সংবাদ শিরোনামঃ

মুজাহিদ ও সালাউদ্দিনের শাহাদাত ** মুজাহিদের বিরুদ্ধে সরকারের করা মামলার ইতিহাস ** দুই জাতীয় নেতাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা ** অপরাজিত শহীদ মুজাহিদ পরাজিত সরকার ** শহীদ মুজাহিদের কবরের পাশে অশ্রুভেজা জনতার ঢল ** প্রতিহিংসা চরিতার্থে মুজাহিদকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে সরকার ** মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন মার্সি পিটিশন করেননি ** মুজাহিদকে হত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী হরতাল পালিত ** বিরোধী নেতাদের ফাঁসি রাজনৈতিক বিভাজন বাড়াবে ** আওয়ামী লীগকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে ** একজন নির্দোষ মানুষকে হত্যার বিচার আল্লাহ করবেন ** দেশকে এগিয়ে নিতে প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করতে হবে ** ধাওয়া-খাওয়াদের খবর ** নতুন উদ্যোক্তা গড়ায় পিছিয়ে বাংলাদেশ ** শহীদ মুজাহিদের রক্ত এদেশের মাটিকে ইসলামী আন্দোলনের জন্য উর্বর করবে ** প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন মুজাহিদ ** শাহাদাতের মৃত্যু গৌরবের **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪২২, ১৪ সফর ১৪৩৭, ২৭ নভেম্বর ২০১৫

সোনার বাংলা রিপোর্ট : বাংলাদেশে গত ২১ নভেম্বর শনিবার দিবাগত রাতে দুইজন শীর্ষ বিরোধী রাজনৈতিক নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে দেশে বিদেশে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষ প্রতিক্রিয়া জানাতে না পারলেও ভেতরে ভেতরে চরম ুব্ধ তারা। শহর থেকে গ্রাম, চায়ের দোকান থেকে লোকাল বাসসহ প্রায় সব পাবলিক প্লেসে এখন আলোচনার একটিই ইস্যু, আর তা হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর। ফাঁসির দণ্ড কার্যকর সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা এখন সাধারণ মানুষের আলোচনার মূল বিষয়। কত কয়েক দিনে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপকালে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। রাষ্ট্র পরিচালনাকারী দু’টি বৃহৎ দলের শীর্ষ দুই নেতাকে ফাঁসির মতো শাস্তি দেওয়া এবং শেষ ফলাফল কী দাঁড়াতে পারে তাও সাধারণ মানুষের আলোচনায় উঠে এসেছে। সাধারণ মানুষ মনে করে সরকার দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত না করলে এর দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া দেখা যেত। আবার পুলিশি তৎপরতা জোরদার করা না হলে হয়তো সরকার ফাঁসি দেয়ার মতো ঝুঁকি নিত না। এসবই সাধারণ মানুষের আলোচনার বিষয়বস্তু। অন্যদিকে দেশের প্রায় সব মানুষের মধ্যে একটি আলোচনা বেশ জোরালোভাবেই চলছে। আর সেটি হচ্ছে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে মার্সি পিটিশন করেছেন কী-না? রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত গত তিন দিনে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা স্পষ্ট করেই বলছেন দণ্ডিত এই দুই নেতা মার্সি পিটিশন করার লোক নন। তাছাড়া তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতে স্পষ্টভাবেই জানিয়েছিলেন মার্সি পিটিশন না করার বিষয়ে। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রশ্ন তাহলে কেন সরকার মার্সি পিটিশনের ইস্যুটি সৃষ্টি করেছিল? এসবের জবাবও সাধারণ মানুষের কাছে রয়েছে। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সব সময়েই রাজনীতিতে নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি করায় অভ্যস্ত। আর এটা এরই একটি অংশ। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো দুই শীর্ষ পলিটিশিয়ানের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে চরম ুব্ধ। কারণ, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কোন আন্ডারগ্রাউন্ড দলের নেতা ছিলেন না। এরা দুই জনই প্রভাবশালী দুই পরিবারের সন্তান। বাংলাদেশ পরিচালনায় যাদের যথেষ্ট অবদান ছিল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও বিরোধী শক্তিকে দুর্বল করার জন্যই মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো শক্তিমান নেতাদের দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলেও মন্তব্য সাধারণ মানুষের।

অপরদিকে সর্বশেষ রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর বিএনপির মুখপাত্র স্পষ্টভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কোনো অপরাধ করেননি। তিনি রাষ্ট্রপরিচলানায় বিভিন্ন সময় অবদান রেখেছেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বারবারই বলা হয়েছে সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেই দলের সেক্রেটারি জেনারেলকে হত্যার চেষ্টা করছে এবং করেছে। পাশাপাশি জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালীরা স্পষ্টভাবেই বলে আসছে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হচ্ছে না এবং ফাঁসির মতো দণ্ড থেকে সরে আসার জন্য সরকারকে বারবার বলে আসা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে।

মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ‘কন্ট্রিবিউশন’ ছিল। তিনি বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আমাদের পার্টির নেতা। নিজের অবস্থানের সপক্ষে যেসব দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় নিলে তিনি হয়তো ন্যায়বিচার পেতেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ন্যায়বিচার পাননি বলেও মনে করেন রিপন। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ‘পারসিকিউশনের’ শিকার হয়েছেন দাবি করে রিপন বলেন, ‘সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর এলাকার মানুষ তাঁকে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে পার্লামেন্টে পাঠিয়েছিলেন। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য তাঁর কন্ট্রিবিউশন ছিল। তিনি একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক ছিলেন, সৎ রাজনীতিক ছিলেন, তাঁর কমিটমেন্ট ছিল, গণতন্ত্রের প্রশ্নে তিনি আপসহীন ছিলেন।’

রিপন বলেন, ‘আপিল বিভাগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের পর বিএনপির যে অবস্থান ছিল, এখনো একই অবস্থান বহাল রয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম তিনি ন্যায়বিচার পাবেন, কিন্তু আইনজীবীরা বলেছেন, তিনি ন্যায়বিচার পাননি।’ রিপন দাবি করে বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী অপরাধী নন। তিনি অপরাধ করেননি। যে সময়ে অপরাধ সংগঠনের কথা বলা হয়েছে, সে সময় তিনি দেশেই ছিলেন না। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প থেকে এর দালিলিক প্রমাণ এবং দেশী-বিদেশী একাধিক বিশিষ্ট জনকে সাক্ষী মানা হয়েছিল। যুদ্ধকালীন তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। রিপন বলেন, ‘আমরা খুশি হতাম, দেশবাসী খুশি হতো, যদি এসব বিবেচনায় নেয়া হতো। বিএনপির মুখপাত্র অভিযোগ করেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নাগরিক হিসেবে যে মৌলিক ও মানবাধিকার পাওয়ার কথা তা দেয়া হয়নি।

ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে দুই দিনের কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ গত ২২ নভেম্বর রোববার গায়েবানা জানাজা ও দোয়া এবং সোমবার দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনের ঘোষণা দেন। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীরের আহ্বানে দেশ ও বিশ্ববাসী দুদিনের কর্মসূচি সফল করে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে দলের ভারপ্রাপ্ত আমীর এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, “আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বাংলাদেশের জনগণের নিকট প্রিয় একটি নাম। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতি চালুর েেত্র তার অবদান অবিস্মরণীয়। চারদলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে তিনি যে দতা ও সততার পরিচয় দিয়েছেন তা বাংলাদেশের জনগণ কখনো ভুলবে না। তিনি ইসলামী আন্দোলনের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের নিকট ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য রাতদিন পরিশ্রম করেছেন। বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার এ রকম একজন সৎ, আল্লাহভীরু ও যোগ্য জাতীয় নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করায় জাতি গভীরভাবে শোকাহত ও ুব্ধ। তিনি বলেন, মুজাহিদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা রাষ্ট্রপ প্রমাণ করতে পারেনি। তাকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিণেও মুজাহিদের সঙ্গে যে তামাশা করা হয়েছে এবং মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়েছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা চেয়েছেন বলে যে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে তাতে দেশবাসী ুব্ধ। মুজাহিদের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা শেষ সাক্ষাত করে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট দোষ স্বীকার করেননি, মা প্রার্থনা করেননি এবং প্রাণভিক্ষাও চাননি। মুজাহিদের প্রতি ফোঁটা রক্ত এ দেশের ইসলামী ও গণতন্ত্রমনা জনগণকে উজ্জীবিত করবে বলেও মন্তব্য করেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর।

ফাঁসি কার্যকরের পূর্বে ও পরে দেশ ও বিদেশে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিচার ও দণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ।

আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি আবারও শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড পুরোপুরি বাতিল করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অবিলম্বে এ শাস্তি রহিত করারও আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন। অন্যদিকে জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়েও একই রকম কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক। রাভিনা তার বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের দেয়া রায়ে গত ২১ নভেম্বর শনিবার দিবাগত রাতে কার্যকর করা হয়েছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি। ওই বিবৃতিতে রাভিনা আরও বলেন, বিচারে সুষ্ঠুতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আমরা সতর্ক করছি যে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে না মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা। বিভিন্ন সময় একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। তারা ফাঁসি বন্ধ রাখতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, সুষ্ঠু বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখা হয়নি। ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল পলিটিক্যাল রাইটসের শর্তও অনুযায়ীও ওই বিচার করা হয়নি। এই চুক্তিতে স্বার করা একটি দেশ বাংলাদেশ। রাভিনা বলেন, যেকোন পরিস্থিতিতে, এমনকি সবচেয়ে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধের েেত্রও মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী জাতিসংঘ। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র স্টিফেন বলেন, যেকোন অবস্থায় মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী মহাসচিব মুন।

‘বিতর্কিত ট্রাইবুনাল’ কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষস্থানীয় বিরোধীদলীয় নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর হলে দেশটিতে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই । এ তথ্য দিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। অন্যদিকে মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক চিঠিতে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির নেতারা বলেছেন, “বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পরিসর সংকুচিত হচ্ছে এবং যুদ্ধাপরাধ আদালতকে রাজনৈতিক শাস্তিস্বরূপ ব্যবহার করা হচ্ছে।”

