সংবাদ শিরোনামঃ

ভোট ডাকাতির আশঙ্কা ** বাংলা সাহিত্য বিশ্বে ছড়িয়ে দিন ** দেশের রাজনীতি এখন ছাই চাপা তুষের আগুন ** বিশ্ব হিজাব দিবস পালিত ** হারলেন ট্রাম্প, টিকলেন হিলারি ** মধ্যবর্তী নির্বাচনের চাপ ** বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিলেন খালেদা জিয়া ** অন্তর্দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত জাতীয় পার্টি ** মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আজও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ** শিশু নির্যাতন ও অপহরণ বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ** নিশ্চিত অনিশ্চয়তার মুখে দেশ ** নাজাত লাভের উপায় ** যেভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ** নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাস করছে ** করতোয়া নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে তীরবর্তী স্থাপনা **

ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মাঘ ১৪২২, ২৫ রবিউস সানি ১৪৩৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মনসুর আহমদ
মুসলিম সমাজে আজ র্শিক তৌহিদী আকিদা ও জাতি বিধ্বংসী ব্যাধিরূপে চেপে বসেছে অসাবধানী  মুসলমানদের অজান্তে। মানুষের মন-মস্তিষ্কে ও সমাজমূলে  যখন এই শরীকবাদ বা বহু খোদাবাদ গেড়ে বসে, তখন  সেখান থেকে আল্লাহর অনুশাসন বদলে যেতে থাকে, আর সে স্থান ধীরে ধীরে দখল করে নেয় জাহেলিয়াত। শিরক সব চাইতে বড় জুলুম। “ইন্নাশ শিরকা লাজুলমুন আজীম।”

তৌহিদবাদী মুমিনের মোকাবেলায় রয়েছে বহুখোদাবাদী দল, যাদেরকে শরীয়তের পরিভাষায় মুশরিক বলা হয়ে থাকে। তাদের পরিণাম সম্পর্কে ঘোষণা হয়েছে, “যে আল্লাহর সাথে শিরক করে সে যেন আসমান থেকে পড়ে গেছে। অতঃপর তাকে পাখি ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে অথবা বাতাস তাকে নিপে করবে অনেক দূরবর্তী স্থানে। (সূরা হজ)”

র্শিক থেকে বিরত থাকার  জন্য আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের প থেকে নির্দেশ এসেছে :

১) তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। আর তার সাথে কাউকে শরীক করো না। ( নিসা : ৩৬) 

২) হে মুহম্মদ বলো,  [হে আহলে কিতাব] তোমরা এস তোমাদের রব তোমাদের জন্য যা হারাম করে দিয়েছেন তা পড়ে শুনাই। আর তা হচ্ছে এই, “তোমরা তার সাথে কাউকে শরীক করবে না।” (আনআ’ম : ১৫১) 

 à¦¹à¦¾à¦¦à¦¿à¦¸- হজরত ইবনে মাসউদ (রা.)  বলেছেন, “যে ব্যক্তি মুহম্মদ (সা.)-এর মোহরাঙ্কিত অসিয়ত দেখতে চায়  সে যেন আল্লাহ তায়ালার এ বাণী পড়ে নেয়, “হে মুহম্মদ বলো, তোমাদের রব তোমাদের উপর যা হারাম করেছেন তা পড়ে শুনাই। আর তা হলো, তোমরা তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, আর এটাই হচ্ছে আমার সোজা পথ।”

র্শিক কি?

র্শিক মানে শরীক করা বা অংশবাদিত্ব বা বহুত্ববাদ । বহুত্ববাদ হলো স্রষ্টা, প্রতিপালক ও সর্বশক্তিমান, সর্বনিয়ন্তা আল্লাহর অংশীদার  স্থির করা, কিংবা আল্লাহ ছাড়া  কাউকে আল্লাহর বিশেষণে  বিশেষায়িত করা; আর এ কথায় বিশ্বাস করা যে, মতা, রহমত বা ইষ্ট অনিষ্ট আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে আসা।  শরীয়তের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘র্শিক’। 

