সংবাদ শিরোনামঃ

জনসমর্থন বাড়ছে জামায়াতের ** প্রধান বিচারপতির অভিসংশনের আবেদন : শিক্ষিত সমাজ স্তম্ভিত ** অধ্যাপক মুজিব ও গোলাম পরওয়ারকে কারাগারে প্রেরণ ** শরণার্থী ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ ইউরোপ ** ভুল পথে সরকার অতিষ্ঠ জনগণ ** অশান্ত ইয়েমেন ** ভারত থেকে গরু আসছে ** আমরা সবাই এই দেশের শরণার্থী ** কুরবানির চিরাচরিত ঐতিহ্য বজায় রাখতে হবে ** একদলীয় শাসনে হাঁসফাঁস ** নবমূল্যায়নে নজরুল ** কুষ্টিয়ায় পর্যটন আকর্ষণে সরকারি উদ্যোগ নেই ** মঙ্গাপীড়িত রংপুর বিভাগে ঈদের চাঁদ হাসবে কি ** বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি বন্ধ **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩ আশ্বিন ১৪২২, ৩ জিলহজ ১৪৩৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আবদুল হালীম খাঁ
বাংলা সাহিত্য ও পত্রপত্রিকার ক্রমবিকাশের ধারায় মুসলমানদের অবদান নিতান্ত নগণ্য নহে। ইংরেজগণ এ দেশের শাসন ক্ষমতা দখল করার পর তাদের একমাত্র ও পরমশত্রু মুসলমানদের নানা প্রকারে দমন ও নির্যাতন করতে শুরু করে। দ্বিতীয়তঃ বৈরী মনোভাবের কারণে মুসলমানরাও ইংরেজদের সঙ্গে অসহযোগিতা করতে থাকে। ফলে মুসলমানরা দিন দিনই শিক্ষাদীক্ষায়, চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়তে থাকে। মুসলমানদের একমাত্র শিক্ষার মাধ্যম ফারসি ভাষা ও রাজকীয় মর্যাদা হারানোর পরে তারা ইংরেজি ও বাংলা ভাষার প্রতিও ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে পড়ে। মুসলমানদের এই দুঃসহ অবনতির যুগে যিনি বাংলার মুসলমানদের বাংলাভাষা সাহিত্য ও পত্রপত্রিকার অঙ্গনে আনলেন তিনি হলেন মীর মোশাররফ হোসেন। তিনি শুধু সাহিত্যের সাধনা এবং বাংলা পুস্তক রচনা করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি মুসলিম সমাজকে সর্বপ্রথম সাংবাদিকতার সাথেও পরিচিত করান। মুসলিম বাংলার পত্রপত্রিকার প্রথম সম্পাদক হলেন মীর মোশাররফ হোসেন। তাঁর সম্পাদনায় ১৮৭৪ সালে ‘মাসিক আজিজন নাহার’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

কুষ্টিয়া লাহিনী পাড়া থেকে ১৮৯০ সালে ‘পাক্ষিক হিতকরী’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন মীর মোশাররফ হোসেন। তাঁর সম্বন্ধে রাজশাহী ‘শিক্ষা পরিষদ’ মারফত জানা à¦¯à¦¾à§ŸÑ ‘একজন সুপ্রসিদ্ধ দেশ হিতৈষী সাধারণের নিকট অদৃশ্য থেকে হিতকরী পরিচালনা করতেন।’ একথা থেকে তেমন স্পষ্ট বুঝতে পারা না গেলেও শ্রী ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের কথায় এর সমাধান মেলে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আমাদের মনে হয় পাত্রিকাখানি মীর মোশাররফ অন্তরালে থেকে এর পরিচালনায় সহায়তা করতেন।’ দ্বিতীয় বর্ষে হিতকরী টাঙ্গাইলে স্থানান্তরিত হয়। মনে করা হয় মীর সাহেবের টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে বদলী হওয়ার কারণে পত্রিকাও স্থানান্তর হয়েছিল্ ১৮৮৪ সালে ‘মুসলমান’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হওয়ার বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পত্রিকাটি শেষ পর্যন্ত বের হয়েছিল কি না তার কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। কেউ আবার লিখেছেন, মোহাম্মদ রেয়াজুদ্দীন আহমদ সম্পাদিত ‘মুসলমান’ (সাপ্তাহিক) পত্রিকাটি ১৮৮৪ সালে প্রকাশিত হয়।

