ইরানের বিরুদ্ধে নয়া নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের
ইরানের সাথে যুক্ত আরো কয়েকটি সংস্থা এবং ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এক মাসের কম সময় আগেও মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় ইরান-সংশ্লিষ্ট তিন ব্যক্তি এবং চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়। ইরানের বিরুদ্ধে কিছু দিন পরপর নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেই চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত চার দশক ধরে নানা অজুহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। বর্তমানে ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার বহু কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সামরিক হুমকি-ধমকি এবং মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও প্রচারণা চালিয়ে আসছে ওয়াশিংটন। ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও পদক্ষেপগুলো ব্যর্থ হওয়ার পরও জাতিসংঘ সনদ লঙ্ঘন করে তেহরানের বিরুদ্ধে এ অবৈধ পন্থা অব্যাহত রেখেছে মার্কিন প্রশাসন। পার্সটুডে।
যুক্তরাজ্য থেকে ইসরাইলে ইহুদি অভিবাসন বেড়েছে
ব্রিটিশ ইহুদিদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হারে ‘আলিয়ার’ আগ্রহ বেড়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল। আগ্রহের প্রেক্ষাপটে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম আলিয়া মেলার আয়োজনও করেছে লন্ডন। আলিয়া মেলায় ইসরাইলের আলিয়া অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশনবিষয়ক মন্ত্রী ওফির সোফার, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত জিপি হটোভলি এবং জিওশ এজেন্সির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণকারীরা ইসরাইলে অভিবাসন সুযোগ এবং একীভূত হওয়ার সহায়তা সম্পর্কে তথ্য লাভ করেন। জেরুসালেম পোস্টের খবরে বলা হয়, সোফার অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘সোর্ডস অব আয়রন’ যুদ্ধ শুরুর পর আমরা ইসরাইলে অভিবাসনে আগ্রহ বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি। আর পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রথম আমরা লন্ডনে মেলার আয়োজন করছি। সংহতি প্রকাশ করে অভিবাসন করার এবং যুদ্ধের সময় ইসরাইলের প্রতি সমর্থন প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করার জন্য অনেক ইহুদির সাথে সাক্ষাৎ করতে পেরে খুশি।
ওই মন্ত্রী নতুন অভিবাসীদের সহায়তা করার ইসরাইলের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা অভিবাসনকে উৎসাহিত করছি, অভিবাসনের সর্বোত্তম উপায় হলো হিব্রু ভাষা শিক্ষা করা, নেগেভ ও গ্যালিলিতে ভাড়া সহায়তা করার, চাকরি প্রদান করার, ছাত্রদের জন্য কর্মসূচি রয়েছে আমাদের। ইসরাইল বলছে, ২০২৪ সালের শুরু থেকে ব্রিটেন থেকে ইসরাইলে অভিবাসন বেড়েছে ৪০ ভাগ। ইসরাইলের ‘প্রত্যাবাসন আইন’ অনুযায়ী ইহুদি এবং ইহুদিদের বংশধরদের ইসরাইলে যাওয়ার এবং নাগরিকত্ব লাভ করার অধিকার রয়েছে। যে ব্যবস্থার মাধ্যমে তা করা হয়, তা ‘আলিয়া’ নামে পরিচিত। এটি হলো ইসরাইলে ইহুদি জনসংখ্যা বাড়ানোর একটি ব্যবস্থা।
তবে ১৯৪৮ সালের ‘নাকবা’র সময় কিংবা এরপর বাড়িঘর হারানো বা ছাড়তে বাধ্য হওয়া ফিলিস্তিনিদের একই অধিকার দেয়া হয় না। ওই সময় বাস্তুচ্যুত লোকদের বিরাট অংশ আর কখনো ইসরাইলে ফিরতে পারেনি কিংবা তাদের ভিটামাটি দেখার সুযোগ লাভ করেনি, নাগরিকত্ব পাওয়া তো দূরের কথা। মিডল ইস্ট মনিটর।
আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে তালেবান
