সংবাদ শিরোনামঃ

জনগণের আন্দোলন সফল হবেই ** কোকোর জানাজায় লাখো মানুষের আহাজারি ** সঙ্কট সমাধানে প্রয়োজন সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন ** বিরোধী দলের আন্দোলনে শঙ্কিত সরকার ** সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত অবরোধ-হরতাল চলছে ** সংহতি রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে আরব নেতাদের ** দেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত সরকার দেখতে চায় ** শওকত মাহমুদের মামলা প্রত্যাহার ও বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়া না হলে সরকার পতনের আন্দোলন ** সংলাপেই সমঝোতা করুন ** আবারও দৃশ্যপটে ভারতের সেই ঝানু কূটনীতিক ** কান্নাভেজা চোখে ছেলেকে শেষ বিদায় জানালেন খালেদা জিয়া ** ভারতবর্ষে শিক্ষা বিস্তারে মুসলমানদের অবদান ** জনপ্রতিরোধে রাজধানী ঢাকার সাথে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ** কার্পেটিং জুট মিলের স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণকারীদের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মাঘ ১৪২১, ৯ রবিউস সানি ১৪৩৬, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫

দেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত সরকার দেখতে চায়

॥ কামরুল হাসান॥
একজন মুসলমান হিসেবে আমি বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তার বান্দাকে যে সম্মানের সাথে নিয়ে যেতে চান, সেই সম্মানকে কারো পক্ষে ঠেকানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশে জন্মের পর থেকে আরাফাত রহমান কোকোর জানাজা দ্বিতীয় বৃহত্তর জানাজা। প্রথমটি হয়েছিল তার পিতা মেজর জিয়াউর রহমানের বেলায়। বাংলাদেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির মৃত্যুতেও এমন নজীর দেখা যায় না।

গত ২৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার চ্যানেল আইয়ের ‘আজকের সংবাদপত্র’ অনুষ্ঠানে সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মানবজমিনের প্রধানসম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী।

কোকোর জানাজায় জনসমুদ্রের জোয়ার নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে চরমভাবে শোকহত। এনিয়ে শাসক শ্রেণিকে অবশ্যই কিছুটা ভাবনা-চিন্তার বিষয় আছে। জানাজায় এত লোকের সমাগমের পিছনে দুটি ব্যাখ্যা হতে পারে। প্রথমত, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বর্তমান শাসক শ্রেণি আওয়ামী লীগের প্রতি একটা ক্ষোভ আছে, জনসমুদ্রই এর বহিঃপ্রকাশ। এর দ্বারা এটাই সরকারকে বোঝানো হচ্ছে যে, বিরোধী দলের সাথে বর্তমান সরকার যে আচরণ করছে তা মোটের সঠিক নয়। আর দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে বিএনপির অনেক মৌন সমর্থন আছে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে কোকোর জানাজার মধ্য দিয়ে। সবশেষে বলা যায় যে, কোকোর জানাজা সারাদেশে এবং বিদেশে একপ্রকার অকল্পনীয় জনসমুদ্রের জোয়ার তৈরি করেছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি দলের মধ্যে যে মান অভিমান তথা অন্য যা কিছু ছিল, তা ঘুচে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। আরাফাত রহমান কোকোর জানাজা তাই বলে।

মাহফুজউল্লাহ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক জীবনে তিন বার অঝরে কেঁদেছেন। প্রথমে ১৯৮১ সালে তার স্বামীর মৃত্যুতে, দ্বিতীয়বার যখন তাকে তার বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হলো এবং সর্বশেষ সন্তানের মৃত্যুর শোক। এটা সরকারের জন্য একটা বার্তা যে, বিএনপি মুছে ফেলা কিংবা উড়িয়ে দেয়ার মতো কোনো দল নয়। মাহফুজউল্লাহ বলেন, আরাফাত রহমান কোকো রাজনীতির মানুষ ছিলেন না। সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট পুত্র আরাফাত রহমান কোকো, এই ছিল তার পরিচয়। তার অন্য পরিচয় ছিল তিনি খেলাধূলার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। কোকোর মৃত্যুতে মোটামোটি সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিগত ছয়-সাত বছরে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কায়দায় সরকারি দল চরিত্র হনন করার চেষ্টা চালিয়েছে এবং এই কারণেই তাকে প্রবাস জীবন বেছে নিতে হয়েছিল।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংলাপ বাধ্যতামূলক

