সংবাদ শিরোনামঃ

‘কেষ্টা বেটাই চোর’ ** ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রসার ছাড়া অবক্ষয় রোধ সম্ভব নয় ** হুমকির মুখে আবাসন শিল্প ** ৫ শ’ প্রভাবশালী মুসলিমের তালিকায় হাসিনা, নিজামী, সাঈদী ও ইউনূস ** রিভিউ পিটিশন করবেন মুজাহিদ : প্রস্তুতির নির্দেশ ** সিরিয়া সঙ্কটের আশু সমাধান হচ্ছে কি? ** দলীয় সন্ত্রাসে বেসামাল সরকার ** প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মনে হচ্ছে দেশে তদন্তকারী সংস্থা ও কোনো তদন্তের প্রয়োজন নেই : বিএনপি ** খুন, গুম ও গণধর্ষণ সামাজিক বিপর্যয়ে দেশ ** দেশে রাজনীতির পরিবর্তে চলছে রাজচালাকি ** বৃহত্তর স্বার্থেই দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন ** অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি : টেকসই গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত ** মানবদেহে বায়ু ও রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থার আবিষ্কারক বিজ্ঞানী ইবনুন নাফিস ** আদর্শ স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য ** শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক সরে গিয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে ** রংপুরে জাপানি নাগরিককে গুলি করে হত্যা ** মহাজোট সরকারের এমপির গুলিতে আহত শিশু সৌরভ **

ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ আশ্বিন ১৪২২, ২৪ জিলহজ ১৪৩৬, ৯ অক্টোবর ২০১৫

মতিউর রহমান আকন্দ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
মদীনায় হঠাৎ অসুস্থতা অনুভব ও অনন্য অনুভূতি

নানান ফলমুল ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ছোলা, পেঁয়াজু, মুড়ি দিয়ে ইফতারের আয়োজন করেছিলেন সিরাজ ভাই। সঙ্গে ফলের জুস, ঠাণ্ডা পানীয়। হোটেলে নির্ধারিত কক্ষে প্রবেশ করার সাথে সাথেই ধ্বনিত হলো মাগরিবের আজান। দ্রুত ইফতার করে সিরাজ ভাইয়ের সঙ্গে চললাম নামাজ আদায় করতে। ততক্ষণে মসজিদুন নববীতে জামায়াত শুরু হয়ে গেছে। হোটেলের নিকটেই এক মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম। নামাজের পর শুরু হলো সিরাজ ভাইয়ের মেহমানদারি। কী খাওয়ানো হবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তার পেরেশানির অন্ত নেই। কিন্তু খাবারের চাইতে আমাদের হৃদয় তখন মসজিদুন নববীর সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে আছে। কখন মসজিদে প্রবেশ করব, সালাত আদায় করব এবং রওজা পাক জিয়ারত করব!

সিরাজ ভাই আমাকে নিয়ে গেলেন বাংলাদেশের খাবার পাওয়া যায় এমন এক হোটেলে। সঙ্গে আয়াজ ভাই। পরিবারের অন্যদের জন্য খাবার নিয়ে আমরা হোটেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আয়াজ ভাই বিদায় নিলেন। রাতেই নিজে ড্রাইভ করে তাকে জেদ্দায় ফিরে যেতে হবে। মক্কা থেকে দীর্ঘ জার্নি করে আমাদের নিয়ে মদীনায় আসা আবার রাতেই জেদ্দায় ফেরত যাওয়া এই লম্বা যাত্রার কথা ভেবে নিজে বিচলিত হয়ে পড়লাম। কিন্তু আয়াজ ভাই আশ্বস্ত করে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। সিরাজ ভাই খাবারসহ আমাকে হোটেলে পৌঁছে দিলেন।

পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে সামান্য খাবার গ্রহণ করে তাদের হোটেলে রেখে আমি ছুটে চললাম মসজিদুন নববীর উদ্দেশে। মক্কা থেকে মদীনায় দীর্ঘ পথে সফরের কান্তির জন্য পরিবারের সদস্যদের হোটেলে রেখে আমি একাই যাচ্ছিলাম মসজিদুন নববীতে এশা এবং তারাবীর নামাজ আদায় করতে।

