সংবাদ শিরোনামঃ

আন্তর্জাতিক চাপে সরকার ** গুমের সঙ্গে এই সরকার জড়িত ** যেমন কর্ম তেমন ফল ** শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ** উৎপাদন খরচ কমলেও বাড়লো বিদ্যুতের দাম ** গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : বিএনপি ** প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বিক্ষোভ, উত্তাল মালয়েশিয়া ** দেশ আতঙ্কিত অথচ সরকার বলছে শান্তিপূর্ণ ** রাষ্ট্র ও সরকারকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ** অনুভূতির সাগরে কুরআনের দেশে ** গুম দিবসও গুম হয়ে গেলো! ** ছোটদের বন্ধু নজরুল ** বন্যায় সারাদেশে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি অপর্যাপ্ত সরকারি সাহায্য ** রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ** যশোরের শার্শায় বাণিজ্যিকভাবে বেদানা চাষ **

ঢাকা, শুক্রবার, ২০ ভাদ্র ১৪২২, ১৯ জিলকদ ১৪৩৬, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কোনো ‘দিবস’ পালনের কথা এলে বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। দিবসটির মধ্যে আনন্দ খুঁজতে চায়। কিছু ব্যতিক্রমও অবশ্য আছে। যেমন দিনের পর দিন, দীর্ঘ ৪০ দিন ধরে শোক পালন করতে গিয়ে এবার মানুষ কান্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে গত ৩০ আগস্ট জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দুটি সংস্থার ডাকে বিশ্বের সকল দেশে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক গুম দিবস। গুম শব্দটির পরিবর্তে জাতিসংঘ ব্যবহার করেছে ‘এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স’। বলেছে, যাদের জোর করে সরিয়ে ফেলা হয়েছে তাদের ফিরিয়ে আনাই তাদের লক্ষ্য। দিবসটির উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে নিশ্চয়ই বলার অপো রাখে না। সব দেশেই গুম ও গুপ্তহত্যার মতো বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডকে মারাত্মক অপরাধ হিসেবে শুধু নয়, অত্যন্ত ঘৃণার সঙ্গেও দেখা হয়। গণতান্ত্রিক কোনো দেশে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গুম করা হবে এবং পরে এখানে-সেখানে তাদের লাশ পাওয়া যাবে এমনটা কল্পনা করা যায় না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন বাংলাদেশে গুম শুধু হচ্ছেই না, মাঝে-মধ্যে গুমের রীতিমতো ধুমও পড়ে যাচ্ছে। অনেকের এমনকি খোঁজ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী গুম হয়েছেন ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে। সঙ্গে তার ড্রাইভারও ছিল। কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও এখনো ইলিয়াস আলীর কোনো খোঁজ মেলেনি। মাঝখানে তার ছোট ভাই অভিযোগ করেছিলেন, ইলিয়াস আলীকে নাকি কলকাতার আশপাশে ভারতের কোনো কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। অন্য কোনো দেশ হলে সরকার সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়ে উঠতো এবং ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার বলে কথা! তৎপর হয়ে ওঠা দূরে থাকুক সরকার টু শব্দটিও করেনি। গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কমিশনার ও বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মী গুম হয়েছেন। আমিনুল ইসলামের লাশ তবু টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলে পাওয়া গিয়েছিল। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী মু. ওয়ালিউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাসকে র‌্যাব পরিচয়ে সাভারের নবীনগর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওয়ালিউল্লাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শহর ছাত্রশিবিরের অর্থ সম্পাদক ছিলেন। আল মুকাদ্দাস ছিলেন সংস্কৃতি সম্পাদক। ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে তাদের অপহরণ করা হলেও আজ পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি। ২০১৪ সালে নীলফামারী থেকে নিখোঁজ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সাবেক ছাত্রনেতা মহিদুল। ডিবি পরিচয়ে তাকে তুলে নেয়ার পঞ্চাশ দিন পর তার লাশ পাওয়া যায়।

এছাড়া সীতাকুণ্ড পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের শিবির সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন (২২) ও আমিনুল হক নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন পর তাদের লাশ পাওয়া যায়। আরো অনেকের লাশও দেশের বিভিন্ন স্থানে নদী বা খালের পাশে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের মতো বেশিরভাগেরই এখনো কোনো খবর নেই।