শিরকের তিনটি স্তর রয়েছে। যথা-

১. শিরকে আকবর বা বড় শিরক।

২. শিরকে আসগর বা ছোট বা সাধারণ শিরক

৩. ‘শিরকুল খফী’ বা অস্পষ্ট শিরক। 

শিরকে আকবার বা ঘোর বহুত্ববাদ -এর বিধানকে চার ভাগে ভাগ করা যায়।

১. আশ র্শিকুদ্ দুআ’- যে শিরকে আল্লাহ ছাড়া অন্য দেবদেবীকে ডাকা বা অন্য দেবদেবীর কাছে প্রার্থনা করা।

২. ‘আশ র্শিকুন্  নিয়াহ ওয়াল ইরাদা ওয়াল কাস্দ্’ -আল্লাহ ছাড়া অন্যের প্রতি উপাসনা বা প্রার্থনায় কিংবা ধর্মীয় আচারে নিয়ত বা সংকল্প করা এবং তাকে ছাড়া অন্যকে ল্য বা উদ্দেশ্য স্থির করা। 

৩. আশ্শিরকুত্ তাআ’-আল্লাহর হুকুম বা বিধানের বিরুদ্ধে অন্য কোনো শক্তির আনুগত্য করা।

৪) আশ্ শিরকুল à¦®à§à¦¹à¦¬à§à¦¬à¦¾Ñ à¦¯à§‡ প্রেম বা ভক্তি একমাত্র আল্লাহরপ্রাপ্য তা তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে নিবেদন করা হলো মহা  শিরকের চতুর্থ প্রকার। 

র্শিকুল আসগর

প্রশংসা,  যশ  বা পার্থিব লাভের আশায় কোনো ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করা বা ইবাদত করা হলে যে র্শিক অভিব্যক্তি হয়, তাকে ছোট শিরক বা ‘র্শিকুল আসগর’ বলা হয়।  লোক দেখানো ইবাদত বা রিয়া এ পর্যায়ের র্শিক। এ শিরকের ভয়াবহতা সম্পর্কে দু’খানা হাদিস-

 à¦“মর ইবনে খাত্তাব (রা.) বর্ণনা করেন -“তিনি একদিন  নবী (সা.)-এর মসজিদে উপস্থিত হলে সেখানে তিনি দেখেন যে , মু’আয বিন জাবাল (রা.) নবী (সা.)-এর কবরের নিকট কাঁদছেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন- ‘কেন কাঁদছ?’ মু’আয বিন জাবাল (রা.) বলেন ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে থেকে একটা কথা  শুনেছিলাম, ঐ কথাই আমাকে কাঁদাচ্ছে।  তিনি বলেছিলেন, ‘সামান্যতম রিয়া হলো শিরক।’ (মিশকাত)

র্শিকুল খফী বা গুপ্ত র্শিক-

হজরত আবু সাঈদ (রা.) থেকে এক মরফু হাদিসে বর্ণিত আছে, “আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় সংবাদ দেব না? যে বিষয়টি আমার কাছে ‘মসীহ দাজ্জালের’ চেয়েও ভয়ঙ্কর?” সাহাবায়ে কেরাম বলেলেন, হাঁ। তিনি বললেন, তা হচ্ছে  শিরকে খফী বা গুপ্ত শিরক।  [আর এর উদাহরণ হচ্ছে] একজন মানুষ দাঁড়িয়ে শুধু এজন্যই তার নামাজকে খুব সুন্দরভাবে আদায় করে  যে, কোনো মানুষ তার নামাজ দেখছে [বলে সে মনে করছে]।” (আহমদ)

র্শিকমুক্ত জীবনই  নাজাতের একমাত্র পথÑ

আল্লাহ তায়ালা  ইরশাদ করেন, “যারা ঈমান এনেছে এবং ঈমানকে জুলুম [শিরক]-এর সাথে মিশ্রিত করেনি” তাদের জন্যই রয়েছে নিরাপত্তা। আনআ’ম : ৮২)

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি : “আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “হে আদম সন্তান, তুমি দুনিয়া ভর্তি গুণাহ নিয়ে যদি আমার কাছে হাজির হও,  আর আমার সাথে কাউকে শরীক না করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ  করো, তা হলে আমি দুনিয়া পরিমাণ মাগফিরাত নিয়ে তোমার দিকে এগিয়ে  আসব। (তিরমিজি)

বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে : “আর যারা তাদের রবের সাথে শিরক করে না।” (মুমিনুন-৫৯)আলাহ তাঁর সাথে শিরক করা গুণাহ মাফ করবেন না।  শিরক ছাড়া অন্যান্য  যেসব গুণাহ রয়েছে সেগুলো যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেবেন। ( নিসা : ৪৮)।

হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (মুসলিম) ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (বোখারী)

শিরকের জাহেলিয়াতের পরিণতিতে পৃথিবীতে নেমে আসে ধ্বংসলীলা। সাধারণ মুসলমানতো দূরে থাক অনেক জ্ঞানী লোকেরাও শিরক কিভাবে সমাজকে ধ্বংস করে চলছে সে সম্পর্কে গাফিল।

‘শিরক’ ও ‘শুরাকা’ শব্দদ্বয় পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এসেছে। আমরা সাধারণত এই শব্দদ্বয়কে দেব-দেবী, মূর্তি বা এই ধরনের অলৌকিক শক্তির অধিকারীকে আল্লাহর সাথে উপাসনা করা অর্থে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু  মুমিনগণও যে বিভিন্ন সময় মানুষকে আল্লাহর অংশীদাররূপে মেনে থাকি তা আদৌ খেয়াল করি না বা বুঝিও না। ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে কুরআনের দিকে তাকালে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

“এমনভাবে তাদের শরীকেরা বহু সংখ্যক মুশরিকদের  জন্য তাদের নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করার কাজকে খুবই আকর্ষণীয় বানিয়ে দিয়েছে। যেন তারা তাদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিমজ্জিত করে এবং তাদের কাছে তাদের দ্বীনকে সন্দেহপূর্ণ বানিয়ে দেয়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা এরূপ করত না। কাজেই তাদেরকে ছেড়ে দাও। তারা নিজেদের মিথ্যা রচনায় লিপ্ত থাকুক। (আনআম- ১৩৭)”

এ আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিখ্যাত তাফসির তাফহীমুল কুরআনে লেখা হয়েছে, “এ আয়াতে শরীক বলতে বুঝানো হয়েছে সে সব মানুষ ও শয়তানকে যারা সন্তান হত্যার মত জঘন্য কাজকে লোকদের দৃষ্টিতে সংগত ও আকর্ষণীয় ব্যাপার বানিয়ে দিয়েছিল। এদেরকে কুরআনে শরীক বলার কারণ এই যে, ইসলামের দৃষ্টিতে পূজা, উপাসনা ও আরাধনা পাওয়ার একমাত্র  অধিকারি আল্লাহ, অনুরূপভাবে জনগণের জন্য আইন বিধান প্রণয়ন এবং জায়েজ না জায়েজের সীমা নির্ধারণের অধিকারি একমাত্র আল্লাহ। অতএব, পূজা, উপাসনা, আরাধনা কোনো একটি কাজ খোদা ছাড়া অন্য কারও জন্য করা হলে তাতে যেমন খোদার সাথে শরীক করা হয়, ঠিক অনুরূপভাবে খোদা ছাড়া অন্য কারো মনগড়া আইনকে ঠিক ও নির্ভুল মনে করে তা পালন ও কার্যকর করলে এবং কারো নির্ধারিত সীমাকে অবশ্য লালন পালন যোগ্য মেনে নিলেও খোদার সাথে শরীক করার সমান অপরাধ হয়। এই দুই ধরনের কাজ নিশ্চয়ই শিরকের কাজ। যারা এই শিরক করে তারা যাদের সামনে পূজা উপাসনার দ্রব্য সামগ্রী পেশ করে কিংবা যাদের রীতি আইন বিধানকে অবশ্য মাননীয় বলে বিশ্বাস করে ও মানে তাদেরকে মুখে ইলাহ, রব বা আল্লাহ না বললেও তাতে কিছু আসে যায় না।”

এ কথা সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করার জন্য এই সূরারই  নিচের অংশ টুকুর দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। এরশাদ হচ্ছে-“হে মুহাম্মদ, এই লোকদেরকে বল যে, তোমরা এস আমি তোমাদেরকে শুনাব তোমাদের রব তোমাদের উপর কি বিধি নিষেধ আরোপ করেছেন, তার সাথে কাউকেও শরীক মনে করবে না, তার অধিকারের েেত্রও নয়”।

