সংবাদ শিরোনামঃ

মুজাহিদ ও সালাউদ্দিনের শাহাদাত ** মুজাহিদের বিরুদ্ধে সরকারের করা মামলার ইতিহাস ** দুই জাতীয় নেতাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা ** অপরাজিত শহীদ মুজাহিদ পরাজিত সরকার ** শহীদ মুজাহিদের কবরের পাশে অশ্রুভেজা জনতার ঢল ** প্রতিহিংসা চরিতার্থে মুজাহিদকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে সরকার ** মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন মার্সি পিটিশন করেননি ** মুজাহিদকে হত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী হরতাল পালিত ** বিরোধী নেতাদের ফাঁসি রাজনৈতিক বিভাজন বাড়াবে ** আওয়ামী লীগকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে ** একজন নির্দোষ মানুষকে হত্যার বিচার আল্লাহ করবেন ** দেশকে এগিয়ে নিতে প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করতে হবে ** ধাওয়া-খাওয়াদের খবর ** নতুন উদ্যোক্তা গড়ায় পিছিয়ে বাংলাদেশ ** শহীদ মুজাহিদের রক্ত এদেশের মাটিকে ইসলামী আন্দোলনের জন্য উর্বর করবে ** প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন মুজাহিদ ** শাহাদাতের মৃত্যু গৌরবের **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪২২, ১৪ সফর ১৪৩৭, ২৭ নভেম্বর ২০১৫

॥ সৈয়দ খালিদ হোসেন॥
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চেীধুরী মার্সি পিটিশন করেছেন বলে সরকারের তরফ থেকে যে দাবি করা হয়েছিল তা খুব কড়া ভাষায়ই নাকচ করে দিয়েছেন উভয়ের পরিবার। পরিবারের সদস্যরা বিএনপি ও জামায়াতের এ শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতার সঙ্গে কারাগারে শেষ সাক্ষাতের পর স্পষ্ট ভাষায় এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। যদিও এর আগেই উভয় পরিবারের প থেকে মার্সি পিটিশনের খবরটি ‘অবিশ্বাস্য’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার দিন ২১ নভেম্বর দুপুরেই জামায়াতে ইসলামীর প থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ দেশী-বিদেশী সব গণমাধ্যমে একটি জরুরি বিবৃতি পাঠিয়েছিলেন। ওই বিবৃতিতে তিনি দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রাণভিক্ষা চাওয়ার খবরের কড়া প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি মুজাহিদের প থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া হয়েছে বলে প্রচারিত খবরকে অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক আখ্যা দিয়ে ওই সময় প্রচার হওয়া সংবাদ বন্ধে সংবাদ মাধ্যমগুলোর কর্তৃপকে অনুরোধও জানিয়েছিলেন। অপরদিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প থেকে মার্সি পিটিশন করা হয়েছে মর্মে যে সংবাদ প্রচারিত হয়েছিল তারও প্রতিবাদ জানিয়েছে তার পরিবার। বিএনপির প থেকে এ সংবাদের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কারাগারে শেষ সাক্ষাতের পর উভয়ের পরিবারের প থেকেও স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয় যে, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মার্সি পিটিশন করেন নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, দণ্ডপ্রাপ্তরা যখন নিজেরাই স্পষ্ট করে তাদের পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দিলেন যে তারা কখনোই কারো কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি, তখনো খুবই বিস্ময়করভাবে দেশের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো মার্সি পিটিশনের সরকারি সংবাদ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে আসছিলো। আর আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও সালউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের গণমাধ্যমের সামনে যেতে দেওয়া হয়নি সরকারের নির্দেশেই। শেষ সাক্ষাত শেষে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর মুজাহিদ ও সালাউদ্দিনের পরিবারের সদস্যদেরকে সব গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সুযোগও দেওয়া হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে কৌশলে মিডিয়া থেকে দূরে রেখেছে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর এ শীর্ষ দুই নেতা রাষ্ট্রপতির কাছে মাভিক্ষা করেন নি। রাষ্ট্রপতির কাছে মাভিক্ষার বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ নাটক।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ বলেছেন,  রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার খবর সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। রাতে মুজাহিদের সঙ্গে কারাগারে শেষ সাক্ষাত শেষে তার ছেলে আলী আহমদ মাবরুর গণমাধ্যমকে এতথ্য জানান। তিনি জানান, তার বাবা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ তাকে বলেছেন, তিনি প্রাণভিক্ষা চাননি। ওনার (মুজাহিদ) সম্পর্কে প্রশাসন মিথ্যাচার করেছে। বিগত পাঁচটা বছর ওনার (মুজাহিদ) নামে মিথ্যাচার করে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আজ তার জীবনের শেষ সময়ে এসেও তার বিষয়ে ‘প্রাণভিক্ষা চাওয়ার’ মিথ্যা খবর ছড়ানো হয়েছে।

