সংবাদ শিরোনামঃ

তুরস্কে জনতার বিজয় ** এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের জনগণ রুখে দিল সেনা অভ্যুত্থান ** সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ** ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র ** তুর্কী গণপ্রতিরোধে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ** রফতানি বাণিজ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ : রাজনৈতিক অস্থিরতা ** মানবতাবাদী বিশ্ব ও সন্ত্রাসবাদী বিশ্বের মাঝখানে মুসলমানদের দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে ** সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্য : নজরুল ইসলাম খান ** তুর্কী জনগণকে অভিনন্দন ** জাতীয় স্বার্থ বনাম হুকুম তামিল করার দৌড়ঝাঁপ ** এ শিক্ষা আমাদের কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ** দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেও হরিলুটের অভিযোগ ** দুর্ভোগের আরেক নাম পাইকগাছার কপিলমুনি শহর ** কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট : সেবা কার্যক্রম ব্যাহত ** কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা ** ইসলামী সংস্কৃতির আলোকেই হোক ঈদ আনন্দ ** বাংলা ভাগের জন্য মুসলমানরা নন হিন্দুরাই দায়ী ** কবির বিশ্বাস ** সানজিদা তাহসিনা বেঁচে থাকবে সবার মাঝে ** জাতির নিকট রেখে গেলেন অনেক প্রশ্ন **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ শ্রাবণ ১৪২৩, ১৬ শাওয়াল ১৪৩৭, ২২ জুলাই ২০১৬

॥ সাদ বিন রাবি॥
“রাজপথে নামুন, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন” তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানের এই আহ্বানের পরই গণপ্রতিরোধে নস্যাৎ হয়ে যায় সেনা অভ্যুত্থান । নিরস্ত্র জনগণের কাছে হেরে যায় সুশিক্ষিত ও উন্নত প্রশিক্ষিত সেনা সদস্যরা। জনস্রোতে ভেসে যায় ভারী অস্ত্রশস্ত্র, কামান ও সাঁজোয়া ট্যাংকসহ ডানপন্থী সরকারকে হটাতে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা। মসজিদে মসজিদে আজান আর আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে কেঁপে উঠে বিদ্রোহীদের আত্মা। বাধ্য হয়েই জনতার কাছে ওরা করে আত্মসমর্পণ। সরকারের পক্ষে রাজপথে অবস্থান নেয় হাজার হাজার মানুষ। রাতভর নানা নাটকীয় ঘটনার পর ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে ফেরত পেয়ে অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পরিণতির হুঁশিয়ারি দেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান।

 à§§à§« জুলাই শুক্রবার সারা রাত ধরে চলা এই রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহে প্রাণ হারায় প্রায় তিনশত মানুষ। এ ছাড়া আহত হয় অন্তত দেড় সহস্রাধিক। শুক্রবার তুরস্কের স্থানীয় সময় এশার নামাজের পর থেকে সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায় তুরস্কের সেনাবাহিনীর একাংশ। এ সময় ইস্তাম্বুলের এশীয় ও ইউরোপীয় অংশের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী সেতুগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি তারা দখল করে নেয় সরকারি টেলিভিশন আরটিসহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। এ ছাড়া প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেস ও পার্লামেন্টের সামনে মোতায়েন করা হয় ট্যাঙ্ক। অভ্যুত্থানকারী সেনাসদস্যরা হামলা চালায় আঙ্কারার পুলিশের বিশেষ বাহিনী এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়েও। তবে সামরিক বাহিনীর সরকারপন্থী অংশ এবং রাজপথে নেমে আসা জনতার তৎপরতায় কয়েক ঘণ্টার বেশি টিকতে পারেনি বিদ্রোহী সেনারা। ১৬ জুলাই শনিবার সকালের দিকেই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার আলামত ধীরে ধীরে ¯à¦ªà¦·à§à¦Ÿ হয়ে ওঠে। ইস্তাম্বুল ও রাজধানী আঙ্কারার বিভিন্ন স্থানে ধীরে ধীরে আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে অভ্যুত্থানকারীরা।

