॥ একেএম রফিকুন্নবী ॥
আদম আ. থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মদ সা. পর্যন্ত কুরআনে বর্ণিত ২৫ জন নবী-রাসূলই বিবাহ করেছেন, সংসার করেছেন, স্বামী-স্ত্রী, শ^শুরবাড়ির দায়িত্ব পালন করেছেন। সমাজে-রাষ্ট্রে এর প্রভাবে আত্মীয়তার বন্ধন মজবুত হয়েছে। বংশবিস্তার হয়েছে। যুগ যুগ ধরে দেশ থেকে দেশান্তরে মানবগোষ্ঠীর বিস্তার হয়েছে। আমরা বাংলাদেশিরা নবীর সাহাবীদের সংস্পর্শে আল্লাহর বাণী এবং নবীদের দেখানো পথে ও মতে আল্লাহর দীনের কাজ বুঝে তা আমল করার চেষ্টা করছি। এ চেষ্টার সফলতার জন্য আমরা নিয়ামতভরা সীমাহীন জান্নাত আর যারা বিরোধিতা করবে, তাদের জন্যও রয়েছে সীমাহীন আগুনে ভরা জাহান্নাম।
মহান আল্লাহ তায়ালা নারী-পুরুষ সৃষ্টি করেছেন এমনভাবে যে, নারী-পুরুষের সমন্বয়েই সামাজিকভাবে সমাজ, রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে। বংশবিস্তার ঘটছে, যার যার কাজের অগ্রগতির ফলেই সমাজে ভালো ও মন্দের বিচারে এগিয়ে যাচ্ছে আগামী দিনের সমাজবিপ্লব। আমরা মহান আল্লাহর বাণী ও রাসূলের প্রদর্শিত পথেই ব্যক্তি-সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করে সমাজবিপ্লব করতে চাই। নারী-পুরুষের বৈবাহিক জীবনে সুখ ও শান্তির প্রবাহ সৃষ্টি করে দুনিয়াকে আখিরাতের শস্যক্ষেত্র বানাতে চাই, জনগণের কল্যাণ করতে চাই, সমাজকে নারী-পুরুষ, ছেলেমেয়ে নাতি-নাতনি নিয়ে সুখে সংসার করতে চাই। দুনিয়ায় ভালো চাই, আখিরাতে চাই জান্নাতুল ফেরদাউস, ইনশাআল্লাহ।
দেশে দেশে বিবাহপ্রথার মাধ্যমেই সব ধর্মের নারী-পুরুষই সংসার করছে, বংশবিস্তার হচ্ছে, ছোট-বড়, বুড়া-বুড়ির আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ যখন ছোট থাকে, সে মায়ের আদরে এবং তার দুধ পান করে বড় হয়। বাবার স্নেহ, দাদা-দাদি, নানা-নানির আদরে বড় হতে থাকে। তাদের কথা ও কাজ অনুসরণ ও অনুকরণ করে তাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে। যারা ছোটবেলা থেকে মা-বাবার নামাযের জায়নামায লক্ষ্য করে, তারা তাদের অজান্তেই সময় সময় জায়নামাযে সেজদায় পড়ে যায়। আপনি-আমি লক্ষ করলেই দেখতে পারব ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কীভাবে জায়নামাযে অভ্যস্ত হয়ে যায়। আমাদের ঘরেও ৬ জন নাতি-নাতনি আছে, ছেলেমেয়ের ঘরে। মেয়েদের ঘরের নাতি-নাতনি তো তাদের দাদা-দাদির কাছেই বড় হচ্ছে এবং দাদা-দাদির খেলার সাথী হিসেবে তাদের মনে শান্তির খোরাক জোগাচ্ছে। আর আমাদের ঘরের নাতি-নাতনি তো আমাদের খেলার যেমন সাথী; অন্যদিকে আমাদের কাজের এনার্জিও, আলহামদুলিল্লাহ।