আলী আহমদ মাবরুর বলেন, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ কোন মার্সি পিটিশন করেননি। দেশের কাছে, দলের কাছে, পরিবারের কাছে হেয় করা ও কাপুরুষ বানানোর জন্য এই মিথ্যাচারের নাটক তৈরি করা হয়েছে।

ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেষ দেখা করার সময় বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি কারো কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি। তার ব্যাপারে প্রাণভিক্ষার যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, ‘সরকারতো কত কিছুই বানাবে, কত কাগজ তৈরি করবে।’

কারাগারের ভেতরে দেখা করে আসার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। হুম্মাম বলেন, আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করেছি প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেছেন কি না। জবাবে তিনি আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেছেন, ‘কে বলেছে এমন বাজে কথা।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি যখন বাবাকে বলি সরকার বলছে এ কথা। উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচনে তাকে হারাতে না পেরে এখন তার প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের প্রাণভিক্ষা চাওয়ার যে খবর দিচ্ছে তা অবিশ্বাস্য বলে দাবি করছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই নেতার পরিবারের সদস্যরা। শনিবার ২১ নভেম্বর দুপুরে দুই পরিবারের বরাত দিয়ে এ সংবাদ প্রচার করে বিবিসি। আন্তর্জাতিক ওই সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র শনিবার দুপুরে বিবিসিকে জানায়, মি. চৌধুরী ও মি. মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু মি. মুজাহিদের ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর বিবিসিকে বলেছেন, প্রাণভিক্ষা চাওয়ার যে খবর আসছে সেটি সঠিক নয় বলে তারা মনে করেন। তিনি আরো বলেন, তারা যখন তার বাবার সঙ্গে দেখা করেছেন তখন তিনি জানিয়েছিলেন যে তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন না। এদিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরীও এ খবরটিকে অবিশ্বাস্য বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তারা আইনজীবীর মাধ্যমে দুদিন ধরে মি. চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে চেষ্টা করছেন কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছেন। মি. চৌধুরীর  সঙ্গে দেখা করা গেলে এ বিষয়ক বিভ্রান্তি দূর হতো বলে তিনি উল্লেখ করেন। এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে মিসেস চৌধুরী বলেন, প্রাণভিক্ষার আবেদন করাটা মি. চৌধুরীর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি নিজেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এডভোকেটের নিকট আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ মা চেয়েছেন’ মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে খবর শনিবার দুপুর থেকে প্রচারিত হচ্ছিল তা বিভ্রান্তিকর ও অসত্য বলে দাবি করেছে জামায়াত।

দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ২১ নভেম্বর দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি করেন। একইসঙ্গে প্রচার হওয়া এ সংবাদটি এই মুহূর্তে বন্ধ করার আহ্বানও জানানো হয়েছে জামায়াতের প থেকে।

২১ নভেম্বর দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে কারা অধিদফতরের বরাত দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে যে, ‘জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। প্রচারিত এ খবরটি সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিকর।’

তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতকালে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার বিষয়ে পরামর্শের জন্য আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। তিনি পরিবারের নিকট প্রাণভিক্ষার বিষয়ে কোন বক্তব্য দেননি। পরিবারের প থেকে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যে জানানো হয়েছে যে, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ আইনজীবীদের সঙ্গে পরবর্তী আইনি বিষয়ে পরামর্শ করতে চান। আইনজীবীগণ মুজাহিদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে কারা কর্তৃপরে নিকট আবেদন করেন। কারা কর্তৃপ মুজাহিদের ইচ্ছা অনুযায়ী এখনো আইনজীবীদেরকে সাক্ষাতের অনুমতি দেননি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে মা চাওয়ার যে খবর প্রচারিত হচ্ছে তা সঠিক নয়। কারা কর্তৃপকে মুজাহিদের সঙ্গে আইনজীবীদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানানো হয় জামায়াতের প থেকে। সেই সঙ্গে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য কারা কর্তৃপরে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদানের আহ্বানও জানানো হয়। আইনজীবীদের সাক্ষাৎ এবং কারা কর্তৃপরে অফিসিয়াল বক্তব্য আসার আগে বিভ্রান্তিমূলক ও নোংরা অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানায় জামায়াত।

অপরদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ‘দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে মা প্রার্থনা করেছেন’ মর্মে গণমাধ্যমে যে খবর প্রচারিত হচ্ছে তা অসত্য বলে বিএনপির প থেকে দাবি করা হয়। বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্যই এমন খবর প্রচার করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন। বিএনপি’র মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন দলের পক্ষে ২১ নভেম্বর রাত ১১টা ৪৯ মিনিটের সময় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন দাবি করেন।

ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা রাতে তার সঙ্গে সর্বশেষ সাক্ষাত করে দলকে অবহিত করেছেন যে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী দোষ স্বীকার করেন নি। রাষ্ট্রপতির কাছে মা প্রার্থনা করে প্রাণভিক্ষাও চাননি। তার পরিবার বিএনপিকে অবহিত করেছেন এ মর্মে একটি বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে, যা আদৌ সত্য নয়। তার পরিবার দলকে আরো অবহিত করেছেন, যে অভিযোগে তাকে প্রাণদণ্ড দেয়া হয়েছে, এ ধরনের কোন অপরাধ তিনি করেননি যা তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আদালতেও যুক্তি ও দালিলিক প্রমাণ দাখিল করেছিলেন। কিন্তু তিনি ন্যায় বিচার পাননি। তার পরিবার দলকে আরো জানিয়েছেন তিনি নিশ্চয়ই পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে ন্যায় বিচার লাভ করবেন।

গত ২১ নভেম্বর শনিবার সকালেও প্রাণভিক্ষার বিষয়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ কোন সিদ্ধান্ত নেননি। শুক্রবার ২০ নভেম্বরও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের সঙ্গে তাঁদের আইনজীবীরা দেখা করার অনুমতি পাননি। গত ১৮ নভেম্বর বুধবার সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের করা ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। পরদিন বৃহস্পতিবার সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে পৌঁছায়। কারাগারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শুক্রবার ২০ নভেম্বর বলেন, আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতেই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। তাঁরা প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি না, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তাৎণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেননি, সময় নিয়েছেন। এরপর শুক্রবার  দুপুরের আগে তাঁদের কাছে আরও একবার এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তখনো তাঁরা কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। কারা উপমহাপরিদর্শক গোলাম হায়দার বলেন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুজনের কেউই প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেননি।

গত ২১ নভেম্বর শনিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন মুজাহিদের স্ত্রী তামান্না ই জাহান। ওই সংবাদ সম্মেলনে তামান্না-ই-জাহান মুজাহিদের সঙ্গে আইনজীবীদের সাক্ষাতের দাবি জানান।

একই দিন ২১ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি আবারও দাবি জানিয়ে বলেন, আইনজীবীরা দেখা করার পরই প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে জানা যাবে। তিনি বলেন, “আমরা যখন ওনার সঙ্গে দেখা করলাম, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, উনি বললেন, ‘আমি এখনো লিখিত কাগজ পাইনি। যখন পাব, তখন আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলব। আমার যা বক্তব্য আমি তাদের বলব।” তিনি বলেন, ‘আইনজীবীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করার আবেদন করেছেন। কিন্তু কারা কর্তৃপ দেখা করতে না দিলে তো আমরা বলতে পারছি না, উনি কী করবেন। কারণ লাস্ট উনি বলেছেন আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করে সিদ্ধান্ত আমাদের জানাবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘উনি (চৌধুরী) মার্সি পিটিশন করবেন না বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা ব্যক্তিগতভাবে ওনার স্ত্রী ও ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছি, উনি মার্সি পিটিশন করুক বা না করুক, ওনার পক্ষে আপনারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি না? তারা আমাদের জানিয়েছেন, তাঁরা মার্সি চান না, মার্সি পিটিশন চান না। শুধু আন্তর্জাতিক মহলে এ মামলার ত্র“টি বিচ্যুতি নিয়ে যে কথা প্রকাশ হয়েছে, সে বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করতে চান।’

