সংবাদ শিরোনামঃ

তুরস্কে জনতার বিজয় ** এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের জনগণ রুখে দিল সেনা অভ্যুত্থান ** সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ** ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র ** তুর্কী গণপ্রতিরোধে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ** রফতানি বাণিজ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ : রাজনৈতিক অস্থিরতা ** মানবতাবাদী বিশ্ব ও সন্ত্রাসবাদী বিশ্বের মাঝখানে মুসলমানদের দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে ** সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্য : নজরুল ইসলাম খান ** তুর্কী জনগণকে অভিনন্দন ** জাতীয় স্বার্থ বনাম হুকুম তামিল করার দৌড়ঝাঁপ ** এ শিক্ষা আমাদের কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ** দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেও হরিলুটের অভিযোগ ** দুর্ভোগের আরেক নাম পাইকগাছার কপিলমুনি শহর ** কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট : সেবা কার্যক্রম ব্যাহত ** কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা ** ইসলামী সংস্কৃতির আলোকেই হোক ঈদ আনন্দ ** বাংলা ভাগের জন্য মুসলমানরা নন হিন্দুরাই দায়ী ** কবির বিশ্বাস ** সানজিদা তাহসিনা বেঁচে থাকবে সবার মাঝে ** জাতির নিকট রেখে গেলেন অনেক প্রশ্ন **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ শ্রাবণ ১৪২৩, ১৬ শাওয়াল ১৪৩৭, ২২ জুলাই ২০১৬

কৃতিত্ব যার বা যাদেরই হোক না কেন, ‘ডিজিটাল’ বাংলাদেশে আজকাল ‘গোপন’ সবকিছুও প্রকাশিত হয়ে পড়ে। ফাঁস হয়ে যায়। এ ব্যাপারে ফেসবুকসহ সামাজিক গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। এরকম একটি মাধ্যমেই গত ১৫ জুলাই দেখলাম, একজন লিখেছেন, গুলশান ও শোলাকিয়ার হত্যাকাণ্ডের আড়াল নিয়ে সরকার চমৎকার কৌশলে ভারতের সঙ্গে রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তারও আগে বিভিন্ন সাজানো নাটকের দিকে জনগণের দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে রেখে সরকার একের পর এক ভারতকে ট্রানজিট, করিডোর দিয়েছে। দেশজুড়ে এই যে হাজার হাজার কিলোমিটারের জাতীয় সড়ক এবং ফ্লাইওভার নির্মাণ করার তুমুল কার্যক্রম চলছে সেগুলোর সবও আসলে ভারতের স্বার্থেই করা হচ্ছে। যাতে ২০, ৩০ এবং ৪০-৫০ চাকার ভারতীয় মালবাহী যানবাহন বাংলাদেশের পবিত্র জমিনের ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারে। ভারতের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যেতে ও আসতে পারে। সে সব যানবাহনে পণ্যের নামে মিসাইল ধরনের মারণাস্ত্র থাকলেও বাংলাদেশের বলার ও করার কিছুই থাকবে না। কারণ, মুহিত সাহেবরা শত ও হাজার টাকার অংকে টোল বা ভাড়া পেলেই আনন্দে ডুগডুগি বাজাবেন। জনগণকে শোনাবেন, তারা ভারতের যানবাহনকে বিনা ভাড়ায় যাতায়াত করতে দেননি। শোনাবেনও এমনভাবে যেন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল ভারতের কাছে ‘ভাড়া’ খাটার জন্য!