ইসলামে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার কোনো সুযোগ নেই। প্রাপ্ত বয়স হলে নারী-পুরুষের অভিভাবকদের প্রস্তাবে বিবাহকাজ সম্পন্ন হয়। শুরু হয় নতুন জীবন, নতুন সংসার, সমাজের নতুন একটি ইউনিট। ইসলামে বিবাহ জীবন শুরু হয় ছেলের পক্ষ থেকে তার আর্থিক সামর্থ্যানুযায়ী এবং মেয়ে পক্ষের সামাজিক মর্যাদা সামনে রেখে ‘মোহরানা’ ধার্য করে বিবাহকাজ সম্পাদন করা হয়। মোহরানা মেয়ের পক্ষের জন্য ছেলেদের পক্ষ থেকে দেয়া অধিকার। এ অধিকার ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই শুরু করে আজ পর্যন্ত বহাল আছে। এক্ষেত্রে সামাজিক মর্যাদা ঠিক রাখতে গিয়ে ইসলাম সম্মত নয় এমন কাজও করে থাকে, যা ইসলামে পরিতাজ্য। নামকাওয়াস্তে ‘মোহরানা’ বড় আকারে ধার্য করে ভবিষ্যতে তা পরিশোধের চিন্তা না করে মাত্রাতিরিক্ত ‘মোহরানা উল্লেখ করা হয়। পরিশোধ না করার চিন্তা করে ‘মোহরানা’ ধার্য করে বিয়ে করলে তা ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে না। গুনাহ হবে। মোহরানা নারীদের প্রাপ্য অধিকার। এ ‘মোহরানা’ কমবেশি যাই হোক, পুরোটাই পরিশোধ করে দিয়ে দিলে উত্তম। যদিও কিছু পরিশোধ ও কিছু ভবিষ্যতে পরিশোধের অঙ্গীকারে অনেক বিয়ে হয়ে থাকে। ‘মোহরানার’ ব্যাপারে উভয় পক্ষেরই বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। মূল বিষয় হলো ছেলেমেয়ের এবং দুই পরিবারের মিল-মহব্বত হলেই বিয়ের উদ্দেশ্য সফল হবে। বিয়ের পর উভয় পক্ষই একে অপরের বন্ধুসুলভ আচরণ করলে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর। আমার ব্যক্তি জীবনে শ^শুরবাড়ি, ছেলেমেয়ের শ^শুরবাড়ির সবার সাথে মহান আল্লাহর রহমতে অত্যন্ত সম্পর্ক ভালো এবং কল্যাণকর, আলহামদুল্লিাহ। সবগুলো বিয়েই আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হয়েছে এবং ‘মোহরানা’ নিয়ে কোনো বিরোধ হয়নি। সংসারে তো আমার ৪০ বছর কেটে গেল এবং ছেলেমেয়েদেরও এক যুগ পার হলো। কোনোদিন ঝগড়া-বিবাদের উদ্ভব হয়নি, আলহামদুলিল্লাহ।
গত কিছুদিনে বেশ কয়েকটি বিয়ে সংঘটিত হওয়ার সাথে আমার জড়িত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। সবগুলো বিয়েই প্রস্তাবের মাধ্যমে হয়েছে। ডাক্তার-অডাক্তার, ডাক্তার-ডাক্তার ছাড়াও সাধারণ ডিগ্রিধারী ছেলেমেয়েদের বিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়েছে। ভালো সংসার করছে। বাচ্চা-কাচ্চাও হয়েছে। বলতে পারি সুখী সংসার, আল্লাহর প্রতি তারা কৃতজ্ঞ এবং ইসলামের প্রতি তারা পাবন্দ।
ইদানীং বিবাহ ছাড়া-ছাড়ির খবর পত্রিকায় দেখা যায়। খবর নিয়ে জানা যায়, খুবই ছোট-খাটো বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে। শুধুমাত্র সঠিকভাবে কাউন্সেলিংয়ের অভাবে এ বিচ্ছেদ সংঘটিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমার সুযোগ হয়েছে কিছু কাউন্সেলিং করার। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রমও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়েছে, মেয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি করেছে, এখন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। ছেলে ব্যাংকের বড় অফিসার। দুইটা বাচ্চাও হয়েছে। খুবই ভালো পরিবেশ, আলহামদুলিল্লাহ।
