সংবাদ শিরোনামঃ

বিশ্বব্যাপী শোক নিন্দা ও প্রতিবাদ ** আওয়ামী লীগকে সমর্থন না করায় বিচারের মুখোমুখি ** তারপরও কেন এই বিদ্যুৎ সঙ্কট ** ধৈর্য ও সাহসিকতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে : মকবুল আহমাদ ** সংলাপ সমঝোতার পরিবর্তে সংঘাতের পথে সরকার ** ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দকে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে : অধ্যাপক মুজিব ** সরকারের সদিচ্ছার অভাবে পানি পাচ্ছে না বাংলাদেশ ** টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন রাষ্ট্রের জন্য ভয়ঙ্কর ** দেশ জাতি ও ইসলামের জন্যই তার এ আত্মত্যাগ ** শেষ বিদায়ের আগে আব্বুর পাশে ** সঙ্কট মোকাবেলায় বেশি বেশি আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে ** কুড়িগ্রামে ধানের মণ ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা॥ হতাশ কৃষক ** শোকার্ত মানুষের ঢল ** কাজী নজরুল ইসলামের একটি অনন্য দিক **

ঢাকা, শুক্রবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩, ১২ শাবান ১৪৩৭, ২০ মে ২০১৬

ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস পালিত

সরকারের সদিচ্ছার অভাবে পানি পাচ্ছে না বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার : চুক্তি থাকলেও প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে। ১৯৭৬ সাল এর পর থেকে আজ পর্যন্ত চাহিদানুযায়ী পানি পাচ্ছে না বাংলাদেশ। অথচ ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের আগে, শীতকালের শুষ্ক মওসুমেও পদ্মা নদী থেকে ৪০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত পানি পেত বাংলাদেশ। ভারতের অব্যাহত এই পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশটি এক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তাছাড়া চাহিদা অনুযায়ী পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সরকার শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারছে না। গত ১৬ মে দেশে পালিত হয়ে গেল ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ১৯৭৬ সালের এ দিনে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে সারাদেশের লাখ লাখ মানুষ রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দান থেকে মরণ বাঁধ ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চে অংশগ্রহণ করেন। সেই থেকে এই দিনটি ফারাক্কা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। মওলানা ভাসানী দেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জনদুর্ভোগের জন্য ওইদিন লংমার্চ করে ভারত সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানান। তিনি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন।

ওই দিন মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে রাজশাহী থেকে ফারাক্কা অভিমুখে ঐতিহাসিক মিছিল ন্যায্য পাওনা আদায়ের সংগ্রামে জনগণ অকুতোভয় সাহসী পদক্ষেপে এগিয়ে গিয়েছিল। তাই প্রতি বছর ১৬ মে ‘ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস’ বৈদেশিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা ও অধিকার আদায়ে উদ্বুদ্ধ করে। ওইদিন রাজশাহীর মাদরাসা ময়দান থেকে লংমার্চ শুরু হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গিয়ে শেষ হয়। সকাল ১০টায় রাজশাহী থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। হাতে ব্যানার আর ফেস্টুন নিয়ে অসংখ্য প্রতিবাদী মানুষের ঢল নামে রাজশাহীর রাজপথে। ভারতবিরোধী নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। বেলা ২টায় হাজার হাজার মানুষের স্রোত গোদাগাড়ীর প্রেমতলী গ্রামে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে মধ্যাহ্ন বিরতির পর আবার যাত্রা শুরু হয়। সন্ধ্যা ৬টায় লংমার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়ে রাত যাপনের জন্য সেদিনের মতো শেষ হয়। মাঠে রাতযাপন করে পরদিন সোমবার সকাল ৮টায় আবার যাত্রা শুরু হয় শিবগঞ্জের কানসাট অভিমুখে। ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের উদ্দেশ্যে ১৯৬১ সালের ৩০ জানুয়ারি ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। আর ১৯৭০ সালে শেষ হয় বাঁধটির নির্মাণকাজ। তখন পরীক্ষামূলকভাবে ভারত একটু একটু পানি ছাড়ে। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা  বাঁধ চালু হয়। আর ১৯৭৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ফারাক্কা বাঁধের সবকটি গেট খুলে দেয় দেশটি। সেবারই মূলত চাহিদা অনুযায়ী পানি পেয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর ১৯৭৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত চাহিদানুযায়ী পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেছে বাংলাদেশ। ফারাক্কার অভিশাপে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯ ফুট উঁচুতে অবস্থিত রাজশাহীর গোদাগাড়ীসহ সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়তই নিচে নামছে। এতে অগভীর কোনো নলকূপ থেকে বর্তমানে পানি উঠছে না। দিবসটি উপলক্ষে ১৫ মে এক বার্তায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দিনটি আমাদের জাতীয় আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ থেকে ৪০ বছর আগে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ডাকে সারাদেশ থেকে লাখো জনতা ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত গঙ্গা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের সংগ্রামে ফারাক্কা অভিমুখে ঐতিহাসিক মিছিলে অংশ নেয়।’

