নাটোর সংবাদদাতা : চলনবিলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে। পানিশূন্য হয়ে মরে গেছে বেশিরভাগ নদনদী, খাল-বিল। বিলীন হচ্ছে বিলাঞ্চলের অস্তিত্ব।
ভরা বর্ষায় চলনবিলের বিস্তীর্ণ নদী-খাল কিংবা বিলে পালতোলা নৌকায় গাঁয়ের বধূর বাপের বাড়ি যাওয়ার চিত্র এখন বিরল। স্বচ্ছ জলরাশির স্রোতে রূপালি ঝলকে খসল্লা-কাকিলা আর টেংরা-পুঁটির ছুটে চলার দৃশ্যও আর চোখে পড়ে না। আকাশে দেখা যায় না উড়ে চলা সাদা পালকের বকপাখির ঝাঁক। বিল প্রায় পানিশূন্য। দেখা মেলে না পানকৌড়ি আর মাছরাঙার। দোয়েল, কোয়েল, চড়ুই ও শালিকের দেখা মেলাও ভার। সংকুচিত হয়েছে চলনবিলের বিস্তীর্ণ মাঠে সবুজ সমুদ্রের ঢেউ। এমনই করুণ অবস্থায় অস্তিত্ব বিলীন হতে বসেছে উত্তরবঙ্গের শস্য ও মৎস্যভাণ্ডার চলনবিলের।
অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট ও বাঁধ নির্মাণ, অবাধ পুকুর খনন, স্থাপনা নির্মাণ করে খাল-বিল-নদীর পানিপ্রবাহের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমেই ধ্বংস হতে বসেছে দেশের সর্ববৃহৎ জলময় ভূভাগ চলনবিল। কয়েক দশকে চলনবিলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে। পানিশূন্য হয়ে মরে গেছে বেশিরভাগ নদী ও খাল। নানা প্রতিকূলতায় বিলুপ্ত হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ, পাখিসহ কয়েক ধরনের প্রাণী। একসময় মৎস্য, শস্য ও প্রাকৃতিক রত্নভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত চলনবিল বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রূপে সজ্জিত হতো। গ্রীষ্মে দিগন্তজুড়ে সোনালি ধানের মাঠ। বর্ষায় সূর্যকিরণের প্রতিফলনে ঝিলমিলিয়ে উঠত বিস্তীর্ণ জলাভূমি। শরৎ ও হেমন্তে কৃষকের ডিঙি নাও ভরে ওঠে ছোট-বড় দেশীয় মাছে। শীতকালে সরিষা ফুলে ছেয়ে যাওয়া মাঠকে মনে হতো যেন হলুদের সমুদ্র। চলনবিলের এসব নৈসর্গিক দৃশ্য ধীরে ধীরে বিলীনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক বলেন, এর ৪৬ কিলোমিটার ভাটিতে আটঘড়ি নামে একটি স্থানে দুই দরজার আরেকটি স্লুইসগেট দেওয়া হলো। ফলে পানিপ্রবাহের পরিমাণ আরও কমে গেল। এখান থেকেই ধীরে ধীরে নদী শুকিয়ে গেছে। ১৯৮৫ সালে চারঘাট থেকে ১২৫ কিলোমিটার ভাটিতে চাটমোহরে এসে প্রভাবশালীরা নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পুরোপুরি আটকে দিল। বড়াল তখন ভাগাড় হয়ে গেল, বড় বড় পুকুরে রূপ নিল।
মিজানুর রহমান বলেন, দহপাড়া নামে এক জায়গায় পুরো নদী চাপিয়ে এনে ১০ ফিট চওড়া এক দরজার একটি স্লুইসগেট দেওয়া হলো। যেটা এসে গুমানী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চলনবিলের অপর গুরুত্বপূর্ণ নদী আত্রাই ভারত থেকে আসে। আটঘড়ি থেকে বড়াল নদী দুই ভাগ হয়। একটি বড়াল নাম নিয়ে চাটমোহরের দিকে চলে যায়। অপরটি নন্দকুজা নাম ধরে গুরুদাসপুর চাঁচকৈড় গিয়ে আত্রাইয়ের সঙ্গে মিলিত হয়। আত্রাই ও নন্দকুজার মিলিত ধারা চাঁচকৈড় থেকে গুমানী নাম নিয়ে বয়ে চলে। চাঁচকৈড়ের ৮ কিলোমিটার উজানে আত্রাই নদীতে রাবার ড্যাম দেওয়া হয়েছে। যাতে নদীর গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এভাবেই চলনবিলের বৃহত্তম নদী দুটি ধ্বংস করা হয়েছে।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- সংগঠন সংবাদ
- কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে চিনা চাষ
- ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে --ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের
- ইসলামী আন্দোলনের কাজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে --রফিকুল ইসলাম খান
- ড. মান্নানের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়
- তিস্তার অববাহিকায় ধ্বংসের মুখে জীববৈচিত্র্য
- সুন্দরবন থেকে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা
- সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমানের কবর জিয়ারত