ফেসবুকে যিনি লিখেছেন তিনি তো বটেই, অন্য অনেকেও তাদের মন্তব্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নাম ধরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রশ্নসাপেক্ষ নীরবতার তীব্র সমালোচনা করেছেন। জানতে চেয়েছেন, এসব দল কেন সরকারের জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি ও কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে না, কেন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ছে না? তাদের ধারণা, দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোট যদি কঠোর অবস্থানে থাকতো তাহলে সরকারের পক্ষে ভারতকে এভাবে সবকিছু দিয়ে দেয়া সম্ভব হতো না। অন্তত এতটা সহজে পারতো  না সরকার।

বিষয়টি অবশ্যই চিন্তা করার মতো। অন্যদিকে সত্য কিন্তু মোটেও সহজ-সরল নয়। যারা লিখেছেন ও মন্তব্য করেছেন তারা সম্ভবত ২০০৬ সালের অক্টোবরে সংঘটিত লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাস থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ‘ডিজিটাল’ নির্বাচন, অচিন্ত্যনীয়ভাবে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা, মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের প্রচণ্ড ধাওয়ার মুখে রাখা, হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে ঢোকানো, গণজাগরণ মঞ্চ নামের নাটক সাজানো এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন ও একদলীয় বা একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে আসার মতো বিষয়গুলো নিয়ে তেমনভাবে চিন্তা করেননি। শুধু তা-ই নয়, তাদের অনেকে এমনকি দেশবিশেষের কৌশলের ফাঁদে পা দিয়ে অন্য একটি বহুল আলোচিত প্রশ্ন নিয়েও মাতামাতি করেছেন। বলেছেন, বিএনপি যদি জামায়াতের ‘সঙ্গ’ ত্যাগ করতো তাহলেই নাকি সব অসম্ভব সম্ভব হয়ে যেতো! বিএনপি এখনো, এত কিছুর পরও কেন জামায়াতকে জোট থেকে বিদায় করছে না, তাড়িয়ে দিচ্ছে à¦¨à¦¾Ñ à¦¸à§‡ জন্যও কেউ কেউ তাদের মাথাব্যথার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে অতীতে বিভিন্ন উপলক্ষে আলোচনা করেছি। আমি চাই আর না চাই, আগামী দিনগুলোতেও আলোচনা করতেই হবে। কারণ, বিএনপি এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রধান রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা যা-ই বোঝাতে চান না কেন, জামায়াতে ইসলামীও ‘গাঙ্গের জলে’ ভেসে আসা দল নয়। বিশেষ করে নির্বাচনী হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রে জামায়াত বরং এতটাই প্রভাবশালী দল যে, একে এড়িয়ে বা বাদ দিয়ে দেশে কোনো নির্বাচনের কথাই কল্পনা করা যায় না। ক্ষমতার পালাবদলেও জামায়াতের ভূমিকাই প্রধান থাকে। কথাটা সবচেয়ে ভালো জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাস থেকে আজ পর্যন্ত যা কিছু করা হয়েছে ও হচ্ছে তারও পেছনে প্রধানত রয়েছে ‘জামায়াত ঠেকাও’-এর উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে পরবর্তী কোনো নিবন্ধে আলোচনা করার ইচ্ছা রইল।

এবার মূলকথায় ফিরে আসা যাক। সে কথাটা ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দু-একটি চুক্তি, যার প্রতিটির ব্যাপারেই সরকার গোপনীয়তা বজায় রেখেছে। শুধু তা-ই নয়, ‘ডিজিটাল’ প্রযুক্তির কারণে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও সরকার সামান্য পাত্তা পর্যন্ত দেয়নি। তোয়াক্কাও করেনি। উদাহরণ দেয়ার জন্য সর্বশেষ গত ১২ জুলাই স্বাক্ষরিত রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তির উল্লেখে যাওয়ার আগে অনেক কম আলোচিত অন্য একটি চুক্তি সম্পর্কে জানিয়ে নেয়া দরকার। এটা দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের চুক্তি। স্বাক্ষরিত হয়েছে গত ৯ মার্চ। এর পর পর প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, এমনভাবে চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়েছে, যার প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কঠিন শর্তের অধীনে থাকতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে ভারত দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে। কিন্তু ঋণের অর্থ বাংলাদেশ নিজের ইচ্ছা মতো ব্যয় করতে পারবে না। সম্পূর্ণ অর্থ রেল, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ এমন কয়েকটি খাতেই শুধু ব্যবহার করা যাবে, যেগুলোর মাধ্যমে উপকৃত ও লাভবান হবে কেবলই ভারত।

