সংবাদ শিরোনামঃ

খুনিদের বিচার করতে হবে ** দেশে সঙ্কট আরো বাড়বে ** লাগামহীন লুটপাটের যোগান দিতেই সরকার দাম বাড়াচ্ছে ** ব্যাংকিং খাতে সীমাহীন লুটপাট ** গাজায় গণহত্যার দায়ে ইসরাইলের বিচার দাবিতে বিশ্ব জনমত গঠন করতে হবে ** বাংলাদেশে অদ্ভুত কাণ্ড শুরু হয়েছে ** প্রতি বছর দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং এতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে ** গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া জনগণের জানমাল নিরাপদ নয় ** এ এক অসহায়ত্বের যুগ ** বাংলাদেশ : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ ** নাটোরে মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৩৪ ** পুলিশের গুলিতে পা হারাল সাজু ** তেঁতুলিয়ার টুপি কারখানার শ্রমিকরা মহাব্যস্ত ** ২৮ অক্টোবর : ইতিহাসের কালো অধ্যায় ** মানবতার কান্না ** ২৮ অক্টোবর ও তার বেনিফিশিয়ারি ** ২৮ আক্টোবর যেন ফিরে না আসে বার বার ** রক্তের তৃষ্ণা প্রবলতর হয়েছে **

ঢাকা, শুক্রবার, ৯ কার্তিক ১৪২১, ২৮ জিলহজ ১৪৩৫, ২৪ অক্টোবর ২০১৪

॥ হারুন ইবনে শাহাদাত॥
দেশের ব্যাংকিং খাত এখন রীতিমতো আতঙ্কজনক অবস্থায় আছে। এই খাতে জবাবদিহিতা, সুশাসন, নজরদারি, শাস্তি, বিচার বলে কিছুই নেই। কেউ জনগণের আমানত লুট করলে অথবা রাষ্ট্রের অর্থ চুরি করলে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না। জনগণের সঞ্চয়কৃত টাকাও ফেরত দিতে হবে না। ইতিহাসের পাতায় আওয়ামী লীগের প্রথম আমলের ব্যাংক ডাকাতির যে কাহিনী লেখা আছে এবং চিরদিন থাকবে। কিন্তু বর্তমান শাসনামলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজর কেড়েছে এই অপকর্মটি। গত ১০ অক্টোবর শুক্রবার প্রভাবশালী নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতামত পাতায় তাহমিমা আনাম ‘বাংলাদেশে যেভাবে ব্যাংক ডাকাতি হয়’ শিরোনামে লেখাটি প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়েছে, “আর এ বছর ছিল, হলিউড স্টাইলে ব্যাংক ডাকাতির বছর।”

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব চার ব্যাংকের সর্বমোট ৫০ জন পরিচালক আছেন। এদেও অধিকাংশকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এরমধ্যে সোনালী  ও অগ্রণীতে ১৩ জন করে এবং রূপালী ও জনতায় ১২ জন করে। প্রতিটি ব্যাংকের পরিষদে সরকারি বর্তমান আমলা ৪ থেকে ৫ জন এবং  ২ থেকে ৩ জন আছেন সাবেক আমলা। বাকী ৪ থেকে ৫ জন রাজনৈতিক কর্মী; যাদের ব্যাংকিং সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। চার ব্যাংকের  ২টির পরিচালনা পরিষদের  চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এএইচএম হাবিবুর রহমান। এছাড়া একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক বজলুর রহমান অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান। সম্প্রতি জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে মেয়াদ শেষ করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।

গত ২০১২ সালে সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক কেলেঙ্কারীর সময় ১৩ জন পরিচালকের মধ্যে ৩ জন ছিলেন সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এরা হলেন মহিলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরী, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুভাষ সিংহ রায় ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের আন্ত—র্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক সাইমুম সরওয়ার কামাল।

সূত্রে প্রকাশ, রূপালী ব্যাংকে পরিচালক পদে রয়েছেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবী সতেন্দ্র চন্দ্র ভক্ত। অগ্রণী ব্যাংকে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগ নেতা মঞ্জুরুল হক লাভলু, বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা আবদুস সবুর ও জনতা ব্যাংকের পর অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক হয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা এডভোকেট বলরাম পোদ্দার। রূপালী ব্যাংকের পর ফের জনতা ব্যাংকের পরিচালক নিযুক্ত হয়েছেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান হিরণ। এছাড়া অন্যান্য সাবেক ও বর্তমান আমলা এবং বাণিজ্যিক সংগঠনের যেসব নেতৃবৃন্দ রয়েছেন তারাও আওয়ামী সমর্থক বা কর্মী হিসেবেই পরিচিত।