এমন এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যেই এবার আন্তর্জাতিক গুম দিবস পালিত হয়েছে। কৌতূহলোদ্দীপক তথ্যটি হলো, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার কিন্তু পালন করা দূরে থাকুক, দিবসটি সম্পর্কে জনগণকে জানতে পর্যন্ত দেয়নি। এ উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সে অনুষ্ঠানে ইলিয়াস আলীর স্ত্রীসহ বিভিন্ন সময়ে গুম হয়ে যাওয়াদের স্বজনরা উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে ভয় ও আতঙ্কের সঙ্গে খালেদা জিয়া বলেছেন, যে অবস্থা চলছে তাতে তিনি নিজেও গুম হয়ে যেতে পারেন। তাকেও হত্যা করা হতে পারে। তিনি একই সঙ্গে প্রতিটি গুমের ঘটনার তদন্ত এবং দোষীদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেছেন। খালেদা জিয়া বলেছেন, এই তদন্ত হতে হবে জাতিসংঘের অধীনে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বিশ্বের সব দেশও একই অবস্থান নিয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়েইনের বক্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনদিনের সফরশেষে দেশে ফিরে যাওয়ার আগে ২৫ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটেনের এই প্রতিমন্ত্রী বলে গেছেন, বাংলাদেশে চলমান বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিচারবহির্ভূত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে দোষীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর এবং শাস্তি দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। কারণ ব্যাখ্যাকালে বলেছেন, ব্রিটেন বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় আর সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সুরক্ষা করা উচিত। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ধরনের সব অপরাধের তদন্ত ও বিচার করার দায়িত্ব যে সরকারের সে কথাটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ডেসমন্ড সোয়েইন।

এখানে উল্লেখ করা দরকার, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালীর পাশাপাশি ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। ইইউ-এর পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময়ে গুম-খুন, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সঙ্কটসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। যেমন মাত্র কিছুদিন আগে রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ-এর ১৩ জন রাষ্ট্রদূত গুম-খুন, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক সঙ্কট ও সহিংসতা নিয়ে অভিন্ন ভাষায় কথা বলেছেন, সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন। প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই যে দুর্নীতি এবং গুম-খুনের খবর চোখে পড়ে সে কথা তারা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গেই বলেছেন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কট যে ক্রমাগত ঘনীভূত হচ্ছে সে কথাটা বলতেও ভোলেননি তারা। তাদের স্পষ্ট অভিমত ছিল, সব মিলিয়েই বিদেশে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইমেজ দারুণভাবে তিগ্রস্ত হচ্ছে। নেতিবাচক এই ইমেজের কারণে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না। যারা বিনিয়োগ করেছেন তারাও তাদের অর্থ অন্য কোনো দেশে সরিয়ে নিতে চাচ্ছেন। অনেকে নিচ্ছেনও। রাষ্ট্রদূতরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন বিশেষ করে সর্বব্যাপী দুর্নীতির বিরুদ্ধে।  বলেছিলেন, এমন কোনো ত্রে নেই যেখানে দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে না গেছে। দুর্নীতির প্রশ্নে ইইউ ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাবে বলেও ঘোষণা করেছিলেন রাষ্ট্রদূতরা। অর্থাৎ কোনোভাবেই দুর্নীতিকে সহ্য করবে না ইউরোপের দেশগুলো। রাষ্ট্রদূতরা গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছিলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য বিক্রি কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত রফতানির মতো অনেক সুবিধা হারিয়ে ফেলবে। রাজনৈতিক সঙ্কট প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতরা বলেছিলেন, সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার এবং আগামীতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসতে হবে।

ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি ইইউ রাষ্ট্রদূতদের বক্তব্য উল্লেখ করার কারণ সম্ভবত ব্যাখ্যা করার দরকার পড়ে না। সাধারণ মানুষ না জানলেও সত্য হলো, ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান অংশীদার। ঋণ ও সাহায্যেরও বিরাট একটি অংশ আসে এই দেশগুলো থেকেই। সুতরাং তাদের কথা নিয়ে হেলাফেলা করা যায় না। লণীয় যে, রাষ্ট্রদূতদের বক্তব্যে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে দুর্নীতি এবং গুম-খুন তথা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ সহিংসতার দিকগুলো। বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে ইইউ-এর যেহেতু ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং ইইউ সহযোগিতা বন্ধ করলে দেশকে যেহেতু সর্বাত্মক বিপদে পড়তে হবে সেহেতু রাষ্ট্রদূতদের কথাগুলোকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত ছিল সরকারের। কোনো প্রসঙ্গেই রাষ্ট্রদূতরা কিন্তু বাড়িয়ে বলেননি। দুর্নীতি আগেও হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি ছড়িয়ে গেছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টারা পর্যন্ত। অন্য কারো কারো নামও এসেছে, যাদের মধ্যে দু-চারজন আবার বিদেশে বসবাস করেন। পদ্মাসেতুর মতো অনেক েেত্রই দুর্নীতির খেসারত দিতে হয়েছে সমগ্র জাতিকে। গার্মেন্টের বিপুল অর্ডার স্থগিত ও বাতিল হয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো সর্বশেষ উপলক্ষেও বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেয়নি। অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে বিশেষ করে জনশক্তি রফতানিও কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে প্রতিদিন চাকরি হারাচ্ছে হাজার হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথও সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। বলা বাহুল্য, বিদেশী বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনেও রয়েছে একই দুর্নীতি। উদ্বেগের কারণ হলো, আগে শুধু সমালোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ইইউ-এর রাষ্ট্রদূতরা প্রথমবারের মতো দুর্নীতির ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানোর ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন। এর অর্থ এবং অনিবার্য পরিণতি সম্পর্কে নিশ্চয়ই বিস্তারিত বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন পড়ে না। বিদেশী বিনিয়োগই যথেষ্ট নয়, বিদেশী সাহায্যও বাংলাদেশের দরকার। কারণ, বিনিয়োগ করলেও বিদেশীরা লাভের অর্থ নিজেদের দেশে নিয়ে যায়। অন্যদিকে শিল্পকারখানার বিকাশ ঘটেনি বলে দেশের ভেতরে কর্মসংস্থান যেমন হতে পারে না তেমনি বাধাগ্রস্ত হয় অবকাঠামোসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। কারণ সরকারের হাতে টাকা থাকে না। বেতন-ভাতা দিতেই ট্যাক্সের অর্থ শেষ হয়ে যায়। এজন্যই বিদেশী সাহায্য ছাড়া বিশেষ করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানো সম্ভব নয়। কিন্তু এখানেও দুর্নীতিই প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছে। সাহায্যদাতা দেশগুলোকে তাদের জনগণের কাছে প্রতিটি টাকার জন্য পাই পাই করে কৈফিয়ত দিতে হয়। সে জনগণ যখন দুর্নীতির পাশাপাশি গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের খবর জানতে পারে তখন আর কোনো দেশের সরকারের পইে বাংলাদেশকে সাহায্য দেয়া সম্ভব হয় না। এটাই কঠিন সত্য। এজন্যই ইইউ-এর রাষ্ট্রদূতরা দুর্নীতির মূলোচ্ছেদ করার তাগিদ দিয়েছেন। একই কঠোরতার সঙ্গে বলেছেন গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধেও। রাজনীতির ব্যাপারে তারা অবশ্য সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। রাজনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার এবং নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব দেয়ার পরিবর্তে রাষ্ট্রদূতরা সরকার ও বিরোধী দলকে সংলাপে বসার তাগিদ দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তারা কিন্তু বলতে বাকি রাখেননি যে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো প্রধান বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে আয়োজিত নতুন কোনো একতরফা নির্বাচন ইইউ-এর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা কিন্তু এখনো নিজেদের গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথেই এগিয়ে চলেছেন। তারা বিশেষ করে বিদেশীদের প্রতিক্রিয়া ও মনোভাবের মতো বিষয়গুলোকে নিয়ে চিন্তা পর্যন্ত করছেন না। ব্রিটিশ মন্ত্রীর কথাই ধরা যাক। মূলকথায় তিনি বলেছেন, কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়া যায় না এবং এ ধরনের প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে বিচার করা জরুরি। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, ডেসমন্ড সোয়েইন সরকারকে সরাসরি দায়ী না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ ছাড়া এভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে না। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ব্রিটিশ মন্ত্রী সামান্যও বাড়িয়ে বলেননি। কারণ বর্তমান সরকারের আমলে গুম ও গ্রেফতারের পাশাপাশি দেশের কোথাও না কোথাও হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা। অধিকাংশ েেত্র এসব গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর নাম জড়িয়ে পড়েছে। কোনো কোনো ঘটনার ক্ষেত্রে এ সম্পর্কিত তথ্য-প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অভিযোগ করা হচ্ছে নিয়মিতভাবে। দল দুটি বলেছে, সরকারের বাহিনীগুলো তালিকা করে এবং বেছে বেছে বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের হত্যা করছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও একই অভিযোগ করেছেন। গত বছরের ৫ জানুয়ারি আয়োজিত ভোটারবিহীন নির্বাচনের আগে-পরে বিভিন্ন এলাকায় মানুষের বাড়িঘরে ঢুকে হামলা ও ভয়াবহ নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে বেগম জিয়া একথা পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে à¦¨à¦¾Ñ à¦à¦°à¦¾ বাংলাদেশের বাহিনী নাকি অন্য কোনো রাষ্ট্রের বাহিনী। কারণ, বাংলাদেশের কোনো বাহিনী নিজ দেশের মানুষের ওপর এত নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাতে পারে না। দেশের সার্বভৌমত্ব অটুট তথা অক্ষুণœ রয়েছে কি না সে প্রশ্নও তুলেছিলেন বেগম জিয়া। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বন্ধ হচ্ছে না বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। ফলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতে হচ্ছে। সে কথাটাই বলে গেছেন ব্রিটিশ মন্ত্রী ডেভিড সোয়েইন।