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংলাপ বাধ্যতামূলক এবং সংলাপের জন্য অবশ্যই রাজনৈতিক দলের সাথে সমাবস্থানে আসতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিন্দুমাত্র সৌহার্দ্য নেই। এর অন্যতম উদাহরণ হলো সংসদ ভবন। এখানে বিরোধী দল সবসময় অনুপস্থিত এবং সরকারি দল বিরোধী দলের সমালোচনায় ব্যস্ত। গত ২৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ‘মুক্তবাক’ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী এসব কথা বলেন।

দিলারা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত সরকার ক্ষমতায় দেখতে চায়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কোনো নির্বাচন নয়। কারণ এই নির্বাচনে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলগুলোর উপস্থিতি ছিল না। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ সুন্দর নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। কিন্তু বাংলাদেশে যে রাজনীতি চলছে তাতে গণতন্ত্রের কোনো বালাই নেই। একটি দল অপর দলকে কীভাবে দমন করা যায়, তাই হলো রাজনীতির আলোচ্য বিষয়। সরকারি দল বিরোধী দল বিএনপিকে মিছিল-মিটিংয়ে বাধা প্রদান করে চলছে। কিন্তু বাধা প্রদান করে কোনো লাভ নেই কারণ বিএনপি একটি রাজনৈতিক শক্তি। একে দমন করা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, ফুটন্ত ভাতের হাঁড়িকে ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করলে সেখান থেকে বিভিন্ন কায়দায় শক্তি সঞ্চারিত হবেই। বর্তমানে আওয়ামী লীগ যে রাজনীতি করছে তাতে স্পষ্টত বোঝা যায় যে, তারা বিএনপিকে দমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বিএনপি বাংলাদেশের অন্যতম একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। তাই বিএনপিকে বন্ধ করার চেষ্টা করলে তারা বিভিন্ন উপায়ে বন্ধ জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা চালাবেই। কারণ দমন কখনই কোনো সমাধানের পথ হতে পারে না।

দুই নেত্রীর শুভবুদ্ধিই বাংলাদেশের সমাধান

দেশ এবং জাতির উন্নয়নে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির যত তাড়াতাড়ি শুভবুদ্ধির উদ্বেগ ঘটবে, ততই আমাদের জন্য মঙ্গল। যদি দুই নেত্রী চান তবে নিশ্চয়ই বর্তমান সঙ্কটাপন্ন বাংলাদেশের কোনো না কোনো উপায় অবশ্যই বেরিয়ে আসবে।

সিনিয়র সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান গত ২৩ জানুয়ারি শুক্রবার চ্যানেল আইয়ের ‘আজকের সংবাদপত্র’ অনুষ্ঠানে একথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মানবজমিনের প্রধানসম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী।

মিজানুর রহমান খান বলেন, আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বাংলাদেশের অন্যতম দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারি দল এবং বিএনপি বিরোধী দলের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত রয়েছে। ক্ষমতা নিয়ে দলদুটির মধ্যে যে লড়াই চলছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ এবং দেশের সাধারণ জনগণ। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের রাজনীতি এমন জায়গায় চলে গেছে যেখানে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে।

তিনি বলেন, যেকোনো রাষ্ট্র নায়কের দায়িত্ব হলো জনগণের নিরাপত্তা দেয়া। রাষ্ট্রনায়ক একনায়ক, অনির্বাচিত কিংবা গণতান্ত্রিক যেকোনো কাঠামোর হতে পারে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, বর্তমানে বাংলাদেশে নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা অত্যন্ত নাজুকাবস্থায় চলে এসেছে। সহিংসতায় জর্জরিত বর্তমান রাজনীতি। রাজনীতির এই অস্থিরতার সঙ্কট নিরসন করতে না পারলে অতিশীঘ্র দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হতে পারে, যা অত্যন্ত খারাপ। আর বাংলাদেশে যদি জঙ্গিবাদের উত্থান হয়, তবে খোদ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের  মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি এবং সাধারণ জনগণ সবাই মহাবিপদে পতিত হব।

তিনি আরো বলেন, এমতাবস্থায় দেশবাসী ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে প্রধান দুই নেত্রীর সদ্বিচ্ছা এবং প্রজ্ঞার জাগরণ হওয়া অতীব জরুরি। এরজন্য সংলাপ বাধ্যতামূলক এবং উভয় নেত্রীর পক্ষ হতেই এই আহ্বান আসা উচিত। তবে সর্বাগ্রে সরকারি দল আওয়ামী লীগকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ রাষ্ট্রের পরিচালক হিসেবে সরকারি দলের দায়িত্ব বেশি।