আমার বয়স তো ৭০ পার হলো, ইতোমধ্যে ৪৪ বছর কর্মজীবন, ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট সদস্য, রিহ্যাবের সদস্যসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত হওয়ার সুবাদে বন্ধু-বান্ধব অনেকের সাথেই গভীর সম্পর্ক হয়েছে। তাদের ছেলেমেয়ের বিবাহের কথা এলে সুযোগমতো একে অপরের ছেলেমেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কাজ করে ভালো ফল পাওয়া গেছে। দুনিয়ার লাভ ও আখিরাতের কল্যাণে এ কাজের গতি ভালো, আলহামদুলিল্লাহ।
গত ১৮ মার্চ সোমবার একটি বিয়ে হলো। দেশের প্রখ্যাত এবং বড় ইসলামী দলের প্রধানের উপস্থিতিতে এবং দোয়ার মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো। উভয় পক্ষই আমার জন্য দিলখুলে দোয়া করলো। আমরাও দুই পরিবারের জন্য দোয়া করলাম। ছেলেমেয়ের জন্য দোয়া করলাম। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নতি-অগ্রগতির জন্য এ পরিবেশ অত্যন্ত সহায়ক।
ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়। ছেলেমেয়ে ডাক্তার। বিয়ের বয়স ১৫ বছর। বাচ্চা দুটি। এখন তারা সংসার করবে না। উভয়কেই আলাদা ডেকে কথা বলেও সমাধানের পথ বের করতে পারিনি। মহান আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়ে দোয়ার ভাণ্ডার খুলে রেখেছি। ছেলেমেয়ের বিবাদ সম্পর্কে শুরুতে জানলে সমাধান করা সহজ। বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক দেয়া ইসলামে জায়েজ কাজের মধ্যে নিকৃষ্টতম। তাই ভেবেচিন্তে বিবাহবিচ্ছেদের দিকে এগোনো উচিত। বিশেষ করে ছেলেমেয়ে থাকলে তো আরো ভাবা দরকার। আমার এক প্রতিবেশীর মেয়ে তার স্বামীকে তালাক দিয়েছে, আমি অনেক পরে জানতে পেরেছি। কিছুই করতে পারিনি। দুটি ফুটফুটে ছেলে ও মেয়ে। আমার নাতির খেলার সাথী। খুবই মায়া লাগে। টাকা থাকলে বা বাবার ধনসম্পদ থাকলেই তালাকের কথা চিন্তা, না আনা ভালো। সহায়-সম্পদ বিবাহ জীবনের স্বাদ দিতে পারে না। এ ব্যাপারে খুবই ভেবেচিন্তে এগোলে বা সমাজের ভালো লোকের পরামর্শ নিলে অনেক উপকার হয় এবং সমস্যার সমাধান হয়। বিবাহের জন্য ৪টি শর্ত মেনে চলতে আল্লাহর নবী বলেছেন- (১) ভালো পরিবার বা বংশ দেখা, (২) নারীর সৌন্দর্য দেখা, (৩) আর্থিক অবস্থা দেখা, (৪) দীনদারি দেখা। তবে দীনদারিকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। আমরা কেউ পহেলাই দেখি ছেলেমেয়ের বয়সের পার্থক্য আছে কিনা? মেয়েছেলে লম্বা কিনা? গায়ের রং উজ্জ্বল কিনা? কোন এলাকার ছেলেমেয়ে ইত্যাদি, যা পূর্বের শর্তের সাথে একটিও মেলে না। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তার ‘মানুষ জাতি’ কবিতায় লিখেছেন, ‘কালো আর ধলো বাহিরে কেবল / ভেতরে সবারই সমান রাঙা।’ তাই লম্বা-খাটো না দেখে দীনদারি ও পরিবারিক শিক্ষা দেখে বিয়ে করালে সংসার সুখের হবে, ইনশাআল্লাহ।