কথা আরো আছে। এসব খাতে বাংলাদেশ যেসব প্রকল্প গ্রহণ করবে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ও সেবার অন্তত ৯০ শতাংশ ভারত থেকে এবং ভারতের নির্ধারণ করে দেয়া মূল্যে আমদানি করতে হবে। আন্তর্জাতিক রীতি ও নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের চুক্তির মেয়াদ সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছরের হয়ে থাকে। অন্যদিকে সরকার চুক্তি করেছে মাত্র ২০ বছরের জন্য। সুদের হারের ক্ষেত্রেও রয়েছে যথেষ্ট কঠিন মারপ্যাঁচ। এ ধরনের চুক্তিতে সুদের হার সাধারণত শূন্য দুই থেকে শূন্য তিন বা সর্বোচ্চ শূন্য পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে এই চুক্তিতে সুদের হার ধরা হয়েছে এক শতাংশ হারে। শুধু তা-ই নয়, নির্ধারিত সময়ে ঋণের অর্থ ব্যয় না করতে পারলে সুদের হার সরাসরি দুই শতাংশে উন্নীত হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, গত বছর ২০১৫ সালের জুন মাসে ঢাকা সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রনাথ মোদি বাংলাদেশকে দুইশ’ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সে ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচ্য চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে উভয় দেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ভারতীয়রা জানিয়েছেন, এ চুক্তির অর্থ প্রধানত বিদ্যুৎ, রেলপথ, সড়ক ও নৌ পরিবহনসহ এমন কয়েকটি খাতে ব্যবহার করতে হবে, যেগুলোর সঙ্গে ভারতের প্রত্যক্ষ স্বার্থ জড়িত রয়েছে। বলা হচ্ছে, এটাই বাংলাদেশকে দেয়া ভারতের সবচেয়ে বড় ঋণ। এর আগে ২০১০ সালে ভারত একশ’ কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছিল। ওই অর্থে গৃহীত ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে আর ঋণের সমুদয় অর্থই দিয়েছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। এবারের চুক্তিতেও একই এক্সিম ব্যাংক অর্থের যোগান দেবে বলে জানা গেছে। এই চুক্তির আওতায় ২৫ থেকে ৩০টি প্রকল্প নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, ভারতের সম্মতিক্রমে যেগুলোর অনুমোদন দেবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।

অবকাঠামোর উন্নয়নসহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য ঋণ নেয়া কোনো নতুন বিষয় না হলেও ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তিকে দেশপ্রেমিকরা স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য বলে মনে করতে পারেননি। সুদের অত্যধিক উচ্চ হারের পাশাপাশি কঠিন বিভিন্ন শর্ত এর প্রধান কারণ। মাত্র ২০ বছরের মেয়াদের জন্যও আপত্তি ও প্রতিবাদ উঠেছে। কারণ, এত অল্প সময়ের জন্য সাধারণত কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না করতে পারলেই সুদের হার লাফিয়ে দ্বিগুণ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার যে কঠিন শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে তাও আন্তর্জাতিক রীতি ও নিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে সমর্থন করা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা, এই চুক্তির অর্থে নেয়া প্রতিটি প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ভারত থেকে আনতে তো হবেই, কিনতেও হবে ভারতীয়দের বেঁধে দেয়া দামে। এক লাখ টাকার কোনো পণ্যের দাম তারা যদি ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে তাহলে সে দামেই বাংলাদেশকে কিনতে হবে।