‘ভারতে গঙ্গা নদীর ফারাক্কা পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণের পর অভিন্ন নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার শুরু হয়। যার ফলে বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল আজ প্রায় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ওই এলাকায় পানিতে আর্সেনিকসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত মানকে বিবেচনা না করে এবং প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কাকে উপেক্ষা করে ১৯৭৪ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের মতামতকে অগ্রাহ্য করে ভারতকে কয়েক দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালুর অনুমতি দেয়, আর সেই সুযোগ নিয়ে অব্যাহতভাবে আজ পর্যন্ত তা চালু রেখেছে ভারত।’

‘তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এ অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে নির্লজ্জভাবে তা মেনে নিয়েছে, ফলে বাংলাদেশের জনগণ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়’। ‘আজও ফারাক্কা দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদীতে ভারত আন্তর্জাতিক আইন-কানুন ও কনভেনশনের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণে অভিন্ন নদীর ধারাকে বাধাগ্রস্ত করে একতরফা নিজেদের অনুকূলে পানি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত হয়ে আসছে। সর্বশেষ টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বাস্তবায়িত হলে এবং তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা না পেলে বাংলাদেশকে আরেক প্রাকৃতিক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সারা বাংলাদেশ মরুময় হয়ে উঠবে বলে দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই অভিমত প্রকাশ করেছেন।

ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ১৩ মে ঢাকায় বাংলাদেশ ন্যাপ আয়োজিত ‘ভারতের পানি আগ্রাসন প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচিত না হওয়ার কারণে ভারত বাংলাদেশকে পানি দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাদের সহযোগিতার কারণে আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু পানি নিয়ে তারা যা করছে এটি বন্ধুরাষ্ট্রের কাজ নয়। পাকিস্তান আগে গুলি করে আমাদের মারতো, আর ভারত এখন পানি না দিয়ে আমাদের মারবে; সেটি তো মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি দাবি করে বলেন, দেশে দেশপ্রেমিক সরকার থাকলে ভারতের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সমতার ভিত্তিতে পানিসহ সকল সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারতো। কিন্তু আমাদের দেশে এখন যে সরকার আছে তারা নির্বাচিত নয়। সেজন্য জনগণের কাছেও তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে বিরূপ পরিবেশের কারণে আমাদের নদীগুলো আজ শুকিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। কৃষকেরা পানির অভাবে ফসল ফলাতে পারছে না। অথচ আন্তর্জাতিক আইনে আছে, অভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। কিন্তু ভারত সেটা মানছে না।

এদিকে ফারাক্কা চুক্তির নামে ভারতের পানি-প্রতারণাও অব্যাহত রয়েছে। ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরের পর এবছর এই প্রথম বাংলাদেশ সর্বনিম্ন পানি পেয়েছে। শুষ্ক মওসুমে ফারাক্কা বাঁধ পেরিয়ে এতো কম পানি আর কখনই বাংলাদেশের ভাগ্যে জোটেনি। এমনকি গঙ্গা চুক্তি যখন ছিল না; সেই সময়টাতে পানি নিয়ে এমন দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। পানি না পাবার প্রধান কারণ, উৎস থেকে শুরু করে গঙ্গার মাঝপথেই পানির সিংহভাগ প্রবাহ সরিয়ে নিচ্ছে ভারত। ফলে পর্যাপ্ত পানি ফারাক্কা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। সে কারণে ফারাক্কা পয়েন্টে বাংলাদেশকে দেবার মতো যথেষ্ট পানি থাকে না। মধ্যখানে বাংলাদেশের মানুষ চুক্তির নামে প্রতারণার শিকার হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা অভিমত দিয়েছেন।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।