সংবাদ শিরোনামঃ

বিএনপি জামায়াতকে আগামী নির্বাচনে বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র ** ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশাল জনসভায় জনগণের প্রতি বেগম খালেদা জিয়া ** নতুন নির্বাচন দিতে সরকারের উপর বিজেপির চাপ ** আন্দোলনের ঢেউ সামাল দিতে পারবে না সরকার ** মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল ** নিজের স্বার্থে আফগানিস্তানে শান্তি চায় না যুক্তরাষ্ট্র : কারজাই ** গণতন্ত্রকে হাইজ্যাক করছে আওয়ামী লীগ ** প্রতিরোধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে ** প্রধানমন্ত্রীর ব্যঙ্গ-তামাশা এবং বিশিষ্টজনেরা ** কে বলে আজ তুমি নেই ** ষোড়শ সংশোধনীর বিরুদ্ধে গণঅনাস্থা ** মাওলানা সাঈদীর মুক্তির দাবিতে সারাদেশে জামায়াতের স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত **

ঢাকা, শুক্রবার, ১১ আশ্বিন ১৪২১, ৩০ জিলক্বদ ১৪৩৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪

আফগানিস্তানে মতৈক্যের সরকার সঙ্কটের আপাত অবসান

নিজের স্বার্থে আফগানিস্তানে শান্তি চায় না যুক্তরাষ্ট্র : কারজাই

॥ ফেরদৗস আহমদ ভূইয়া ॥
যুদ্ববিধ্বস্ত আফগানিস্তানে জাতীয় মতৈক্যের সরকার গঠনে সম্মত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী দাবিদার দুই প্রার্থী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ ও আশরাফ ঘানি। গত ২১ সেপ্টেম্বর রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে স্বার করেছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই প্রার্থী। এর মধ্য দিয়ে কয়েক মাস ধরে চলা অচলাবস্থার অবসান হতে যাচ্ছে। আর আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার প্রেসিডেন্টের পদ থেকে বিদায় নিচ্ছেন হামিদ কারজাই। বিদায়ী ভাষণে কারজাই বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্বার্থে আফগানিস্তানে শান্তি চায় না। তাঁর মতে, পাকিস্তানের মতিগতিও মার্কিনিদের মতোই।

সব ঠিকঠাক থাকলে আসছে ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে বিদায় নেবেন হামিদ কারজাই। আর বিদায়বেলায় এসে গত ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার অনেক কথাই তিনি বলছেন ‘মন খুলে’। ১৩ বছর ধরে মতায় থাকা কারজাই বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্বার্থে আফগানিস্তানে শান্তি চায় না। তাঁর মতে, পাকিস্তানের মতিগতিও মার্কিনীদের মতোই। আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানে তালেবান সরকারের পতনের পর ২০০১ সাল থেকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন কারজাই। সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কারণে তৃতীয় মেয়াদে তাঁর মতায় যাওয়ার সুযোগ নেই। আগামী সোমবার আশরাফ ঘানির হাতে মতা হস্তান্তরের কথা আছে তাঁর।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কারজাইর সম্পর্কের তিক্ততা টের পাওয়া যায় শেষদিকে। ২০১৪ সালের পর বিদেশী সেনারা আফগানিস্তানে থাকবে কী থাকবে না, তা নিয়ে এ তিক্ততা তৈরি হয়। চলতি বছরের মধ্যেই বিদেশী সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার কথা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চায় দ্বিপীয় নিরাপত্তা চুক্তির (বিএসএ) মাধ্যমে হাজার দশেক সেনা সেখানে রাখতে। কারজাই এ চুক্তিতে সই করতে রাজি হননি। কাবুলে গত মঙ্গলবার বিদায়ী ভাষণে কারজাই বলেন, ‘নিজেদের ল্য ও উদ্দেশ্য পূরণ করতে আফগানিস্তানে শান্তি চায় না মার্কিনরা।’ মঙ্গলবার খোলাসা করে মার্কিনীদের উদ্দেশ্য না বললেও এর আগে তিনি বলেছিলেন, এখানে ঘাঁটি বসাতে চলমান যুদ্ধ-হাঙ্গামাকে তারা একটা অসিলা হিসেবে ব্যবহার করে।

আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিতে নাক গলানোর জন্য তিনি পাকিস্তানকেও অভিযুক্ত করেন। বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, আফগানিস্তানের যুদ্ধ আসলে আমাদের যুদ্ধ নয়। এ যুদ্ধ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা তার ভুক্তভোগী।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান না চাইলে এখানে শান্তি আসবে না।’

যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান যে আফগানিস্তানে শান্তি চায় না, সেদিকে ইঙ্গিত করে কারজাই বলেন, তিনি পাকিস্তান সফর করেছেন। এসব সফরে একাধিকবার তিনি চেষ্টা করেছেন তালেবানের সঙ্গে একটি চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছাতে। কিন্তু পারিপার্শ্বকিতা তা হতে দেয়নি। প্রসঙ্গত, তালেবানের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পাকিস্তানকেই ধরা হয়।

আফগানিস্তানে মতৈক্যের সরকার

আশরাফ ঘানি, আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ আফগানিস্তানে জাতীয় মতৈক্যের সরকার গঠনে সম্মত হয়েছেন আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ ও আশরাফ ঘানি। গত ২১ সেপ্টেম্বর রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে স্বার করেছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই প্রার্থী। এর মধ্য দিয়ে কয়েক মাস ধরে চলা অচলাবস্থার অবসান হলো। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির।

