুরো মসজিদ বিভিন্ন রকমের আলোকসজ্জায় সাজানো হয়। সবাইকে বেরামিনিজ মোবারক ওলসন, বেরামিনিজ কুতলু ওলসন, মুতলু বেরামলার বলে শুভেচ্ছা জানান। ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির পুরুষেরা গোসল করে, নতুন পোশাক পরে পাশের মসজিদে নামাজ আদায় করতে যান। একে অন্যের বাড়িতে বেড়াতে যান। অনেকেই কবরস্থানে গিয়েছে তাঁদের পূর্বসূরিদের জন্য দোয়া কামনা করেন। এ সময় এসব কবরস্থানের সামনে ফুল, পানি ও ধর্মীয় বইপত্রের দোকান বসে। ওই দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথা হলো, বিশেষ কায়দায় প্রবীণদের শ্রদ্ধা জানানো। যিনি শ্রদ্ধা জানাবেন, তিনি প্রথমে ওই প্রবীণ ব্যক্তির ডান হাতে চুমু দেবেন এবং সেই হাতটি তাঁর কপালে ছুঁইয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানাবেন। শিশুরা প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। এ সময় তাদের ক্যান্ডি, চকলেট, ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে দেয়া হয়। একই সঙ্গে সালামি হিসেবে কিছু অর্থও দেয়া হয় তাদের।

তিউনিসিয়া

তিউনিসিয়ায় তিন থেকে চার দিন ধরে ঈদ উদযাপন করা হয়। তবে সরকারি ছুটি থাকে দুই দিন। দেশটিতে ঈদ উপলে বিশেষ এক ধরনের বিস্কুট তৈরি করা হয়ে থাকে, যা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে ঈদের দিন উপহার হিসেবে দেয়া হয়। ঈদ উপলে বাদাম, চিনির সিরা ও মধু দিয়ে বাকলাভা নামের এক ধরনের পেস্ট্রি তৈরি করা হয়। এ ছাড়া তিল দিয়ে ডোনাটের মতো এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরি করে তিউনিসিয়ার লোকজন। এর নাম ‘কাহকা’। অন্যান্য মুসলিম দেশের মতোই ঈদের দিন সকালে নামাজ আদায়, দিনভর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও খাওয়া-দাওয়া চলে। তবে ঈদের আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করে গান ও নাচের আসর।

দণি আফ্রিকা

রমজান মাসের শেষ দিনের সন্ধ্যায় দণি আফ্রিকার কেপটাউন শহরের গ্রিন পয়েন্টে শত শত মুসলিম চাঁদ দেখার জন্য জড়ো হন। সেখানে সবার হাতে থাকে ইফতারের উপকরণ। এরপর সেখানে মাগরিবের নামাজের পর আনুষ্ঠানিকভাবে চাঁদ দেখার কথা ঘোষণা করা হয়। পরদিন মসজিদে নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন শুরু হয়। এরপর একে অন্যের বাড়িতে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিমিয় করেন। হয় উপহার আদান-প্রদান। বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় বিস্কুট, কেক, সমুচা, পাইসহ অন্যান্য খাবার দিয়ে।

ফিলিপাইন

ফিলিপাইনে বেশির ভাগ মানুষ খ্রিস্টান। তবে ঈদুল ফিতরে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ২০০২ সালের ১৩ নভেম্বর এই আইন সই হয়। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রথম ঈদের ছুটি ঘোষণা করা হয়। একমাত্র খ্রিস্টান দেশগুলোর মধ্যে ফিলিপাইনে প্রথম এমন আইন পাস হয়। এর মধ্য দিয়ে মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ দূর হয়েছে।

চীন

চীনে সরকারি হিসাবে ৫৬টি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী থাকলেও ঈদুল ফিতর পালন করে ১০টি গোষ্ঠী। সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ। এই দিনে দেশটির নিগজিয়া ও শিনজিয়াং প্রদেশসহ কয়েকটি অঞ্চলে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এই ছুটি এক দিন বা তিন দিন হতে পারে। মুসলিম অঞ্চলের বাইরে থাকা মুসলমানদের জন্য এ ছুটি এক দিন। শিনজিয়াং প্রদেশে হান চাইনিজ জনগোষ্ঠী ঈদ উদযাপন করে। এ সময় সরকারি সংস্থা, ব্যক্তি মালিকাধীন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প থেকে সেবাদানের অংশ হিসেবে খাসি বা গরুর গোশত বিতরণ করা হয়।

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ায় মুসলিমরা নিজেদের মতো করে ঈদ উদযাপন করেন। বড় কোম্পানিগুলো মুসলিমদের ঈদের জন্য ছুটি দিয়ে থাকে। মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মসজিদে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। অনেক সময় তা মসজিদ ছাড়িয়ে রাস্তায় চলে আসে। তখন পুলিশ এসব সড়ক বন্ধ করে দেয়।

ভারত ও পাকিস্তান

চাঁদরাতে ভারত ও পাকিস্তানে মেয়েরা হাতে মেহেদী লাগান।

ভারত ও পাকিস্তানে ঈদের আগের রাতকে ‘চাঁদ রাত’ বলা হয়। চাঁদ রাতে এসব দেশে অনেকেই কেনাকাটা করতে যান। এর মজাই আলাদা। চাঁদরাতে মুসলমানদের বাড়িগুলোতে চলে ঈদের রান্নাবান্নার আয়োজন। মেয়েরা অনেকে হাতে মেহেদির কারুকাজ করতে ব্যস্ত হয়েছে পড়েন। ঈদের দিন নতুন পোশাক পরে ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা বিনিময় চলে। চলে কোলাকুলি করে হৃদ্যতা-বিনিময়। ঈদের দিন বড়দের সালাম করে ছোটরা পায় সালামি বা ঈদি। খাবারের আয়োজনে থাকে পোলাও-গোশতের মতো উপাদেয় পদ। থাকে নানা রকম মিষ্টান্ন। ধনাঢ্য পরিবারগুলো নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী জাকাত আদায় করে থাকে। ভারতে ঈদ উপলে এক দিনের সরকারি ছুটি থাকে। নয়াদিল্লিতে জামে মসজিদ, হায়দরাবাদে মক্কা মসজিদে, লৗেতে আছে শবাগ ঈদগাহে, কলকাতায় রেড রোডে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। এ সময় অমুসলিম প্রতিবেশী ও বন্ধুরাও মুসলিমদের ঈদের শুভেচ্ছা জানান। ভারতের হায়দরাবাদে জাঁকজমকভাবে ঈদ উদযাপন করা হয়।

পাকস্তিানে ঈদের দিন সকালে পরিবারের সবাই একসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, ঐতিহ্যবাহী শির কোরমা দিয়ে নাশতা করেন। দেশটির গণমাধ্যম সারা দিনে ঈদের খবর ছাড়াও বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। শিশুদের জন্য দিনভর খোলা থাকে বিভিন্ন খাবার ও খেলনার দোকান। অনেকে পার্ক ও সাগর তীরের মতো মনোরম স্থানে বেড়াতে যান।

তথ্য সূত্র : আন্ডারস্ট্যান্ডিং ইসলাম অ্যান্ড মুসলিম ট্র্যাডিশন : তানিয়া গুলেভিচ এবং দেশী-বিদেশী পত্রিকা।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।