সংবাদ শিরোনামঃ

মাওলানা সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড ** আমরা আশা করেছিলাম তিনি খালাস পাবেন ** বৃহস্পতি ও রোববার সারাদেশে হরতাল ** ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা : ইমেজ সঙ্কটে মিডিয়া ** সন্ত্রাসবাদের ইস্যুকে উজ্জীবিত রাখতে সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্র ** মুক্ত চিন্তা বন্ধ করতেই মাহবুব উল্লাহর ওপর হামলা ** বিরোধী দলের প্রতি সরকারকে আরো সহনশীল হতে হবে ** এবার কোটি কোটি টাকার গালগল্প ** ঈদকে সামনে রেখে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে চোরাচালান বাড়ছে ** প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে বেঁচে আছে তিস্তাপাড়ের মানুষ ** মৌলভীবাজার মনুব্যারেজ ও লেকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় ** কাজী নজরুল ইসলামের শিক্ষা ভাবনা **

ঢাকা, শুক্রবার, ৪ আশ্বিন ১৪২১, ২৩ জিলক্বদ ১৪৩৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪

মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন
প্রাণের কবি, অবহেলিত মানুষের কবি কাজী নজরুল ইসলাম।  যেখানে অন্যায়-অবিচার, প্রতারণা ও ষড়যন্ত্র সেখানেই নজরুল সোচ্চার হয়েছেন জুলুমবাজদের বিরুদ্ধে। পরাধীনতার বিরুদ্ধে। ভারতীয় উপমহাদেশে নজরুলের মতো আপাদমস্তক  আর কোনো কবি নেই যিনি মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন এবং দেখাবেন।

এত কিছুর পরও নজরুলের বহুমুখী প্রতিভার কথা সবার কাছে সমভাবে উচ্চারিত হয়নি এবং এমনকি উচ্চারিত হয় না এখনো, অথবা যাতে উচ্চারিত না হয় সে চেষ্টাও করা হয়। নজরুলের সৃষ্টি ও কর্ম উচ্চারিত হবার মানেই হল অন্যায়কারী, জুলুমবাজ ও প্রতারকদের নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। তাই নজরুলকে কেবল ‘বিদ্রোহী’ তক্মা লাগিয়ে সঙ্কীর্ণ করে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে বিশেষ বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে। আমরা স্বীকার করি নজরুল ইসলাম আপাদমস্তক একজন বিদ্রোহী। কিন্তু আমরা একথাও বলতে চাই নজরুল কেবল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করেননি। তিনি বিদ্রোহ করেছেন ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে, মহাজনদের বিরুদ্ধে. সব অপশক্তির বিরুদ্ধে। তিনি বিদ্রোহ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে যারা দেশীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে ‘উন্নত মম শির’ করার হেন চেষ্টা চালিয়েছে। তিনি লড়াই করেছেন ধর্মীয় গোঁড়ামি ও অন্ধত্বের বিরুদ্ধে। তিনি লড়াই করেছেন সেসব ভণ্ডদের বিরুদ্ধে যারা দেশীয় শিক্ষার পরিবর্তে বিজাতীয় শিক্ষা আমদানি করে জাতিকে পর নির্ভরশীল করার হেন ষড়যন্ত্র করেছেন। তবে তিনি শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিদেশী বই পড়তে নিষেধ করেননি। তার শিক্ষা বিষয়ক যেসব চিন্তা ভাবনা রয়েছে তা তুলে ধরাই এই লেখার মুখ্য উদ্দেশ্য।

কাজী নজরুলের শিক্ষা বিষয়ক চিন্তা-ভাবনা আলোচনার পূর্বে বর্তমানে আমাদের দেশে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থার দিকেও সামান্য দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করছি। কেননা নজরুল সে সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে যে গলদ দেখেছেন বর্তমানেও তা বিদ্যমান । বরং সেসব সমস্যা নতুন নতুন মাত্রায় প্রকট হয়ে উঠেছে।

স্বাধীনতার পর থেকেই শিক্ষার গুরুত্বের উপর বারবার জোর দেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। কেননা, শিক্ষাকে মুক্তির উপায় হিসেবে কেউ দেখেননি। প্রত্যেকেই ব্যক্তি স্বার্থের মধ্যে শিক্ষাকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন। প্রতিটি সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ের ক্ষেত্রে দেশের সংস্কৃতি ও বাস্তবতার নিরিখে মানুষের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে, রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা ও বিদেশী বন্ধুদের সুবিধা-অসুবিধার দিকেই খেয়াল রেখেছেন এবং রাখছেন। বর্তমানে রাজনৈতিক চেতনাকে বাস্তবায়িত করতে শিক্ষাকে ক্ষমতায় টিকে থাকার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে, দিনে দিনে আক্ষরিক অর্থে শিক্ষার হার  বাড়লেও শিক্ষিতের হার বাড়েনি। অন্যভাবে বললে বলতে হয় আমরা দিন দিন সনদধারী মূর্খ জনগোষ্ঠী তৈরিতে সচেষ্ট।

