সংবাদ শিরোনামঃ

মুজাহিদ ও সালাউদ্দিনের শাহাদাত ** মুজাহিদের বিরুদ্ধে সরকারের করা মামলার ইতিহাস ** দুই জাতীয় নেতাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা ** অপরাজিত শহীদ মুজাহিদ পরাজিত সরকার ** শহীদ মুজাহিদের কবরের পাশে অশ্রুভেজা জনতার ঢল ** প্রতিহিংসা চরিতার্থে মুজাহিদকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে সরকার ** মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন মার্সি পিটিশন করেননি ** মুজাহিদকে হত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী হরতাল পালিত ** বিরোধী নেতাদের ফাঁসি রাজনৈতিক বিভাজন বাড়াবে ** আওয়ামী লীগকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে ** একজন নির্দোষ মানুষকে হত্যার বিচার আল্লাহ করবেন ** দেশকে এগিয়ে নিতে প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করতে হবে ** ধাওয়া-খাওয়াদের খবর ** নতুন উদ্যোক্তা গড়ায় পিছিয়ে বাংলাদেশ ** শহীদ মুজাহিদের রক্ত এদেশের মাটিকে ইসলামী আন্দোলনের জন্য উর্বর করবে ** প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন মুজাহিদ ** শাহাদাতের মৃত্যু গৌরবের **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪২২, ১৪ সফর ১৪৩৭, ২৭ নভেম্বর ২০১৫

পাঠকরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, মাঝে-মধ্যে আমি ইতিহাস স্মরণ করিয়ে  দেই। তাই বলে একে কেবলই ইতিহাস-প্রীতি বলা ঠিক হবে না। কোনো না কোনো উপলক্ষ কাজ করে আশু কারণ হিসেবে। আমার উদ্দেশ্য থাকে ইতিহাসের ভিত্তিতে ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। সাম্প্রতিক সময়ে সে রকম বেশ কয়েকটি উপলক্ষ বা কারণ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে সব কিছু নিয়ে আলোচনা না করা à¦­à¦¾à¦²à§‹Ñ à¦¬à¦²à¦¾ যায়, না করাই উত্তম!  বর্তমান নিবন্ধের শুরুতে বরং এদেশের অনেক বিশিষ্টজনের প্রিয় দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে পাওয়া একটি খবরের উল্লেখ করা যাক। ঢাকার বিভিন্ন দৈনিকে ১৬ নভেম্বর প্রকাশিত খবরটিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন পর জনসমক্ষে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে ক্ষমতা দখলকারী গোষ্ঠীর প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমদ।

খবরে ভদ্রতা করে বিব্রতকর পরিস্থিতির কথা বলা হলেও বাস্তবে বাংলাদেশীদের ধাওয়ার মুখে পড়েছিলেন তিনি। ঘটনাস্থল ছিল জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার মসজিদ। সেখানে শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) প্রথম দফা জুমার নামাজে অংশ নিয়েছিলেন ফখরুদ্দিন আহমদ। পরে জানা গেছে, জুমার আড়ালে প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল আবদুল মুনিম চৌধুরী নামের এক বাংলাদেশীর জানাজায় অংশ নেয়া। মরহুম এই চৌধুরী তার বন্ধু ছিলেন। সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল মসজিদ কমিটির সম্পাদক ফখরুদ্দিন আহমদের নাম ঘোষণা করার পর। ঘোষণায় বলা হয়েছিল, মরহুমের বন্ধু হিসেবে বক্তব্য রাখবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। আর যায় কোথায়! সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ, প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশী মুসল্লিরা। কয়েক মিনিটের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় শখ মিটে গিয়েছিল ফখরুদ্দিন আহমদের। বক্তব্য রাখার সুযোগ পাওয়া দূরের কথা, তিনি এমনকি মসজিদের ভেতরেও থাকতে পারেননি। মসজিদ কমিটি কোনোভাবে তাকে বাইরে নিয়ে গেছে এবং অপেক্ষমাণ একটি গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছে। তখনও প্রতিবাদী স্লোগান এবং তুমুল বিক্ষোভ চলছিল। বিক্ষোভকারীরা চিৎকার করে বলছিলেন, এই লোকটি দেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন এবং বাংলাদেশকে ১০০ বছর পিছিয়ে দিয়ে এসেছেন। দেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার দায়েও অভিযুক্ত করেছেন অনেকে। কোনো কোনো খবরে ইঙ্গিতে গলা ধাক্কার কথাও জানানো হয়েছে। উপস্থিতজনদের কাছে জানা গেছে, ‘উত্তম-মধ্যম’ না খেলেও ধাওয়া তাকে ভালোই খেতে হয়েছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে গোপনে কেটে পড়ার পর তিনি নাকি সেদিনই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশীদের প্রকাশ্য কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন।