অভ্যুত্থানে জড়িত অভিযোগে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার জনকে আটক করেছে কর্তৃপক্ষ, যাদের বেশির ভাগই সেনাসদস্য। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১০০ জেনারেল ও এডমিরাল এবং অর্ধশতাধিক কর্নেল পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন। শুক্রবার বিকালে সেনাবাহিনীর একটি দল অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশের শাসনভার নেওয়ার দাবি করে। রাজধানী আঙ্কারা এবং দেশটির বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলে ট্যাঙ্ক নামে, পথে পথে পাহারায় বসে বিপথগামী সেনাসদস্যরা। সরকারি বিভিন্ন ভবনের নিয়ন্ত্রণও নেয় তারা। উপকূলবর্তী শহর মারমারিসে থাকা এরদোগান অভ্যুত্থানের খবর পেয়েই জনগণকে তা প্রতিরোধের আহ্বান জানান। এরপর তড়িঘড়ি করে তিনি ইস্তাম্বুলে পৌঁছেন।

তবে কোনো কোনো জায়গায় অভ্যুত্থানকারীরা সরকারপন্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এদিকে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা শুরুর পরপরই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না সেনাপ্রধান জেনারেল হুলুসি আকারের। এ অবস্থায় দেশের ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল উমিত দুনদারকে নিয়োগ দেয় সরকার। অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা শুরুর পরপরই বিদ্রোহী সেনাদের একটি গ্রুপ জেনারেল হুলুসি আকারকে জিম্মি করে আঙ্কারার একিনসিলার বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যায়। তবে শনিবার সকালে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা বাহিনী।

হঠাৎ রাজপথে ট্যাঙ্ক : সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার দীর্ঘ ইতিহাস আছে তুরস্কের।

তবে এবার কোনো ধরনের আভাস না পাওয়ার মধ্যেই আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলের সড়কে ট্যাঙ্ক দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন তুরস্কবাসী।

অভ্যুত্থান চেষ্টার ঘটনাপ্রবাহ : তুরস্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অভ্যুত্থানকারীরা ইস্তাম্বুলের বসফরাস সেতু ও ফাতিহ সুলতান মেহমুদ সেতু বন্ধ করে দেয়।

 à¦°à¦¾à¦¤ ৮টার দিকে আঙ্কারায় গুলির শব্দ শোনা যায়। সামরিক জেটবিমান ও হেলিকপ্টারগুলোকে আকাশে চক্কর দিতে দেখা যায়।

ইস্তাম্বুলের আকাশেও সামরিক হেলিকপ্টার দৃশ্যমান হয়। এর পরপরই তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তুর্কি সামরিক বাহিনীর একটি গোষ্ঠী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং এ বিষয়ে যা করণীয় তা করতে নিরাপত্তাবাহিনীগুলোকে ডাকা হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টায় অভ্যুত্থানকারীরা ঘোষণা দিয়ে জানায়, গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তারা ক্ষমতা গ্রহণ করেছে।

রাত ৯টায় রয়টার্স জানায়, আঙ্কারায় টিআরটি ভবনে সেনারা অবস্থান নিয়েছেন। একই সময় তুরস্কের ক্ষমতাসীন এ কে পার্টির ইস্তাম্বুলের কার্যালয়ে বিদ্রোহীরা প্রবেশ করে এবং সেখানকার নেতা-কর্মীদের চলে যেতে বলা হয়। কাছাকাছি সময়ে বিদ্রোহী সেনাদের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে সামরিক ও সান্ধ্য আইন জারির ঘোষণা দেয়া হয়। তবে এর পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ও সরকার এখনো ক্ষমতায় আছেন। রাত সাড়ে ৯টায় প্রেসিডেন্ট এরদোগান সামরিক বাহিনীর একটি সংখ্যালঘু দলছুট অংশের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান।