হোটেল থেকে নেমে দ্রুত যাচ্ছিলাম মসজিদুন নববীর দিকে। কিছুদূর যাওয়ার পর খুব কান্ত বোধ করলাম। সাধারণত এমন কান্ত আমি কখনো হই না। দাঁড়িয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আবার হাঁটা শুরু করলাম। আবার সেই কান্তি। মনে হলো বুকে সামান্য চাপ অনুভব হচ্ছে। ইতঃপূর্বে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন আমি কখনো হইনি। ধীরে ধীরে মসজিদুন নববীতে প্রবেশ করলাম। এশা ও তারাবীর নামাজ শেষ করে এবং রাসূল (সা.) এর রওজা মুবারক জিয়ারত করে হোটেলে ফিরে আসলাম। পরিবারের সদস্যদের বাইরে আমার এই কান্তির কথা অন্য কাউকে জানালাম না। শুধু মনে মনে ভাবলাম আমি নবীর শহরে অবস্থান করছি। এখানে আল্লাহর রাসূলের অনুসারীদের জন্য এবং তাদের রোগমুক্তির জন্য আল্লাহর রাসূল (সা.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। নিশ্চয়ই আমি এই পবিত্র মদীনা নগরীতে রাসূল (সা.)-এর সেই দোয়ার আওতায় পড়ব বলে আশা রাখি। সে দিনটি ছিল ৫ জুলাই ২০১৫, রোববার।

এরপর মদীনা থেকে মক্কা, মক্কা থেকে জেদ্দা, জেদ্দা থেকে বাংলাদেশ। ২২ জুলাই ২০১৫ আমরা বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করলাম। ঐ কান্তিকর পরিবেশ আমাকে আর স্পর্শ করেনি। বাংলাদেশে এসে নানাবিধ কাজে ব্যস্ত হওয়ার পূর্বে শরীরটা একটু চেকআপ করানো দরকার বলে মনে করলাম। কিন্তু ডাক্তারের কাছে যাওয়া এক ধরনের অনীহা আমার মধ্যে সবসময়ই ছিল। আজ নয় কাল এভাবে ২৪টি দিন অতিবাহিত হলো। শেষে ১৬ আগস্ট ২০১৫ ডাক্তারের কাছে গেলাম। রক্ত পরীক্ষাসহ আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সবকিছু স্বাভাবিক দেখা গেলো। ডাক্তার এনজিওগ্রামের পরামর্শ দিলেন। ২৩ আগস্ট ২০১৫ এনজিওগ্রাম করতে গেলাম। এনজিওগ্রাম সম্পন্ন হওয়ার পর ডাক্তার বিস্মিত হয়ে জানালেন আপনার হার্টে ৪টি ব্লক ধরা পড়েছে। সুতরাং আপনাকে অপারেশন করতে হবে। তখনো আমি শরীরে কোন অস্বাভাবিকতা উপলব্ধি করিনি। সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় এবং কোন ধরনের পার্শ্বক্রিয়া অনুভূত না হওয়া সত্ত্বেও এই ধরনের সমস্যা নিয়ে চলাফেরা করছি শুনে ডাক্তারসহ অন্যরা বিস্মিত হলেন।

এরপর ইবনে সিনা, এ্যাপলো, সিকদার ও ইউনাইটেড হাসপাতালে এবং সবশেষে সিএমএইচ এর কার্ডিয়াক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করলাম। কেউ কেউ রিং পরাতে, কেউ বা অপারেশন করতে পরামর্শ দিলেন। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রিং এর কুফল তুলে ধরে আমাকে অপারেশনের পরামর্শ দিয়ে বললেন আপনার হার্টের স্ট্রাকচার, প্রেসার ও শারীরিক কাঠামো সবকিছু অনুকূল। সুতরাং অপারেশনটি আপনার জন্য খুব সহজ হবে। আর রিং পরানো হলে সর্বদাই আপনাকে উৎকণ্ঠায় থাকতে হবে। সেটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। আবার কোন কোন বিশেষজ্ঞ মাত্র দুটো রিং পরিয়ে এ চিকিৎসা সম্পন্ন করা যায় বলে পরামর্শ দিলেন। পরস্পরবিরোধী এ পরামর্শে কিছুটা দ্বিধা এবং দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলো।

