সংবাদ শিরোনামঃ

ভোট ডাকাতির আশঙ্কা ** বাংলা সাহিত্য বিশ্বে ছড়িয়ে দিন ** দেশের রাজনীতি এখন ছাই চাপা তুষের আগুন ** বিশ্ব হিজাব দিবস পালিত ** হারলেন ট্রাম্প, টিকলেন হিলারি ** মধ্যবর্তী নির্বাচনের চাপ ** বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিলেন খালেদা জিয়া ** অন্তর্দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত জাতীয় পার্টি ** মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আজও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ** শিশু নির্যাতন ও অপহরণ বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ** নিশ্চিত অনিশ্চয়তার মুখে দেশ ** নাজাত লাভের উপায় ** যেভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ** নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাস করছে ** করতোয়া নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে তীরবর্তী স্থাপনা **

ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মাঘ ১৪২২, ২৫ রবিউস সানি ১৪৩৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মতিউর রহমান আকন্দ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

এমনি কঠোর সামরিক নির্দেশসহ রাসূলে করিম (সা.) তীরন্দাজ সৈন্যদেরকে নিযুক্ত করে গিরিপথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সেই পথের বিপরীত থেকে এসে শত্রুরা মুসলমানদের ওপর সহজেই হামলা করতে সক্ষম হতো।

বাকি সৈন্যদের মধ্যে থেকে হজরত মোনযের ইবনে আমরকে (রা.) ডানদিকে এবং হজরত যোবায়ের ইবনে আওয়াম (রা.) সহকারী হিসাবে হজরত মেকদাদ ইবনে আসওয়াদকে (রা.) নিযুক্ত করা হলো। হজরত যোবায়েরকে (রা.) এই দায়িত্বও দেয়া হয়েছিল যে, তিনি খালেদ ইবনে ওলীদের নেতৃত্বাধীন ঘোড় সওয়ারদের গতিরোধ করে রাখবেন। এই শ্রেণী বিন্যাস ছাড়াও সম্মুখভাগে বিশিষ্ট ও নির্বাচিত সাহাবাদের মোতায়েন করা হয়েছিল। এ সকল সাহাবাদের বীরত্ব সাহসিকতার খ্যাতি এত বেশি ছিল যে, তাদের এক একজনকে এক হাজার শত্রুর মোকাবেলায় যথেষ্ট মনে করা হতো।

রাসূলে করিমের (সা.) সেনা বিন্যাসের এ পরিকল্পনা ছিল সূক্ষ্ম কৌশলের ও সামরিক প্রজ্ঞার পরিচায়ক। সামরিক নেতৃত্বে এবং সমর কৌশলে তাঁর নৈপুণ্য ও বিচক্ষণতার পরিচয় এতে পাওয়া যায়। এতে এটাও প্রমাণিত হয় যে সুযোগ্য ও দূরদর্শী কোন সেনানায়কই সমর কৌশলের ক্ষেত্রে রাসূলে করিমের (সা.) চেয়ে শ্রেষ্ঠ সমর পরিকল্পনা প্রণয়নে সক্ষম হবেন না। শত্রু সৈন্যদের পরে এসে নবী করিম (সা.) মুসলমানদের অবস্থানের জন্য উৎকৃষ্ট স্থান নির্বাচন করেছিলেন। পাহাড়ের সম্মুখভাবে অবস্থান গ্রহণ করে তিনি শত্রুদের হামলা থেকে পেছনে এবং ডান দিক নিরাপদ করলেন। বাম দিক থেকে শত্রুরা এসে যে জায়গায় পৌঁছে হামলা করবে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছিল সেই জায়গায় তিনি সুদক্ষ তীরন্দাজ বাহিনী মোতায়েন করলেন। পেছনে উঁচু জায়গা বাছাই করে তিনি এটাই স্থির করলেন যে, যদি খোদা না করুন পরাজিত হতেই হয় তাহলে পলায়নও করতে হবে না এবং শত্রুদের ধাওয়ার মুখে পড়ে নাজেহালও হতে হবে না বরং শিবিরে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ সম্ভব হবে। এমতাবস্থায় শত্রুরা যদি শিবিরের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের জন্য হামলা চালায় তাহলে তাদেরকে শোচনীয় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে। পক্ষান্তরে শত্রুদের এমন জায়গায় থাকতে বাধ্য করা হলো যে, যদি তারা জয়লাভও করে তবু জয়ের সুফল তেমন লাভ করতে পারবে না। যদি মুসলমানরা জয়লাভ করেন তাহলে কাফেররা মুসলমানদের ধাওয়া থেকে আত্মরক্ষায় সমর্থ হবে না। পাশাপাশি রাসূলে করিম (সা.) বিশিষ্ট সাহাবাদের একটি দলকে সম্মুখভাগে রেখে সামরিক সংখ্যা তাত্ত্বিক শূন্যতাও পূরণ করে দিলেন। রাসূলে করিম (সা.) দোসরা হিজরী সালের ৭ শাওয়াল শনিবার সকালে সেনা বিন্যাসের এ গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করলেন। মুসলিম সেনাবাহিনীর পদভারে মুখরিত ওহুদ প্রান্তরের সেই স্থানটি আজও সে শক্তি নিয়ে দণ্ডায়মান। সে স্থানটি জিয়ারত করতে এসে চোখের পর্দায় সেদিনের সে দৃশ্যগুলো একে একে ভেসে উঠছিলো।

