ঈদ মোবারক- পবিত্র ঈদুল ফিতরের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আমাদের অগণিত পাঠক, গ্রাহক, এজেন্ট, হকার ও শুভানুধ্যায়ীকে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট ক্ষমা ও তাঁর রহমত লাভের দিন ঈদুল ফিতর সমাগত। মহান রব পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর (রমযানের) রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়েছিল- যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সূরা বাকারা : ১৮৩)। আমরা যারা এ এক মাস সিয়াম সাধনা বা রোজা পালনের মাধ্যমে আল্লাহভীতি বা তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছি, নিঃসন্দেহে ঈদুল ফিতর তাদের জন্য এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের সওগাত নিয়ে। ঈদের আনন্দ তাদের জন্যই। মাহে রমযানে আমরা যে আত্মসংযম, আত্মত্যাগ, সহমর্মিতা, কষ্ট-সহিষ্ণুতা, ধৈর্য ও পারস্পরিক ভালোবাসার প্রীতিবন্ধনের শিক্ষা পাই, বছরের বাকি ১১ মাস সেই আলোকে জীবন পরিচালিত করার শপথ নেয়ার দিন ঈদুল ফিতর।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর দেশে দেশে চলছে আজ মানুষে মানুষে অসম দ্বন্দ্ব-সংঘাত। ষড়রিপুরকে পরাজিত করে সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠার বদলে চলছে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, দুর্নীতি, প্রতারণার চাষ। ফলে পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে গণতন্ত্র হত্যা করে চলছে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার কুটিল ষড়যন্ত্র। শক্তিমানরা দুর্বলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে চালাচ্ছে নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা, বাস্তুভিটা থেকে উৎখাত এবং জাতিগত নির্মূলের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ। এ সমস্যার সমাধান আল্লাহভীতি বা তাকওয়া অর্জনকারী নেতৃত্ব ছাড়া সম্ভব নয়। এমন নেতৃত্ব এ মানবসমাজ থেকেই উঠে আসবে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন আল্লাহর বিধানের দিকে ফিরে এসে তাঁর দেখানো পথে মানবোন্নয়ন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সিয়াম ফরজ করা সংক্রান্ত আয়াতের পরের আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রমযান মাস। এ মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্য-মিথ্যার পথনির্দেশ।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)। এ কুরআনের আলোকে জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালিত হলেই মানবতার প্রকাশ্য দুশমন ষড়রিপুর পরিচালক শয়তান পরাজিত হবে। মানুষ মানুষের গোলামি থেকে মুক্তি পাবে। সেদিনই এ পৃথিবীতে সত্যিকারে শান্তি ফিরে আসবে। বন্ধ হবে হিংসা, প্রতারণা, দুর্নীতি, হানাহানি, যুদ্ধ-বিগ্রহের মতো মানবতাবিধ্বংসী অভিশাপ।
ইসলামের শাশ^ত বিধান শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, মানবজাতির জন্য। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির সাথে সাথে শরীরও বিষমুক্ত হয়। একাধিক গবেষণায় তা প্রমাণ হয়েছে। প্রত্যেক রোজাদার রোজা রাখেন মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ পালন করার জন্য। তাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে। কোনো রোজাদারই অটোফেজি বা শরীর বিষমুক্ত করার উদ্দেশ্যে রোজা রাখেন না। কিন্তু সঠিক নিয়মে সিয়াম পালন করলে বাড়তি নিয়ামত হিসেবে আল্লাহ তায়ালার এ নিয়ামতও তারা লাভ করেন। নোবেলজয়ী অটোফেজি গবেষক ইয়োশিনোরি ওহশোমিসহ অন্য যারা অটোফেজি নিয়ে কাজ করছেন, গবেষণা বিষয়টি সামনে এনেছেন, নিঃসন্দেহে তারা একটি মহৎ কাজ করেছেন। তবে একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের বিশ^াস আত্মাকে সংশোধন, রিপুর লোভ-লালসা থেকে পরিমার্জন ও পরিশোধন করার মাধ্যমেই একজন রোজাদার সফলকাম হতে পারেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘শপথ নফসের এবং যিনি তা সুঠাম করেছেন তার, অতঃপর তাকে পাপাচারের ও ধার্মিকতার পথ শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং সে সফলকাম, যে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে। আর সে ব্যর্থ, যে নিজেকে কলুষিত করে।’ (সূরা আশ-শামস : ৭-১০)।
ইসলামী চিন্তাবিদরা মনে করেন, রোজা আত্মশুদ্ধি ও চরিত্র উন্নয়নের এক বিশেষ প্রক্রিয়া। মানুষের চারিত্রিক উন্নয়ন ও মানসিক উন্নতির জন্য প্রয়োজন সাধনা। সিয়াম সাধনায় শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহারের চেয়ে মনের গতি-প্রকৃতি, কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বই অনেক বেশি। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) সিয়ামকে দেহের যাকাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। রোজা দ্বারা শরীর, মন ও আত্মা বিধৌত হয়। দেহ যখন সংযমের শাসনের অধীন থাকে, আত্মা তখন সবল হয়ে ওঠে। সত্যকে গ্রহণ ও ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। সিয়াম সাধনায় কুপ্রবৃত্তিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। মানুষের মধ্যে লুকায়িত পাশবিক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। কৃপ্রবৃত্তি মানুষকে পাপাচারের দিকে পথনির্দেশনা দেয়। রোজাদারদের স্বীয় আত্মাকে সৎপথে পরিচালনা করার দ্বারা প্রবৃত্তির বিরুদ্ধাচরণ করেন। অন্তর যদি গুনাহর দিকে আহ্বান করে, তাহলে সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়া দেন না। মাহে রমযানে সর্বদা হৃদয়কে কুচিন্তাভাবনা থেকে সংশোধিত রাখতে হবে। মানবাত্মাকে সংশোধন করা হলে ইবাদতে সত্যনিষ্ঠতা ও একাগ্রতা আসবে। এমন পরিশুদ্ধতা লোভ-লালসা, কামনা-বাসনা, রিপুর তাড়না, অপরের সম্পদ আত্মসাৎ, জুলুম-নির্যাতন ও অসামাজিক দুর্বৃত্ততা পরিহার করে ধার্মিকতার পথে অগ্রসর হওয়ার মাধ্যমে অর্জিত হবে। লৌকিকতা বা প্রদর্শনের ইচ্ছা পরিহার করে আত্মার পরিশুদ্ধি নিয়ে ইবাদতে মনোনিবেশ করা উচিত। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে সংশোধিত হলো, সে সফলকাম হলো।’ (সূরা আল-আ’লা : ১৪)। এমন সফল মানুষের সংখ্যা এ পৃথিবীতে যত বাড়বে, এ পৃথিবী তত সুন্দর হবে। সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধন হবে আরো সুদৃঢ়।
এ পাতার অন্যান্য খবর
এ বিভাগ বা পাতায় আর কোন সংবাদ, কবিতা বা অন্যকোন ধরণের লেখা পাওয়া যায়নি।