এই ‘মধুর’ অভিজ্ঞতা তাকে আদৌ অনুতপ্ত করবে কি না এবং নতুন করে চিন্তার খোরাক যোগাবে কি না সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। বড় কথা, তার নতুন কোনো চিন্তার খবরে আমাদের অন্তত খুশি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, দেশের ক্ষতি যা করার তা তিনি সুচিন্তিতভাবেই করে গেছেন। করেছেনও একজন বন্দুকধারী জেনারেলের নেতৃত্বে। বন্দুকের জোরে অবৈধভাবে মতা দখল করে তারা দেশ ও জাতির নানামুখী তি করে গেছেন। কিছু কিছু েেত্র সর্বনাশও করেছেন তারা। কিন্তু হাতে ‘বন্দুক’ এবং একটি রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সমর্থন ছিল বলে কারো কাছে জবাবদিহিতা করতে হয়নি তাদের। রাজনৈতিক নেতাদের জেলের ভাত খাওয়ানো এবং ব্যবসায়ীদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে অর্থনীতিতে ধস নামানোর পাশাপাশি ফখরুদ্দিন আহমদরা একের পর এক এমন অনেক মৌলিক ও নীতিগত বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং সেগুলো কার্যকর করেছিলেন যেগুলো তত্ত্বাধায়ক সরকারের দায়িত্বে ও এখতিয়ারে পড়ে না। রাজনীতির েেত্র ফখরুদ্দিনদের সরকার ‘মহাবিপ্লব’ ঘটানোর চেষ্টা চালিয়েছিল। সব মিলিয়ে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, ফখরুদ্দিনরা আসলে বিশেষ কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই মতা দখল করেছিলেন। দেশকে তারা প্রচলিত রাজনীতির অনেক বাইরে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠিত এবং জনসমর্থিত রাজনৈতিক দলগুলোকে উৎখাত করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। রাষ্ট্র পরিচালনার েেত্রও তাদের ছিল সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা। 

সেদিকে যাওয়ার আগে অন্য কিছু তথ্যের উল্লেখ করা দরকার। বন্দুকের জোরে সব েেত্রই ‘কৃতিত্ব’ দেখিয়ে গেছে ফখরুদ্দিনদের তত্ত্বাবধায়ক নামের সরকার। এই সরকারের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে একথা পরিষ্কার হয়েছিল, ২০০৬ সালের অক্টোবরে সংঘটিত লগি-বৈঠার নৃশংসতা থেকে জরুরি অবস্থা জারি করা পর্যন্ত সবই করা হয়েছিল সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে। বহুল আলোচিত ‘রোডম্যাপ’ও ছিল সেই পরিকল্পনার অংশ। এর ভিত্তিতেই ডিজিটাল নির্বাচন হয়েছে, মতায় বসানো হয়েছে আওয়ামী লীগকে। এরপর এসেছে ‘ঋণ’ পরিশোধ করার পালা। সেই কার্যক্রম চলছে এখনো। এজন্যই ফখরুদ্দিন আহমদ তার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও শ্যালক ইফতেখার আহমদ চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে পেরেছিলেন। অন্য উপদেষ্টারাও বহাল তবিয়তে রয়েছেন, কেউ কেউ আবার চুটিয়ে রমরমা ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছেন।