দায়িত্বশীলদের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহর বাণী

রাসূলে করিম (সা.) এরপর ঘোষণা করলেন যে, আমি আদেশ না দেয়া পর্যন্ত তোমরা যুদ্ধ শুরু করবে না। তিনি সেদিন দুটি বর্ম পরিধান করেছিলেন। সাহাবাদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, শত্রুর সাথে মোকাবেলার সময় বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দেবে। নবী করিম (সা.) সাহাবাদের মধ্যে উদ্দীপনা ও জেহাদী জজবা, জো’শ সৃষ্টি করার প্রাক্কালে একটি ধারালো তলোয়ার খাপমুক্ত করে বললেন, এই তলোয়ার খাপমুক্ত করে এর হক আদায় করতে পারবে এমন কে আছে? একথা শুনে কয়েকজন সাহাবা তলোয়ার নেয়ার জন্য অগ্রসর হলেন। এদের মধ্যে হজরত আলী ইবনে আবু তালেব, হজরত যোবায়ের ইবনে আওয়াম এবং ওমর ইবনে খাত্তাব রাদি আল্লাহু আনহুমও ছিলেন। হজরত আবু দোজানা সাম্মাক ইবনে খায়শা (রা.) সামনে অগ্রসর হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, এর হক কি? প্রিয় নবী (সা.) বললেন, এই তরবারি দিয়ে শত্রুর চেহারায় এমনভাবে আঘাত করবে যেন সে চেহারা বাঁকা হয়ে যায়। হজরত আবু দোজানা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি এই তলোয়ার গ্রহণ করে এর হক আদায় করতে চাই। রাসূলুল্লাহ (সা.) তলোয়ার হজরত আবু দোজানার হাতে তুলে দিলেন।

হজরত আবু দোজানা ছিলেন নিবেদিত প্রাণ সৈনিক। লড়াই-এর সময় বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করতেন। তাঁর কাছে একটি লাল পট্টি ছিল। সেটি বেঁধে নিলে লোকে বুঝতো যে এবার তিনি মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করতে থাকবেন। রাসূলে করিমের (সা.) দেয়া তলোয়ার গ্রহণ করে তিনি মাথায় পট্টি বাঁধলেন এবং মুসলমান ও কাফের সৈন্যদের মাঝখান দিয়ে বুক টান করে হাঁটতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এ ধরনের চলাচল আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পছন্দ করেন না, কিন্তু এই ক্ষেত্রে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।

মক্কা থেকে আগত সৈন্যদের বিন্যস্তকরণ

মোশরেকরা কাতারবন্দী করে সৈন্য সমাবেশ করলো। তাদের প্রধান ছিল আবু সুফিয়ান। সৈন্যদের মাঝামাঝি জায়গায় সে নিজের কেন্দ্র তৈরি করলো। ডানদিকে ছিল খালেদ ইবনে ওলীদ। খালেদ তখনো ইসলাম গ্রহণ করেনি। বাঁ দিকে ছিলেন ইকরামা ইবনে আবু জেহেল। পদাতিক সৈন্যদের নেতৃত্ব করছিল সফওয়ান ইবনে উমাইয়া। তীরন্দাজ সৈন্যদের মোকাবেলার জন্য আবদুল্লাহ ইবনে রবিয়াকে নিযুক্ত করা হলো।