ইদানীং স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে; এমনকি চাকরির স্থলেও ছেলেমেয়ে একসাথে চলাফেরার কারণে তাদের মধ্যে কথাবার্তায় সম্পর্ক গড়তে থাকে। একসাথে রিকশায় চলা, বাগানে বেড়াতে যাওয়া, পিকনিক বা প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রোগ্রামে বাইরে রাত কাটানো ইত্যাদিতে সম্পর্কের মাত্রা গড়িয়ে অবৈধ আচরণে রূপ নেয়। এতে ছেলের চেয়ে মেয়ের ক্ষতি বেশি হয়। আমরা যারা অভিভাবক, পিতা-মাতা তাদের এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবেÑ যেন ছেলেমেয়ে কোনোভাবেই অবৈধ সম্পর্কের সুযোগ না পায়। ছেলে বা মেয়ের পছন্দের কথা এলে দেরি না করে সরাসরি অভিভাবকগণ আলোচনা করে বৈধভাবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় চলে যেতে হবে। কোনোভাবেই পরকীয়া বা অবাধ মেলামেশার পরিবেশ মেনে নেয়া যাবে না। এ ব্যাপারে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের দায়িত্ব অনেক বেশি। ছেলেমেয়ের অবৈধ সম্পর্ক সমাজকে গভীর খাদে ফেলে দেয়। কয়েকদিন পূর্বে ব্যবসায়িক কারণে আমাকে একজন মেয়ে টেলিফোন করল। কথায় কথায় বের হয়ে এলো সে ইতোমধ্যে ২ জন স্বামী ত্যাগ করেছেন। তিনি একটি টেলিভিশনের উপস্থাপিকা। আমার সাথে এর পূর্বে তার দেখা হয়নি। কথাও হয়নি। তাকে পরামর্শ দিলাম তুমি আগে বাবা না থাকায় তোমার মায়ের সাথে পরামর্শ করে ভালো একটি ছেলেকে বিয়ে করো। ঘর-সংসার কর, তারপর ব্যবসার কথা চিন্তা কর। সমাজে এরকম ঘটনা একেবারে কম নয়। সমাজকে পরিশুদ্ধভাবে চালাতে এর গতিরোধ জরুরি।
বিবাহ সম্পর্কে আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহর নির্দেশ পাওয়া যাবেÑ সূরা বাকারা : ২৩০, ২৩২, ২৩৫, ২৩৭; আহযাব : ৩৭, ৫০ এবং সূরা নেসা : ৬, ২৪, ২৫ আয়াত উল্লেখযোগ্য। আল্লাহর নবী রাসূলদের জীবনের ঘটনাবলিও আমাদের স্মরণ রেখে বিবাহকার্য সম্পাদন করলে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ভালো থাকবে। উন্নতি-অগ্রগতির চাকা সঠিকভাবে এগিয়ে যাবে।
বিয়ের আগে ছেলেমেয়ের দেখার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে ছেলেমেয়ের উভয়ের পরিবার আগে বসে পারিবারিকভাবে ঐকমত্যে পৌঁছার পরই ছেলেমেয়ে দেখার ব্যবস্থা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাস্তাঘাটে ছেলেমেয়ে দেখার চিন্তা বাদ দিয়ে পারিবারিকভাবে ঐকমত্য হলে নিজেদের বাড়িতেই ছেলেমেয়ে দেখার কাজ সারতে অসুবিধা নেই। আমার জীবনে নিজের ছেলেমেয়ের ও বন্ধু-বান্ধবদের ছেলেমেয়ের বিবাহে এ পথ অনুসরণ করে ভালো ফল পাওয়া গেছে।
বিয়ের আরেকটি পরিতাজ্য দিক আংটি পরানো। শুধুমাত্র আংটি পরানোর জন্য ঘটা করে অনুষ্ঠান করা মোটেই ঠিক নয়। পারিবারিকভাবে একমত হলে ছেলেমেয়ের পছন্দ হলে সরাসরি ‘আকদ’ বা বিয়ে কবুলের অনুষ্ঠান করতে হবে। ছেলে ও মেয়ের অনুমতিসাপেক্ষে ছেলের কাছে প্রস্তাব করবে মোহরানার কথা উল্লেখ করে ছেলে রাজি থাকলে সবার সামনে কবুল বলে বিয়ে মেনে নিলে বিয়ে হয়ে যাবে। সঠিক পদ্ধতিতে বিয়ে। আংটি পরিয়ে বিয়ের কবুল না করে ছেলেমেয়ে একসাথে চলা বৈধ নয়। আমার অভিজ্ঞতায় বলে শুধুমাত্র