সংবাদ শিরোনামঃ

‘কেষ্টা বেটাই চোর’ ** ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রসার ছাড়া অবক্ষয় রোধ সম্ভব নয় ** হুমকির মুখে আবাসন শিল্প ** ৫ শ’ প্রভাবশালী মুসলিমের তালিকায় হাসিনা, নিজামী, সাঈদী ও ইউনূস ** রিভিউ পিটিশন করবেন মুজাহিদ : প্রস্তুতির নির্দেশ ** সিরিয়া সঙ্কটের আশু সমাধান হচ্ছে কি? ** দলীয় সন্ত্রাসে বেসামাল সরকার ** প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মনে হচ্ছে দেশে তদন্তকারী সংস্থা ও কোনো তদন্তের প্রয়োজন নেই : বিএনপি ** খুন, গুম ও গণধর্ষণ সামাজিক বিপর্যয়ে দেশ ** দেশে রাজনীতির পরিবর্তে চলছে রাজচালাকি ** বৃহত্তর স্বার্থেই দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন ** অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি : টেকসই গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত ** মানবদেহে বায়ু ও রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থার আবিষ্কারক বিজ্ঞানী ইবনুন নাফিস ** আদর্শ স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য ** শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক সরে গিয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে ** রংপুরে জাপানি নাগরিককে গুলি করে হত্যা ** মহাজোট সরকারের এমপির গুলিতে আহত শিশু সৌরভ **

ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ আশ্বিন ১৪২২, ২৪ জিলহজ ১৪৩৬, ৯ অক্টোবর ২০১৫

॥ আবু সুলাইমান॥
জাতিরাষ্ট্রভিত্তিক পশ্চিমা ধাঁচের আধুনিক দেশভিত্তিক পরিচয় বর্তমানে মানবজাতির জন্য অভিশাপ হিসেবে  দেখা দিয়েছে। পৃথিবী নামক এই ছোট্ট গ্রহটির বুক ছিদ্র করে বর্তমানে (জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের ভিত্তিতে) সর্বশেষ স্বাধীনতা লাভকারী দণি সুদানসহ মোট ১৯৩টি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছে। বুর্জোয়া পুঁজিবাদী অর্থনীতির কল্যাণে এই ১৯৩টি দেশকে মূলত উন্নত, উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়ে থাকে। এই সব দেশ পরিচালনার মূলনীতিতে নানান পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ দেশই আজ গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অনুসারী এবং গণতন্ত্রকে আজ উন্নয়নের পূর্বশর্ত বলে ধরে নেয়া হয়। এক মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বের হর্তাকর্তা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আজ গোটা বিশ্বের আনাচে-কানাচে এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই অব্যাহত রয়েছে। যদিও এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই সব দেশে একই রকম নয় এবং দেশে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ভিন্নমুখী লড়াই বিশ্বব্যাপী নানান সমালোচনার শিকার। রাশিয়া, চীন, কিউবা কিংবা অন্যান্য মুষ্টিমেয় বাম রাজনীতিক দেশের কথা বাদ দিলে, বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহে আমেরিকার ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতি কোনোমতেই সমর্থনযোগ্য নয়। তদুপরি যে সব দেশে  প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে  গণতন্ত্র চলমান রয়েছে সেই সব দেশে গণতন্ত্র আজ ‘মন্দের ভালো’। ব্যক্তির নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মান বজায় থাকলে গণতন্ত্র বিশ্বের যে কোনো দেশে একটি পজিটিভ ভূমিকা রাখতে পারে। 