‘নাটের গুরু’ ও প্রধান ‘উদ্দিন’ জেনারেল মইন উ আহমেদ সম্পর্কেও কিছু বলা দরকার। মইন উ যে অস্ত্রের মুখে রাষ্ট্রপতিকে বাধ্য করে রাষ্ট্রমতা দখল করেছিলেন, সে কথা জানতে জাতির কয়েকদিনও সময় লাগেনি। অবৈধভাবে মতা দখল করার সময় লাইনচ্যুত ট্রেনকে লাইনে উঠিয়ে আনাসহ মিষ্টি-মধুর অনেক কথাই শুনিয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে দুর্নীতি উচ্ছেদের নামে মইন উ ও তার সহচররা দেশে ব্ল্যাকমেইলিং-এর রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। ুদে ব্যবসায়ী থেকে বড় ব্যবসায়ী পর্যন্ত কাউকেই রেহাই দেননি তারা। সমৃদ্ধি অর্জনের ধারে-কাছে যাওয়ার পরিবর্তে বিনিয়োগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা সৃষ্টির ব্যাপারেই তাদের বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। দুর্নীতি দমনের নামে ওই সরকার এমন সব শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ঢালাও ব্যবস্থা à¦¨à¦¿à§Ÿà§‡à¦›à§‡Ñ à¦¬à¦›à¦°à§‡à¦° পর বছর ধরে যারা দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগ করেছেন, শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, লাখ লাখ মানুষকে চাকরি দিয়েছেন এবং দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছেন। এসব শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রেফতার হওয়ায় এবং অনেকে ভয়ে পালিয়ে থাকায় তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়েছিল, অর্থনীতির সব সূচক হয়েছিল নিম্নমুখী। রাজনীতির েেত্র মইন উ’রা রীতিমতো ‘মহাবিপ্লব’ ঘটানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাসহ প্রধান নেতা-নেত্রীদের অনেককেই ‘জেলের ভাত’ খাইয়েছেন তারা। মামলার পর মামলা চাপিয়ে নেতা-নেত্রীদের ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর সংস্কারের আদেশ চাপিয়েছেন। কথায় কথায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ করেছেন মইন উ। কিন্তু বছর না ঘুরতেই তার নিজের বিরুদ্ধেই নানা ধরনের নোংরা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। অর্ধ ডজন আপন ভাই এবং ঘনিষ্ঠ সহচরদের জন্যও ‘ফুলে-ফেঁপে’ ওঠার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। ভারতের স্বার্থে সীমান্ত খোলা রেখে বিডিআরকে দিয়ে ‘দোকানদারি’ করিয়েছেন মইন উ। তার হুকুমে হকার উচ্ছেদের নামে লাখ লাখ গরিব মানুষের পেটে লাথি মারা হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি তি করেছেন তিনি সেনাবাহিনীর। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সেনাবাহিনীর পেশাগত দতা কমে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে চাকরির নামে সৈনিকদের মধ্যে তিনি অর্থ-বিত্তের লোভ ঢুকিয়েছেন, ব্ল্যাকমেইলিং-এর কাজে নিয়োজিত রেখে সেনাবাহিনীতে দুর্নীতির বিস্তার ঘটিয়েছেন। সব মিলিয়ে দেশ ও জাতিকে মইন উ পেছন দিকে ঠেলে দিয়ে গেছেন। মতায় সত্যিকার কোনো গণতান্ত্রিক সরকার থাকলে অনেক আগেই মইন উ’কে কারাগারে ঢুকতে এবং বিচারের সম্মুখীন হতে হতো। অন্যদিকে মইন উ’র ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রথম থেকেই ‘অন্য রকম’ মনে হয়েছে। এর কারণ সম্পর্কেও জেনে গেছে সাধারণ মানুষ। সবকিছুর পেছনে রয়েছে একই ‘রোডম্যাপ’। এই ‘রোডম্যাপের’ ভিত্তিতেই লগি-বৈঠার তাণ্ডব এবং ১/১১ ঘটানো হয়েছিল। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল। মতালিপ্সা এবং ভাড়া খাটার তাগিদ ছিল বলেই মইন উ নিজেও মতা দখল করেছিলেন।

পর্যালোচনায় প্রমাণিত হয়েছে, মইন উ’দের আসলে ‘নিয়ে আসা’ হয়েছিল। ভেতরে ভেতরে তৈরি করা ‘রোডম্যাপ’ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েই মতায় এসেছিলেন মইন উ। বিএনপি-জামায়াতসহ তৎকালীন চার দলীয় জোটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে মতায় যেতে পারবে না বলে হতাশ হয়ে পড়া আওয়ামী লীগও ‘নাচুনে বুড়ির’ মতো ‘ঢোলের বাড়িতে’ সাড়া দিয়েছিল। এরপর ছিল ‘ডিল’ হওয়ার পালা। সে ‘ডিল’ অনুযায়ী আওয়ামী লীগকে মতায় বসানো হয়েছে। বিনিময়ে আওয়ামী লীগ ‘ঋণ’ পরিশোধ করে চলেছে। সবকিছুই এত নগ্নভাবে ঘটেছে যে এসবের কোনো একটি নিয়েই গবেষণা করা প্রয়োজন পড়ে না। ৫০ বছর লাগার তো প্রশ্নই উঠতে পারে না। বলা দরকার, ২০১০ সালে একবার দেশে এসে মইন বলেছিলেন, তিনি নাকি ‘জেনে বুঝে’ কোনো ভুল করেননি! মইন উ আরো বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘ভালো কাজ করেছে’ বলেই তিনি জানেন। ওই সরকারের মূল্যায়ন এখনই করা উচিত নয়। এজন্য নাকি ৫০ বছর লাগবে!