এদেশের প্রচলিত পাঠ্য পুস্তকে দেশকে ভালোবাসার ও নৈতিকতা শিক্ষার কথা বলা হয়না। বরং বলা হয় যে সব দেশ আমাদের শাসন শোষণ করেছে এবং আমাদের সব ধ্বংস করে পরগাছা জাতিতে পরিণত করেছে এবং যারা বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে কথা বলে দেশকে পঙ্গু করে দেয়ার সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন, তাদের অনুকরণে পাঠ্য পুস্তক ও শিক্ষানীতি তৈরি করে দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন পেয়ে যায়, যেনতেন লিখলেই পরীক্ষায় পাস করে যাচ্ছে। বাস্তব জীবনে একটি শুদ্ধ বাক্যও তারা বাংলা বা ইংরেজিতে লিখতে পারে না। তাহলে এসব পাস করা ছাত্রদের দিয়ে দেশ কী আশা করছে?

উচ্চ শিক্ষার এ বেহাল দশা কেন? কেন প্রতিদিন কোনো না কোনো মিডিয়াতে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে? যেখানে স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর পর শিক্ষার নতুন দুয়ার নিয়ে কথা বলার কথা সেখানে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে? যদিও সংবাদ মাধ্যমগুলো সত্যিকারের সমস্যা তুলে ধরার চেয়ে নিজেদের প্রচারের অর্থাৎ ব্যবসায়িক চিন্তা করেই সংবাদ প্রচার করে। তাদের মধ্যেও এ স্বার্থপরতা কাজ করছে বর্তমানে বহাল শিক্ষা ব্যবস্থার কারণেই। কেননা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ব্যর্থ, শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত করে মানুষের মধ্যে থেকে থাকা সব জড়তাকে দূর করে, হাতে হাত মিলিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের তথা বিশ্বমানবতার জন্য কাজে উদ্বুদ্ধ করতে। তাই শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে যারা জড়িত তাদের জন্য দিক নির্দেশনা পাওয়া যায় নজরুলের শিক্ষা বিষয়ক প্রবন্ধগুলোতে। এখানে নজরুলের প্রবন্ধগুলো আলোচনার মাধ্যমে আমাদের বিদ্যমান সমস্যা দূর হবে বলে আশা করি।

যুগবাণীতে ঠাই পাওয়া ‘সত্য-শিক্ষা’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি বলেন কেবল মাত্র দার্শনিক মতামত দিয়ে বসে থাকার মধ্যেই শিক্ষাবিদদের সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। তাদের ব্যবহারিক জীবনেও তার প্রতিফলন থাকতে হবে। অর্থাৎ নিজেরা শিক্ষা ব্যবস্থার ধারণা দিয়ে নিজেদের সন্তানকে বিদেশ না পাঠিয়ে যদি যে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য তাদের সন্তানদের বিদেশ পাঠান সে ব্যবস্থা আমাদের দেশেও চালু করে জনগণকে মুক্তি দিতে পারেন।

তৎকালীন সময়ে ‘জাতীয় শিক্ষা’ নামে চালু হওয়া বিজাতীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে তিনি তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘আজাদির নেশায়’ যাত্রা করার আহ্বান জানিয়েছেন। কেননা, বিজাতীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তাদের গোলামীতে অলস হয়ে পড়া মানুষগুলো তরুণদের সাড়ায় জেগে ওঠে ভুল বুঝতে পারবে। নজরুল একথাও বলেছেন, “কেউ কেউ এ শিক্ষাকে বৈশ্বয়িক উদারনীতি বলে চালিয়ে দিবে এবং সাধারণ মানুষের সাথে তারা প্রতারণা করবে। তাদের হেন চিন্তার জবাবে নজরুল বলেন, “আমরা কিন্তু নিত্য বন্ধন-বাধা সৃজন করিয়া তাহাদিগের উচ্ছল গতিকে অচল করিতেছি।”

তিনি বিদেশী  শিক্ষার বিপক্ষে নন। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদেশী নীতির বিপক্ষে। তার মতে, “বিজাতীয় অনুকরণ আমরা ক্রমেই আমাদের জাতীয় বিশেষত্ব হারাইয়া ফেলিতেছি। অধিকাংশ স্থলেই আমাদের এই অন্ধ অনুকরণ হাস্যাস্পদ ‘হনুকরণে’ পরিণত হইয়াছে।” তিনি মনে করেন নিজের শক্তি ও বিশেষত্ব হারালে জাতির চরম অবমাননা হয়। অর্থাৎ সে জাতির কোনো স্বকীয়তা আর থাকে না। তাই তিনি বিশ্বাস করেন, “স্বদেশের মাঝেই বিশ্বকে পাইতে হইবে, সীমার মাঝেই অসীমের সুর বাজাইতে হইবে।”