আসলেও সরকারের জন্য দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ, প্রতিটি ঘটনায় প্রমাণিত হচ্ছে, সরকার র‌্যাব ও পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হত্যার কাজে ব্যবহার করছে। অথচ গণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্রে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলতে পারে না। বলা দরকার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনসহ ইউরোপের দেশগুলো মোটেও ভালো চোখে দেখেনি। দেখছেও না। সরকারও এ পর্যন্ত কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। ওদিকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আয়োজিত এক দলীয় নির্বাচনকেও এক ভারত ছাড়া কোনো রাষ্ট্র মেনে নেয়নি। ফলে বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখনো বৈধ ও নির্বাচিত সরকার হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। পাশাপাশি রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর সরকারের চালানো দমন-নির্যাতন এবং গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। সে কারণে সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই অঘোষিতভাবে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে সর্বাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। সে চিন্তা অবশ্য ক্ষমতাসীনদের মধ্যে থাকার কথা নয়! সেজন্যই সরকার এখনো ফ্যাসিস্ট পন্থাতেই এগিয়ে চলেছে। অথচ যে কোনো বিচারে সরকারের উচিত গুম ও গুপ্তহত্যার মতো ভয়ঙ্কর অপরাধ বন্ধের পদপে নেয়া। বিষয়টি জরুরি এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালীসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সব দেশই বিভিন্ন সময়ে গুম-খুনের কঠোর বিরোধিতা করেছে। এখনো করছে। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুম এবং গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডকে ইউরোপীয় দেশগুলো তো বাংলাদেশ বিরোধী একটি প্রধান ইস্যুই বানিয়ে ছেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা স্থগিত হওয়ার পেছনেও রয়েছে একই কারণ। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা একাধিক উপলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ইলিয়াস আলীর গুম এবং আমিনুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য বিক্রি কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত রফতানির মতো অনেক সুবিধা হারিয়ে ফেলবে। বলা দরকার, বিদেশীদের হুমকির কারণে শুধু নয়, দেশের ভেতরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্যও গুম ও গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে সরকারের উচিত কঠোর অবস্থান নেয়া। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা। মতাসীনদের বুঝতে হবে, গুম ও গুপ্তহত্যার পেছনে তাদের ইন্ধন ও ভূমিকার বিষয়টি কারো কাছেই আর গোপন নেই। একটা সময় আসতে পারে যখন মানুষের জীবনকে ছেলেখেলার বিষয় বানানোর মূল্য গুণতে হবে কড়ায়-গণ্ডায়। সুতরাং সতর্ক হওয়া উচিত এখনই।

বলাবাহুল্য, এত কথা শোনার সময় ও মনমনসিকতাই নেই ক্ষমতাসীনদের। এজন্যই বাংলাদেশের জনগণকে এবার তারা আন্তর্জাতিক গুম দিবস সম্পর্কে জানতে পর্যন্ত দেননি। বলা যায়, গুম দিবসকেও গুম করে ফেলেছেন তারা!

এ পাতার অন্যান্য খবর

এ বিভাগ বা পাতায় আর কোন সংবাদ, কবিতা বা অন্যকোন ধরণের লেখা পাওয়া যায়নি।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।