সংবাদ শিরোনামঃ

স্থানীয় সরকার ধ্বংসের নীলনকশা ** কেন মানুষ অথৈ সাগর পাড়ি দিচ্ছে, দায় কার? ** দেশকে রাজনীতিহীন করার ষড়যন্ত্র ** গণতন্ত্রহীনতা দেশকে সঙ্কটের দিকে নিয়ে যাবে ** আফগানিস্তানে শান্তির সম্ভাবনা ** গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারে ভোটাধিকারের সুযোগ দিতে হবে : বিচারপতি আব্দুর রউফ ** নরেন্দ্র মোদির সফর : বাংলাদেশের প্রত্যাশা! ** গণতন্ত্র ছাড়া দেশের উন্নতি কখনই সম্ভব নয় ** নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন প্রয়োজন ** সোনা নয়, সোনালী ফাঁস ** নিখোঁজ আর গুম ** জগতসেরা পর্যটক ইবনে বতুতা ** বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই ** কুষ্টিয়ায় পারিবারিক কলহে নৃশংস হত্যাকাণ্ড বাড়ছে **

ঢাকা, শুক্রবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২২, ৩ শাবান ১৪৩৬, ২২ মে ২০১৫

॥ ফেরদৌস আহমদ ভূইয়া॥
আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী। তার সফরের তারিখও চূড়ান্ত হয়ে গেছে। জুন মাসের ৬ তারিখ ঢাকা আসছেন মোদি। ঢাকায় অবস্থান করবেন মাত্র ৩৬ ঘণ্টা। তার এ সফর নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মিডিয়ায় ব্যাপক নিউজ হচ্ছে। মিডিয়া শুধু এটাই জানতে পেরেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। কিন্তু এ সফরকালে কি এজেন্ডা এবং কি বা কোন ধরনের চুক্তি বা প্রটোকল স্বাক্ষর হতে পারে তার কোনো সরকারি বা আনুষ্ঠানিক কার্যসূচি জানা যায়নি। অবশ্য মোদির সফরে সম্ভাব্য কি বা কোন ধরনের চুক্তি হতে পারে কি এজেন্ডা থাকতে পারে তা নিয়ে ফলাও করে লিড নিউজ করা হচ্ছে বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে।  এনিয়ে চলছে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসেব নিকেশ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ৬ জুন সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবেন এবং পরদিন ৭ জুন সন্ধ্যায় দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। এ দু’দিনে মোট ৩৬ ঘণ্টা ঢাকায় অবস্থান করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর নিয়ে তারা নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলেও জানা গেছে।

মোদির সফরে কি পাবে বাংলাদেশ : মোদির সফরকালে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়ানোর উপর জোর দেয়া হবে। বলা হচ্ছে নৌ, সড়ক, রেল ও সমুদ্র পথে বাংলাদেশের সংযোগ বাড়াতে চায় ভারত। আর এজন্য চট্রগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে আরো ১৫ রুটে ট্রানজিট চাচ্ছে ভারত। আর এ সফরেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত করতে চায় ভারত। আর এসব ট্রানজিট রুটের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও গড়ে তুলতে চায় ভারত। ভারত যেটাকে কানেকটিভিটি বলছে সেটা কি আসলেই কানেকটিভিটি? ভারত তার নিজের প্রয়োজনে অর্থাৎ উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে সহজভাবে কম খরচে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের উপর দিয়ে করিডোর চাচ্ছে আর এটাকে বলা হচ্ছে কানেকটিভিটি। কানেকটিভিটি একটি ইংরেজি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে সংযোগ বা যোগাযোগ। কিন্তু ভারত যা চাচ্ছে তা কি যোগাযোগ না ভারতের জন্য একতরফা সুযোগ? মোদির এ সফরে বাংলাদেশ কি সীমান্তে বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা, পানির ন্যায্য হিস্যা, নেপাল, ভুটান, চীন ও পাকিস্তানসহ বহির্বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের কানেকটিভিটি বাড়ানোর জন্য কোনো প্রস্তাব পেশ বা চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা করবে? কোনো দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের সফরে আমন্ত্রিত ও স্বাগতিক দুই দেশই তার নিজ নিজ স্বার্থে বেশ কিছু প্রস্তাব, চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে থাকে।  এধরনের শীর্ষ পর্যায়ের সফরে দুই দেশই কম-বেশি লাভবান হয় যাকে কূটনীতির ভাষায় বলা হয় উই্ন উইন সিচুয়েশন। কিন্তু মোদির এ সফরে ঢাকার পক্ষ থেকে বিশেষ করে বহির্বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সংযোগ স্থাপনে কোনো ট্রানজিট রুট পাওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রস্তাব  আছে কিনা তা জানা যায়নি।