এ অংশের ব্যাখ্যায় তাফহীমুল কোরআনে লেখা হয়েছে “খোদার মূল সত্তায় কাউকেও তাঁর শরীক মনে করবে না। না তাঁর গুণাবলীর েেত্র। তাঁর মতা এখতিয়ারের ব্যাপারে অনুরূপভাবে কাউকেও তাঁর শরীক মনে করবে না, তাঁর অধিকারের েেত্রও নয়।”

সাধারণত খোদার মূল সত্তায় শিরককেই আমাদের সমাজে শিরক মনে করা হয়। কিন্তু ব্যাপারটি তা নয়। খোদার মূল সত্তায় শিরক হয় মূল খোদায়ীর ব্যাপারে কাকেও অংশীদার মানলে। যেমন- খ্রিস্টানদের তিন খোদার আকিদাহ। আরব জাহেলিয়াতের মুশরিকরা যেমন ফেরেশতাদের খোদার কন্যা মনে করত এবং অপরাপর মুশরিকরা যেমন নিজেদের দেব দেবী ও নিজেদের জাত বংশকে খোদার জাত বলে বিশ্বাস করত। এই সব আকিদাহ খোদার মূল সত্তায় শিরক এর পর্যায় গণ্য। আল্লাহর মূল সত্তায় শিরক থেকে আমরা অনেকে দূরে অবস্থান করতে পারলেও তাঁর গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকারের ক্ষেত্রে যে শিরক করে চলেছি তা দুষণীয় মনে করি না।

গুণাবলীর েেত্র খোদার সাথে শিরক হয় যদি খোদার বিশেষ গুণাবলীকে যেমনভাবে তা খোদার জন্য নির্দিষ্ট তেমনভাবেই সেগুলোকে বা তন্মধ্যে কোনো একটিকে অপর কারো মাঝে পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করা হলে। যেমন কারো সম্পর্কে বিশ্বাস করা যে গায়েবি জগতের সকল তত্ত্ব ও তথ্য তার নিকট সুস্পষ্ট কিংবা সে সব কিছু জানে, সব কিছু শোনে অথবা যদি ধারণা করা হয় যে, সে সব ধরনের দুর্বলতা অমতা ও সকল ধরনের দোষ ত্রুটি হতে মুক্ত ও পবিত্র।

মতা ইখতিয়ারের েেত্র খোদার সাথে শিরক হয় যদি খোদা হিসেবে খোদার জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট মতা ইখতিয়ারগুলো কিংবা তন্মধ্যে বিশেষ কোনোটি খোদা ছাড়া অপর কারো আছে বলে মেনে নেয়া হয়। যেমন- অতি প্রাকৃতিক উপায়ে উপকার বা তি পৌঁছাবার মতা, প্রয়োজন পূরণ করা ও সাহায্য সহায়তা করার সামর্থ্য, রণাবেণ ও দেখা শোনা করার শক্তি,  দোয়া প্রার্থনা শোনা, ভাগ্য তৈরি ও নষ্ট করার মতা থাকা। একইভাবে হালাল হারাম জায়েজ নাজায়েজের সীমা নির্ধারণ করা ও মানব জীবনের জন্য আইন বিধান রচনা করা। বস্তুত এগুলো সবই খোদার খোদায়ীর বিশেষ গুণাবলী। এর কোনো একটি আল্লাহ ছাড়া অপর কারো আছে বলে মেনে নেয়াই হচ্ছে ইখতিয়ারের ব্যাপারে শিরক।

আল্লাহর অধিকারের েেত্র শিরক হয় যদি খোদা হিসাবে বান্দাহদের উপর তাঁর যে বিশেষ অধিকার রয়েছে তা, বা তন্মধ্যে কোনো একটি অধিকারকে খোদা ছাড়া অপর কারো জন্য মেনে নেয়া হয়। যেমন- রুকু- সিজদা, হাত জোড় করে বিনীতভাবে সামনে দাঁড়ানো, কারো আস্তানায় চুমু দেওয়া, নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা কিংবা শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতির জন্য কারো নামে মানত বা নিয়াজ মানা, বলি দান করা, প্রয়োজন পূরণ ও বিপদ মুক্তির আশায় মানত  মানা,  পবিত্রতা বর্ণনা করার অন্যান্য যত রকম ধরন ও পদ্ধতি খোদার জন্য নির্দিষ্ট তা খোদা ছাড়া অপর কারো জন্য মনে করা। এমনই ভাবে কাকেও এতদূর প্রিয় বানানো যে তার প্রেম ভালবাসায় অপরাপর সব প্রকার প্রেম ভালোবাসাকে কুরবানি দেয়া, কাকেও ভয় ভীতি আতঙ্ক পাওয়ার এতদূর অধিকারি মনে করা যে উপস্থিত অনুপস্থিত সকল অবস্থায় তার নারাজি অসন্তোষ ও তার হুকুমের বিরোধিতা করাকে ভয় করা হবে। বস্তুত এরূপ ভয় কেবল মাত্র খোদাকেই করা যেতে পারে। মানুষের জন্য এরূপ ভয় পাওয়া কেবল খোদার জন্যই শোভা পায়।