সিএনএন-তুর্কির এক সাংবাদিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনের ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে তিনি বলেন, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর কিছু সময় পর রাজধানী আঙ্কারায় একটি সামরিক হেলিকপ্টার থেকে গুলির্বষণ করে বিদ্রোহীরা। এ সময় রাজধানীতে একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এর কিছু সময় পর সামরিক বাহিনীর ট্যাঙ্কগুলো তুর্কি পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ করে। ইস্তাম্বুলের বিমানবন্দরে গুলির শব্দ শোনা যায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানী আঙ্কারার কেন্দ্রস্থলে দুটি ভারী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। রাত ১১টার দিকে তুরস্কের এনটিভি জানায়, দেশটির যুদ্ধবিমানগুলো আঙ্কারার আকাশে অভ্যুত্থান পরিকল্পনাকারীদের ব্যবহার করা সামরিক হেলিকপ্টার গুলি করে নামিয়েছে। কাছাকাছি সময় তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, আঙ্কারার ¯à§‡à¦ªà¦¶à¦¾à¦² ফোর্সের সদর দফতরে ১৭ পুলিশ নিহত হয়েছেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানায়, আঙ্কারার পার্লামেন্ট ভবনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ছাড়া রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক ইস্তাম্বুলের বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন বলে জানান।

সেনা অভ্যুত্থান ঠেকাল এরদোগানের স্মার্টফোন : অত্যাধুনিক অস্ত্রসজ্জিত শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্বার অস্ত্র হয়ে উঠল স্মার্টফোন। সামান্য স্মার্টফোনের সাহায্যে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দিলেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। ওয়ার্ল্ড বুলেটিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর একদল সদস্য যখন অভ্যুত্থান ঘটিয়ে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কেড়ে জনগণের ওপর চেপে বসতে যাচ্ছিল, তখন এরদোগান ছিলেন মারমারিস শহরে অবকাশ যাপনে। কিন্তু নিজের আইফোনের মাধ্যমে গভীর রাতে জনগণের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি।

নিজের আইফোনে অ্যাপলের ফেস টাইম অ্যাপ ব্যবহার করে একটি ভাষণে এরদোগান জনগণকে অভ্যুত্থান প্রতিরোধের আহ্বান জানান। এরদোগান বলেন, তুরস্কের জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, জড়ো হন রাজপথে, বিমানবন্দরগুলোতে। তাদের কাছে ট্যাংক-কামান থাকতে পারে, কিন্তু জনগণের চেয়ে বড় কোনো শক্তি নেই। ফেস টাইমে দেয়া তার ওই বক্তব্য সিএনএন-তুর্ক টেলিভিশনে দেখানো হয়। আর তারপর পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। এরদোগানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নামেন তার ভক্ত-সমর্থকরা। ট্যাংক, সাঁজোয়া যান এবং অস্ত্রসহ সেনারা রাস্তায় অবস্থান করলেও তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে পিছপা হননি নিরস্ত্র জনতা। যেসব স্থানে সৈন্যরা সন্ধ্যা থেকে অবস্থান নিয়েছিল, সরকার সমর্থকরা দলে দলে নেমে সেসব স্থানে অবস্থান নেয়। তুর্কিদের এই অবস্থান ও বিক্ষোভের কারণেই অনেকাংশে দুর্বল হয়ে পড়ে অভ্যুত্থান চেষ্টা। এতে জড়িত থাকা অনেক সেনাকে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা। আবার জনরোষের সামনে আত্মসমর্পণ করে অনেক সেনা। এরপর মধ্যরাতে মারমারিস থেকে ইস্তাম্বুলে ফেরেন এরদোগান। জনগণের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে এরদোগান বলেন, রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ এখনও তার হাতেই রয়েছে, অভ্যুত্থান চেষ্টাকারীদের চরম মূল্য দিতে হবে।