তখনও বলা হয়েছিল, ইতিহাস গবেষকদের ‘খেয়ে দেয়ে’ বহু কাজ থাকে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নিয়ে তারা গলফের মাঠে মতা দখলের ষড়যন্ত্র করেন না। তেমন বিকৃত রুচি ও ইচ্ছাও সাধারণত গবেষকদের থাকে না। সুতরাং মইন উ’র মতো একজন অবৈধ মতাদখলকারীকে নিয়ে গবেষণার জন্য নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার চিন্তাও ইতিহাস গবেষকরা করবেন না। কারণ, তিনি তো অনেক আগেই দেশ ও জাতি বিরোধী খলনায়ক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পড়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘ভালো কাজ করেছে’ বলে জানেন কথাটার মধ্য দিয়ে মইন উ সেবার অন্য একটি সত্যও স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। সে সত্যটি ছিল, কয়লার ময়লা আসলেও ধুইলেই যায় না। বাংলাদেশ এবং এদেশের জনগণ সম্পর্কেও নিজের অজ্ঞতার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন মইন উ। কারণ, মাত্র দু’ বছরে বহু বছর পিছিয়ে দেয়ার পর ৫০ বছরের কথা বলেও জাতিকে তিনি পিছিয়েই দিতে চেয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের জনগণ মোটেও পিছিয়ে পড়ার মতো বোকা কিংবা অলস জাতি নয়। কারণ, কলকাতাকেন্দ্রিক ‘বাঙ্গালী’ প্রেম বুঝতে জাতির ৫০ বছর লাগেনি। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার পর মাত্র ৩৬ বছরের মধ্যেই ৯০ শতাংশ মুসলমানের এই দেশ ভারত থেকে বেরিয়ে এসেছিল, ১৯৪৭ সালে যোগ দিয়েছিল পাকিস্তানে। পাকিস্তানের মোহ কাটিয়ে উঠতেও জাতির ৫০ বছর লাগেনি। ২৪ বছরের মধ্যেই তারা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। মইন উ’র মতো একজন বন্দুকধারী ভাড়া খাটা জেনারেল এবং তার নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক নামধারী অবৈধ সরকার সম্পর্কে জানার জন্যও জাতিকে ৫০ বছর অপো করতে হয়নি। ১/১১-এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জাতি কিছুদিন পর থেকেই সবকিছু জানতে শুরু করেছিল। একই কারণে ওই সরকারের মূল্যায়ন করার জন্য জাতিকে অবশ্যই ৫০ বছর অপো করতে হবে না। কথাটার মধ্য দিয়ে মইন উ প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশী জাতির মানহানি করেছিলেন। যারা ভাড়া খাটে তাদের অবস্থা অবশ্য এমনই হয়ে থাকে।

এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। মাঝে-মধ্যে করা হয়েছেও। এখানে এ পর্যন্ত খুবই কম আলোচিত এবং চমকে ওঠার মতো একটি বিশেষ তথ্য সম্পর্কে জানিয়ে রাখা দরকার। তথ্যটি হলো, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ড. ফখরুদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতা ছিল না। ২০১০ সালের ৯ জানুয়ারি কথাটা প্রথম প্রকাশ্যে বলেছিলেন প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতাই ফখরুদ্দিন আহমদের ছিল না। কারণ, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং সংবিধানে বলা আছে, কোনো বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হতে পারবেন না। অন্যদিকে সত্য গোপন করে ফখরুদ্দিন আহমদ প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন। তার উপদেষ্টাদের মধ্যে আরো চারজন সংবিধানের একই ধারা লঙ্ঘন করে পদ নিয়েছিলেন। সত্য গোপন এবং সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ফখরুদ্দিন আহমদসহ তত্ত্বাধায়ক নামধারী ওই সরকারকে বিচারের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। উল্লেখ্য, ব্যারিস্টার রফিক-উল হকেরও আগে ফখরুদ্দিন আহমদের নাগরিকত্ব সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ্যে এসেছিল। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি জানিয়েছিল, ফখরুদ্দিন আহমদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী আবাসিক কার্ডধারী বা রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রে তার সোশ্যাল সিকিউরিটি à¦¨à¦¾à¦®à§à¦¬à¦¾à¦°Ñ à§§à§ªà§®à§«à§¨à§®à§¯à§¯à§¨à¥¤ অর্থাৎ ড. ফখরুদ্দিন আহমদ মার্কিন নাগরিকের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। তার স্ত্রী-সন্তানরাও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি জানিয়েছিল, ফখরুদ্দিন আহমদ অবৈধ পথে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া ও মেরিল্যান্ডে তার দুটি বাড়ি রয়েছে। এ দুটি বাড়ির মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। সে দেশের ওয়াস্যুভিয়া ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্টে তার প্রায় এক কোটি টাকা জমা রয়েছে। অন্য কয়েকটি ব্যাংকেও তার অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে বলে ধারণা করেছিল স্থায়ী কমিটি। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার সময় ফখরুদ্দিন আহমদ তথ্যগুলো গোপন করেছিলেন। এসব তথ্য ও বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তাকে তলব করার চিন্তা-ভাবনা করছে বলে সে সময় প্রকাশিত খবরে জানা গিয়েছিল। অন্যদিকে রহস্যজনক কিন্তু সহজবোধ্য কিছু কারণে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ফখরুদ্দিন আহমদকে কখনো তলব করেনি। তিনিও তাই পার পেয়ে গেছেন। পার পেয়েছেন জেনারেল মইন উ আহমেদসহ তথাকথিত ১/১১-এর অন্য কুশীলবরাও। এর কারণও এতদিনে সবার জানা হয়ে গেছে। বহুল আলোচিত ‘ডিল’ নাকি সেভাবেই হয়েছিল। সে ‘ডিল’-এর সুযোগ নিয়েই মাঝারি মানের সাবেক ব্যাংকার ফখরুদ্দিন আহমদ বিদেশী শক্তির মনোনীত সেবাদাসের ভূমিকা পালন করে গেছেন। এদিকে আওয়ামী লীগ যেহেতু তাদের বদৌলতে মতায় আসতে পেরেছে, সেহেতু আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে তাকে বা অন্য কোনো উদ্দিনকে হেনস্থা করা সম্ভব হয়নি। এখনো হচ্ছে না।

তা সত্ত্বেও ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মন্তব্য স্মরণ ও উল্লেখ করা দরকার। ২০১০ সালের জুলাই মাসে একটি টিভি চ্যানেলের টকশোতে তিনি বলেছিলেন, কার্ডধারী মার্কিন রেসিডেন্ট ড. ফখরুদ্দিন আহমদ নিজে শুধু নন, তাকে যারা প্রধান উপদেষ্টা বানিয়েছিলেন তারাও সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের এই বক্তব্যের সূত্র ধরে তত্ত্বাবধায়ক নামধারী ওই সরকারের বৈধতা নিয়েই সে সময় প্রশ্ন ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। ব্যাখ্যাকালে এসেছিল ফখরুদ্দিন সরকারের কর্মকাণ্ডের বৈধতার দিকটিও। এ ব্যাপারে আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, তথ্য গোপন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ড. ফখরুদ্দিন আহমদের প্রধান উপদেষ্টা পদে নিযুক্তি যদি সংবিধানের লঙ্ঘন ও বেআইনি হয়ে থাকে তাহলে তার সরকার এবং সে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডও বৈধ বা আইনসম্মত হতে পারে না। ব্যাখ্যার এই দৃষ্টিকোণ থেকে ফখরুদ্দিন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন এবং সে নির্বাচনের ভিত্তিতে গঠিত সরকারের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। সরকারের পরবর্তী কোনো কার্যক্রমও প্রশ্নাতীত হতে পারে না।

এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তীকালে করা যাবে। বর্তমান নিবন্ধের সমাপ্তি টানার আগে শুধু এটুকুই বলে রাখা দরকার যে, ড. ফখরুদ্দিন আহমদের ধাওয়া খাওয়ার ‘মধুর’ অভিজ্ঞতার মধ্যে অনেকের জন্যই শিক্ষণীয় রয়েছে। ভবিষ্যতে আরো অনেকেই সাবেক এ প্রধান উপদেষ্টার মতো জনগণের আদালতে বিচারের সম্মুখীন হতে পারেন।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।