জানুয়ারির শেষদিকে তালেবানের উদ্যোগে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১১ দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন। আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন বলে তালেবান জানিয়েছে। ‘আফগানিস্তান রিজিওনাল কো-অপারেশন ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক সম্মেলনে ভারত, চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও ইরানের মতো দেশ অংশ নিয়েছে। ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এরপর থেকে এখনো কোনো দেশের স্বীকৃতি না পেলেও চীন, ইরান, ভারতের মতো দেশগুলো এক ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করেছে। যেমন জানুয়ারির শেষদিকে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মাওলানা আসাদুল্লাহ বিলাল করিমির অ্যাক্রিডিটেশন গ্রহণ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তবে চীনের দাবি, কূটনৈতিক এ অ্যাক্রিডিটেশন তালেবান শাসনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া নয়।
অবশ্য তালেবান ক্ষমতায় যাওয়ার পর আফগানিস্তান ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে। আল-জাজিরা জানিয়েছে, ২০২৩ সালে চীনের কয়েকটি কোম্পানি তালেবানের সাথে ব্যবসায়িক চুক্তি করেছে। এর মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি একটি তেল চুক্তি রয়েছে। এর আওতায় প্রথম বছরে ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে চীন। পরবর্তী তিন বছরে তা ৫৪০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
এদিকে তালেবান ক্ষমতা নেয়ার দুই মাসের মধ্যে ইরান কূটনীতিবিদ হাসান কাজেমি কমিকে আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও অত্র অঞ্চলের লাভের জন্য তালেবানের সাথে যোগাযোগ জরুরি বলে মনে করে ইরান। ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিও প্রায় একই। তারা আফগানিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) এক প্রতিবেদন বলছে, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো কাবুলের শাসকের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পক্ষে। ওই অঞ্চলের এর কূটনীতিক আইসিজিকে বলেছেন, ‘আমরা তালেবান সম্পর্কে পশ্চিমা বিশ্বের মনোভাব পরিবর্তনের অপেক্ষায় থাকতে পারি না। কারণ আমরা ফ্রন্টলাইনে আছি।’ ইন্ডিপেন্ডেন্ট থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘আফগানিস্তান অ্যানালিস্টস নেটওয়ার্ক’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা থমাস রুটিগ মনে করেন, প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব হলে তা তালেবানের জন্য বিজয় হবে। তিনি বলেন, নারী অধিকারসহ তালেবানের নানা নীতির কারণে পশ্চিমের সাথে যোগাযোগ অনেক কঠিন হবে। তাই তালেবান এখন অন্য অঞ্চলের দেশগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে। কারণ তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন সহজ মনে হচ্ছে।’ আইসিজির প্রতিবেদন বলছে, সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে আদর্শিক মিল খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে না। এর পরিবর্তে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার মতো ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে। রুটিগ বলেন, মধ্য এশিয়ার দেশ থেকে শুরু করে চীন, ইরানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো উগ্রবাদদমন। উগ্রবাদী সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট অফ খোরাসান প্রভিন্স’ হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় ওই দেশগুলো তালেবানের সাথে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
তালেবান এখনো উগ্রবাদী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পাকিস্তানকে রাজনৈতিক চাপ দিতে তালেবান এমন করতে পারে। দ্য ডিপ্লোম্যাট মনে করছে, তালেবান নিষ্ক্রিয় থাকায় পাকিস্তান তার দেশে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার আফগান শরণার্থীকে দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে এসবের মধ্যেও আফগানিস্তান ও পাকিস্তান নতুন রুট খোলাসহ অর্থনৈতিক বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত টোমাস নিকলাসন তালেবানের আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়কে স্বাগত জানিয়েছেন। ডয়চে ভেলে।
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : আবদুল কাইউম খান
এ পাতার অন্যান্য খবর
এ বিভাগ বা পাতায় আর কোন সংবাদ, কবিতা বা অন্যকোন ধরণের লেখা পাওয়া যায়নি।