কয়েকটি ব্যাংক ডাকাতি

 à¦¨à¦¿à¦‰à¦‡à§Ÿà¦°à§à¦• টাইমসের  প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়েছে ব্যাংক ডাকাতি ও এ খাতের অনিয়মের কিছু চিত্র। জানুয়ারিতে সোহেল নামের এক ব্যক্তি ও তার সহযোগী ইদ্রিস রাজধানী ঢাকার ৭০ মাইল উত্তরে কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে প্রায় ১৭ কোটি টাকা চুরি করে। মার্চ মাসে বগুড়াতে সোনালী ব্যাংকের আদমদীঘি শাখা থেকে ৩০ লাখ টাকা চুরি হয়। নিকটবর্তী একটি আসবাবের দোকান থেকে ব্যাংকের সিন্দুক পর্যন্ত সুড়ঙ্গ কেটে একই কায়দা ব্যবহার করে চোরেরা। আর গত ( সেপ্টেম্বর) মাসে জয়পুরহাটের একটি ব্র্যাক ব্যাংক শাখা থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা নিয়ে ভেগে যায় অপরাধীরা। এ দফায় পাশের ভবন থেকে ছিদ্র কেটে সঙ্ঘটিত হয় ডাকাতি। ব্যাংকের পাশের ঘর ভাড়া নিতে গিয়ে ডাকাতরা দাবি করেছিল তারা পুওর ডেভেলপমেন্ট নামক একটি অলাভজনজক সংস্থার কাজ শুরু করছে। আর হ্যাঁ, বাংলাদেশে আমাদের বিড়ম্বনাও আছে। আমাদের মনোযোগ যখন সিনেমা স্টাইল ডাকাতির দ্রুত বিস্তারের দিকে তখন সব থেকে বড় বিড়ম্বনা হলো, মি. মুন্সি ও তার নকলবাজ অপরাধীরা সত্যিকারের ব্যাংক ডাকাত নয়। বড় চোরেরা চোখের সামনে লুকিয়ে আছে। আর তাদের অনুমোদন দিয়েছে ওই ব্যাংকগুলোই। তারা হলো ঋণখেলাপি : ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যারা ব্যাংক থেকে অর্থ ঋণ নেয় ফেরত দেয়ার কোনো অভিপ্রায় ছাড়াই।

 à¦¸à¦®à¦¸à§à¦¯à¦¾ মনে হয় বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াতে। দু’ধরনের ব্যাংক রয়েছে : বেসরকারি ব্যাংক, যেগুলোর তত্ত্বাবধান করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আর রাষ্ট্র পরিচালিত বাণিজ্যিক ব্যাংক যেগুলো সরাসরি অর্থ মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় চলে। বেসরকারি ব্যাংকে তো ঋণখেলাপিরা আছেই (কখনও তারা এসব ব্যাংকের বোর্ডের আসনে আসীন), সরকারি ব্যংকগুলোও যে হারে এমন ঋণের অনুমোদন দিয়েছে তা অভাবনীয়। ঋণখেলাপের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বর্তমানে ২ থেকে ৩ শতাংশ। বাংলাদেশে এটা ১২ শতাংশেরও ওপরে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাষ্ট্র পরিচালিত ব্যাংকগুলোতে বকেয়া ঋণের হার ২৯ শতাংশ পর্যন্ত বেশি। পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। ২০১৩ বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট শীর্ষক বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্বল অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, দুর্বল কর্পোরেট শাসন ব্যবস্থা, ঋণ মানদণ্ডের শিথিলতার ফলে ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম দেখা দিয়েছে। এটা রাষ্ট্র পরিচালিত ব্যাংকগুলোকে তাদের অর্ধ বিলিয়ন ডলারের বেশি পরিমাণ ঋণকে খেলাপি ঋণ তালিকাভুক্ত করতে বাধ্য করেছে। গত ছয় বছরে রাষ্ট্র পরিচালিত প্রধান ৪টি ব্যাংক ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি দেখেছে। ওই চার ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২.৪৫ বিলিয়ন ডলার। (এর মধ্যে ইতোমধ্যে ক্ষতির তালিকাভুক্ত প্রায় ২ বিলিয়ন অন্তর্ভুক্ত নয়)। এর অর্থ হলো বড় অংকের অর্থ ব্যাংকিং প্রক্রিয়া থেকে নেয়া হয়েছে। আর চড়া সুদের হারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাধ্য হতে হয়। বাংলাদেশী ব্যাংকগুলোতে সুদের হার প্রায় ৯ থেকে ১৬ শতাংশ। পক্ষান্তরে জমা রাখার ক্ষেত্রে আয় ৬ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বেসিক ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান লজ্জাজনকভাবে শীর্ষ ১০০ ঋণ খেলাপির তালিকায় স্থান পেয়েছেন, যিনি প্রায় ১৫০ কোটি ডলার ঋণ নেয়া এক শীর্ষ অভিযুক্ত। ব্যাংক এ ঋণের কিছুটা উদ্ধার করতে পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মূলত অসফলই হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আইনের আশ্রয় নেয়া গেছে সামান্যই। কেননা বিচার ব্যবস্থা সাংঘাতিকভাবে ভারাক্রান্ত। আদালতে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ৮ লাখেরও বেশি মামলা চলমান রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এ ধরনের অবস্থা পরিবর্তন করার একমাত্র উপায় হচ্ছে সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক একক একটি ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণে আসা। যে সব ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরাসরি দায়বদ্ধ রাজনৈতিকভাবে নিয়োগকৃতদের হাতে নিয়ন্ত্রিত এবং যাদের কোন নিরপেক্ষ সংস্থা কর্তৃক নিরীক্ষার ঝুঁকি নেই সেসব ব্যাংকে সবসময়ই দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়া সৃষ্টি হবে।”