শিক্ষার আনন্দ বা স্বার্থকতা কোথায় এবিষয়ে তিনি বলেন, “তাহারা শিখিবে দেশের কাহিনী, জাতির বীরত্ব, ভ্রাতার পৌরুষ, স্বধর্মের সত্যÑদেশের ভাইয়ের কাছ হইতে তাহারা শিখিবে আত্মোৎসর্গ, কর্মীর ত্যাগ ও কর্ম, নির্ভীকের সাহস, দেশের উদাহরণে উদ্বুদ্ধ হইয়া,Ñ à¦‡à¦¹à¦¾ কি কম আনন্দের কথা।” একথাগুলো বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি নিজেদের সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিজের ভাইয়ের কাছে শিখার পক্ষে মত দিয়েছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের নিজের দেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা পাবার যেমন আশঙ্কা থাকেনা তেমনি পাঠে বিভ্রান্তির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না।

বিগত শতাব্দীর তৃতীয় দশকের শুরুতে ব্রিটিশ সরকার এদেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্থায়ীভাবে ধ্বংস করার লক্ষ্যে ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ ও ‘জাতীয় শিক্ষার’ নামে দেশব্যাপী  বিষবৃক্ষ রোপণ করতে উঠে পড়ে লেগেছিল, নজরুলের মতো বিচক্ষণ ও দেশ প্রেমিক মানুষের পক্ষে তা বুঝতে মোটেও কষ্ট হয়নি। কিন্তু নিজে বুঝলেই হবে না, সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততা থাকা আবশ্যক হেন ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলায়। ফলে, যুগবাণীতে লেখা ‘জাতীয় শিক্ষা’ নামক যে প্রবন্ধ লেখেন তা সত্যি হৃদয়গ্রাহী।

সত্যকে অস্বীকার করে এবং দেশীয় সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে যে শিক্ষাব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, তাকে তিনি ‘ভণ্ডামী’ কর্মকাণ্ড বলেছেন এবং এও বলেছেন এমন শিক্ষাব্যাস্থার মাধ্যমে ‘মঙ্গল-উৎসবের কল্যাণ-প্রদীপ জলিবেনা।’ প্রণীত শিক্ষা ব্যবস্থার গলদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “শুনিয়াছি ‘বন্দে মাতারামের’ যুগে যখন স্বদেশি জিনিসের সওদা লইয়া দেশময় একটা হৈ হৈ ব্যাপার, হৈ হৈ কাণ্ড পড়িয়া গিয়াছিল, তখন অনেক দোকানদার বা ব্যবসায়িকগণ বিলাতি জিনিসের ট্রেডমার্ক বা চিহ্ন দিব্যি চাঁচিয়া-ছুলিয়া উঠাইয়া দিয়া তাহাতে একটা স্বদেশি মার্কা মারিয়া লোকের নিকট বিক্রয় করিতেন। এখন যে পদ্ধতিতে জাতীয় শিক্ষা আমাদের ভবিষ্যৎ আশা ভরসাস্থল নব-উদ্ভাবিত জাতীয় বিদ্যালয়ে দেওয়া হইতেছে, তাহাও ঠিক ঐ রকম শিক্ষারই ট্রেডমার্কা উঠাইয়া ‘স্বদেশী’ মার্কা লাগাইয়া দেওয়ার মত।”

শিক্ষা ব্যবস্থার ভিতরের গলদ ছাড়াও বাহিরের আরেকটি গলদ তিনি তুলে ধরেছেন, যা অর্ত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকে সত্যিকারের মানব কল্যাণে কাজে লাগাতে। বর্তমানে আমরা যেমন দেখি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে কি পরিমাণ অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়, যা ভাবলেও গা শিয়রে ওঠে। কেননা, অন্ধকার পথে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকেরা কখনই জাতির পথপ্রদর্শক হতে পারে না। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ করার ক্ষেত্রে যে অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে, তা শিক্ষা ব্যবস্থাকে কেবল দুর্বল করে দিচ্ছে না, তা পুরো জাতিকে অস্থিরতার দিকেও নিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষক হতে হলে পড়াশোনার বাহিরে বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। আর এ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বয়সও লাগে। কিন্তু দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ  করে মিছিল মিটিং করা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা ব্যতীত অন্য কোনো গঠনমূলক কাজ করানো যায় না।