১৫ রুটে করিডোর চায় ভারত

বাংলাদেশের ওপর দিয়ে নদী, স্থল, রেলপথে ভারতের ভাষায় ট্রানজিট যা প্রকৃতপক্ষে করিডোর চালুর প্রস্তাব অনেক আগেই দিয়ে রেখেছে ভারত। এসব প্রস্তাব বাংলাদেশ এখন যাচাই-বাছাই করছে। তবে অবকাঠামো উন্নত না হওয়া ও মাশুল চালুর সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না হওয়ায় প্যাকেজ আকারে ট্রানজিট প্রস্তাব ঝুলে থাকলেও এসব বিষয়ে পৃথকভাবে অগ্রগতি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারত তার করিডোর প্রস্তাবে ১৫টি রুটের উল্লেখ করেছে। এসব রুট চট্টগ্রাম কিংবা মংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে বিদ্যমান সংযোগের বর্ধিত অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব রুট হলো বাংলাদেশের এক অংশ থেকে ভারতের অন্য অংশে সংযোগ স্থাপন করবে। রুটগুলো হলো আখাউড়া-আগরতলা, সাবরুম-রামগড়, দেমাগিরি-তেগামুখ, বিবিরবাজার-শ্রীরামপুর, বিলোনিয়া-বিলোনিয়া, বেতুলি-পুরনো রংনা বাজার, চাতলাপুর-মনু, তামাবিল-ডাউকি, বরসরা-বরসরা, হালুয়াঘাট-ঘাসুয়াপাড়া, সুনামগঞ্জ-সেলবাজার, দর্শনা-গেদে, রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ, বিরল-রাধিকাপুর এবং বেনাপোল-পেট্রাপোল। এসব রুটের কোনো কোনোটির ব্যাপারে মোদির সফরে অগ্রগতির আশা করা হচ্ছে। যদিও এসব রুটের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে প্রত্যেকটির ধরন বুঝে পৃথক ছোট ছোট চুক্তির মাধ্যমে অগ্রসর হতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রেলপথে করিডোর : ভারত রেলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে কানেকটিভিটি জোরদারে আগ্রহী বেশি। কেননা রেলপথে কোনো যানজট হয় না। সময় ও খরচও কম। ফলে রেললাইনের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছে। আখাউড়া ও আগরতলার মধ্যে ভারত একটি রেললাইন স্থাপন করে দেবে বলে জানিয়েছে। এতে করে নৌ করিডোর রুটে আসা পণ্য রেলপথে আগরতলায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। বর্তমানে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু আছে। রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ হয়ে মালবাহী ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচলও শুরু হয়েছে। এদিকে খুলনা থেকে পশ্চিমবঙ্গে আরেকটি মৈত্রী এক্সপ্রেস চালুর বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ রেলওয়ের লাইনগুলো উন্নয়ন, মিটারগেজ ও ব্রডগেজের সমন্বয় সাধনেও উদ্যোগী ভারত। কারণ যমুনা সেতু এবং পদ্মা সেতুসহ বিদ্যমান গোটা রেলব্যবস্থা ব্যবহারে আগ্রহী ভারত। ভারতের অনুদানের ২০ কোটি ডলার পদ্মা সেতুতে ব্যবহার করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ।

ভারত যাকে ট্রানজিট বলছে তা প্রকৃত অর্থে কোনো ট্রানজিট নয় তা হচ্ছে করিডোর। ট্রানজিট হচ্ছে এক দেশ থেকে আরেক দেশের মধ্য দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যাতায়াত। ভারত তার নিজের প্রয়োজনে বাংলাদেশের ভুখণ্ড ব্যবহার করে করিডোর নিচ্ছে এবং মোদির এ সফরের মাধ্যমে সে সুযোগ আরো নিতে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ চাইছে ত্রিপুরা

 à¦¬à¦¿à¦¬à¦¿à¦¸à¦¿ জানায়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার প্রতিবেশী বাংলাদেশের কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ এবং সড়কপথে ট্রানজিটের সুবিধা চেয়েছেন। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ভারতের পার্লামেন্টে স্থলসীমান্ত বিল পাস হওয়ার পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে আস্থা তৈরি হয়েছে তাতে তিনি আশা করছেন যে দিল্লি এবার এই বিষয়গুলোও ঢাকার কাছে উত্থাপন করবে।

ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে চলতি বছরেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরে মি. সরকারও তার সঙ্গী হবেন আর এই পটভূমিতে ত্রিপুরার দাবিকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। এদিকে ভারতের কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে ত্রিপুরায় আগরতলা পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস চালুর অনুমতি দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দিল্লি সফররত বাংলাদেশের যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিবিসিকে বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির ঢাকা সফরেই সম্ভবত এ নিয়ে দু’ দেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হবে। এছাড়া ঢাকা থেকে মেঘালয়ের শিলং হয়ে আসামের রাজধানী গুহাটি পর্যন্ত বাস সার্ভিসের একটি পরীক্ষা চালানো হবে ২২ মে।

নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে তোড়জোর চলছে বাস্তবে কি তার তোড়জোর থাকবে। ভারত বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে খুব জোর গলায় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলছে। কিন্তু ভারত সরকার বাস্তবে তার প্রমাণ দিতে পারছে না। কাটা তারের বেড়া তার জ্বলন্ত উদাহরণ। কোনো দেশ তার বন্ধুপ্রতিম দেশের সাথে কাটা তারের বেড়া নির্মাণ করে বন্ধুত্বের সর্ম্পককে জোরদার করতে পারে না। মোদি কি কাটা তারের বেড়া ডিঙিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে পারবেন। আর্ন্তজাতিক বিশ্লেষকরা বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তকে মৃত্যুকূপ বলে অভিহিত করে থাকেন। কারণ এ সীমান্তে ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক গুলি করে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনা স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার ব্যাপারে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও  গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা থামছে না।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রয়েছে সীমান্ত সমস্যা ছাড়াও পানি বণ্টন সমস্যা। ভারত পানি বণ্টনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক কোনো আইনই মানছে না। উজানের দেশ হওয়ায় তার পানি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রয়েছে আর তাই দুই দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোতে বাঁধ দিয়ে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত। ভারতের একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশের জীব বৈচিত্র থেকে শুরু করে তার অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি পারবেন বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে দিল্লির পক্ষ থেকে তৈরি করা কাটাতারের বেড়া তুলে দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে জোরদার করতে। তিনি কি পারবেন বাংলাদেশের পানির হিস্যা দিতে, বাংলাদেশের সাথে বহির্বিশ্বের কানেকটিভিটি বাড়াতে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্য ট্রানজিট দিতে। মোদির কাছে বাংলাদেশের জনগণের এটাই প্রত্যাশা। বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সুস্বাগতম। মোদির বাংলাদেশ সফর সফল হোক।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।