শর্তহীন আনুগত্য কেবল খোদারই করা যেতে পারে। তাঁর দেয়া হেদায়েতের মানদণ্ডকেই কেবল ছহীহ ও গলদ এর মানদণ্ডরূপে মেনে নেয়া যেতে পারে। আল্লাহর আনুগত্য হতে মুক্ত স্বতন্ত্র ধরনের আনুগত্য,  খোদার আইন বিধানের সনদ ছাড়াই অপর কোনো আইন বিধান মেনে নেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ না করা ও স্বীকৃতি না দেওয়াই প্রকৃত মুসলমান হওয়ার জন্য মূল শর্ত। এই সব অধিকারের মধ্য থেকে যে অধিকারই আল্লাহ ছাড়া অপর কাকেও দেয়া হবে বা অপর কারো এরূপ অধিকার আছে বলে মনে করলেই তাকে খোদার সাথে শিরক করা হয়। খোদার কোনো এক নাম দ্বারা তার নামকরণ করা না হলেও পরিণাম উহাই হবে।”

বর্তমান যুগে মুসলিম জাতি আল্লাহকে অকর্মণ্য বানিয়ে তাঁর পাশাপাশি এ সব ধরনের শিরক করে চলছে। কেননা একই মানুষ মসজিদে গিয়ে আল্লাহর সামনে সেজদাবনত হয়ে ঘোষণা দিচ্ছে, “সুবহানা রাব্বিয়াল আলা”, দাঁড়ান অবস্থায় বলছে, “ইয়াকা না’বুদু”- আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করছি, “ওয়ানাতরুকু মাইঁ ইয়াফজুুুরুকা”- তোমার হুকুম অমান্যকারীদের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করছি-তারাই মসজিদ থেকে বের হয়ে খোদার কানুন যারা বদলিয়ে দিতে চায় তাদের সাথে ওঠা বসা করছে, তাদের খোদাদ্রোহী কাজে সহায়তা করে যাচ্ছে। কিছু মুসলমানতো খোদার আইনকে অচল ঘোষণা দিয়ে নিজের গড়া আইনকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরা মুসলমান এদের কোনো বিরোধিতা না করে বরং সহায়তা করে যাচ্ছি। সুতরাং এ কাজগুলো যদি আল্লাহর সাথে শিরক না হয় তবে শিরক হবে আর কোনো কাজে।

প্রাকৃতিক জগতের জন্য যে আল্লাহ সুন্দর আইন বিধান তৈরি করেছেন তিনিই বান্দাহর নৈতিক, দৈহিক, সমাজ-সাংস্কৃতিক ইত্যাদি সব বিষয়ের প্রয়োজন অনুসারে যাবতীয় আইনের মূল সূত্রসমূহ পাঠিয়েছেন রাসূলের মাধ্যমে। এখন যদি কেউ মনে করে যে এই সব বিধান তৈরি করার অধিকার আর কারও রয়েছে, যা আমাদের মেনে নেওয়া উচিত,  তাহলে তাদেরকে আল্লাহর মোকাবেলায় রব মেনে নিয়ে শিরক করা হবে। এ কাজটাই আজ হরদম মুসলমানরা করে যাচ্ছে নির্দোষ মনে করে। অথচ এ কাজটি যে মানবতার জন্য কত বড় তিকর তা আমরা মোটেই বিবেচনা করি না। আর আমরা এ ভাবেই শিরকের জুলমে নিজেদেরকে নিপে করেছি।

