সংবাদ শিরোনামঃ

বেকায়দায় সরকার ** দেশে চলছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ** লতিফ সিদ্দিকীর মুক্তি : আওয়ামী লীগের মুখোশ উন্মোচন ** পাকিস্তানের এমকিউএমকে অর্থায়ন করছে ভারত : বিবিসি ** সুকৌশলে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে সরকার ** গৃহশ্রমিকের নিরাপত্তা নেই, মর্যাদা নেই ** প্রতিটি রাষ্ট্রের মূলকথা হলো গণতন্ত্র ** পবিত্র রমজানে মিথ্যা অভিযোগে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বন্ধ করা হোক ** রাজনীতির মৃত্যুপুরিতে জল্পনা-কল্পনা ** দিনাজপুরে কীটনাশক মিশ্রিত লিচু খেয়ে ১১ শিশুর মৃত্যু ** গণবিরোধী বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব ** ‘জাতির সকল দুর্দিনে অতীতের মতো জামায়াতে ইসলামী তার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে’ ** ধনীর দুলাল সালমান (রা.) **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ আষাঢ় ১৪২২, ১৫ রমজান ১৪৩৬, ৩ জুলাই ২০১৫

মাহবুবুল হক খান, দিনাজপুর থেকে : দিনাজপুরে কীটনাশক মিশ্রিত লিচু খেয়ে ১১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আরো এক শিশু অসুস্থ হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. আব্দুল ওয়ারেস অজ্ঞাত রোগে এসব শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করলেও কীটনাশকের প্রভাবে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এর কারণ হিসেবে তারা কীটনাশক মেশানো লিচুকে দায়ী করছেন।

তাদের দাবি, মৃত শিশুদের পরিবারগুলো হতদরিদ্র। এ কারণে তারা পুষ্টিহীনতায় ভোগে, তাদের শীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। লিচু বাগানের কীটনাশকের প্রভাব এবং বাগানে বিষ স্প্রে করার পর পড়ে থাকা ফাটা লিচু শিশুরা কুড়িয়ে খেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়।

এ ব্যাপারে আইইডিসিআরের পরিচালক মাহমুদুর রহমান বলেন, কীটনাশকের সংস্পর্শে এসে শিশুরা অসুস্থ হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, অধিকাংশ শিশুর মৃত্যুর কারণ কীটনাশক। তাদের বাড়ি বা বাড়ির পাশের লিচুগাছ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেখানে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, কীটনাশক দেয়া লিচু খেয়ে শিশুরা অসুস্থ হয়।

আক্রান্ত শিশুদের সকলের রোগের লক্ষণ প্রায় একই। প্রচণ্ড খিঁচুনি ও কাঁপুনি দিয়ে আক্রান্তের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো এমনটি জানায়। মৃত শিশুরা হলো পার্বতীপুর উপজেলার জুরাই গ্রামের জোবাইদুর রহমানের মেয়ে জেরিন (৫), কাহারোল উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের মো. জিয়ারুল ইসলামের মেয়ে মোছাম্মাত ইয়াসমীন (৪), বিরল উপজেলার মাধবমাটি গ্রামের মো. আজিবর রহমানের ছেলে মো. সামিউল (২), একই এলাকার রুবেল হাসানের ছেলে মো. সাকিব (৩) ও নুরপুর গ্রামের মো. আলমের মেয়ে মিনারা (২), বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের ধুলট দাসপাড়া গ্রামের গজেন চন্দ্র দাসের ছেলে ফুল কুমার (২), একই এলাকার সেনগ্রামের মো. আব্দুল হকের মেয়ে মোছাম্মাত শামিমা (৫), সনকা গ্রামের মো. আবু তালেবের ছেলে মো. মামুন (৫), সাদুল্যাপাড়া গ্রামের মো. রবি চাঁনের ছেলে মো. স্বপন আলী (৫), চিরিরবন্দর উপজেলার ডগনবাড়ী গ্রামের মো. আমানুল হকের ছেলে মো. আবু সায়েম (৪)। এছাড়া এ রোগে আক্রান্ত কাহারোল উপজেলার পূর্ব সাদিপুর গ্রামের মো. খায়রুল ইসলামের মেয়ে মোছাম্মাত নিধি (৩) সংজ্ঞাহীন অবস্থায় নিজ বাড়িতে রয়েছে।