প্রভাবশালী দুই বিরোধী নেতার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পর বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যাল নিয়ে সমালোচনা আরো তীè করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পররাষ্ট্রনীতি দেখভাল করে থাকেন এমন কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ট্রাইব্যুনালকে ‘অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ’ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মাধ্যম বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশে দুই শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার ফাঁসি কার্যকরে বাংলাদেশ নিজেই শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করেছে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ডন। পাকিস্তানের প্রভাবশালী এ দৈনিকটিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গত ২৪ নভেম্বর মঙ্গলবার এ অভিযোগ করা হয়।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে পাকিস্তানের দেওয়া বিবৃতির পরিপ্রেেিত বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ২৩ নভেম্বর সোমবার তলব করে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। আর এরই পরিপ্রেেিত গত মঙ্গলবার দৈনিক ডন ‘মুজিবের প্রতিশ্র“তি তুলে ধরায় ুব্ধ বাংলাদেশ’ শিরোনামে নিজেদের মতো করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

১৯৭৪ সালে নয়াদিল্লিতে স্বারিত একটি চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে না এই মর্মে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একমত হয়ে চুক্তিতে সই করেছিল।

এ ব্যাপারে পত্রিকাটি সে দেশের দুজন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও একজন আইনমন্ত্রীর বক্তব্যও তুলে ধরে।

পাকিস্তানের বহুল প্রচারিত ডন পত্রিকায় ‘মুজিবের প্রতিশ্র“তি তুলে ধরায় ুব্ধ বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “১৯৭১ সালে পাকিস্তান বিভক্তির সময় যারা ‘যুদ্ধাপরাধ’ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না বলে বাংলাদেশের জাতির পিতা ১৯৭৪ সালের ত্রিপীয় চুক্তিতে যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন, তা স্মরণ করিয়ে দেয়ায় পাকিস্তানের ওপর ুব্ধ হয়েছে বাংলাদেশ।”

এরপর গত সোমবার পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দফতরে তলবের বিষয়টি তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে দুই রাজনৈতিক নেতার ফাঁসির ঘটনায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল করা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের চুক্তির চেতনায় বিবৃতিটি দিয়েছিল।

১৯৭৪ সালে করা ত্রিপীয় চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান ওই ত্রিপীয় চুক্তি করেন। তিনি সম্মত হন যে, এই অঞ্চলের শান্তি ধরে রাখতে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচার এগিয়ে নেয়া হবে না।

এদিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন দাবি করে বলেন, সিমলা চুক্তিতে কোথায়ও উল্লেখ করা হয়নি যে বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যারা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচার করা যাবে না। আর যে চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছিল তা জাতীয় সংসদে পাস না হওয়ায় এটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বাধ্য নয় উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। 

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জন্য নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের নামে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে সরকার এমন অভিযোগ এনে গত ২২ নভেম্বর কোয়ালিশন অব বাংলাদেশী আমেরিকান এসোসিয়েশন (কোবা) এক সমাবেশ করে। ওই সমাবেশে বক্তারা ফাঁসি কার্যকরের তীব্র সমালোচনা করেন।

এদিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব জমা হয়েছে পাকিস্তান সংসদে। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প থেকে প্রস্তাবটি গত সোমবার সংসদে পেশ করেন পিপিপির সংসদ সদস্য শাজিয়া মারি, নাফিসা শাহ, আজরা ফজল এবং সৈয়দ গুলাম মুস্তফা শাহ। সংসদ সচিবালয়ে জমা দেয়া প্রস্তাবে ফাঁসি কার্যকরের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাসের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বিএনপি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। বর্তমান বিচার প্রক্রিয়া চলছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আইনের শাসন অনুপস্থিত। কোনো ঘটনা ঘটার পর বিচারের আগেই সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বলেন কার ফাঁসি হবে, কার জেল হবে! তাহলে বিচারক কি সরকার? বিচার কি বিচারপতিরা করেন, না সরকার নির্ধারণ করে?’ গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘ন্যায় বিচার হলে আমরা ন্যায় বিচার পেতাম। বিএনপিসহ বিরোধী মতের মানুষের ওপর হামলা মামলা চলছে। এভাবে চলতে পারে না। আমরা তো এখন কাঁদতে পারি, ভবিষ্যতে সরকার কাঁদতে পারবে কি না-তা জনগণই নির্ধারণ করবে।’

সাধারণ মানুষ বলছেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের মধ্যে যারা এখন সরকারের ভেতরে রয়েছেন তাদের বিচারও একই প্রক্রিয়ায় করতে বাধ্য হবে ভবিষ্যতের সরকারগুলো। কারণ, একাত্তরের কাঁদা লাগানো ব্যক্তিদের পাশে রেখে বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ফাঁসি সাধারণ মানুষ সহজভাবে মেনে নাও নিতে পারেন। এটির সুদূর প্রসারী প্রতিক্রিয়াও দেখা দেবে এবং বিরোধী নেতাদের ফাঁসি রাজনৈতিক বিভাজন আরও বৃদ্ধি করবে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।