সংবাদ শিরোনামঃ

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মাঠে নামছে জনগণ ** গুরুতর অসুস্থ ড. মাসুদের আবারো ১৪ দিনের রিমান্ড ** সরকার যুক্তি নয় শক্তি দেখাচ্ছে ** গণআন্দোলনের মাধ্যমে অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো হবে ** গাজায় দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি ** অবৈধ সরকার রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করে জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে : ছাত্রশিবির ** সংবিধানের কোথায়ও বলা নেই কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী রাজনীতি করতে পারবে না ** মামলা করে চরম হয়রানি করা হচ্ছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ** ধোঁকা খেলেন ইমরান খান? ** ক্যাট স্টিভেন্স থেকে ইউসুফ ইসলাম ** ব্যক্তি ও মুসলিম উম্মাহর উন্নয়নের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে ** এরদোগান কেন মুসলিম বিশ্বের জন্য মডেল ** শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে জিডিপি থেকে ৫-৬ শতাংশ ব্যয় করা দরকার ** সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে ** ধেয়ে আসছে বান ** পদ্মার ভাঙনে কুষ্টিয়ার ৭ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন ** ড. মাসুদকে নির্যাতনের প্রতিবাদ॥ নিঃশর্ত মুক্তি দাবি ** গৃহবধূকে অমানবিক নির্যাতন, মামলা করায় প্রাণনাশের হুমকি **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ ভাদ্র ১৪২১, ২ জিলক্বদ ১৪৩৫, ২৯ আগস্ট ২০১৪

কুষ্টিয়ায় প্রমত্তা পদ্মা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া থেকে : কুষ্টিয়ায় প্রমত্তা পদ্মা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে কুষ্টিয়ার কুমারখালী, ভেড়ামারা ও  দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৭ শতাধিক কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর, মরিচা, রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী চারটি ইউনিয়নের ৫ শতাধিক কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অব্যাহত নদী ভাঙ্গনে মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীর চর বাজার, ফিলিপনগর ইউনিয়নের হাইস্কুল থেকে আবেদের ঘাট এবং হাজির হাট পর্যন্ত প্রায় চার কি. মি. নদী গর্ভে বিলিন হয়েগেছে। ফিলিপনগর গ্রামের শতাধিক পরিবার গৃহহারা ও দুই শতাধিক পরিবার, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, চাঁইপাড়া জামে মসজিদ হুমকির মুখে রয়েছে।

নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারানো অসহায় মানুষগুলো  মানবেতর জীবন-যাপন করলেও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। সরেজমিন ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফিলিপনগর, মরিচা, রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী চারটি ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে প্রমত্তা পদ্মা নদী ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। নদীর কড়ালগ্রাসে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে একের পর এক কাঁচা পাকা ঘর বাড়ি। এখন পর্যন্ত ৩ শতাধিক পরিবার নদী ভাঙ্গনে বাড়ি ঘর খুইয়েছেন। বর্তমানে তাদের দিন কাটছে অনাহারে অর্ধাহারে। নদী ভাঙনে ঘর বাড়ি হারানো ইসলামপুর গ্রামের অরিফুল ইসলাম জানান, সর্বনাশা পদ্মা তার সহায় সম্বল সব গিলে খেয়েছে, এমন কি ঘরের আসবাবপত্রও রক্ষা করতে পারেননি। ছেলে মেয়ের মুখে কিভাবে একটু খাবার তুলে দেবেন সেটা ভেবেই কুল পাচ্ছে না রহমত আলী। একই এলাকার ফজল মণ্ডল বলেন, এক সপ্তাহ তার বাড়ি ঘর নদীবক্ষে বিলীন হয়ে গেছে। এক প্রতিবেশীর আঙ্গিনায় কোনো মতে মাথা গুজার ঠাঁই হলে এই এক সপ্তাহে একদিনও তিন বেলা খাবার জোটেনি কপালে। এলাকাবাসীর অভিযোগ পদ্মার উত্তাল ঢেউ সরাসরি রাজশাহী থেকে কুষ্টিয়ার ইসলামপুরে আঘাত হানলেও এখন পর্যন্ত জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড রক্ষার চেষ্টা করেনি।