ঘটনার পর আইইডিসিআর গবেষক দল দুই দফায় আক্রান্ত শিশুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবক ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেন। এলাকার শিশুদের রক্তের নমুনা গ্রহণ, লিচু বাগান পরিদর্শন এবং লিচু সংগ্রহ করে। পরে গবেষক দলটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের পূর্ব সাদুল্যাপাড়া গ্রামের মৃত মো. স্বপনের বাবা মো. রবি চাঁন বলেন, আমার ছেলে সারাদিন খেলাধুলা করেছে। সে অসুস্থ ছিল না। রাত ১০টার দিকে হঠাৎ প্রচণ্ড খিঁচুনি ও কাঁপুনি দিয়ে চিৎকার করে ওঠে। এর পর শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়, জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সকালে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। রাতে সে মারা যায়।

মৃত স্বপনের খেলার সাথী প্রতিবেশী গোলজার আলীর ছেলে মাসুদ বলে, আমরা সারাদিন লিচু বাগানে খেলা করেছি। বাগানের পড়ে থাকা লিচু কুড়িয়ে খেয়েছি। একই এলাকার ধুলট দাসপাড়া গ্রামের গজেন চন্দ্র দাস বলেন, আমার একমাত্র ছেলে ফুল কুমার। রাতে প্রচণ্ড খিঁচুনি ও কাঁপুনি দিয়ে চিৎকার করে ওঠে। এর পর শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং জ্ঞান হারায়। সকালে দিনাজপুর শহরের অরবিন্দু শিশু হাসাপাতালে ভর্তি করি। সেখানে এক দিন থাকার পর বিকেলে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি করি। সেখানে দুই দিন চিকিৎসার পর সে মারা যায়।

তিনি বলেন, আমি লিচু বাগানের শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। কাজ শেষে ফেরার পথে সন্তানের জন্য কিছু লিচু নিয়ে আসি। লিচু বাগানে কাজ করার সময় বাগানের মালিক লিচুতে একটি বিষ স্প্রে করেন। ওই বিষের প্রচণ্ড গন্ধ। ব্যবহারের পর বাগান মালিক বিষের প্যাকেট ও বোতলগুলো লুকিয়ে রাখেন। অনেক সময় তাৎক্ষণিকভাবে পুড়িয়ে ফেলেন।

অজ্ঞাত বিষ ব্যবহারের বিষয়ে বীরগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সম্ভবত ভারত থেকে চোরাইপথে এ সব বিষ নিয়ে এসে ব্যবহার করা হয়। আমরা বিষয়টি জানান পর বাগান মালিক ও লিচু ব্যবসায়ীদের নিয়ে মতবিনিময় করেছি। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অচিরেই লিচু বাগান এলাকায় সভা-সমাবেশ করা হবে।

এ ব্যাপারে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চলতি মাসের বিভিন্ন সময়ে অজ্ঞাত রোগ নিয়ে ১২ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১১ শিশু মারা গেছে। এক শিশুকে তার পরিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনার পর সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একদল গবেষক দুই দফায় আক্রান্ত শিশুদের বাড়ি পরিদর্শন করে। ১১ শিশুর মৃত্যুর পর দিনাজপুর প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ এবং মিডিয়াকর্মীদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক আহম্মদ শামীম আল রাজী বলেন, বিষয়টি তদন্তে সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরও কীটনাশক মিশ্রিত লিচু খেয়ে অসুস্থ হয়ে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েকজন শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় লিচু বাগান মালিক ও লিচু ব্যবসায়ীরা লিচুতে কীটনাশক মেশানোর ফলে এবারো এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সচেতন দিনাজপুরবাসী।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।