ট্যাঙ্ক আটকে দিল নিরস্ত্র জনগণ : তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টা শেষ পর্যন্ত জনগণের প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে। বিদ্রোহী সেনাদের ট্যাঙ্ক থামিয়ে দেয় গণতন্ত্রপন্থী সাহসী জনগণ। সেনা অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজপথে নেমে আসে তুরস্কের জনগণ। নিরস্ত্র জনগণের প্রতিরোধের মুখে থামতে বাধ্য হয় বিদ্রোহী সেনারা। অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়লে মসজিদগুলো থেকে ফজরের নামাজের সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই আজান ও কুরআন তিলাওয়াত শুরু হয়। রাজপথে নেমে আসতে থাকে সাধারণ মানুষ। এরদোগানের আহ্বানের পরপরই রাজধানী আঙ্কারা, ইস্তাম্বুল, দিয়ারবাকির, ইদিরনে ও ডেনিজলি শহরসহ দেশটির প্রায় সবক'টি শহরের রাজপথে নেমে আসে জনগণ। গণতন্ত্রণের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে হাজার হাজার মানুষ। এর আগে সাধারণ মানুষকে পাথর ছুঁড়ে এবং লাঠি দিয়ে আঘাত করে ট্যাঙ্ক থামাতে দেখা যায়। তারা আটক বিদ্রোহী সেনাদের পুলিশে সোপর্দ করে। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় গণতন্ত্রপন্থী পুলিশ ও সেনারা।

রাস্তায় পাহারা দেয়ার নির্দেশ : এদিকে  সমর্থকদের রাজপথে থাকতে নির্দেশ দিলেন এরদোগান।

অভ্যুত্থান যেভাবে ব্যর্থ হলো : শুক্রবার রাতে যখন অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ে, তখন কয়েক ঘণ্টা ধরে দেশটির নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহী সেনাদের হাতে বলেই মনে হচ্ছিল। রাজধানী আঙ্কারা আর সবচেয়ে বড় নগরী ইস্তাম্বুলের প্রধান স্থাপনাগুলোতে ছিল তাদের দৃশ্যমান উপস্থিতি। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দখল করে নেয় অভ্যুত্থানকারীরা। কিন্তু অভ্যুত্থানচেষ্টা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম তা প্রতিরোধের চেষ্টা শুরু করেছেন।

শুরুতে বোঝা যাচ্ছিল না প্রেসিডেন্ট এরদোগান কোথায় আছেন। কোনো কোনো খবরে বলা হচ্ছিল, তিনি তুরস্কের একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিমে এজিয়ান সাগর তীরের অবকাশ কেন্দ্র মারমারিসে আছেন এবং সেখানে তাকে জিম্মি করা হয়েছে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে দেখা গেল সিএনএনের তুর্কি ভাষার নিউজ চ্যানেলে।

মোবাইল ফোনে ভিডিও সাক্ষাৎকারে তিনি জনগণকে রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থান প্রতিহত করার আহ্বান জানান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে এরদোগান এক টুইট বার্তায় জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার উৎখাতের এ চেষ্টা রুখে দেওয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনছে সরকার। এরপর সিএনএন-তুর্ক টেলিভিশনে এরদোগানের এক ভিডিও সাক্ষাৎকার প্রচারের পর দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে। সরকার সমর্থকরা ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারার রাজপথে নেমে আসেন। পুলিশও অবস্থান নেয় সড়কগুলোতে। অন্যদিকে সামরিক বিমানগুলো থেকে বিদ্রোহী সেনাদের হেলিকপ্টারে গুলি ছোড়া শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেওয়া সেনাসদস্যদের হাত উঁচু করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে দেখা যায়। আর ট্যাঙ্কগুলোতে জাতীয় পতাকা নিয়ে উঠে পড়েন উল্লসিত সরকার সমর্থকরা। ইস্তাম্বুলে সেতুতে আত্মসমর্পণকারী সেনাসদস্যদের ওপর এরদোগানের এ কে পার্টির সমর্থকদের হামলার খবরও প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে রয়টার্স। এরপর ভোররাতে ইস্তাম্বুলে ফিরে এরদোগান সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, আমি পালাইনি, আমি জনগণের সঙ্গেই আছি। ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে তিনি যখন টেলিভিশনে কথা বলছিলেন, তখন তার চারপাশ ঘিরে ছিলেন উল্লসিত কর্মী-সমর্থকরা। আমি ক্ষমতায় আছি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে বলেও জনগণকে আশ্বস্ত করেন এরদোগান। এরদোগান যখন ইস্তাম্বুলের কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরে এসে নামেন, পরিস্থিতি হঠাৎই পাল্টে যায়। অনেকের কাছেই পরিষ্কার হয়ে যায়, অভ্যুত্থানকারীরা ব্যর্থ হয়েছে। উচ্চপদস্থ সেনানায়করা সরকারের পক্ষেই আছেন।