দেশ এবং জনগণের স্বার্থে পিছনে নয় সামনের কথা চিন্তা করতে হবে

বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতির আলোচ্য বিষয় হলো সংলাপ এবং এই নিয়েই রাজনৈতিক মহলে বেশ তোরজোর চলছে। আর তোরজোরের মাত্রার আধিক্য জনগণের উপর প্রভাব বিস্তার করছে। সবাই সংলাপ সংলাপ বলে নানান মত ভিন্নমত প্রকাশ করে এবং আগামীতেও করবে। তবে সংলাপের জন্য দুই দল নয় বরং সকল রাজনৈতিক দলকে সমান ভূমিকা পালন করতে হবে। বিরোধী দলকে যেমন হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করতে হবে অন্যদিকে সরকারকেও সহনশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়াও নির্বাচন এবং নির্বাচন বিধি নিয়ে সর্বাগ্রে চিন্তা করতে হবে এবং এই আলোচনায় সরকারি ও বিরোধী দল উভয়কেই সমান কাতারে এগিয়ে আসতে হবে।

গত ২৬ জানুয়ারি সময় টেলিভিশনের ‘সম্পাদকীয়’ অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘সঙ্কটের প্রেক্ষাপট’।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতন্ত্রই হলো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জায়গা। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে একই কাতারে আসা উচিত। কারণ উন্নয়ন সকল সরকারের আমলেই হয়। পাকিস্তান আমলে আইয়ুর খানও অনেক উন্নয়ন ঘটিয়েছে এবং এরশাদ সরকারও দেশের রাস্তাঘাটের অনেক উন্নতি সাধন করেছে। কিন্তু জনগণ তাদের ফেলেও দিয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই হলো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আসল জায়গা। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের যে রাজনীতি চলছে তাতে পিছনের দিকে না গিয়ে, আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। রাজনীতিতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই যুক্তিতর্ক থাকতে পারে এবং আছেও। তাই দেশ এবং জনগণের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে পিছনের কথা ভুলে গিয়ে সামনের কথা চিন্তা করতে হবে। এতেই বাংলাদেশের মঙ্গল।

সঙ্কট নিরসনে জাতীয় সংলাপ প্রয়োজন

দেশে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনের জন্যে জাতীয় সংলাপ প্রয়োজন। সরকারি দল, বিরোধী দল, সচেতন নাগরিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, মহিলা সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন সকলকে নিয়ে সংলাপে বসতে হবে। সেখানে দেশের ভালো-মন্দ সামনে রেখে আলোচনা হতে হবে। গত ২৬ জানুয়ারি সোমবার রাতে যমুনা টেলিভিশনে ‘২৪ ঘণ্টা’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন, গণফোরামের সভাপতি ও প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আলোচনার বিষয় ছিল ‘চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট’।

তিনি বলেন, সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, জনগণ ক্ষমতার মালিক। কিন্তু আজকে দেশে যে পরিস্থিতি বিরাজমান এর দায়ভার আওয়ামী লীগ-বিএনপি একে অন্যের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।

ড. কামাল আরো বলেন, বাংলাদেশে মানুষ সংঘাত-সংঘর্ষ চায় না, দেশে শান্তি চায়। সুশাসন ও আইনের শাসনের নিশ্চয়তা চায়। কিন্তু আজকাল র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির প্রধানরা যে ভাষায় কথা বলেন তা কাম্য নয়। তারা তো দেশের নাগরিক। এ দেশেই থাকবেন।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যদি দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়, তা হলে এর চেয়ে বড় বিপদ আর থাকবে না।

জাতীয় সংলাপের দাবিতেই আমাদের ঐকমত্যে আসা উচিত

বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট যেহারে দিন-দিন উন্নতি লাভ করছে, তাতে জনমনে একটাই প্রশ্ন কী হচ্ছে, কী হবে আগামী দিনে। আমরা সবসময় রাজনৈতিক মহলে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ নিয়েই বাংলাদেশের সমস্যাগুলোকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। দুই দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার চোখেই আমরা বাংলাদেশের সমস্যা দেখি। যার ফলে দুই দলের মধ্যে প্রতিযোগিতাগুলোই আমাদের মনে আঁচড় কাটে।

গত ২৬ জানুয়ারি সোমবার চ্যানেল আইয়ের ‘আজকের সংবাদপত্র’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন, সিনিয়র সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মানবজমিনের প্রধানসম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী।

নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশ নানান সমস্যায় জর্জরিত। সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিকসহ অনেক সমস্যা দিন-দিন মাথা চাড়া দিচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার মধ্যে অনেক ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে নারীর ক্ষমতায়ন, দুনীর্তি বিরোধী প্রচেষ্টা, রাজনীতিকে সন্ত্রাসমুক্তকরণ, কালো টাকা থেকে মুক্তি এবং সর্বজনীন সুষ্ঠু নির্বাচন এই সব সমস্যা সব সরকারের আমলে দেখা যায়। এছাড়াও আগামীতে সংবিধানের যুগপোযোগী করণে আমাদের বিশেষ নজর রাখতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশের মৌলিক সমস্যাগুলোকে নিয়ে সর্বস্তরে জাতীয় আলোচনা করা উচিত এব্ ংআলোচনায় আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বলে কিছু থাকবে না, এখানে সবাই স্থান পাবে। যখনই সংলাপ সর্বস্তর থেকে উঠে আসবে তখন আওয়ামী লীগের কিংবা বিএনপির মনে হবে না যে, তারা পরস্পরের কাছে হেরে গেছে। জাতীয় বিষয় নিয়ে জাতীয় সংলাপ বাংলাদেশের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বের কোথাও ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মতো হাস্যকর নির্বাচন হয়নি

বিশ্বের কোথাও ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মতো হাস্যকর নির্বাচন হয়নি। এই ধরনের নির্বাচন করে ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। গত ২৫ জানুয়ারি রোববার রাতে বাংলাভিশন টেলিভিশনে ‘নিউজ অ্যান্ড ভিউজ’ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বাসে আগুন দেয়ার কথা কখনো বলেননি। তিনি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার কথা বলেছেন। তাকে যদি হুকুমের আসামি করা হয় তাহলে অতীতের সকল নেতাকেই দায়ী করা যাবে। আসলে দু’পক্ষ মধ্যে যদি আলোচনায় বসার আগ্রহ থাকে তাহলে এসব মামলা কোনো সমস্যা নয়। তবে প্রধানত সরকারি দলের পক্ষ থেকেই আলোচনায় বসার আগ্রহ থাকতে হবে। বিরোধী দলের আলোচনা ছাড়া উপায় নেই।

’৯১ সালের পর থেকে রাজনীতির অধঃপতন শুরু হয়েছে

রাজনৈতিক সৌজন্য রাজনীতির সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। রাজনীতি নোংরা হলে রাজনৈতিক সৌজন্যতাও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে যাবে না। ’৯১ সালের পর থেকে রাজনীতির অধঃপতন শুরু হয়েছে।

গত ২৫ জানুয়ারি রোববার রাতে টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনে ‘মুক্তবাক’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন সাংবাদিক ও লেখক মাহফুজ উল্লাহ।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবেদনা জানাতে গিয়ে গুলশান কার্যালয় থেকে ফিরে আসার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিএনপির এই ধরনের আচরণ কাক্সিক্ষত বা প্রত্যাশিত নয়। সেসময় প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান জানানো বিএনপির উচিত ছিলো। উচিত ছিলো দাঁড়িয়ে থাকা প্রধানমন্ত্রী ও তার সঙ্গে যারা ছিলেন তাদেরকে কার্যালয়ের ভেতরে বসানো। তবে প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রীর দেখা হলেই রাজনীতির বরফ গলতো তা নয়।

দেখা হলেই সমঝোতা হবে, এমন চিন্তার দ্বারা দুই নেত্রীর সাথে অবিচার করা হবে

কোকোর মৃত্যু এবং শেখ হাসিনা বিএনপি কার্যালয়ে যাওয়া নিয়ে অনেক মাধ্যমে শোনা গেছে যে, এতদিনে হয়তো বরফ গলায় উপক্রম হলো। এ রকম মন্তব্য প্রকৃতপক্ষে তাচ্ছিল্যের সামিল ছাড়া অন্য কিছু না। বেগম জিয়া বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান, অন্যদিকে তিনি একজন মা। পুত্র হারানো শোক কী, তার মা ছাড়া অন্য কেউ বোঝেন না। আরাফাত রহমানের মৃত্যুতে বেগম জিয়া অত্যন্ত শোকাহত। এই শোকের দিনে যদি কেউ মনে করে যে, শোকে পাথর গলবে, তবে সে ভুল বুঝছে। কারণ এই দিন কখনই রাজনৈতিক আলাপ- আলোচনা সময় না। তবে যে সব ব্যক্তি মনে করেন যে, দুই নেত্রীর দেখা হলেই সমঝোতায় বসবে। তাহলে এই রকম চিন্তার দ্বারা দুই নেত্রীর সাথে অবিচার করা হবে।