যুদ্ধের পতাকা বহন করছিল বনু আবদুদ দারের একটি ছোট দল। বনু আবদে মানাফ কুসাই এর নিকট থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে মর্যাদা পরস্পরের মধ্যে বণ্টনের সময় বনু আবদুদ দার এই মর্যাদা লাভ করে। পূর্বপুরুষ থেকে শুরু করে প্রচলিত এ রীতি সম্পর্কে কেউ কোন প্রকার কলহের সৃষ্টিও করতে পারত না। আবু সুফিয়ান তাদের স্মরণ করিয়ে দিল যে, বদরের যুদ্ধে নিশান বরদার নযর ইবনে হারেস গ্রেফতার হওয়ার পর কোরায়েশদের কিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সে কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার সাথে সাথে আবু সুফিয়ান নিশান বরদারদের ক্রোধের উদ্রেক করার জন্য বলল, হে বনু আবদুদ দার, বদরের যুদ্ধের দিনে আপনারাই আমাদের পতাকা বহন করছিলেন। কিন্তু সেই সময় আমাদেরকে কিরূপ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছিল সেটা আপনারা দেখেছেন। প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধের পতাকাই হচ্ছে যুদ্ধের প্রাণ। পাতাকা পতিত হলে সাধারণ সৈন্যদের পদস্খলন ঘটে। এবার আপনারা হয়তো আমাদের পতাকা ভালোভাবে রক্ষা করবেন অথবা পতাকা বহন করা থেকে বিরত থাকবেন। আমরা নিজেরাই এই পাতাকা বহনের ব্যবস্থা করবো। এই কথোপকথনে আবু সুফিয়ানের যে উদ্দেশ্য ছিল এতে সে সফল হলো। তার জ্বালাময়ী কথা শুনে বনু আবদুদ দারের মনে প্রচণ্ড ক্রোধের উদ্রেক হলো। আমরা পতাকা তোমাদের হাতে তুলে দেব? আগামীকাল লড়াই শুরু হলে দেখে নিও আমরা কি করি। পরদিন যুদ্ধ শুরু হলে বনু আবদুদ দারের প্রতিটি লোক দৃঢ়তা ও নিষ্ঠার সাথে পতাকা ধরে রাখলো। শেষ পর্যন্ত একে একে সবাই জাহান্নামে পৌঁছে গেল।

মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির জন্য কোরায়েশদের রাজনৈতিক চালবাজি

যুদ্ধ শুরুর কিছুক্ষণ আগে কোরায়েশগণ মুসলিম সৈন্যদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি এবং পারস্পরিক কলহ সৃষ্টির চেষ্টা করলো। আবু সুফিয়ান আনসারদের নিকট পয়গাম পাঠালো যে, আপনারা যদি আমাদের এবং আমাদের চাচাতো ভাই মোহাম্মদের (সা.) মাঝখান থেকে সরে যান তবে আমরা আপনাদের প্রতি হামলা করব না। কেননা আপনাদের সাথে লড়াই করার কোন প্রয়োজন আমাদের নেই। কিন্তু যে ঈমানের সামনে পাহাড়ও টিকতে পারে না সেই ঈমানের সামনে এ ধরনের কূটনৈতিক চাল কিভাবে সফল হতে পারে? আনসাররা আবু সুফিয়ানকে কঠোর ভাষায় জবাব পাঠালেন এবং কিছু রূঢ় কথা শুনিয়ে দিলেন।

পরস্পরের কাছাকাছি হওয়ার পর কোরায়েশরা আরেকটি কূট চালের আশ্রয় নিল। কাফেরদের ক্রীড়নক আবু আমের ফাসেক মুসলমানদের সামনে হাজির হলো। এই লোকটির নাম আবদে আমর ইবনে সাইফী। তাকে রাহেব বলা হতো। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) তার নাম রেখেছিলেন ফাসেক। এই লোকটি আইয়ামে জাহেলিয়াতে আওস গোত্রের সরদার ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পর ইসলাম তার গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিল। সে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য শত্রুতা শুরু করলো। মদীনা থেকে বেরিয়ে সে মক্কায় কোরায়েশদের নিকট পৌঁছল এবং তাদেরকে যুদ্ধের জন্য প্ররোচিত ও উদ্বুদ্ধ করলো। সে কাফেরদের এ মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করলো, আমার কওমের যেসব গোত্র ইসলাম গ্রহণ করেছে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে আমাকে দেখে আমার কাছে ছুটে আসবে।

মক্কাবাসীদের সাথে আবদে আমর নামের এই লোকটি প্রথমে মুসলমানদের সামনে এসে নিজের কওমের লোকদের আহ্বান জানালো। নিজের পরিচয় প্রকাশ করে সে বলল, হে আওস গোত্রের লোকেরা আমি আবু আমের। এই পরিচয় শুনে আওস গোত্রের লোকেরা বললেন, ওহে ফাসেক, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমার চোখকে যেন খুশী নসীব না করেন। একথা শুনে আবু আমের বলল, ওহো, আমার কওম আমি চলে যাওয়ার পর খারাপ হয়ে গেছে। পরে যুদ্ধ শুরু হলে এই লোকটি কাফেরদের পক্ষে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রাণপণ যুদ্ধ করছিল। সে মুসলিম মোজাহেদদের প্রতি প্রচুর পাথর নিক্ষেপ করছিল।

এমনিভাবে কোরায়েশদের পক্ষ থেকে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির দ্বিতীয় চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে গেল। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, সংখ্যাধিক্য এবং প্রচুর অস্ত্রবল থাকা সত্ত্বেও পৌত্তলিকদের মনে মুসলমানদের ভয় কতো প্রবল ছিল এবং মুসলমানদের ব্যক্তিত্বের সামনে তারা নিজেদের কতো ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ মনে করতো।    (চলবে)

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।