মার্কিন ব্যবহৃত ঘাঁটি থেকে অভ্যুত্থানকারীরা আটক : তুরস্কে আমেরিকার ব্যবহৃত একটি বিমান ঘাঁটি থেকে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে তুরস্কের বিমান বাহিনীর একজন জেনারেল ও কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন। সিরিয়ায় তৎপর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কথিত বিমান অভিযানে তুরস্কের ইনজারলিক নামে এ ঘাঁটিটি ব্যবহার করে আমেরিকা। সেখান থেকে তুর্কি বিমান বাহিনীর জেনারেল বেকির এরকান ভানকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তার সঙ্গে এক ডজনেরও অনুগত সেনা কর্মকর্তাকে আটক করা হয়।

তুরস্কের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, আঙ্কারা ধারণা করছে এ বিমান ঘাঁটি থেকে অভ্যুত্থানকারীরা জঙ্গিবিমানে জ্বালানি নিয়েছে। গত বছর তুরস্ক ইনজারলিক বিমান ঘাঁটিটি আমেরিকাকে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। ইনজারলিক বিমান ঘাঁটিটি কৌশলগত দিক দিয়ে অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ। সেখানে আমেরিকার অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য মার্কিন যুদ্ধবিমান এ-১০ রয়েছে। এছাড়া সেখানে পরমাণু বোমাও রাখা হয়েছে।

যে কারণে তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ : তুরস্কের সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। ইস্তাম্বুলের বাহচেশির ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের অধ্যাপক গুলনূর আইবেত বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার তিনটি কারণ উল্লেখ করেন।

এক. সেনা অভ্যুত্থানে স্বল্পসংখ্যক সদস্যের অংশগ্রহণ। সংখ্যাধিক্যে বিশ্বের অন্যতম বিশাল এ বাহিনীর মধ্যে বেশিরভাগ সদস্যই অভ্যুত্থান কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিল না। এছাড়া সেনাপ্রধান জেনারেল গুল হুলুসি আকার এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে ছিলেন না। সবচেয়ে বড় নগরী ইস্তাম্বুলের ছিল যে সেনা ডিভিশন, তার অধিনায়কও এই অভ্যুত্থান সমর্থন করেননি। নৌবাহিনী প্রধান এবং বিশেষ বাহিনীর প্রধানও অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেন। এফ-সিক্সটিন জঙ্গি বিমান থেকে অভ্যুত্থানকারীদের অবস্থানে বিমান হামলাও চালানো হয়।

দুই. সিনিয়র কমান্ডাররা ছিলেন অভ্যুত্থান বিরোধী। বাহিনীর সিনিয়র কমান্ডাররা বেশিরভাগই দেশের শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখতে এ অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেছেন।

তিন. জনগণের রাজপথে নেমে আসা ছিল অভ্যুত্থানকারীদের জন্য বড় বিপর্যয়।

বিচারক ও পুলিশ বরখাস্ত : তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর ২ হাজার ৭৪৫ বিচারকও সন্দেহভাজন ৮ হাজার পুলিশকে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।

