সংবাদ শিরোনামঃ

এ কোন রাজনীতির আগুন? ** গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য দরকার ** গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করুন : প্রধানমন্ত্রী ** অভিভাবকত্বের দায়িত্ব নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ** গণতান্ত্রিক শক্তির আন্দোলনেই জাতীয় মুক্তি ত্বরান্বিত হবে ** চীনের নেতৃত্বে বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল ** শ্রমিক আন্দোলনকে গণমুখী করতে হবে-আ ন ম শামসুল ইসলাম **

রেজি: ডিএ ৫১৭।। ৫৯ বর্ষ : ৩২তম সংখ্যা ॥ ঢাকা শুক্রবার ৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৭ ॥ ৪ রবি. সানি. ১৪৪২ : Friday 20 November 2020

দরবার-এ শাহ : অন্যসব দেশের মতো বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আলোচনা অনেকটাই থিতিয়ে পড়েছে। কারণ, অনেক নাটকীয়তার পর আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও নিজের পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, জো বাইডেন যেখানে ৫৩৮ ‘ইলেক্টর’-এর মধ্যে ৩০৬ জনের ভোট পেয়েছেন, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২ জনের ভোট।
অর্থাৎ মানতে না চাইলেও জো বাইডেনের কাছে বিরাট ব্যবধানে পরাজয় ঘটেছে ট্রাম্পের। এখন অপেক্ষা চলছে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার, যেগুলোর অবসান ঘটবে আগামী বছর ২০ জানুয়ারি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সেদিনই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। হোয়াইট হাউস থেকে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এবং হেলিকপ্টারে চড়ে বিদায় নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে আলোচিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নয়, বর্তমান নিবন্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যর্থতার কিছু বিশেষ দিক সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করার ইচ্ছা রয়েছে। প্রথমেই একটি প্রচারণার কথা উল্লেখ করতে হয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হওয়ার এবং ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেয়ার পরপর এই সুচিন্তিত প্রচারণা জোরেশোরে চালানো হয়েছিল যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তির পরিবর্তে যুদ্ধকে অনিবার্য করবে। প্রচারণায় এ কথাও বলা হয়েছিল, সত্যি শুরু হলে সে যুদ্ধ কোনো বিশেষ অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং পরিণত হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা অবশ্য বিনা কারণে অমন আশঙ্কা প্রকাশ করেননি। সে সময়ের কিছু তথ্য স্মরণ করা যাক। কমিউনিস্ট রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন পরিষ্কার হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, পারমাণবিক বোমার চাবি তার নিজের টেবিলের ওপর থাকে। বড়কথা, ওইসব বোমা পুরো যুক্তরাষ্ট্রকেই ধ্বংস করে দিতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দেরি করেননি। সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়ে বলেছিলেন, তার টেবিলে কিম জং উনের চাইতে অনেক বড় এবং কয়েকটি বোতাম রয়েছে। আর তিনি যদি সে বোতামগুলো টেপেন, তাহলে উত্তর কোরিয়া মাটির সঙ্গে মিশে যাবে!
এভাবেই উত্তর কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রেসিডেন্ট সে সময় বিশ্বব্যাপী আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন। এই আলোচনা কিন্তু একসময়ের রেসলার বা কুস্তিগীর ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই চলে আসছিল। এমন একটি প্রচারণাও à¦›à¦¿à¦²Ñ à¦¯à¦¾à¦° মূলকথা হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুধু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধই বাধাবেন না, বিশ্বযুদ্ধ না বাধিয়ে তিনি ছাড়বেনই না। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলেই বিশ্ববাসীকে আরো একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ দেখতে এবং সে যুদ্ধের অসহায় শিকারে পরিণত হতে হবে। অত্যন্ত ভীতিকর সন্দেহ নেই, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট দেখিয়ে এসেছেন। কিম জং উনকে হুমকি দেয়ার আড়ালে তিনি আসলে যুদ্ধের ভীতি দেখিয়েছেন।
এখানে উত্তর কোরিয়ার উদাহরণ দেয়ার কারণ, কমিউনিস্ট এদেশটির সঙ্গে মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর ধরে কথার তথা বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে থেকেছেন ট্রাম্প। মাঝখানে পরিস্থিতি এমন পর্যায়েও পৌঁছে গিয়েছিল, যখন মনে হচ্ছিল যেন যুদ্ধ বেধে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে উত্তর কোরিয়া প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই মার্কিন সা¤à§à¦°à¦¾à¦œà§à¦¯à¦¬à¦¾à¦¦à§‡à¦° কঠোর বিরোধিতা করে এসেছে। এই বিরোধিতার সূচনা করে গেছেন দেশটির প্রতিষ্ঠাতা নেতা এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের দাদা বা পিতামহ কিম ইল সুং। কিম জং উনও দাদার উপযুক্ত নাতির ভূমিকা পালন করে চলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার পরিণতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে, সে