সরকারি সহায়তায় লুটপাট

দেশের সর্বত্র দুর্নীতিতে ছেয়ে যাওয়ায় আবারও তীব্র সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবকাঠামো এত দুর্বল, এত দুর্নীতিগ্রস্ত যে তা দিয়ে কোনোভাবেই এ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ব্যাংকিং খাতের দক্ষতা বৃদ্ধির কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় । কিন্তু ব্যাংক খাতে নৈরাজ্য চলছে। দুর্নীতি সর্বত্র ছেয়ে গেছে। ব্যাংক খাত আজ তছনছ হয়ে ভেঙে পড়েছে। সোনালী ব্যাংকে লুটপাট হয়েছে। জনতা ব্যাংকে লুটপাট হয়েছে। বেসিক ব্যাংককে ধ্বংস করা হয়েছে। ভারতের সোমনাথ মন্দিরের পর এত বড় দুর্নীতি আর কোথাও হয়নি।  সোনালী, জনতা, বেসিকে এত লুটপাট হওয়ার পরও দেখার কেউ নেই। কাজী ফিরোজ বলেন, সোনালী ব্যাংকে লুটপাট হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী সার্টিফিকেট দিলেন যে পরিচালনা পর্ষদ এর সঙ্গে যুক্ত নয়। ব্যাংক খাত থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হলো, কারোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। পুঁজিবাজারে ধস নামল। কারা করল? লুটপাটের জন্য কাউকে আটকানো হলো না। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে পুঁজিবাজার ধসের কারণ উদ্ঘাটনে কমিটি যে সুপারিশ করল, সেই রিপোর্টের কী হলো?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন গবেষণা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক  ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ  ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, সোনালী ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোতে এত বড় দুর্নীতি বা লুটপাটের ঘটনা কি করে ঘটলো- সে ব্যাপারে আমি বলবো, ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত স্পর্শকাতর  খাত। এর ব্যবস্থাপনা-পরিচালনা যদি সুষ্ঠু ,সৎ এবং দক্ষ ব্যক্তিদের দ্বারা না হয়, তাহলে কিন্তু  বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যে দুর্নীতি এবং লুটপাটের ঘটনা সম্প্রতি উদঘাটিত হয়েছে এটার একটা বড় কারণ হচ্ছে, ব্যাংকগুলোর যে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে সেই পর্ষদ এমন সব ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে যারা ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। আর তাদের একমাত্র যোগ্যতা হচ্ছে রাজনৈতিক পরিচয়। ব্যাংক ব্যবস্থাপনা করার জন্য যে ধরনের যোগ্যতা, শিক্ষা ও মেধা প্রয়োজন হয় সেটা তাদের নেই। তারা এই দায়িত্ব নেয়ার পর তা ব্যবহার করেছেন ব্যক্তিগত সুবিধা অর্জনের জন্য এবং ব্যাংকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ ধরনের লোক অধিষ্ঠিত থাকার ফলেই ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