একদলীয় শাসন, বাদশাহ, রাজা বা রানীর শাসন কিংবা স্বৈরাচারী শাসনের পরিবর্তে গণতন্ত্র তাই আজ দেশে দেশে শাসিত, নিপীড়িত, দরিদ্র মানুষের আশা-আকাক্সায় পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রকে ঘিরে দেশে জনমানুষের এই যে প্রত্যাশা তার অন্যতম কারণ গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হিসেবে এখানে নানা মতাদর্শ ও মূলনীতিকে ধারণকারী নানামাত্রিক ভিন্ন ভিন্ন রাজনীতিক দলের সহাবস্থান। একই দেশে একই বিষয়ে ভিন্নমত ও ধারণা সংবলিত এই সকল রাজনৈতিক দলের অবস্থান সংশ্লিষ্ট দেশের জনগণের জন্য আপন ধ্যান ধারণা ও মতামত প্রকাশের এক সুবর্ণ সুযোগ হাজির করে যা অন্যান্য মতবাদের তুলনায় গণতন্ত্র কে এনে দেয় এক নিরবছিন্ন জনপ্রিয়তা। কিন্তু গণতন্ত্রের এই জনপ্রিয়তা কিংবা এই অপ্রতিদ্ব›à¦¨à§à¦¦à§à¦¬à§€ অবস্থান শর্তহীন নয়। গণতন্ত্রের বিশ্বজয়ী ভূমিকার অন্যতম কারণ হচ্ছে গণতান্ত্রিক দেশসমূহের ইনকুসিভ রাজনৈতিক চরিত্র। জাতীয় রাজনীতিতে এই অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সহাবস্থান বজায় না থাকলে কোনোভাবেই সে দেশ ও তার জনগণ গণতন্ত্রের আসল উপকার ভোগ করতে পারেনা। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সকল দলের অন্তর্ভুক্তিমূলক অবস্থান নিশ্চিত করা সেজন্য জরুরি।

বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র দেশ হলেও ‘গণতান্ত্রিক রাজনীতি’ এদেশের আজন্ম বৈশিষ্ট্য। বলা চলে, গণতান্ত্রিক চেতনা সমুন্নত করার আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। বিগত চার দশকের এই পথচলায় এদশের গণতন্ত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানান স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে বিভিন্ন সময় হোঁচট খেলেও তা একবারে থেমে থাকেনি। এদেশের জনমানুষের জনআকাক্সার কাছে স্বার্থবাদী রাজণীতিক, কূটনীতিকদের এই হীন প্রচেষ্টা বারবার পরাজিত হয়েছে। ফলে গণতন্ত্র তার হারানো অবস্থান ফিরে পেয়েছে। 

গণতন্ত্র বাংলাদেশের মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য হলেও এদশের রাজনীতিতে গণতন্ত্র কখনোই তার প্রকৃত ইনকুসিভনেস অর্জন করতে পারেনি। ফলে এদেশের গণতন্ত্র থেকে কাক্সিত লাভালাভ অর্জিত হয়নি, এদেশের মাটি ও মানুষের। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এই ব্যর্থতার দায়ভার এদেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণকারী সকল দলের। এই দায়ভার যেমন সরকার পরিচালনার অংশীদার সরকারি দলের তেমনি সরকারের বাইরে অবস্থানকারী সকল বিরোধী দলেরও। সরকারি দল সরকারে থেকে যেমন ব্যর্থ হয়েছে বাইরে অবস্থানকারী অন্যান্য দলের অবদান গ্রহণ করতে তেমনি বাইরে অবস্থানকারী বিরোধী দলগুলো সমানভাবে ব্যর্থ হয়েছে বাইরে অবস্থান করে সরকার পরিচালনায় তাদের অবদান রাখতে। ‘সরকারি দল’ কিংবা ‘বিরোধী দল’ যে নামেই আমরা অভিহিত করি না কেন, যে কারণেই সকলের অবদান থেকে দেশ বঞ্চিত হোক না কেন, মূল তি হয়েছে দেশের, রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের জনগণের।