১৮৮০ সালে মৌলভী মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন টাঙ্গাইলের করটিয়ার মাহমুদীয়া ছাপাখানা থেকে মাসিক আখবারে এসলামিয়া পত্রিকা প্রকাশ করেন। করটিয়ার বিখ্যাত জমিদার হাফেজ মাহমুদ আলী খান পন্নীর আর্থিক সাহায্যে ও উৎসাহে পত্রিকাটি সাত বৎসরকাল প্রকাশিত হয়। আখবারে এসলামিয়া মূলত সমাজ ও ধর্মীয় বিষয়ে মুসলমানদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ের দিকনির্দেশনা প্রদান করা হতো। তৎকালে আখবারে এসলামিয়া মুসলিম সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৮৮৬ সালে টাঙ্গাইল থেকে আবদুল হামিদ খান ইউসুফ জাইয়ের সম্পাদনায় ‘পাক্ষিক আহমদী’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তিন বছর প্রকাশিত হওয়ার পর স্থানীয় নবরতœ পত্রিকার সঙ্গে মিলিত হয়ে ‘আহমদ ও নবরতœ’ নামে প্রকাশিত হয়। কিছুকাল অনিয়মিত প্রকাশিত হওয়ার পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।

১৮৮৭ সালে যশোরের মাগুরার গোলাম কাদেরের সম্পাদনায় ‘সম্মিলনী’ প্রকাশিত হয়।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে যখন হিন্দু গোড়া সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদকদের বিরূপ সমালোচনার মুখে পড়ে ইসলাম ধর্ম ও মুসলমান জাতি নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছিল। তখন কয়েকজন মনীষী মিলে ‘সুধাকরদল’ গঠন করেন। এদের একজন মুন্সী মোহাম্মদ রেয়াজুদ্দীনের পরিচালনায় এবং শেখ আবদুর রহীমের সম্পাদনায় ১৮৮৯ সালের  অক্টোবর মাসে ‘সাপ্তাহিক সুধাকর’ পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। এ পত্রিকা সম্বন্ধে মুহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, সুধাকর পত্রিকা নানা বিপর্যয়ের ভেতর দিয়ে বেশ কিছুদিন চলছিল।’ এ পত্রিকার মাধ্যমেই বাংলা ভাষায় বাঙালি মুসলমানরা তাদের ধর্মের মহিমা, তত্ত্ব, জাতীয় ঐতিহ্য ও গৌরব সম্বন্ধে কিছুটা সচেতন হয়েছিল। সেকালে বংকিস প্রমুখ মুসলিম বিরোধী লেখক মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেসব লেখা লিখতেন সুধাকরে তার প্রতিবাদ ও দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হতো।

১৮৯১ সালে মৌলভী জহিরুদ্দীনের সম্পাদনায় ‘মাসিক ভিষক দপন’ নামে চিকিৎসা তত্ত্ব বিষয়ক একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১৮৯১ সালে প্রকাশিত আরেকটি মুসলিম সংবাদপত্রের নাম হলো ‘ইসলাম প্রচারক’। এ মাসিক পত্রিকাটি মোহাম্মদ রেয়াজুদ্দীন আহমদ এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। এটি ধর্মনীতি, সমাজনীতি, ইতিহাস ও সাহিত্য বিষয়ে গুরুত্ব দেয়। পত্রিকাটি প্রথম দু’বছর চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয়বারে ১৮৯৯ সাল থেকে ১৯০৬ সালে পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। ইসলাম প্রচারক ছিল রক্ষণশীল ঐতিহ্যমুখী মুসলিম জাতীয়তাবাদের পত্রিকা।

১৮৯২ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ আবদুর রহীমের সম্পাদনায় মাসিক মিহির পত্রিকা আত্মপ্রকাশ করে।  পরে ১৮৯৫ সালে সুধাকর পত্রিকার সাথে মিলিত হয়ে ‘মিহির ও সুধাকর’ নামে বেশ সুনামের অধিকারী হয়। মুসলমানদের জাতীয় জীবনের সমস্যাগুলো ফুটিয়ে তোলা এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল।