গাছ, মাছ, দেব-দেবীকে শরীক মানা মানবতার জন্য যতটা তিকর তার চেয়ে অনেক বেশি তিকর মানুষকে খোদার শরীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। কারণ, ঐ সব দেখা অদেখা শরীকেরা মানুষের উপর কোনো বিধান দিতে সম নয়, বরং বেচারাদের উপরই মানুষ বিভিন্ন গুণ অর্পণ করে পূজা করে মনের চাহিদা মেটায়। পান্তরে মানুষ যখন সমাজের ইলাহ হয়ে বসে তখন তারা এমন সব বিধি বিধান মানুষের উপর চাপিয়ে দেয় যে তার ভারে মানবতা  আর্তনাদ করতে থাকে।

আজ মুসলমান যে পৃথিবীতে অপমানিত ও নিষ্পেষিত হওয়ার কারণ মানুষ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে খোদার আসনে স্থান দেওয়া। দেশে দেশে মুসলমান রাষ্ট্র প্রধানগণ অমুসলমান রাষ্ট্রের নিয়ম-কানুন ও শর্তাদি মেনে চলছে যদিও তা খোদার হুকুমের পরিপন্থী। এভাবেই মুসলিম সমাজে শিরক চেপে বসে সমাজে অশান্তির সয়লাব বয়ে দিচ্ছে। যুগে যুগে রাসূলদের আগমন ঘটেছিল শিরক মুক্ত সমাজ গড়তে। তাই রাসূলের অনুসারী দাবিদার প্রত্যেকটি মানুষকে শিরক মুক্ত সমাজ বিনির্মাণে ঝাঁপিয়ে পড়া একান্ত জরুরি। 

শিরক হচ্ছে এমন সব কাজ বা কথা যারদ্বারা আল্লাহ তায়ালার যাত (সত্তা) বা সিফাতের (গুণাবলী) সাথে অন্য কোনো মখলুককে শরীক করা হয়। যেমন-

১. গাযেবের জ্ঞানের অধিকারী মনে করে কোনো পীর ফকীর বা গণকের কথায় বিশ্বাস করা ।

২. কাফেরদের হোলি দেওয়ালি ইত্যাদি পূজাতে আমোদ ফূর্তি দেখে ওগুলো পছন্দ করা।

৩. আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কাউকে লাভ-লোকসানের অধিকারী মনে করা।

৪.আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো কাছে নিজের মকসূদ, টাকা-পয়সা, ধন-সম্পত্তি, রুজি-রোজগার ইত্যাদি চাওয়া।

৫. কোনো পীর, বুজুর্গ বা অন্য কাউকে সিজদা করা । 

৬. কোনো দরগায় মানত মানা বা কারো নামে গরু ইত্যাদি কোনো জানোয়ার  ছেড়ে দেয়া।

৭.আল্লাহ তায়ালা এবং নবী করীম (সা.)-এর হুকুমের মোকাবেলায় অন্য কারো হুকুমকে বা কোনো দেশাচার ও রেওয়াজকে বা নিজের কোনো পুরোনো সংস্কার বা অভ্যাসকে বা বাপ-দাদার কালের কোনো প্রথাকে পছন্দ বা অবলম্বন করা ।

৮) কোনো দরগাহ বা পীর বুজুর্গের ঘরের চতুর্দিকে তওয়াফ করা ।

৯) আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কারো নামে কোনো জীবজন্তু জবেহ করা।

১০) ‘উপরি দৃষ্টি’ বা জিনের আছর ছাড়ানোর  উদ্দেশ্যে নযরানা দেওয়া বা কারো দোহাই দেওয়া।

১১) কারো নামে ছেলে মেয়েদের নাক-কান ছিদ্র করা বা আংটি, বালি পরানো।

১২) লণ ধরা। যেমন, প্রথা আছে  যে, হাত চুলকালে হাতে টাকা আসবে, হাঁচি দিলে কার্য সিদ্ধি হবে না, ডান চোখ লাফালে ভালো হবে, বাম চোখ লাফালে বিপদ আসবে ইত্যাদি।

১৩) কোনো মাস বা তারিখ বা সংখ্যাকে মনহুস  (অলুণে) মনে করা । যেমন, ১৩ কুলণ।

১৪) কোনো বুজুর্গের নাম ওজিফার মতো জপ করা।

১৫) কারো নামের বা মাথার কসম খাওয়া।

১৬) ছবি রাখা, বিশেষতঃ বুজুর্গের ছবি বরকতের  জন্য রাখা বা তার তাজীম করা ।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।