অভ্যুত্থানের নেপথ্যে যারা : সেনাবাহিনীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন কারা। বলা হচ্ছে, দুই ব্যক্তি অভ্যুত্থানের পেছনে নাটেরগুরু হিসেবে কাজ করেছেন।

এদের একজন হচ্ছে জেনারেল একিন ওজতুর্ক। তুর্কি বিমান বাহিনীর কমান্ডার থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালের আগস্টে অবসর নেন তিনি। কিন্তু তিনি এখনও সুপ্রিম মিলিটারি কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

দ্বিতীয় ব্যক্তি হচ্ছেন লেফট্যানেন্ট জেনারেল মেতিন লিয়েদিল। যিনি স্থলবাহিনীর কমব্যাট ও সাপোর্ট ট্রেনিং কমান্ডার হিসেবে কর্মরত আছেন।

যুক্তরাজ্যের একটি থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউজের ফাদি হাকুরা মনে করেন, এরা সেনাবাহিনীর বিরাট অংশের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাদের ব্যর্থতা এটাও প্রমাণ করে যে তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের পক্ষে আর সমাজের বেশিরভাগ অংশের কোনো সমর্থন নেই।

তবে তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা ধর্মীয় নেতা ফেতে উল্লাহ গুলেন অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত বলে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র গুলেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন।

কিন্তু গুলেনের সঙ্গে এরদোগানের স¤à¦ªà¦°à§à¦• খারাপ হতে শুরু করে কয়েক বছর আগে। অভ্যুত্থানের পেছনে এদের হাত আছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন এরদোগান এবং তার দলের নেতারা। তবে গুলেন জোর গলায় তা অস্বীকার করেছেন।

ক্যু অচেনা নয় তুরস্কে : এরদোগানের সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চেষ্টার পর সারা বিশ্বে আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছে এ ঘটনা। এর আগেও কয়েকবার ক্যু ঘটেছে দেশটিতে।

১৯৬০, ১৯৭১, ১৯৮০ এবং ১৯৯৭ সালে এসব সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে।

বিরোধী দলগুলোরও নিন্দা : তার্কিস ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এমএইচপি), তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি, পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি) এ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার নিন্দা জানায়।

বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া : এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো, রাশিয়া, জার্মান, কাতার ও ইরান এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।

অভিযোগের তীর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে : অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এর ফলে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানা পোড়েন শুরু হয়েছে। অভ্যুত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ে থাকা ধর্মীয় নেতা ফেতে উল্লাহ গুলেনের ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি  করেন এরদোগান। এর আগে বহুবার তাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জানান এরদোগান কিন্তু মার্কিন কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

জনতার বিজয় : জানবাজী রাখা তুর্কি জনগণের প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হলো সেনা অভ্যুত্থান। রক্ষা পেল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকার। বিশ্বে আবারও প্রমাণিত হলো জনগণই ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে।

ঘটনাপঞ্জি

১৫ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অভ্যুত্থান শুরু। রাত ৮টায় গুলির শব্দ, আকাশে জঙ্গি বিমান ও হেলিকপ্টারের চক্কর। রাত ৯টায় আঙ্কারার টিআরটি ভবনে সেনা অবস্থান। রাত ৯টায় অভ্যুত্থান প্রতিরোধে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের আহ্বান।

রাত ১০ টায় আঙ্কারার কেন্দ্রস্থলে ভারী বিস্ফোরণ। রাত ১১টায় অভ্যুত্থানকারীদের সামরিক হেলিকপ্টার গুলি করে নামানো হয়। রাত ১১ পার্লামেন্ট ভবনে বোমা বিস্ফোরণ। মধ্যরাতে ইস্তাম্বুলে ফিরে আসেন এরদোগান। হঠাৎ বদলে যায় দৃশ্যপট।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।