গত ২৪ জানুয়ারি শনিবার চ্যানেল টেয়েন্টিফোরের ‘পূর্বাপর’ অনুষ্ঠানে বিএফইউজে এর সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী একথা বলেন।

রুহুল আমিন গাজী বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল। দুটি দলের প্রধান যথাক্রমে বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী যখন মারা যান, তখন বেগম খালেদা জিয়া তাকে গিয়ে সমবেদনা দিয়েছেন। শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের বিয়েতেও বেগম জিয়া গেছেন। পক্ষ্ন্তারে বর্তমান প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা তারেক রহমানের বউ ভাতে এসেছিলেন এবং দুই নেত্রী এক টেবিলে খাবার খেয়েছেন। এই শিষ্টাচার বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে আমরা অতীতেও লক্ষ্য করেছি। তবে অনেকে বলা বলি করছে যে, বেগম জিয়া শিষ্টাচার জানেন না। একথা কখনই সত্য নয়।

তিনি আরো বলেন, বিগত বহু দিন যাবত বেগম জিয়া তার সন্তানদের সাথে দেখা করতে পারছে না। তারেক রহমানের সাথে সৌদি আরবে একবার দেখা হলেও, বাকি আর কারো সাথে দেখা হয়নি। কোকো কখনই একজায়গায় থাকতেন না। কারণ বাংলাদেশ সরকার বারবরই তাকে ধরে আনার চেষ্টা করছে।

রুহুল আমিন গাজী আরো বলেন, আমি এটা শুনেছি, তবে সত্য মিথ্যা কতটুকু তা জানি না যে, কোকো যখন শুনেছে যে তার মাকে গ্রেফতার করা হবে। এই সংবাদ শুনার পর নাকি কোকোর বুকে ব্যথা শুরু হয় এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়। কোকোর মৃত্যু হয় হার্ট অ্যাটার্কের মাধ্যমে।

অবিলম্বে আলাপ-আলোচনার ব্যবস্থা করুন

৫ জানুয়ারির নির্বাচন কোনো নির্বাচন নয়। এ নির্বাচন সাংবিধানিকভাবে সরকার গঠন করতে পারে না। সংবিধানে পরিষ্কার বক্তব্য রয়েছে, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত ৩শ’ সংসদ সদস্য নিয়ে পার্লামেন্ট গঠিত হবে। কিন্তু এই নির্বাচনে ১৫৪ জন জনপ্রতিনিধি ভোটে অঙ্কগ্রহণ করেনি।

গত ২১ জানুয়ারি  রাতে যমুনা টেলিভিশনে ‘২৪ ঘণ্টা’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এর সভাপতি আ স ম আবদুর রব ।

তিনি বলেন, সংলাপ ছাড়া অন্যকোনো রাস্তা আছে কিনা তা সরকার খুঁজে বের করুক। সেখানে সরকারকে তো কোনো ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তাহলে সরকার কেন নাটক করছে? ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট চুরি করে ৪ কে ৪০ বানিয়েছে। আসলে কী চোরের মন পুলিশ পুলিশ। পুলিশ যখন বাড়ির সামনে দিয়ে যায় স্বামী তখন চৌকির তলে লুকায়। স্ত্রী স্বামীকে বলে- তুমি কেন লুকাও? স্বামী তখন স্ত্রীকে বলে ‘তুই সেটা বুঝবি না’। মূলত সে চুরি করছে। পুলিশ তাকেও গ্রেফতার করে কি-না সেই ভয়ে চৌকির তলে লুকায়। আ স ম আবদুর রব আরো বলেন, গণতন্ত্রের জন্যে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, স্বৈরশাসনের জন্যে মুক্তিযুদ্ধ করিনি। ১৪৪ ধারা বিরোধী দলের জন্যে থাকলে, সরকারি দলের জন্যে থাকে না কেন? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকাবস্থায় ‘একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ এ গানটি হয়েছে। এখন সেই দেশে মানুষের বুকে গুলি করার জন্যে পার্লামেন্টে আলোচনা হচ্ছে। এই জন্যে কি মুক্তিযুদ্ধ করেছি? রাজনৈতিক সঙ্কট রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। অস্ত্র দিয়ে সমাধান করা যাবে না।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।