এতে করে গোটা দৌলতপুর উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ফিলিপনগর, মরিচা, রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী চারটি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা। ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নঈম উদ্দীন সেন্টু বলেন, ভাঙ্গন রোধ ও এসব এলাকায় ত্রাণ সাহায্য জরুরি হয়ে পড়েছে। এদিকে কুমারখালীর উপজেলার কয়া ও শিলাইদহ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পদ্মা নদীর ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নদী ভাঙ্গনে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের পাকা রাস্তাসহ কয়েকটি গ্রামের মূল্যবান গাছপালাসহ প্রায় শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও শিলাইদহ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর, কালোয়া, বেড়কালোয়া, শ্রিকোল ও চরবানিয়াপাড়া এলাকার বহু পাকা-কাঁচা বসতবাড়ির চিহ্ন পর্যন্ত নেই। ভাঙন কবলিত কয়েকটি গ্রামের মানুষ সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। অনেককেই দেখা গেল বসতঘর সরিয়ে আতœà§€à§Ÿ-স্বজনদের বাড়ি কিংবা খোলা জায়গায় বসতি স্থাপন করে আশ্রয় ও গাছপালা কাটার কাজে ব্যস্ত থাকতে। অন্যদিকে, শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি, কান্দাবাড়ি ও কসবা এলাকায় ফসলি জমি ও গাছপালা ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহেলা আক্তার, কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম স্বপন ও শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান তারেক। কয়া ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত বেড়কালোয়া গ্রামের ইউনুস আলী বলেন, কিছুদিন আগেও পাকা-রাস্তার সাথেই আমার একটি দোকান ঘর ছিলো। গত কয়েকদিনের ভাঙনে পাকা রাস্তাসহ দোকান ঘরটি নদীতে চলে গেছে। একমাত্র আয়ের উৎস দোকান ঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তিনি। কালো গ্রামের কনা খাতুন বলেন, প্রতিদিনই এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতাম। কয়েকদিন আগে হঠাৎ দেখি রাস্তার বেশকিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, দিনে দিনে নদীর গ্রাসে চলে যাচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালাসহ ফসলি জমি আর মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে।

সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী বেড়কালোয়া গ্রামের শম্পা খাতুন ও সুলতানপুর গ্রামের তানিয়া সুলতানা শাখা জানায়, যে রাস্তাটি দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতাম সেই রাস্তাটির কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবুও নদীর তীর দিয়েই স্কুলে যেতাম। কিন্তু যাতায়াতের সময় আকস্মিকভাবে অনেককেই নদীতে পড়ে যেতে দেখেছি। তাই এখন এখন ফসলি জমি ও আশপাশের বাড়ির মধ্যেদিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করি। আর এ জন্যে অনেক কথাও শুনতে হয়। কয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন, কয়া ইউনিয়নের ৫/৬ টি গ্রামে বর্তমানে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। আর ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন এগিয়ে এসেছেন। তবে জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি খাদ্য সামগ্রীও প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেন। কুমারখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং প্রাথমিকভাকে  আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। অনতিবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকেই সহযোগিতা করা হবে। এদিকে পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে ভেড়ামারার চর গোলাপনগর গ্রামে কোটি টাকা  ব্যয়ে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প পদ্মা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অব্যাহত ভাঙ্গনের মুখে পড়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫শতাধিক মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে জীবন যাপন করছে। খাদ্য ও বাসস্থানের তীব্র সঙ্কটে দিশেহারা অসহায় মানুষ। সরকারি সাহয্যে সহযোগিতা এখনও কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেছে, কয়েক দিনের অব্যহত ভাঙ্গন রোধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। যে কারণে ধীরে ধীরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক হাজার বিঘা জমিসহ আশ্রয়ণ প্রকল্প। অসহায় নারী পুরুষ এবং ছিন্নমুল মানুষগুলো এখন অসহায়ের মতো খোলা আকাশের নিচে জীবন যাপন করছে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মা নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা বিশাল চরে ২০০৫ সালে নির্মাণ করা হয় আশ্রয়ণ প্রকল্প। নাম দেয়া হয় চর গোলাপনগর আশ্রয়ণ প্রকল্প।

মাটি ভরাট করে তৎকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন ৮টি ব্যারাক। প্রতি ব্যারাকে ১০টি করে ঘর রয়েছে। ৮০টি ঘরে রয়েছে ৮০টি পরিবার। কমপক্ষে ৫ শতাধিক মানুষের আবাসস্থল ছিল এই আশ্রয়ণ প্রকল্প। কিন্তু অপরিকল্পিত আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মানের কারণে পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্পই এখন নদীগর্ভে বিলীন হতে চলেছে। ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬টি ব্যারাকের ৬০টি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চর গোলাপনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, ৮টি ব্যারাকে ৮০টি পরিবারের ৫ শতাধিক মানুষ এই আশ্রয়ণে বসবাস করতো। কিন্তু কয়েক দিনের তীব্র ভাঙ্গনে কয়েক শত বিঘা জমিসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬টি ব্যারাকের ৬০টি ঘর এখন নদীগর্ভে। চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে আরো ২০টি পরিবার। যে কোনো সময় ওই ঘরগুলোও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে মানববেতর জীবন যাপন করছে এখানকার মানুষ। ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শান্তি মনি চাকমা জানান, পদ্মা নদী ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করে আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রাস করে নিয়েছে। ৮টি ব্যারাকের মধ্যে ৬টি ব্যারাকই এখন পদ্মা নদীতে। ভাঙ্গন রোধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং জেলা প্রশাসনকে বিস্তারিত জানিয়েছি। বরাদ্দ এলেই ক্ষতিগ্রস্তদের সাহয্যে সহযোগিতা দেয়া হবে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।