এটা আল্লাহ রাব্বুলামীনের একটি বিশেষ মেহেরবাণি যে ডাক্তারের সাথে পরামর্শের সময় আমার স্ত্রী সাবিকুন্নাহার মুন্নি সবসময়ই পাশে ছিল। সে ডাক্তারের পরামর্শ শোনার পর আল্লাহর উপর ভরসা করে অপারেশনের ব্যাপারেই তার পরামর্শ প্রদান করলো। এরপর মুরুব্বীদের সাথে আলোচনা এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে অপারেশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম। সংগঠনের পক্ষ থেকে মক্কা-মদীনাসহ ভাইদের দোয়ার জন্য বলা হলো। রাজধানী ঢাকার গুলশানে অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেলাম।

আস্তে আস্তে বিভিন্ন জায়গায় এ খবর ছড়িয়ে পড়ল। আমার মা, শাশুড়ি, আমার স্ত্রী, পরিবার ও শুভাকাক্সীদের অনেকেই রোজা রেখে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করলাম, আমার প্রিয় ভাইয়েরা দেশে-বিদেশ, বিশেষ করে মক্কা এবং মদীনায় যেখানে মাত্র কয়েকদিন আগে উমরাহ্ পালন করে ভাইদের সাথে কাটিয়ে আসলাম তারা প্রাণখুলে পবিত্র কাবা ও মসজিদুন নববীতে আমার জন্য দোয়া করছেন। সে দোয়ার প্রভাব যেন আমি তীব্রভাবে উপলব্ধি করলাম। মানসিক শক্তি অনেক বেড়ে গেল। সবকিছুতেই স্বাভাবিক অবস্থা। আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণিতে অপারেশন সফল হলো। দোয়ার বরকতে অত্যন্ত কঠিন এবং জটিল একটি অপারেশন আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য সহজ করে দিলেন। আলহামদুলিল্লাহ্।

অপারেশনের কয়েক ঘণ্টার মাঝেই যখন জ্ঞান ফিরে আসলে নিজেকে অনেক হালকা বলে মনে হলো, তখন আমি কোন ব্যথা উপলব্ধি করছিলাম না, ওই পরিবেশে মহান আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম। যিনি আমার অপারেশন সম্পন্ন করেছেন সে ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবির আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, ‘আপনার অপারেশন খুব সুন্দর হয়েছে এবং আপনি সব দিক থেকে ভালো আছেন। কোন ধরনের যান্ত্রিক সাপোর্টের আপনার প্রয়োজন হচ্ছে না। আপনি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন।’ আমি মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে বললাম ‘আলহামদুলিল্লাহ্’।

মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি শুকরিয়ায় মস্তক অবনত হয়ে আসলো। এমন একটি জটিল রোগ আমার বুকে, অথচ আমি স্বাভাবিকভাবে চলাফেলা করছি, কাজ করছি আল্লাহ তার অপার মহিমায় যথাসময়ে রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের তাওফিক দিয়েছেন এবং তার অসীম কুদরতি শক্তির দ্বারা আমাকে জটিল অপারেশনের পর যান্ত্রিক সাপোর্ট ব্যতীত শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার সুযোগ দিয়েছেন একথা স্মরণ করে আল্লাহর প্রতি মনটা আরো অনুগত হয়ে উঠল, আবেগে হৃদয়টা ভরে গেল।

ডাক্তার বিদায় নেয়ার পর আমার মনে বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল সবকিছুই আল্লাহর মহিমা এবং অনুগ্রহ। আমার বিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হলো যে, মানুষের দোয়ার বরকতে আল্লাহ তায়ালা অনেক কঠিন কাজকেও সহজ করে দেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার অসংখ্য বান্দার দোয়ার বদৌলতে আমার কঠিন রোগকে দ্রুতই নিরাময়ের ব্যবস্থা করে দিলেন। মাত্র ৯ দিনের মাথায় চিকিৎসা শেষে হাতপাতাল থেকে বের হয়ে আসলাম। সবই আল্লাহর অপার মহিমা। আল্লাহর দরবারে আবারো শুকরিয়া, আলহামদুলিল্লাহ্।