সম্পর্কে সব জেনে-বুঝেই তিনি একের পর এক উসকানি দিয়ে এসেছেন। ২০১৭-১৮ সালের সংকটের সময়ও তাকে যথেষ্ট উদ্ধতই দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট কিম জং উন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এমনকি ‘অথর্ব বৃদ্ধ’ বলে ব্যঙ্গ-তামাশা করতেও ছাড়েননি। ভাবখানা এমন ছিল যেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চাইলে তার সঙ্গে কুস্তিও লড়তে রাজি আছেন তিনি! অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিন্তু ঠিক পাহলোয়ানসুলভ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেননি। তাকে বরং সময়ে সময়ে পিছিয়ে যেতে বা পশ্চাদপসরণ করতেও দেখা গেছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, উত্তর কোরিয়ার তথা প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের এত সাহস ও শক্তির উৎস কোথায়? সংক্ষেপে উত্তর হলো, একদিকে দেশটির নিজের রয়েছে পারমাণবিক সমরাস্ত্র, অন্যদিকে পাশেই আছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি গণচীন। রাশিয়ার সঙ্গেও দেশটির সম্পর্ক যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ। তাছাড়া উত্তর কোরিয়ার জনগণও প্রবলভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী। সেভাবেই জনগণকে তৈরি করা হয়েছে। তারা বিশ্বাস করে, যেহেতু অর্থনীতির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দুই মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় দরিদ্র, সেহেতু যুদ্ধ বাধলে বা আক্রান্ত হলেও তাদের হারানোর কিছু নেই। অন্যদিকে তাদের নেতা কিম জং উন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর আক্রমণ চালানোর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করার ক্ষমতা ও যোগ্যতা রাখেন। একই কারণে উত্তর কোরিয়া যেমন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিকে পরোয়া করেনি, বরং সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিল, অন্যদিকে মুখে হুমকি উচ্চারণ করলেও ট্রাম্পের পক্ষে অন্তত পিয়ং ইয়ং-এর বিরুদ্ধে হামলা চালানো এবং যুদ্ধ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
দু’দেশের সম্পর্ক অবশ্য এখনো উত্তেজনাপূর্ণ রয়েছে। ক’দিন পরপর দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ নতুন নতুন পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট কিম জং উন জানান দিয়ে চলেছেন, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে পরোয়া করে না। বিশেষ করে ‘বৃদ্ধ ও অথর্ব’ হিসেবে বর্ণিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিতে উত্তর কোরিয়া মোটেও ভীত বা উদ্বিগ্ন নয়। আক্রান্ত হলে দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। সে ঘোষণার অংশ হিসেবেই তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের বোতাম সম্পর্কে জানান দিয়েছিলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এ ধরনের ঘোষণা ও হুমকিতে পিছিয়ে যাওয়ার মতো লোক নন। তা সত্ত্বেও তিনি যখন হুমকি উচ্চারণের বাইরে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নেননি, তখনই বিশ্বের দেশে দেশে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা বলতে শুরু করেছিলেন, বিশ্বকে অশান্ত করে তোলার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের সম্ভবত দ্বিতীয় কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১৭ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসে সত্যিই তেমন অন্তত একটি পরিকল্পনা সম্পর্কে জানান দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আশু কোনো কারণ বা উপলক্ষ ছাড়াই আকস্মিক এক বিবৃতিতে তিনি পূর্ব জেরুসালেমকে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের রাজধানী বলে ঘোষণা করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্যালেস্টাইনসহ মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্পও আসলে সেটাই চেয়েছিলেন। উত্তর কোরিয়াকে ‘দেখে’ আসার পর মুসলিম বিশ্বকে ‘দেখা’ এবং ‘এক হাত নেয়া’ তার দরকার ছিল।
কিন্তু এ ব্যাপারেও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিরাশই হতে হয়েছে। তিনি এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ‘হাতের পুতুল’ এবং ‘হাতিয়ার’ হিসেবে পরিচিত জাতিসংঘেও সফল হতে পারেননি। পূর্ব জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রশ্নে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে ওয়াশিংটনের তথা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের লজ্জাকর পরাজয় ঘটেছিল। এই ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়েছিল তুরস্ক ও ইয়েমেনের উত্থাপিত প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে। ভোটাভুটির ঠিক প্রাক্কালে আন্তর্জাতিক কূটনীতির সকল রীতি ও সৌজন্যের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, কোন কোন রাষ্ট্র তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভোট দেয়, তা তিনি ‘দেখে’ ছাড়বেন। এটা ছিল এক ন্যক্কারজনক হুমকি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তুরস্ক ও ইয়েমেনের উত্থাপিত প্রস্তাবের পক্ষেই ভোট দিয়েছিল ১২৮টি রাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ভোট পেয়েছিল মাত্র ৯টি। তাছাড়া ৩৫টি রাষ্ট্র ভোটদানে বিরত থেকেছিল। তখন বলা হয়েছিল, বিরত থাকার মাধ্যমে ওই রাষ্ট্রগুলোও প্রকৃতপক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছিল। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১৬৩টি রাষ্ট্রের সমর্থন অর্জন করতে পারেননি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ওদিকে মুসলিম বিশ্বে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্ব জেরুসালেম সংক্রান্ত ঘোষণা প্রবল প্রতিক্রিয়া ঘটিয়েছিল। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিল ইসলামী সম্মেলন সংস্থা ওআইসি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে ওআইসি পূর্ব জেরুসালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেছিল। ওআইসির চেয়ারম্যান এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানের আহ্বানে দেশটির বৃহত্তম নগরী ইস্তাম্বুলে ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের বিশেষ সম্মেলনে গৃহীত এক ঘোষণায় ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং পূর্ব জেরুসালেমকে এর রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বিশ্বের সকল দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল।
মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্টের পূর্ব জেরুসালেম সংক্রান্ত ঘোষণার প্রতিবাদ জানানোর এবং মুসলিম বিশ্বের করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্যেই প্রেসিডেন্ট এরদোগান ওআইসির এই বিশেষ শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন। সম্মেলনের ঘোষণায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে আইনগতভাবে অবৈধ বলে মন্তব্য করে বলা হয়েছিল। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে, চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এবং নতুন করে ছড়িয়ে পড়বে প্রাণঘাতী সংঘাত। আর এ ধরনের সকল প্রতিক্রিয়ার জন্যই দায়ী থাকবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পথ ধরে কোনো দেশ যদি পূর্ব জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে মুসলিম দেশগুলো সম্পর্ক ছিন্নসহ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে বলেও ঘোষণায় সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল। ওআইসি একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি ভূখ-ের ওপর থেকে ইসরাইলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে তৎপর হওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।
ওআইসির ইস্তাম্বুল শীর্ষ সম্মেলনে দেয়া ভাষণে ইসরাইলকে একটি ‘অবৈধ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হিসেবে চিহ্নিত করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছিলেন, দেশটির ইহুদি সরকার ক্রমাগত ফিলিস্তিনের ভূখ- দখল করে চলেছে। ইসরাইলের এই সম্প্রসারণবাদী তৎপরতাকে কোনোক্রমেই গ্রহণ করা হবে না, বরং প্রতিহত করতে হবে। জেরুসালেম তথা বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকৃতপক্ষে বিশ্বমানবতাকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। এই ভুল, বেআইনি ও উসকানিমূলক সিদ্ধান্তের পেছনে খ্রিস্টান ও ইহুদিবাদী মন-মানসিকতা কাজ করেছে বলে কটাক্ষ করে প্রেসিডেন্ট এরদোগান সিদ্ধান্তটি বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি আরো বলেছিলেন, যেসব দেশ আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারকে মূল্যায়ন ও সম্মান করে, সেসব দেশের উচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করা এবং জেরুসালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া।
ওআইসির বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছিলেন, ওআইসির পক্ষ থেকে পূর্ব জেরুসালেম তথা আল-কুদ্সকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তার বাস্তবায়নে মুসলিম দেশগুলোকে কঠোর অবস্থান নিয়ে ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রেসিডেন্ট রুহানি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে বলেছিলেন, মুসলিম দেশগুলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলে মার্কিন সরকার তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারবে না। গভীর আশাবাদ ব্যক্ত করে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, বিশ্বের সব দেশের মুসলিমরাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের মুসলিম ও ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বুঝতে পেরেছে এবং এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। ইস্তাম্বুল ঘোষণাও তার প্রমাণ।
ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ওআইসির বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ ছাড়াও ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থে বক্তব্য যেমন রাখা হয়েছিল, তেমনি নেয়া হয়েছিল কিছু সিদ্ধান্তও। পূর্ব জেরুসালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে উল্লেখ করে ওআইসির দেয়া ঘোষণার প্রতি সর্বান্তকরণে সমর্থন জানিয়েছিল মুসলিম বিশ্বের সকল রাষ্ট্র। মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বিশ্বের প্রায় সকল দেশও যে যোগ দিয়েছিল, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে জাতিসংঘের à¦­à§‹à¦Ÿà¦¾à¦­à§à¦Ÿà¦¿à¦¤à§‡Ñ à¦¯à§‡à¦–à¦¾à¦¨à§‡ ১২৮টি সদস্যরাষ্ট্র সরাসরি ভোট দিয়ে এবং ৩৫টি রাষ্ট্র ভোটদানে বিরত থাকার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। দেশগুলো প্রকৃতপক্ষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেয়া সিদ্ধান্তেরই বিরোধিতা করেছিল।
বলা দরকার, ওআইসির সিদ্ধান্ত ও ঘোষণার এবং জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটির পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। কারণ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল অবৈধ পন্থায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মুসলিম অধ্যুষিত ফিলিস্তিনের ভূখ- দখল করে ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠাকালেই ইহুদি সমরবাদীরা জেরুসালেমের পশ্চিম অংশ দখল করে নিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ পাশ্চাত্যের মুসলিমবিরোধী দেশগুলোর সমর্থন ও সহযোগিতায় শক্তিশালী হয়ে ওঠা ইসরাইল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পূর্ব জেরুসালেমও দখল করে নেয়। ইসরাইলের সম্প্রসারণবাদী নেতারা একই সঙ্গে ঘোষণা করেন, মুসলিমদের পবিত্র স্থান বায়তুল মোকাদ্দাস তথা পূর্ব জেরুসালেমই হবে ইসরাইলের রাজধানী।
কিন্তু ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র প্রতিরোধের পাশাপাশি সকল আরব রাষ্ট্র এবং বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের তীব্র বিরোধিতার কারণে এতদিন ইসরাইল তার সে ঘোষণার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। অন্যদিকে পূর্ব জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু ইসরাইলের সমর্থনেই অবস্থান নেননি, পরিষ্কার উসকানিও দিয়েছিলেন। এর ফলে ইসরাইল যেমন উৎসাহিত হবে, তেমনি প্রতিরোধ গড়ে তুলবে ফিলিস্তিনিরা। তারা যে সঙ্গীহীন বা দুর্বল নয়, বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বই যে ফিলিস্তিনিদের পাশে à¦¦à¦¾à¦à§œà¦¾à¦¬à§‡Ñ à¦¸à§‡ ঘোষণাই এসেছিল ওআইসির ইস্তাম্বুল শীর্ষ সম্মেলন থেকে। জাতিসংঘেও এ বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে। মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকা অন্য সকল দেশও ইসরাইলের অন্যায় যুদ্ধ ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল। একাত্মতা প্রকাশ করেছিল ওআইসির ঘোষণার সঙ্গে।
এতে অবশ্য বেশি আশাবাদী হয়ে ওঠার সুযোগ ছিল না। কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওআইসির আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার সিদ্ধান্ত বাতিল করেননি, বরং জাতিসংঘে ভোটাভুটির আয়োজন করিয়েছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই অবস্থান প্রকারান্তরে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর ছিল। বলা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধ বাধানোর পথে পা বাড়িয়েছিলেন। ওদিকে অমীমাংসিত অবস্থায় ছিল উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সৃষ্ট সমস্যা। সব মিলিয়েই মনে করা হচ্ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তির পরিবর্তে যুদ্ধকেই অনিবার্য করতে চাচ্ছে। সত্যি শুরু হয়ে গেলে সে যুদ্ধ কোনো বিশেষ অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং পরিণত হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে। অমন আশঙ্কাই করেছিলেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। সে সময় বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে  লক্ষ করা হচ্ছিল। একই সঙ্গে উত্তর কোরিয়া এবং মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পথে ডোনাল্ড ট্রাম্প সত্যি এগিয়ে যাওয়ার ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত নেবেন কি না। কারণ তেমন ক্ষেত্রে চীন তো বটেই, এমনকি রাশিয়াও জড়িয়ে পড়বে। ওদিকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এর মাত্র দিন কয়েক আগেই ঘোষণা করেছিলেন, তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কোনো সিদ্ধান্তকে ‘পরোয়া’ করেন না। কথাটার মর্মার্থ নিশ্চয়ই বুঝেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। সে কারণেই কি না সেটা একটি বড় প্রশ্ন বটে, তবে প্রমাণিত সত্য হলো, মুখে অনেক লম্বা কথা বললেও এবং হুমকি উচ্চারণ করলেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্তু বিশ্বকে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘রেসলিং রিং’ বানাতে পারেননি। তাকে বরং অঘোষিতভাবে পরাজয় মানতে হয়েছিল।
নিজ দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একইভাবে লজ্জাকর পরাজয় বরণ করতে হয়েছে! সে কারণে তার অর্জনের পাল্লা ভারী হতে পারেনি। তাকে বরং একজন ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট হিসেবেই বিদায় নিতে হচ্ছে।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।