এভাবে পর্যালোচনায় দেখা যাবে, ঋণের আড়ালে বাংলাদেশকে ভারত আসলে গোলামীর জিজ্ঞিরে আবদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারও বিন্যা বাক্য ব্যয়ে এসব কঠিন শর্ত মেনে নিয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে সম্ভাব্য প্রকল্পগুলোর দিকেও লক্ষ্য করা দরকার। কারণ, ২০১০ সালে পাওয়া একশ কোটি ডলারের মধ্যে ৭০ কোটি ডলারই রেলখাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে। ওই ঋণের অর্থে যে ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে তার মধ্যে খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণসহ ১৪টিই রেল সংক্রান্ত। মংলা পোর্টের উন্নয়নের কাজও চলছে একযোগে। এসবের মাধ্যমে বাংলাদেশের তুলনায় প্রকৃতপক্ষে ভারতই বেশি লাভবান হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন তথ্যাভিজ্ঞরা। একই সম্ভাবনা রয়েছে অলোচ্য চুক্তির ব্যাপারেও। এজন্যই দেশপ্রেমিক সকল মহল কঠিন শর্তযুক্ত এবং প্রধানত ভারতের স্বার্থে স্বাক্ষরিত চুক্তির বিরোধিতা করেছেন। দাবি জানিয়ে বলেছেন, সরকারের উচিত চুক্তিটি পুনরায় পর্যালোচনা করা এবং কঠিন শর্তগুলো পরিত্যাগ করে এমনভাবে নতুন শর্ত যুক্ত করা যাতে ভারত এককভাবে লাভবান হতে না পারে। যাতে বাংলাদেশের জন্যও কিছুটা লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

অন্যদিকে দেশপ্রেমিকদের দাবির অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার ধারে-কাছে পর্যন্ত না গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে উল্টো রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এটা গত ১২ জুলাইয়ের ঘটনা। চুক্তিতে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ভারত-বংলাদেশ মৈত্রী সুপার পাওয়ার প্রজেক্ট’। ঢাকায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুয়ায়ী আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে বিদ্যুতকেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রদীপ কুমার পুজারী। পরদিন প্রকল্পের স্থান পরিদর্শনকালে বিদ্যুৎ সচিবসহ বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা সঙ্গে থাকলেও বিদ্যুতকেন্দ্র সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়ে সিদ্ধান্তমূলক ঘোষণা এসেছে ভারতীয়দের পক্ষ থেকে। সেখানে ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাও উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয়রা জানিয়েছেন, সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর উদ্দেশ্যে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ থেকে তিন পয়সা হারে আদায় করে ৩০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হবে।  প্রতি বছর এই টাকা স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়ন খাতে ব্যয় করবে দু’ দেশের সরকার। মহিলাদের জন্য সেলাই এবং যুবকদের জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। সেদিন এ সংক্রান্ত একটি কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেছেন তারা।

অন্যদিকে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প চুক্তির বিরোধিতা করেছেন দেশপ্রেমিক বিভিন্ন মহল। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে চুক্তিটিকে জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হলে ওই এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য, গাছপালা, পশু-পাখি এবং প্রাণী সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। সুন্দরবন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। সে কারণেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পরিবেশবাদী সংগঠন ও সংস্থা, পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে রামপালে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকার সে প্রতিবাদে কর্ণপাত না করে ভারতের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সরকার এমনকি পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রেরও তোয়াক্কা করেনি। সরকারের এই জাতীয় স্বার্থ বিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়ে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল অবিলম্বে চুক্তিটি বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। না হলে জনগণ আন্দোলন গড়ে তুলবে বলেও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন। (ফেসবুকে যারা জামায়াতে ইসলামীর নিন্দা করেছেন, তাদের বিষয়টি জানা দরকার!)

সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকেও কঠোর বিরোধিতা করে চুক্তিটি বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে। ১৩ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল এবং টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, চুক্তিটি স্বাক্ষরের আগে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতামত যেমন নেয়া হয়নি তেমনি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণশীল আইন, নীতি-নিয়ম ও কনভেনশনও লঙ্ঘন করা হয়েছে। সরকার দেশবাসীর পাশাপাশি বিশ্ববাসীর অনুরোধ ও দাবিকেও উপেক্ষা করেছে। এর ফলে সুন্দরবনই শুধু ধ্বংস হয়ে যাবে না, প্রাকৃতিক পরিবেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে কারণে ১২ জুলাই তারিখটি ‘কলংকজনক ও দুঃখের দিন’ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় কমিটি। এর ভিত্তিতে কোনো নির্মাণ কাজ শুরু না করার জন্যও দাবি জানিয়েছে কমিটি।

দাবিটির সঙ্গে সর্বান্তকরণে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন দেশপ্রেমিক সকল দল ও মহল। কারণ, মুখে যতো আশ্বাসই দেয়া হোক না কেন, দেশে দেশে প্রমাণিত সত্য হলো, এ ধরনের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র আশপাশের বহু কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় পরিবেশের সর্বনাশ ঘটায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো বিনষ্ট হয়ে যায়ই, জীব-বৈচিত্র্য, গাছপালা, পশু-পাখি এবং প্রাণী সম্পদেরও অপূরণীয় ক্ষতি হয়। রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্রও বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতির কারণ হয়ে উঠবে। কেন্দ্রটি চালু হলে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে সুন্দরবন। এর প্রাকৃতিক ভারসাম্যও নষ্ট হবে।

এখানে ভারত ও আওয়ামী লীগ সরকারের আশ্বাসের দিকে লক্ষ্য করা দরকার। ওই এলাকার জনগোষ্ঠীর ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার নামে দু’ দেশের সরকারের পক্ষ থেকে বছরে মাত্র ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করার যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সে অর্থও প্রতি ইউনিটে তিন পয়সা হিসেবে জনগণের কাছ থেকেই আদায় করা হবে। এটা হবে মাছের তেলে মাছ ভাজার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ গরু মেরে জুতা দান করতে চাচ্ছে দু’দেশের সরকার। বড় কথা, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, কোনোভাবে প্রকল্পটি নির্মাণ ও চালু করার কৌশল হিসেবেই প্রলোভন দেখানো হয়েছে। সে প্রলোভনও বছরে মাত্র ৩০ কোটি টাকার! অন্যদিকে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্রটি চালু হলে পরিবেশসহ সকল বিষয়ে সর্বনাশের শিকার হবে কেবল বাংলাদেশ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’ সুন্দরবন তো ধ্বংস হয়ে যাবেই। তাছাড়া যে বিদ্যুৎ সেখানে উৎপাদিত হবে তার মাধ্যমেও লাভবান ও উপকৃত হবে শুধু ভারত। বাংলাদেশের কোনো লাভ বা উপকারই হবে না। অর্থাৎ রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র বাংলাদেশের জন্য সকল দিক থেকে শুধু ক্ষতি ও সর্বনাশেরই কারণ হয়ে উঠবে। বলা দরকার, মূলত সে কারণেই সরকারের পরিবেশ অধিদফতর এখনো প্রকল্পের ব্যাপারে ছাড়পত্র দেয়নি।

কিন্তু হলে কি হবে, ক্ষমতাসীনদের রয়েছে হুকুম তামিল করার তাড়া। এজন্যই রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র সংক্রান্ত চুক্তি শুধু নয়, ভারতের ইচ্ছা অনুযায়ী একের পর এক সব চুক্তিতেই স্বাক্ষর করে চলেছেন তারা। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের ইতিহাসের আলোকে দেশপ্রেমিক পর্যবেক্ষকরা কিন্তু মনে করেন, দরকার ফুরিয়ে গেলে সেবাদাসদের সাধারণত ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হয়। কে জানে, বাংলাদেশেও ইতিহাসের সে পুনরাবৃত্তি দেখার সময় দ্রুত এগিয়ে আসছে কি না!

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।