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহম্মদ মুজাহিদ প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন এবং সরকারের কাছে ওই আবেদন সংরতি আছে মর্মে গত ২২ নভেম্বর রোববার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আবারো নাকচ করে দিয়েছেন মুজাহিদের ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর। রোববার রাতে সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় মাবরুর বলেন, ‘আমরা গতকালই (২১ নভেম্বর) বলেছি যে, আমার বাবা আলী আহসান মোহম্মদ মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি। আমি আবারও বলছি, সরকারের কাছে যদি প্রাণভিক্ষার আবেদন সংরতি থাকে, তাহলে সেটা দেখানো হোক। আমরা এটা দেখতে চাই। আমরা আমার বাবার হাতের লেখা ও স্বার চিনি।’

এদিকে প্রাণভিক্ষার আবেদন করা না করা নিয়ে সারাদেশে যখন চরম বিতর্ক ওঠে তখন এ নিয়ে (২২ নভেম্বর দুপুরে) প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে পরেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির অনুমতি ছাড়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন দেখানো যাবে না। তা দেখাতে হলে রাষ্ট্রপতির অনুমতি লাগবে। রোববার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী। আনিসুল হক বলেন, ‘বিদেশী মদদদাতাদের খুশি করতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পরিবার বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আইন মেনে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই তাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তাঁরা দুজন যে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ বা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই।’ সাংবাদিকরা তাঁদের প্রাণভিক্ষার আবেদন দেখতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁদের আবেদন দেখানো যাবে না। তা দেখাতে হলে রাষ্ট্রপতির অনুমতি লাগবে।’

এ বিষয়ে রোববার ২২ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন বলে সরকার দাবি করছে। কিন্তু সেই আবেদন সাংবাদিকদের দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে সরকার। এতেই প্রমাণ হয় মুজাহিদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। রোববার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “মুজাহিদ তার পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতে বলেছেন, প্রেসিডেন্টের নিকট প্রাণভিক্ষার আবেদনের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি প্রেসিডেন্টের নিকট মার্সি পিটিশন করিনি। এরপরেও সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী অবলিলায় মিথ্যাচার করেই যাচ্ছেন। এই মিথ্যাচারীদের কাছে যখন সচেতন সাংবাদিকরা প্রাণভিক্ষার আবেদন দেখতে চেয়েছেন তখন এ কাপুরুষেরা বিভিন্ন ছুতানাতায় তা প্রদর্শন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ রাজনৈতিক, প্রতিহিংসামূলক, মিথ্যা ও জালজালিয়াত দুষ্ট।”

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “জনগণ সরকারের এ মিথ্যাচারকে গ্রহণ করেনি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত গায়েবানা নামাজে জানাজায় সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বাধা দেয়া হয়েছে এবং ঢাকা ও চাঁদপুরসহ কয়েকটি জায়গায় গায়েবানা নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণকারী কয়েকজন মুসল্লিকে গ্রেফতার করেছে।  এমনকি চাঁদপুরে তিনজনকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। জানাজার মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার ও তিনজনকে সাজা প্রদান করা হয়েছে। এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় যে, এ সরকার ইসলামের ব্যাপারে কতটা বিদ্বেষী।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, দণ্ডপ্রাপ্তরা নিজেরাই স্পষ্টভাষায় বলেছেন যে, তারা কারো কাছে মা প্রার্থনা করেননি। তারপরও এ বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে। তারা মনে করেন, সরকার দ্’ুটি উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে মা প্রার্থনার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন। প্রথমত. যেহেতু আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সময়পেণ করছেন, সেহেতু মার্সি পিটিশেনের নাটক করা হলে দ্রুতই না নাকচ করে শাস্তি কার্যকর করা যাবে। দ্বিতীয়ত, মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন মা প্রার্থনা করেছেন এমন সংবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে আওয়ামী পলিটিক্সে নতুন মাত্রা যোগ হবে। রাজনীতিতে নতুন করে ইস্যু তৈরি হবে। পরবর্তীদের আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তৃতা বিবৃতিতে বলতে পারবেন, বিএনপি ও জামায়াতের দণ্ডিত দুই শীর্ষ নেতা মৃত্যুর আগে তাদের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। অবশ্য সরকারের সেই ইচ্ছা ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। দুই শীর্ষ নেতার ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করা গেছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ও সরকারের মিথ্যাচারের একটি বড় নজির তৈরি হয়েছে, যখন দুই পরিবারের লোকেরা সাক্ষাতের পর মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তারা কারো কাছে মার্সি পিটিশন করেননি।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।