শুধুমাত্র চলমান রাজনীতিতে অংশীদার রাজনৈতিক দলগুলোই আমাদের এই অবস্থানের জন্য একমাত্র দায়ী নয়। এদেশের জনসাধারণের অতিরিক্ত রাজনৈতিক বিভাজন, জাতীয় স্বার্থবিমুখতা, নিজস্ব কৃষ্টি-কালচার ভুলে বিজাতীয় অপসংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ অনুসরণ এবং সীমাহীন নির্লিপ্ততাও অনেকাংশে দায়ী। কোনো দেশের জনসাধারণ যেমন হবে তেমন হবে সে দেশের নেতাকর্মীরা, কারণ এসব নেতাকর্মী তো সাধারণ সমাজ থেকেই সরবরাহ হয়ে থাকে। তাই দেশের রাজনীতিক নেতাকর্মীদের চরিত্রের যে অবনমন আমরা দেখে থাকি তা আসলে দেশের জাতীয় জনচরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। দেশের আপামর জনগণের চারিত্রিক অবনমন প্রক্রিয়া বন্ধ করতে না পারলে জাতীয় রাজনীতিক চরিত্রের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিক দলগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা রাজনীতি করে থাকে তাদের নিজ নিজ দলের তথাকথিত দলীয় আদর্শ ও মতবাদ অনুসারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় জাতীয় রাজনীতিতে তাদের এই আদর্শে দেশ ও দেশের জনমানুষের আকাক্সার প্রতিফলন খুব কমই রয়েছে। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শে প্রতিফলিত হওয়া উচিত ছিলো জনমানুষের ও দেশের কল্যাণাকাক্সা। কিন্তু এেেত্র তারা প্রতিফলন করে থাকে ব্যক্তি বা আপন আপন দলের প্রতিষ্ঠাতাদের নামে তাদের মনগড়া আদর্শকে। এদেশের রাজনীতিতে নীতি-নৈতিকতা ও স্ব স্ব ব্যক্তির ধর্মীয় মূল্যবোধকে মূল্যায়ন করা হয় না একেবারেই। ফলে রাজনীতিতে পেশিশক্তি ও বাহুবল আজ নির্ধারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। বিদায় নিয়েছে আদর্শ, নীতি নৈতিকতা। ফলে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা আজ রাজনীতির প্রধান অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পর্যায়ে ধর্মীয় রাজনীতিক দলের অবস্থান থাকলেও তাদের পজিটিভ ভূমিকা থেকে দেশ ও জাতি এখনো বঞ্চিত। জাতীয় রাজনীতিতে অতি বিভাজনের কারণে এদেশের ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো অধিকাংশ সময় থাকে সরকার পরিচালনার বাইরে। ফলে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে তারা যে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতির চর্চা করে থাকে তা এখনো বৃহত্তর পরিমণ্ডলে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

এদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের আরেক চরিত্র হচ্ছে এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো জোটের রাজনীতিতে বিভক্ত। এই জোটভিত্তিক রাজনীতির সুবিধা-অসুবিধা দুই-ই রয়েছে। জোটভিত্তিক রাজনীতি থেকে দলগুলো তাদের সুবিধা পেয়ে থাকলেও আপামর জনসাধারণ এবং সার্বিকভাবে দেশ খুব কমই উপকার ভোগ করতে পারে। কারণ জোটভিত্তিক রাজনীতির পেছনে জনগণের কল্যাণ ও রাষ্ট্র ‘উন্নয়ন ধারণা’ শক্তিশালী দর্শন হিসেবে হাজির না থাকায় এদেশের জাতীয় রাজনীতিতে অতি-বিভাজনদশার বিন্দুমাত্র হ্রাস হয়নি বরং কিছু কিছু েেত্র তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তথাকথিত নামমাত্র কিছু রাজনৈতিক দলকে মতায় বসার সুযোগ করে দিয়েছে। এসব লেজুড়ভিত্তিক জনসমর্থনহীন দল মতায় এসে এদেশের গণতান্ত্রিক চরিত্রকে ভূলুন্ঠিত করার প্রয়াস পাচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিক দলগুলো জোট গঠন করে তাদের তথাকথিত দলীয় আদর্শ এবং তাদের আপাত দলীয় স্বার্থসিদ্ধির কথা চিন্তা করে। তারা দল বা জোট গঠনের সময় কখনোই ল রাখে না দেশ, রাষ্ট্র, বা আপামর জনসাধারণের উন্নয়ন ভাবনার কথা। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। সময় এসেছে নতুনভাবে ভাবার।

এদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মোর্চা বা জোট গঠন করা উচিত দেশের উন্নয়নের জন্য গৃহীত কর্মসূচিভিত্তিক। সেেেত্র দলগুলো যদি দেশকে তার উন্নয়ন ল্যমাত্রার পথে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য নানান কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং তার আলোকে অন্যান্য দলের সাথে তাদের ঐক্যগঠন করে থাকে তাহলে জাতীয় রাজনীতিতে বিরাজমান অতি-বিভাজন স্বাভাবিকাভাবেই কমে আসবে। ফলে রাজনীতিতে স্থায়ী বিরোধী দল বলে কিছু থাকবে না। কারণ সকল দলের ল্যমাত্রা তখন হবে দেশের উন্নয়ন, দেশের জনমানুষের উন্নয়ন, দেশের সার্বিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের গ্যারান্টি নিশ্চিত করা। তখন বিভিন্ন দল দলীয় রাজনীতির েেত্র দল প্রতিষ্ঠাকারী ব্যক্তির আদর্শ, বিভিন্ন মতবাদ বা ধর্মীয় আদর্শকে যে প্রাধান্য দিয়ে থাকে তা হবে কেবলমাত্র তাদের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ডের নিরূপক এবং তাদের স্ব স্ব কর্মীবাহিনীকে গড়ে তোলার হাতিয়ারমাত্র। আর জাতীয় রাজনীতির েেত্র দলগুলোর ভূমিকা নির্ধারিত হবে জাতীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও অন্যান্য খাতে অবকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে। জাতীয় রাজনীতিতে দেশের উন্নয়নের জন্য গৃহীত এই কর্মসূচিভিত্তিক জোট গঠন প্রক্রিয়া ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের অগ্রযাত্রায় এটি হবে একটি মাইলফলক।

বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির আরেক কষ্টদায়ক চরিত্র হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী বহিঃশক্তির প্রভাব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে এদেশের মানুষ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার হাত থেকে রা পেলেও ব্রিটিশদের চাপিয়ে দেয়া “ডিভাইড ও রুল” এর নির্মম কষাঘাত থেকে দেশ এখনও রা পায়নি। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ব্রিটেন চলে গেলেও তাদের স্থলাভিষিক্ত নতুন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হাজির হয়েছে ভিন্ন উপায়ে “ডিভাইড ও রুল” নামক একই হাতিয়ার সঙ্গে নিয়ে। এই অবস্থা তৃতীয় বিশ্বের সকল দেশেই। তবে ১৯৯১ সালে রাশিয়ার পতনের পর এবং ১৯৯৩ সালে ফরেন এফেয়ার্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হার্ভার্ড প্রফেসর স্যামুয়েল ফিলিপ্স হান্টিংটনের (এপ্রিল ১৯২৭ থেকে ডিসেম্বর ২০০৮) “সভ্যতার-সংঘাত”  নামক গবেষণাপত্র  প্রকাশের পর মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে এই পলিসি প্রয়োগ করা হচ্ছে আরো ব্যাপকভাবে। ‘বিভাজিত ও শাসিত’ এই অবস্থা থেকে মুসলিম বিশ্ব তাদের অবস্থার উত্তরণ করতে না পারলে মুসলিম দেশগুলোর উন্নয়নের পথে ধাবিত হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কিভাবে সম্ভব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাত থেকে বের হয়ে জাতীয় রাজনীতিতে ‘শাসিত ও বিভাজিত’ অবস্থার অবসান ঘটিয়ে ‘ঐক্যের পথ’ তৈরি করা?  

মুসলিম বিশ্বের জন্য আবশ্যকীয় এই ঐক্যের পথ তৈরি করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। উন্নত, উন্নয়নশীল কিংবা উন্নয়নের পথে নতুনভাবে ধাবমান যে কোনো দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে জাতীয় রাজনীতিতে তাদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিশ্চিত করা। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কিছু মৌলিক পার্থক্য থাকলেও দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক নীতির েেত্র দেশগুলোর দীর্ঘস্থায়ী, একক ও অবিচ্ছিন্ন, সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতির অনুসরণ এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে পারে। মুসলিম বিশ্বে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে মালয়েশিয়া। ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর দেশের শাসন প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সংখ্যক রাজনৈতিক দলের এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেই মালয়েশিয়া আজকের এই অবস্থানে নিজেদেরকে উন্নীত করেছে। তবে শুধু রাজনীতিক দলগুলোর ঐক্যই যথেষ্ট নয়, এেেত্র সংশ্লিষ্ট দেশের জনগণের ভেতরও এক ঐক্য-প্রক্রিয়া চলমান থাকা প্রয়োজন। আর জনগণের ভেতর ঐক্য গড়ে তুলতে হলে সবার আগে প্রয়োজন হবে ব্যক্তি ও পার্থিব চাহিদা বা স্বার্থের উপর দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে একটি মাত্র ‘আদর্শিক মূল্যবোধের’ উপর দেশের জনগণের ঐক্যের ভিত্তি দাঁড় করানো। মুসলিম বিশ্বে জনগণ কিংবা রাজনৈতিক পর্যায়ে আবশ্যকীয় এই ঐক্য প্রক্রিয়া কিভাবে গড়ে তোলা সম্ভব?