না জানার কারণে আংটি পরানোর অবৈধ পর্ব চালু আছে। একজন বিভাগীয় কমিশনার তার মেয়ের আংটি পরানোর অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত দিলে আমি তাকে এবং ছেলের বাপকে তৎক্ষণাৎ এ অনুষ্ঠানকে ‘আকদের’ অনুষ্ঠানে পরিণত করতে পেরেছিলাম, আলহামদুলিল্লাহ। তাই আমি কলব, পরিবার ও সমাজে আল্লাহ ও তার রাসূলের বাস্তব ঘটনা সামনে রেখে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারলে সমাজকে কলুষমুক্ত করা সম্ভব হবে।
বর্তমানে বিয়ের কাজ সহজীকরণের জন্য অনেক ম্যারেজ মিডিয়া তৈরি হয়েছে। সৎ ও যোগ্য নির্ভরশীল ম্যারেজ মিডিয়া সমাজ পরিবর্তনের অনেক ভূমিকা রাখতে পারে। ছেলেমেয়ের অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়ের তথ্যসহ ম্যারেজ মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ করে তাদের পছন্দমাফিক ছেলে ও মেয়ের সন্ধান পেতে পারেন। এতে উভয় পক্ষই উপকৃত হবে। তবে ম্যারেজ মিডিয়া বিশ^স্ত হতে হবে। অভিভাবক মা-বাবাকেও আসল তথ্য বিচার-বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ বিয়ের ব্যাপারে ছেলেমেয়েদের শিক্ষাজীবন থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার ক্ষেত্রে ভুল হলে আবার পরীক্ষা দেয়া যায়, কিন্তু বিবাহের ক্ষেত্রে ভুল হলে গোটা জীবন প্রস্তাতে হয়। সাবধানে এবং ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করে ছেলেমেয়ের অভিভাবকদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল জীবনের পথ তৈরি করে দিতে হবে বিয়ের মাধ্যমে। বিয়ে একটি পবিত্র সম্পর্ক। এটা ইবাদতের অংশ। বিবাহিত ছেলেমেয়ের দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে।
আজকাল অনলাইন, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপে কাল্পনিক কথা ও কাজ দেখিয়ে ছেলেমেয়েকে আকর্ষণ করে বিয়ের আয়োজন করে প্রতারণার ফাঁদ পেতে সমাজকে কলুষিত করছে। এ ব্যাপারেও আমাদের অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়েও পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করতে হবে- যেন তারা এরূপ কাজে পা না বাড়ায়।
সর্বোপরি মহান আল্লাহর কুরআনের শিক্ষা ও রাসূলের আদর্শে আমাদের ঘর থেকেই ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করতে হবে। বিয়ের বয়স হলেই বাবা-মাকে ভালো, যোগ্য পাত্র বাছাইয়ের কাজ হাতে নিতে হবে। বন্ধু-বান্ধব, ম্যারেজ মিডিয়ার মাধ্যমে এ কাজ সহজেই হতে পারেÑ আমার বিশ^াস। বিবাহ অনুষ্ঠান সহজিকরণ কাম্য।
শেষ করব, রমযানে আমাদের হক আদায় হচ্ছে কিনা। ৭০-৭০০ গুণ সাওয়াব হাসিল করতে হবে। রমাদানের শেষ দশ দিনে শবে কদর তালাশ করতে হবে। হাজার মাসের সাওয়াব পেতেই হবে। রমযানে আমাদের সব গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের ছেলেমেয়ের ভালো বিবাহের ব্যবস্থা করে ভালো সমাজ গড়ার সুযোগ দান করুন।
লেখক : সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।