আজ ক্রমেই আমি সুস্থতা উপলব্ধি করছি। কিছু কাজও করার চেষ্টা করছি। আল্লাহর কাছে এ মিনতি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যেন আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে ও ইসলামের দাওয়াতি কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারি। মহান আল্লাহর কাছে সেই তাওফিক কামনা করি। ইসলামী আন্দোলনের সকল কর্মী ভাই-বোনদের কাছে দোয়া চাই। আল্লাহ যেন তার দ্বীনের পথে আমাকে অবিচল থাকার তাওফিক দান করেন। যে সমস্ত ভাই ও বোনেরা প্রাণ খুলে আমার জন্য দোয়া করেছেন, অনেকে রোজা রেখেছেন এবং অপারেশনের সময় অনেক ভাই রক্ত সরবরাহ করেছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসপাতালে অপেক্ষা করেছেন। আমি তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করেন। আমীন।

পবিত্র মদীনা নগরীতে হঠাৎ করে যে অসুস্থতা অনুভব করছিলাম অতি সহজে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন খুব দ্রুত তা নিরাময়ের ব্যবস্থা করে আবারো আমাকে কাজে অংশগ্রহণে সুযোগ করে দিয়েছেন, সে জন্য আল্লাহর দরবারে লাখো শুকরিয়া। আমার বিশ্বাস অসুস্থতা অনুভবের সময় মদীনার যে বাতাস আমার হৃদয়ে প্রবেশ করেছে সে বরকতময় বাতাসের বদৌলতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার সকল অসুস্থতাকে লাঘব করে দিয়েছেন।

মসজিদুন নববী

৬ জুলাই ২০১৫ আমার মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ আমরা মসজিদুন নববীর পবিত্র চত্বরে প্রবেশ করলাম। আজ থেকে সোয়া চৌদ্দশত বছর পূর্বে নবী করিম (সা.)-এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় মসজিদুন নববী। মদীনায় হিজরতের পর রাসূল (সা.) সর্ব প্রথম যে কাজটি করেন তা হচ্ছে মসজিদ নির্মাণ। দু’জন এতিম শিশুর পতিত জমি খরিদ করা হলো। এই জমিতে মসজিদুন নববীর ভিত্তি স্থাপিত হলো। এর নির্মাণ কাজে ব্যাপক সাড়া পড়ে গেল। নবী করিম (সা.) এবং সাহাবীগণ মসজিদ নির্মাণ কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। সবাই একযোগে আওয়াজ তুলছিলেন ‘আখেরাতের মঙ্গল ব্যতীত মঙ্গল নাই। আল্লাহ্ আনসার ও মুহাজিরদের প্রতি রহম করুন’।

কখনো বা নবী করিম (সা.) ও সাহাবীগণ পাঠ করতেন, ‘আখেরাতের জীবন ব্যতীত জীবন নাই। আল্লাহ্ আনসার ও মুহাজিরদের প্রতি রহম করুন’।

মসজিদ নির্মাণের ইচ্ছা করলে জিব্রাঈল (আ.) আবির্ভূত হয়ে রাসূল (সা.)কে বলে গেলেন যেন তার ছাউনি হজরত মূসা (আ.) এর ছাউনির মতো হয়। রাসূল (সা.) সাহাবীগণকে বললেন, আমার জন্য ‘মূসার ছাউনির মত তৃণ ও কাঠের একখানা ছাউনি নির্মাণ কর’। রাসূল (সা.)কে জিজ্ঞেস করা হলো ‘মূসার ছায়া কি?’ নবী করিম (সা.) বললেন, ‘তিনি দাঁড়ালে ছাদ মস্তক স্পর্শ করতো’। অর্থাৎ হজরত মূসা (আ.) এর ছাউনি ছায়ার জন্যই নির্মিত হয়েছিল। সেরূপ মসজিদুন নববীও শুধু ছায়ার জন্য নির্মিত হবে, জাঁকজমকের জন্য নয়। (সাইয়্যেদুল মুরসালিন)

মসজিদুন নববীর নির্মাণ কাজ চলার সময় সকলেই একটি করে এবং হজরত আম্মার (রা.) দু’টি করে প্রস্তর বহন করতেন। তা দেখে নবী করিম (সা.) তার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, ‘অপর সকলের জন্য একটি আর তোমার জন্য দু’টি করে সওয়াব। তোমার সর্বশেষ পানীয় দুগ্ধ’।