গোলকায়নের এই সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মেরুকরণের চাপ ও ষড়যন্ত্র উপো করে জাতীয় এবং আঞ্চলিক বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করা, বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের জন্য, সহজ কাজ নয়। সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী শক্তির সমর্থনপুষ্ট ‘অর্থনৈতিক লাভের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত’ আন্তর্জাতিক চলমান রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে জনগণের রাজনীতি ও কল্যাণ ধারণাকে কেন্দ্র করে কোনো রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন হবে ‘আধুনিক নতুন বিশ্ব-ব্যবস্থা’ বা ‘নতুন অর্থনৈতিক বিশ্ব ব্যবস্থার’ (New World Order/New Economic World order) সঠিক উপলব্ধি। কারণ চলমান এই ‘আধুনিক নতুন বিশ্ব-ব্যবস্থা’ বা ‘নতুন অর্থনৈতিক বিশ্ব ব্যবস্থার’ শক্তি, তার গতিধারা ও গৃহীত স্ট্রাটেজি বুঝতে না পারলে এর হাত থেকে রা পাওয় সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের রাজনৈতিক দল, দলের নেতা-কর্মী এবং এদেশের বুদ্ধিজীবীদের গ্লোবাল ‘আধুনিক নতুন বিশ্ব-ব্যবস্থা’ বা ‘নতুন অর্থনৈতিক বিশ্ব ব্যবস্থার’ ভয়াল থাবা সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। একসঙ্গে এই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হলেই কেবলমাত্র দেশের জন্য আবশ্যক এই ঐক্যপ্রক্রিয়ার ভিত্তি গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশসহ মুসলিম প্রধান দেশগুলোর েেত্র এসব দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্প্রদায়, জনগণ এবং রাজনীতিক পর্যায়ে দেশ ও জনগণের উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে সামষ্টিক ঐক্য-প্রক্রিয়া গড়ে তোলার জন্য ‘ইসলামী আন্দোলন’ হিসাবে পরিচিত ‘ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল’ ও বিভিন্ন ‘দাওয়াহভিত্তিক ইসলামী সামাজিক শক্তি ও আন্দোলন’ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ জনগণকে গুরুত্ব দিয়ে ঐক্যপ্রক্রিয়া গড়ার জন্য যে ত্যাগ-তিতিক্ষা, অন্যকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা, ও দেশপ্রেমের অঙ্গীকার প্রয়োজন তার একমাত্র উপকরণ বিদ্যমান রয়েছে সেই ‘ইসলামকেন্দ্রিক’ রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি বা দলগুলোর নিকট। কিন্তু সেই উপকরণ থাকলেও তার অনুধাবন এবং কিভাবে তা দেশগড়ার নিমিত্ত ঐক্য-গঠনের েেত্র ব্যবহার করা যায় তার সঠিক ‘কর্মকৌশল কেমন হতে পারে বা হওয়া উচিত’ এই সকল দল ও সামাজিক আন্দোলনের জন্য তা নির্ধারণ করা জরুরি। বর্তমান বিশ্বে এর এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ মিলে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে। বিশেষ করে আরব বসন্তকালীন সময়ে তিউনিশিয়ার রাজনীতিতে এননাহদা এবং মরক্কোর রাজনীতিতে পার্টি অব জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট (পিজেডি) ‘বিং ডিভাইডেড এন্ড রুলড’ অর্থাৎ ‘বিভাজিত ও শাসিত  হওয়া’ এর বিপরীতে দেশের সকল বা অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর ভেতর এক ঐক্য প্রক্রিয়া গড়ে তোলার েেত্র এক অত্যুৎকৃষ্ট নজির বিশ্বরাজনীতিতে উপস্থাপন করেছে, যা ইসলামপন্থা অনুসরণকারী যে কোনো রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি ও আন্দোলনগুলো অনুসরণ করতে পারে। গড়ে তুলতে পারে সংশ্লিষ্ট দেশে পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রের বাইরে অবস্থান করে এক ঐক্যবদ্ধ জাতি যা ইনকুসিভ রাজনীতি, টেকসই গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের এক অন্যতম পূর্বশর্ত।

এ পাতার অন্যান্য খবর

এ বিভাগ বা পাতায় আর কোন সংবাদ, কবিতা বা অন্যকোন ধরণের লেখা পাওয়া যায়নি।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।