১৮৯৭ সালে জানুয়ারি মাসে বিবিধ বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘হাফেজ’ প্রকাশিত হয়। এর সম্পাদক ছিলেন শেখ আবদুর রহীম। এ পত্রিকার প্রথম সংখ্যার আভাসে সম্পাদকের মন্তব্য থেকে পত্রিকার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনেকাংশ অবগত হওয়া যায়। তিনি à¦²à¦¿à¦–à§‡à¦¨Ñ ‘বঙ্গীয় ভ্রাতৃগণ ঘোর আলস্য শয্যাশায়িত হইয়া যেরূপে ভোগবিলাসে জীবন অতিবাহিত করিতেছেন তাহাতে অচিরে তাহারা যে একেবারে ধ্বংস সাগরে নিমজ্জিত হইবেন তদ্বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। ‘হাফেজ’ সেই ভোগবিলাস সুখাভিলাসী নিদ্রিত বঙ্গীয় মুসলমানদিগকে তাহাদের পূর্ব পুরুষ দিকের অতীত গৌরব ও ধর্মভিত্তিক কাহিনী এবং পবিত্র ধর্ম পবিত্র রীতিনীতি শোনাইয়া জাগরিত করিবার জন্যই তোমারই (আল্লাহর) আশ্রয়ে ও অনুগ্রহে আজ বঙ্গের চতুর্দিকে ভ্রমণ করিতে বহির্গত হইল।’

১৮৯৮ সালে এস কে এম মুহাম্মদ রওশন আলীর সম্পাদনায় হিন্দু মুসলমানের মিলন কামনায় কুমারখালী থেকে ‘মাসিক কোহিনূর’ প্রকাশিত হয়। এর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলা হয়েছে, ‘হিন্দু মুসলমানের সম্প্রতি, জাতীয় উন্নতি মাতৃভাষার সেবাকল্পে এবং কলিকাতার অনাথ আশ্রমের সাহায্যার্থে কোহিনূর প্রচারে ব্রতী হইয়াছি।’ ‘সম্মিলনী’ এবং আহমদীর পার কোহিনূরই এ ধারার তৃতীয় উল্লেখযোগ্য মিলনধর্মী পত্রিকা।

১৮৯৯ সালে তসলিম উদ্দীন আহমদ এবং একরামউদ্দীন আহমদ সম্পাদিত ‘মাসিক ইসলাম’ অল্পদিনের জন্য প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষায় ইসলাম প্রচার ও বাঙালি মুসলমানদের সমস্ত কুসংস্কার এবং পরানুকরণ থেকে মুক্ত করার জন্য সমাজে সুধাকরদলের যে অবদান ‘মোহামেডান লিটারেরী সোসাইটি’ আঞ্জুমানে হেফজতে এসলাম এবং ১৮৯৫ সালে প্রকাশিত ‘নূর আল ইমাম’ এরও সেই অবদান। নূর আল ইমাম পত্রিকা মীর্যা মোহাম্মদ ইয়াকুব আলীর সম্পাদনায় ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয়। সমালোচক বলেন, মুসলমানদের অন্ধকার থেকে আলোকের পথে নিয়ে আনাই ছিল নূর আল ইমাম পত্রিকার প্রধান উদ্দেশ্য। ইমাম গাজ্জালীর কিমিয়ায়ে সাআদাত এর অনুবাদ ‘সৌভাগ্য স্পর্শমনি’  এ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯০০ সালে ‘মাসিক ইসলাম’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদক মধুমিয়া চদ্মনামে প্রকাশিত হয়। মধুমিয়ার পূর্ণ নাম ময়েজ উদ্দীন আহমদ। তাঁর দ্বিতীয় পত্রিকার নাম ছিল প্রচারক। ১৯০০ সালে শান্তিপুরের সুসাহিত্যিক ও কবি মোজাম্মেল হকের সম্পাদনায় বাংলা ১৩০৭ সালের বৈশাখ মাস থেকে ‘লহরী’ নামক মাসিক পত্রিকা শান্তিপুর থেকে প্রকাশিত হয়। এর প্রধান লেখক ছিলেন ডি এল রায়। ‘লহরী’ সম্বন্ধে রক্ষণশীল সম্প্রদায়ের মুখপত্র ‘ইসলাম প্রচারক’ à¦¬à¦²à§‡à¦¨Ñ ‘লহরীর কবিতাগুলো বড়ই সুমিষ্ট বড়ই ভাবময়।