জনগণের টাকায় লুটপাটের ঘাটতি পূরণ সমাধান নয়

ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ২৬ দশমিক ৪৬ শতাংশই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতার। তারপরও সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বরাবরের মতো চলতি অর্থবছরেও জনগণের করের টাকায় পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে। অথচ এই ঘাটতির কারণ দুর্নীতি ও অদক্ষতা। সূত্রে প্রকাশ, এবার সরকারের পক্ষ থেকে সোনালী, রূপালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংককে মূলধন ঘাটতি পূরণে ৫ হাজার কোটি টাকা দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর বিজনেস প্লান যাচাই করছে অর্থমন্ত্রণালয়। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে প্রকাশ, অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি, ডাকাতির কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি লুট হয়েছে। তারপরও গত বছরের ডিসেম্বরে মূলধন ঘাটতি পূরণে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা ছাড় করেছে সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও ব্যাংকগুলোর জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের অভিযোগ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের উপযুক্ত লোকদের কখনোই বসানো হয়নি। অথচ দলের পেশাদার দক্ষ লোকদের বসালে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশ্বস্ত অপেশাদার ব্যক্তিরাই নিয়ন্ত্রণ করছে এসব ব্যাংক। যার ফলে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অহরহ অপচয় হচ্ছে। জালিয়াতির কারণে প্রতিবছর মূলধন খোয়া যাচ্ছে এসব ব্যাংকের। মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রতিবছর জনগণের পকেটমারা হচ্ছে, যা কোনো সমাধান নয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর উন্নতি করতে হলে সরকারের অঙ্গীকার থাকতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হাতে এগুলোকে কোনোভাবেই রাখা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে পুরোপুরি দিয়ে দিতে হবে। যেভাবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো চলে, সেভাবেই এগুলোকে চলতে দিতে হবে।’ ব্যাংকগুলোর দুরবস্থার জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে, আইনি দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে শাস্তির বিষয়টি ঝুলে যায়।’ ব্রিটেনে আর্থিক অপরাধ দমনের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বিলেতে আর্থিক অপরাধ তদন্তে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন লোকবল আছে। কিন্তু আমাদের দুদকে কোনো দক্ষ লোকবল নেই। এটা দরকার। আর দ্রুত শাস্তির বিধান করে আইনে সংস্কারও আনা প্রয়োজন।’

এই লুটপাট বন্ধের উপায় কি এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘কেবল কোম্পানি বানালেই তো হবে না, সঠিক লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। সরকার ব্যাংকগুলোতে শীর্ষ দুই পর্যায় (এমডি ও ডিএমডি) পর্যন্ত কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু এই নিয়োগ স্বচ্ছ ও সঠিক হচ্ছে না। সব সরকারের লোকেরা এসব ব্যবস্থাপনাকে যথেচ্ছ ব্যবহার করে। বাছাই (সার্চ) কমিটি করে সঠিক লোক নিয়োগ দিতে হবে।

ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক। কিন্তু সেখানে কোনো হল-মার্ক বা এমন ঋণ কেলেঙ্কারি হয় না। কারণ, সেখানে পেশাদাররা ব্যাংক চালান। সরকার বা কেউ হস্তক্ষেপ করে না। এই মডেল গ্রহণ করলে আমার মনে হয় ঠিকভাবে ব্যাংকগুলো চলবে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান তাঁর পরার্থপরতার অর্থনীতি গ্রন্থে শুয়োরের বাচ্চাদের অর্থনীতি প্রবন্ধে লিখেছেন,“আধুনিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, আজকের রাজনীতিবিদগণ অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান না করে রাজনৈতিক সমাধান দিতে চান আর রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান না করে আর্থিক সমাধান দিতে চান। এর কারণ হল রাজনীতিবিদগণ অত্যন্ত অসহিষ্ণু। ক্ষণভঙ্গুর হলেও তাঁরা চটজলদি জাদু দেখাতে চান ভোটারদের দেখাতে চান যে, তাঁরা সব সমস্যার সমাধান জানেন। অথচ বাস্তবে এখন অনেক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা রয়েছে যার কোন নিশ্চিত সমাধান নেই। এর ফলে হিতে বিপরীত হয়।”

এখন এই রাজনীতির যাদুর কবলে পড়ে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি ব্যাংক ব্যবস্থা হাওয়ার আতঙ্কে আছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পরও রাষ্ট্র খাতের সোনালি, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের অবস্থার উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই। অর্থনীতিবিদদের পর্যবেক্ষণ সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় এই ব্যাংকগুলোর পরিচালক ও শীর্ষ ব্যবস্থাপনা পদে লোকবল নিয়োগ দেয়া, ঋণ বিতরণ থেকে পদোন্নতিসহ সব ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রাধান্যের কারণে সঙ্কট দিন দিন বাড়ছে। অথচ সম্পদ ও কাঠামোগত দিক বিবেচনায় দেশের ব্যাংকিং খাতের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। এই বিপুল পরিমাণ এই সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যে পরিচালনা পরিষদের তাদের বেশির ভাগ সদস্যই নিয়োগ পেয়েছেন রাজনৈতিক বিবেচনায়। পেশাদারিত্বের চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয়কে বেশি গুরুত্ব দেয়ায় অপেশাদারদের হাতে পড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে গ্রাস করছে দুর্নীতি আর অনিয়ম।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।