মসজিদ নির্মাণ হলো অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে। পাথরের দেয়াল, খেজুরপাতা ও ঘাসের ছাউনি, খেজুর গাছের খুঁটি, মাটির খুঁটি মানুষের সমান উচ্চ প্রাচীর দ্বারা তৈরি হলো নবী করিম (সা.)-এর পবিত্র স্মৃতি বিজড়িত মসজিদ। বৃষ্টির সময় ছাদ দিয়ে পানি পড়তো। একরাতে বৃষ্টিতে মসজিদের মেঝ কর্দমাক্ত হয়ে গেল। নামাজ পড়ার সময় কেউ কেউ নিজ নিজ বসার স্থানে কাঁকর বিছিয়ে নেন। তা রাসূল (সা.)-এর মনঃপূত হয়। এরপর সমস্ত মসজিদে কাঁকর বিছিয়ে দেয়া হয়। নবী করিম (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত সেই মসজিদুন নববী একাধারে সরকারের দরবার, পরামর্শ কক্ষ, সরকারি অতিথিভবন ও জাতীয় সম্মেলন ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

রাসূল (সা.)-এর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ শুধু নামাজের স্থান হিসেবেই গুরুত্ব বহন করত না, বরং তাকে ইসলামী রাষ্ট্র ও সভ্যতার কেন্দ্র ও উৎস হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। মসজিদের সাথেই নির্মিত হয়েছিল নবী করিম (সা.) এর বাসভবন। যা তৈরি হয়েছিল লতাপাতা ও মাটির দ্বারা। এই হুজরাতেই রাসূল (রা.) বসবাস করতেন। রাসূলের নেতৃত্বে বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে যে রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছিল সে রাষ্ট্রটির এটাই ছিল কেন্দ্রীয় দফতর। যেখানে সান-সওকত তো দূরের কথা, প্রয়োজন পূরণের মতোও উপায় উপাদানের যথেষ্ট সঙ্কট এবং ঘাটতি সেখানে ছিল।

এই সেই মসজিদুন নববী, যেখান থেকে নবী করিম (সা.) বিশ্বের শক্তিশালী শাসকদের নিকট ইসলামের পয়গাম পাঠাতেন। অন্যায়, অসত্য, মিথ্যার বিরুদ্ধে যেখান থেকে যুদ্ধ ঘোষিত হত। মানুষের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিীয় জীবনের সমস্যার সমাধান দেয়া হত। যে পবিত্র মসজিদ থেকে প্রতিনিয়ত আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ঘোষণা বিশ্বের দিকে দিকে ছড়িয়ে দেয়া হত। পারিবারিক, সামাজিক ও ইসলামের সামষ্টিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ গঠনমূলক দিক নির্দেশনা দিয়ে ইসলামের দাওয়াতি কাজ পরিচালিত হত। যে পবিত্র মসজিদ মানব জাতির জন্য শান্তি, সুখ ও পরিতৃপ্তির এক অনাবিল কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিল। সেই পবিত্র মসজিদের পবিত্র চত্বর ও নবী করিম (সা.)-এর বাসভবনের পাশে দাঁড়িয়ে আধুনিক সমাজ, সভ্যতা ও মানব জীবনের হাজারো সমস্যা নিয়ে ভাবছিলাম যে মসজিদ মানুষের সকল সমস্যার সমাধানে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল আজো সেই মসজিদ বিদ্যমান। অথচ রাসূলের অনুসারী হিসেবে আমরা এই মসজিদের অনন্য বৈশিষ্ট্যসমূহের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। নবী করিম (সা.) উম্মতে মুহাম্মদীকে ওছিয়ত করে গিয়েছিলেন কুরআন এবং সুন্নাহকে কঠিনভাবে আকড়িয়ে ধরে রাখতে। সেই মুসলিম জাতি আজ বিভিন্নভাবে বিভক্ত। এই পবিত্র মদীনাতুন্নবী! এখানেও মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। সারা দুনিয়ায় আজ মুসলমানদের রক্ত ঝরছে।

(চলবে)

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।