সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্য : নজরুল ইসলাম খান

স্টাফ রিপোর্টার : সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া জাতীয় ঐক্যের আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলছেন সেটি দাম্ভিকতা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ ১৪ দল বা ২০ দল কারো একার পক্ষে দমন করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে সবার ঐকমত্য। খালেদা জিয়া সেটিই বলেছিলেন। কিন্তু বেগম জিয়ার জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না সরকার। তারা ভাবছে একাই পারবে কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। আগে যেখানে এক দু’জন মারা যেত এখন ২০-২২ জন মারা যাচ্ছে। দেশ ও জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত ১৮ জুলাই সোমবার দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাংবাদিক সস্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বেগম সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক সম্মেলনে দেশে বিরাজমান সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় ঐক্য ইতোমধ্যে হয়ে গেছে এবং যাদের সাথে ঐক্য প্রয়োজন তাদের সাথে ইতোমধ্যে ঐক্য হয়ে গেছে’ এমন মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য জাতিকে হতাশ করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে হবে। বিশিষ্টজনসহ সমাজের সবাইকে নিয়েই গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের আহ্বান বিএনপি অব্যাহত রাখবে। আশা করি আজ না হয় কাল এ আহ্বানে সরকার সাড়া দিবে। নজরুল ইসলাম খান বলেন, শুধুু সরকার বা বিরোধীদলের ঐক্য যথেষ্ট নয়। সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির অনেক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকায় আমরা বারবার জাতীয় ঐক্য গঠনের কথা বলে যাবো। জাতীয় ঐক্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তাতে জাতি হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। নির্বাচনের মাধ্যমে ৫ বার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা, দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর সমর্থনধন্য বিএনপিকে বাদ দিয়ে কীভাবে জাতীয় ঐক্য সম্ভব?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গুলশান-শোলাকিয়ার ঘটনার বিষয়ে তারা আগেই অবগত ছিলেন। তাহলে তিনি বা তার সরকার আগে থেকেই তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিলেন না কেন? আগেই তথ্য পাওয়ার পরেও যে সরকার এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়, সেই সরকারের সামর্থ্য ও আশ্বাসে জনগণ কতটা নির্ভর করতে পারে এমন প্রশ্নও রাখেন নজরুল ইসলাম খান। সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, নির্লিপ্ততা এবং দায়িত্বহীনতা ও ভ্রান্তনীতির কারণে সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অভিযোগ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানালেও সরকার তাতে কর্ণপাত না করে কোনো ঘটনা ঘটলেই তার দায় বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছে। অহেতুক বিরোধী দলের হাজার হাজার নিরপরাধ নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় হয়রানি করে প্রকৃত অপরাধীদের তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদকে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে। তাদের সেই ভ্রান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণেই আজ সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ বিস্তৃত হয়েছে, সারা দেশে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং সমাজে অনাকাক্সিক্ষত অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।

খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান ছিল সময়োপযোগী এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত উল্লেখ করে বিশিষ্ট এ শ্রমিক নেতা বলেন, তার বক্তব্যে জনআকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সকলের আশা ছিল-সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া আসবে। এখনও জাতি সেই আশায় আছে। প্রধানমন্ত্রী যে ঐক্যের কথা বলেছেন তা সরকারে আসীন দলগুলোর এমনকি মহাজোটেরও ঐক্য নয়। আর বিএনপিসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে কিভাবে তিনি জাতীয় ঐক্যের কথা বলেন?

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার এই আহ্বান শুধু সময়োচিত নয়- বাস্তবতার নিরিখে অনিবার্য। কিন্তু ক্ষমতার মোহে বর্তমান সঙ্কটের গুরুত্ব স্বীকার করতে চায় না। জনগণকে সাথে নিয়ে দ্রুত এই সঙ্কট সফলভাবে মোকাবেলা করার প্রস্তাবের তাই বিরোধিতা করছে। সরকারের এই দাম্ভিক অবস্থান দেশ ও জনগণের জন্য আরো বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে বলেই আমরা একটি দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক দল হিসেবে পুনরায় বলতে চাই, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ও কার্যকর গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবে সম্মত হোন। শুধু ক্ষমতাসীনদের ঐক্য সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমন করতে পারেনি বরং তা বৃদ্ধি ও বিস্তৃত করেছে। শুধুমাত্র সকল দল-মতের কার্যকর ঐক্য তা হ্রাস, সঙ্কুচিত ও নিঃশেষ করতে পারবে।