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে এই চুক্তি স্বার অনুষ্ঠান জাতীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। পুরো অনুষ্ঠান স্থায়ী হয় প্রায় ১০ মিনিট। অভিনব এই মতা ভাগাভাগির পর আফগানিস্তান নতুন এক যুগে প্রবেশ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

চুক্তি অনুসারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর একজন আশরাফ ঘানি প্রেসিডেন্ট হবেন। আর প্রধানমন্ত্রী পদমর্যাদার প্রধান নির্বাহী (সিইও) পদে মনোনয়ন দেবেন আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ।

চুক্তি স্বারের পর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই বলেন, ‘আমি খুব খুশি। আমাদের দুই ভাই আশরাফ ঘানি ও আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ দেশের মঙ্গলে একটি চুক্তিতে স্বার করেছেন। এর ফলে দেশে স্থায়ী শান্তি আসবে।’

গত ১৪ জুন অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে আশরাফ ঘানি ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন বলে প্রাথমিক ফলাফলে জানা যায়। এই ফলাফল প্রকাশের পর ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে আবদুল্লাহর সমর্থকেরা রাস্তায় নামেন। নির্বাচনে আবদুল্লাহ নিজেকে প্রকৃত বিজয়ী বলে দাবি করেন।

জুলাইয়ে ভোট গণনা শেষ হলেও আনুষ্ঠানিক ফলাফল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এতে সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়। দুই প্রার্থীর মধ্যে বৈরী অবসানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আফগানিস্তানে আসেন। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর তাঁদের মতপার্থক্য কমে আসে। এরই ফলে মতা ভাগাভাগির এই চুক্তি হলো। এখন শিগগিরই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণারও প্রস্তুতি চলছে।

মতৈক্যের বিষয়ে আবদুল্লাহর মুখপাত্র বলেন, একটি চুক্তির আওতায় আশরাফ ঘানিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিয়েছেন আবদুল্লাহ। চুক্তি অনুযায়ী আবদুল্লাহ মন্ত্রিসভার প্রধান নির্বাহীর (সিইও) পদে মনোনয়ন দেবেন।

আশরাফ ঘানির মুখপাত্র ফয়জুল্লাহ জাকি বলেন, দুই পরে মধ্যে আর কোনো বিরোধ নেই। তারা প্রতিটি বিষয়ে শতভাগ একমত হয়েছে। নতুন আফগান সরকারের একটি মন্ত্রিসভা থাকবে। এর প্রধান হবেন প্রেসিডেন্ট। এখানে থাকবেন একজন সিইও, সঙ্গে তাঁর দুজন সহকারী। সিইওর মর্যাদা প্রধানমন্ত্রীর সমতুল্য। তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। প্রেসিডেন্ট কৌশলগত সিদ্ধান্তগুলো নেবেন। আর সিইওর নেতৃত্বে দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজ করবে মন্ত্রিসভা।

কারজাইয়ের উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে যেভাবে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল, তাতে আফগানিস্তানে আবার জাতিগত সঙ্ঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। আবদুল্লাহ তাজিক ও হাজারাদের সমর্থনপুষ্ট। আর দেশের সবচেয়ে বড় জাতিগোষ্ঠী পশতুনদের সমর্থন ঘানির প্রতি। আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্টের প্রথম কাজ হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপীয় নিরাপত্তা চুক্তি স্বার। এর ফলে আফগানিস্তানে অবস্থানরত কয়েক হাজার বিদেশি সেনা দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিণ দেয়ার জন্য ২০১৪ সালের পরও থাকতে পারবে।

হামিদ কারজাই এই চুক্তি স্বার করতে রাজি হননি। তবে ঘানি ও আবদুল্লাহ এই চুক্তি করতে রাজি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত আফগানিস্তানের রাজনৈতিক সঙ্কটকে পুঁজি করে বিদেশী রাষ্ট্র তথা প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো বিশেষ সুবিধা আদায়ে তৎপর। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে আফগানিস্তানের একজন সিনিয়র সাংবাদিক আক্ষেপের সুরে তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয় আমাদের দেশটি নিয়ে পাকিস্তান ও ইরানসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি রাষ্ট্র বিভিন্ন দল উপদল সৃষ্টি করে রাজনৈতিক সঙ্কটকে জিইয়ে রেখেছে। হামিদ কারজাইয়ের গত ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবারের বিদায়ী ভাষণে বিদেশী রাষ্ট্রগুলো যে আফগানিস্তানে শান্তি চায়না তা প্রকাশ হয়েছে। হামিদ কারজাই শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের প্রতি অভিযোগ আনলেও ভারত ও ইরানের ব্যাপারে তেমন স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। অবশ্য আফগানিস্তানের ঐ সাংবাদিক বলেছেন আফগানিস্তানের রাজনৈতিক সঙ্কটে পাকিস্তান ও ইরানও দায়ী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ও সাংবাদিকদের অভিমত সাধারণ জনগণ আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাইলেও বিদেশী মদদপুষ্ট বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের কারণে তা হচ্ছে না। তবে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আফগানিস্তানে একটি গণতান্ত্রিক ও স্থিতিশীল সরকার প্রয়োজন। আর এ লক্ষ্যে আফগানিস্তানের রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ জনগণকে গণতন্ত্রের পথেই অগ্রসর হতে হবে। পাশাপাশি বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে আফগানিস্তানের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গণতন্ত্র ও পারস্পারিক সহযোগিতার পথকেই বেছে নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। এ আশাবাদ এ অঞ্চলের সাধারণ জনগণের আর অভিমত রাজনৈতিক বোদ্ধাদের।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।