দুঃখের বিষয় মুসলমানদের কবিতা ইহাতে অল্পই দৃষ্ট হইতেছে।’ ১৯০৩ সালের এপ্রিল মাস, বাংলা ১৩১০ সালের বৈশাখ মাসে সৈয়দ এমদাদ আলীর সম্পাদনায় কলকাতার ১৪৩ কড়েয়া রোড থেকে ‘নবনূর’ প্রকাশিত হয়। এর পরিচালক ছিলেন মোহাম্মদ আসাদ আলী। এ পত্রিকা পৌনে চার বছর জীবিত ছিল। রাজশাহীর বরেন্দ্র মিউজিয়ামে এর কিছু সংখ্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ পত্রিকায় মুসলমানদের হিন্দুদের বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের ‘দুরাশা’ ও নগেন্দ্রনাথের ‘মিলন’ গল্পের প্রতিবাদে হিন্দু নায়িকা এবং মুসলমান নায়কের প্রেম কাহিনী বর্ণনার মধ্যদিয়ে হিন্দু লেখকদের নীতি জ্ঞানের বিরোধিতা করেন।

সম্ভবত ‘১৯০৫ সালে শেখ আবদুর রহীমের সম্পাদনায়ক ‘মোসলেম প্রতিভা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১৯০৬ সালে বাংলা ১৩২২ সালে রংপুরের মহীপুরের জমিদার খান বাহাদুর আবদুল মজিদ ও রাজশাহীর মির্জা মোহাম্মদ ইউসুফ আলীর অর্থানুকূল্যে মোহাম্মদ রেয়াজুদ্দীন আহমদের সম্পাদনায় ‘সাপ্তাহিক সোলতান’ প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি কিছুদিন চলার পর বন্ধ হয়ে যায়।

১৯০৮ সালে বাংলা ১৩১৫ সালে রংপুরের কাকিনা থেকে শেখ ফজলুল করীমের সম্পাদনায় ‘বাসনা’ প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকাটিও হিন্দু মুসলমানের মিলনকামী ছিল। উপর্যুপরি বাংলাভাষা সম্বন্ধে বেশ সারগর্ভ প্রবন্ধাদি বের হতো। ১৩১৭ সাল পর্যন্ত পত্রিকাটি বেঁচেছিল। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করীমের সম্পাদনায় জমজম, ফুল্লোলিনী, রতœà¦ªà§à¦°à¦¦à§€à¦ª নামে পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলোর সঠিক সন তারিখ জানা যায় না।

‘ইসলাম দর্শন’ নামে আরো একখানি পত্রিকা শেখ আবদুর রহীম সম্পাদনা করেন।

১৯১০ সালে মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর সম্পাদনায় ‘আল ইসলাম’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১৯২৪ সালে এটি মাসিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হলে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এর যুগ্ম সম্পাদকের পদে নিযুক্ত হন। আল ইসলাম পত্রিকা সম্পূর্ণ মুসলমানি গণ্ডিতে আবদ্ধ জাতীয় সংস্কারমূলক পত্রিকা। এর প্রথম সংখ্যায় ইসমাইল হোসেন শিরাজী মুসলমানদের এবং বঙ্গ সাহিত্য আমাদিগকে জড়তাপূর্ণ জাতীয় জীবনে সঞ্জিবনী শক্তি সঞ্চারের পক্ষে অদৃশ্য অনুকূল নহে। জাতীয় ভাষা আরবি এবং তৎসহ ফারসি ও উর্দু হইতে এক্ষণে প্রচুর পরিমাণে জাতীয় সাহিত্য ইতিহাস, জীবনী, ধর্মশাস্ত্র এবং দর্শনশাস্ত্রাদির অনুবাদ হওয়া একান্ত আবশ্যক। ইতিহাস মুসলমান জাতির প্রাণস্বরূপ। জাতীয় ইতিহাস এবং মহাপুরুষদের জীবনী ব্যতীত মুসলমানদের মৃতদেহে শক্তি সঞ্চারের অন্য কোনো উপায় নাই। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সেবকগণ সাবধান এবং সতর্ক হও। অনুকরণ করিতে যাইয়া একেবারে দিশাহারা হইয়া পড়িও না। ইসলামের পবিত্রতা এবং নীতির প্রাচীরের বাইরে যাইয়া শ্রমেও সাহিত্যসেবা করিও না।’ ১৯২২ সাল পর্যন্ত এ পত্রিকা চালু ছিল।