আর এমন উপলব্ধি আমাদের প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রায় শত বছর পূর্বেই বুঝেছিলেন। তাই এমন নোংরা কাজের বিরুদ্ধে  তিনি সোচ্চার ছিলেন। ‘জাতীয় শিক্ষা’ প্রবন্ধে তিনি বলেন, “যাঁহারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর বা অধ্যাপক নিযুক্ত হইতেছেন, তাঁহারা সকলেই কি নিজ নিজ পদের উপযুক্ত? কত উপযুক্ত লোককে ঠকাইয়া শুধু দুটো বক্তৃতা ঝাড়ার দরুন ইহারা অনেকেই নিজের রুটির জোগাড় করিয়া লইয়াছেন ও লইতেছেন। ... পবিত্রতার নামে এমন জুয়াচুরিকে প্রশয় দিলে আমাদের ভবিষ্যৎ একদম ফর্সা।” নজরুলের এমন অভিযোগগুলো আজ সমাজের সবস্তরে বিদ্যমান। ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের কাছে বিসর্জন দিচ্ছি পুরো জাতিকে। এর শেষ কোথায়? কারা এ সমস্যার সমাধান করবে? যে শিক্ষক জাতিকে পথ দেখাবে, সে শিক্ষক যদি নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত হন তবে জাতি কোন পথে যাবে?

কাজী নজরুল ইসলাম শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বার বার সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন। ‘জাতীয় শিক্ষার’ পর ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক প্রবন্ধেও তিনি কঠোর সমালোচনা করেন হেন কর্মকাণ্ডের। পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথাও তুলে ধরেন। তার উদ্বেগ তিনি প্রকাশ করেন এভাবে, “পবিত্র কোনো জিনিসে কীট প্রবেশ করিতে দেখিয়া চুপ করিয়া থাকাও অপরাধ। এই জাতীয় বিদ্যালয়ে কাঁচা কাঁচা অধ্যাপক নিয়োগ লইয়া যে ব্যপার চলিতেছে, তাহা হাজার চেষ্টা করিলেও চাপা দেওয়া যাইবেনা; ‘মাছ দিয়া শাক ঢাকা যায় না’। কাঁচা অধ্যাপক মানে বয়সে কাঁচা নন, বিদ্যায় কাঁচা। আমাদের আর সবই ভালো, কেবল বে-বন্দোবস্তিই হইতেছে ‘গুণ-রাশিনাশি।’ গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়ার  তো তদুপরি আবার আমাদের একগুঁয়েমিও আছে।” সত্যিকার অর্থে যে সব অভিযোগ-অনুযোগ এখানে উপস্থাপন করেছেন, তার প্রতিটি এখনো আমাদের সমাজে ব্যপকভাবে প্রচলিত। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর আকার আরো তীব্র। এই একগুঁয়েমি প্রসঙ্গে বন্ধুর স্বার্থ বা প্রতিবেশীর স্বার্থ বা দলীয় অবস্থান ঠিক রাখানে বলে নজরুল দাবি করেন । এ সম্পর্কে নজরুল একগুঁয়েমিকে পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বন্ধুর মর্যদার চেয়ে সত্যের মর্যদা অনেক উপরে।”

এতক্ষণ যে সব কথা বলা হলো সবগুলো শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্রান্ত। কিন্তু শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিৎ এ প্রসঙ্গে নজরুল বলেন, “আমরা চাই, আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি এমন হউক, যাহা আমাদের জীবন শক্তিক্রমেই সজাগ, জীবন্ত করিয়া তুলিবে। যে-শিক্ষা ছেলেদের দেহ-মন দুইকেই পুষ্ট করে, তাহাই হইবে আমাদের শিক্ষা।”

পরিশেষে একথা বলা প্রয়োজন নজরুল  যেভাবে শিক্ষাকে দেখেছেন সেভাবে আমারা দেখতে পারলে এবং বাস্তবায়ন করতে পারলে আত্মমর্যাদাশীল এক জাতিতে পরিণত হতে পারতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা নিজেরা যেমন স্বকীয়তা নিয়ে ভাবিনা তেমনি নজরুলের দেখানো পথকেও অনুসরণ করতে পারিনা। কেবল তাই নয়! আমরা যাতে নজরুলকে জানতে না পারি তাই আমাদের পাঠ্য-পুস্তকে নজরুলকে সামান্যই প্রাধান্য দেয়া। এছাড়াও নজরুলকে জাতীয় পর্যায়ে কম জায়গা দেয়া হয়, যাতে শাসক গোষ্ঠীগুলোর মুখোশ জনগণ বুঝতে পারে। এখন আমাদের কর্তব্য নজরুলকে পরিপূর্ণভাবে জানা এবং তার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলন করে জাতিকে স্বয়ং-সম্পূর্ণ করে তোলা।

ইমেইল : jashimnub@yahoo.com

লেখক : প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ,নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।