১৯২২ সালে মুসলিম সাহিত্য সমাজের মুখপত্র ‘শিখা’ প্রকাশিত হয়। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে যাবার পর মুসলমানদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ এবং আত্মগৌরববোধ জাগিয়ে তোলার সাথে সাথে খেলাফত আন্দোলনের মূলবাণী হিন্দু মুসলমানের ঐক্যস্থাপন করার প্রচেষ্টায় এ সমাজ গঠিত হয়। এ সমাজের পুরোধা ছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন, ডক্টর কাজী মোতাহের হোসেন এবং কাজী আবদুল ওদুুদ। এ প্রচেষ্টায়ই শিখা পত্রিকাটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হতো। অতীতমুখী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুসলমানদের মুক্ত করে জীবনকে বাস্তবমুখী করে প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে যুক্তিবাদ মুক্তবুদ্ধি এবং মানবতাবোধ জাগিয়ে তোলাই এ পত্রিকার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। ১৯১৩ সালে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সোলতানের সম্পাদক ছিলেন মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী। এর সহ-সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী। এ পত্রিকার উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভাষাকে মুসলমান সমাজের মাতৃভাষা এবং সাহিত্যের ভাষারূপে প্রতিষ্ঠিত করা।

১৯১৮ সালে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’ নামে একটি জাতীয় ও ঐতিহাসিক মুসলিম ভাবধারা সম্পৃক্ত পত্রিকা মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং কবি মোজাম্মেল হকের যুগ্ম সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। জাতীয়তাবাদী পত্রিকা হলেও এতে সাহিত্য ও মানবীয়তার অনুশীলন করা হতো। এতে একরামুদ্দীনের ‘চাঁদ মিয়ার খাতা’ নামক রম্য রচনা এবং “অনাধিকার প্রবেশ’ নামে একটি ব্যঙ্গ নাটকও প্রকাশিত হয়েছিল। কাজী নজরুল ইসলাম এই পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ করেন।

১৯১৯ সালে মোহাম্মদ নাসির উদ্দীনের সম্পাদনায় মাসিক সওগাত প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকা দীর্ঘকাল ঢাকা থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ১৯২০ সালে (বৈশাখ ১৩২৭ অগ্রহায়ণ-১৩২৮) মোজাম্মেল হকের সম্পাদনায় ‘মোসলেম ভারত’ মাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকায় হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে লেখা গৃহীত হলেও মুসলমানদেরই অগ্রাধিকার দেয়া হতো এবং প্রতিভাশালী ব্যক্তিদের রচনা মতে সমাদরে গৃহীত হতো। এ পত্রিকায় শেখ ফজলুল করীম, লুৎফর রহমান এবং কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতো।

এ সময়ের আরো একটি পত্রিকা à¦¹à¦²à§‹Ñ à¦¹à¦¾à¦¬à¦²à§à¦² যতীন। এটির সম্পাদক ছিলেন মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরী। নারী জাগরণের মুখপত্র ‘নারীশক্তি’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন ডাক্তার লুৎফর রহমান।

১৯২৬ সালে ‘সোলতান’ নবরূপে প্রকাশিত হয় মাওলানা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর সম্পাদনায়। তিনি ‘দৈনিক আমীর’ নামের আরেকটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।

১৯২৯ সালে মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর সম্পাদনায় মাসিক মোহাম্মদী এবং দৈনিক আজাদ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এ দু’টি পত্রিকা বহুদিন পর্যন্ত যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে প্রকাশিত হয়।

রেয়াজুদ্দীন আহমদ শেষ জীবনে একে ফজলুল হকের কর্তৃত্বাধীনে ‘নবযুগ’ এবং জনৈক ব্যারিস্টারের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘বায়তবন্ধু’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন।

উল্লিখিত পত্রিকাগুলো ছাড়া আরো অনেক পত্রিকা মুসলমানদের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। তার মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত লাঙ্গল (১৯২৪), মুজিবর রহমান সম্পাদিত খাদেম (১৯২৬), আবুল কাশেম সম্পাদিত মুসলিম বাণী (১৯২৬), মুজাফফর আহমদ সম্পাদিত গণবাণী (১৯২৬), নূরুল হোসেন কাশেমপুরী সম্পাদিত দেশের কথা (১৯২৪), মোহাম্মদ সেকান্দর আলী সম্পাদিত নাজাত (১৯২৪), রেজাউল করীম সম্পাদিত সৌরভ (১৯২৫), এম এস উদ্দীন সম্পাদিত নওজোয়ান (১৯১৮)

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।