রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৫ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ॥ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী ॥ ২৬ এপ্রিল ২০২৪

॥ ফারাহ মাসুম ॥
বাংলাদেশের রাজনীতি ও সার্বভৌমত্ব নিয়ন্ত্রণে প্রতিবেশী দেশের হস্তক্ষেপের বিষয়ে জনরোষ ক্রমেই বাড়ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে রাখঢাক থেকে বেরিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে শুরু করেছে। তারা মনে করছে, এ ধরনের অপতৎপরতা মেনে নেয়া হলে রাজনীতির পাশাপাশি বাইরের শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেও তাদের মতো করে অবয়ব দেয়ার চেষ্টা করবে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
চাঙ্গা হচ্ছে বয়কট : দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্পষ্ট করেই বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়ে রেখেছে সরকার। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নিহত হাসান মিয়াসহ প্রতিনিয়ত বাংলাদেশিদের নির্বিচারে হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়েছেন বিএনপির এ নেতা। গত ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, সরকারপ্রধানের ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়। প্রচলিত ফৌজদারি, দেওয়ানিসহ সকল আইন শেখ হাসিনার সংস্করণ অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হয়। ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের পর বাংলাদেশের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানসহ দেশের বিরোধীদলের প্রধান নেতাসহ লাখ লাখ নেতাকর্মীর ওপর নেমে আসা জেল-জুলুম, অত্যাচার আর অবিচারের প্রকটতা দেখে বিশ্ব সম্প্রদায় বিচলিত হলেও তাতে প্রধানমন্ত্রীর কোনো যায়-আসে না। তার সকল অপকর্মের দায় নিয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্যই যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দী করা হয়েছে, তা আজ দেশ-বিদেশে সর্বজনবিদিত জানিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টেও সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বাংলাদেশে গুম, খুন, গুপ্তহত্যা, কারানির্যাতনসহ ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেখানে আরও বলা হয়েছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে নাগরিকদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বলা হয়েছে।
রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা নিয়ে দেশবাসী এতদিন যা মনে করেছে, মার্কিন প্রতিবেদনেও সেটি উঠে এসেছে। ডামি প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা আবারও প্রমাণ হলো ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা পেলে বিরোধী শক্তিসহ গণতন্ত্র স্বীকৃত নাগরিক স্বাধীনতাকে নিশ্চিহ্ন করা যায়। আর আইন-আদালত প্রবল প্রতাপশালী একনায়কের ‘নির্দেশপত্র’ মোতাবেক চলে, যেমনভাবে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নিজের মামলাগুলোকে নিরুদ্দেশ করেছেন। বিরোধীদলকে দমনের বিপুল প্রচেষ্টা সার্থক করতে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও ধারাবাহিক খুনের এক ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাতাবরণ তৈরি করা হয়। সুষ্ঠু ভোট, নির্বাচন, ভোটাধিকার কবরে শায়িত থাকে।
বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, বর্তমান ডামি সরকারের ‘অভিন্ন হৃদয় বড় বন্ধু’ হচ্ছে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত। মনে হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা শেখ হাসিনা তাদের দিয়ে দিয়েছেন। তাই প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বিএসএফ কর্তৃক বধ্যভূমি বানানো হলেও আওয়ামী নিপীড়ক সরকারকে নিশ্চুপ থাকতে হয়। মানবতাশূন্য বিএসএফের রক্তপিপাসু ভূমিকায় গোটা জাতি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উৎকণ্ঠিত। বিএসএফের নরহত্যার দায় দখলদার আওয়ামী সরকারের ওপরও বর্তায়। তাদের নতজানু নীতির কারণে বিএসএফ আশকারা পাচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন কসবা উপজেলার পুটিয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে হাসান মিয়া নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, সীমান্তে রক্তের দাগ যেন শুকাচ্ছেই না। বাংলাদেশি মানুষের রক্তে সীমান্ত সবসময়ই ভেজা থাকছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ যেন নির্যাতন আর মৃত্যুর নির্মম খড়গ। তাদের মনে নিত্য জেগে রয়েছে কেবল হত্যার উল্লাস।
এর আগে বিএনপির সিনিয়র নেতা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন চলবে। তিনি ভারত সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করার সহযোগী আপনারা। তাই আপনাদের আমরা মানি না।’ দেশে গণতন্ত্র না ফেরা পর্যন্ত ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’র আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক।
নির্বাচন অকার্যকর করছে ভারত
৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে একতরফা সমর্থন দেয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবার সামনে চলে এসেছে ‘ভারত ইস্যু’। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া একটিভিস্ট বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে অকার্যকর করতে ভূমিকা পালনের কারণে দেশে-বিদেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। এ আন্দোলন আশাতীত সাড়া জাগিয়েছে। বিরোধীদল বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য জোট এ বিষয়ে দলীয়ভাবে যুক্ত না হলেও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা এ আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী তার গায়ের ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দিয়ে এ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতারা নিয়মিতভাবেই বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ নিয়ে কথা বলেছেন।
বিরোধীদল বিএনপি ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে যে রাজনৈতিক তর্কবিতর্ক চলছে, তার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমেও। পাশাপাশি নির্বাচনের পর থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগবিরোধী কয়েকটি দলের তৎপরতায় শুরু হওয়া ‘ইন্ডিয়া আউট’ বা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ক্যাম্পেইনে ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
আবার ভারতবিরোধী এ প্রচারণা নিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে অনেকে একে ‘ট্র্যাডিশনাল ভারতবিরোধী রাজনীতি’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘বাজারকে অস্থিতিশীল করে পণ্যের দাম বাড়ানো’। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেছেন, সব ভারতীয় পণ্য বাদ দিয়ে বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থা কখনো ঠিক রাখা যাবে?। অন্যদিকে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আবার বলেছেন, ভারত নিয়ে জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বলেই এটি রাজনৈতিক আলোচনায় এসেছে। নির্বাচন এলেই ভারত কোনো রাখঢাক না করেই সক্রিয় হয় বলেই মানুষ ভোট দিতে পারেনি বা বঞ্চিত হয়েছে। সে বঞ্চনা থেকেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। মানুষের ক্ষোভ কমানোর কাজ তো বিএনপির নয়।
শাসকদলের কাউন্টার ও পশ্চিমা ভূমিকা
ভারত নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কারণ সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘বিএনপি বা সমমনা দল বা দলের নেতারা কেউ কেউ যখন ভারতীয় পণ্য বর্জন বা ভারতবিরোধিতাকে মাঠে নিয়ে আসেন, তখন রাজনৈতিক কারণেই আওয়ামী লীগ তার কাউন্টার দিয়ে ভারতের ভূমিকার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে চাইছে।’
বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভক্তি এখন অনেকটাই প্রকাশ্য। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয় তা নিয়ে কৌতূহল আছে জনমনে; এমন কি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পরবর্তী পদক্ষেপ বুঝতে আরো সময় লাগতে পারে। কারণ তারা তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির আলোকে এবং এ অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, নির্বাচনের আগের চেয়ে নির্বাচনের পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া তার কাছে কিছুটা নমনীয় মনে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশ কোনো অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত আসার ইঙ্গিত যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে আছে বলে তার কাছে মনে হয় না।
প্রসঙ্গত, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পরপর চীন, ভারত, রাশিয়া ও জাপানসহ অনেকগুলো দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হয়নি। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন বড় প্রশ্ন হলো, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে’ না হওয়া নির্বাচনের ফল নিয়ে পশ্চিমারা নতুন কোনো পদক্ষেপ নেয় কিনা। কারণ এর আগে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা দিয়ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
মানবাধিকার প্রতিবেদন কি ইঙ্গিতবহ?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশে, বিদ্যমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, ২০২৩ সালে দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০২২ সালের মতো গত বছরও বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা ঘটেছে বলে মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওইসব ঘটনার সাথে জড়িত কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত ও শাস্তি দিতে সরকার বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। উল্টো তাদের ‘ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি’ দেওয়ার অসংখ্য খবর রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের নাগরিকদের হাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা নেই বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির যে চিত্র উঠে এসেছে, দীর্ঘমেয়াদে সেটি দেশটির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গত ২২ এপ্রিল সোমবার ‘২০২৩ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাক্টিসেস : বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা, গণমাধ্যমের ওপর সেন্সরশিপসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে যে, গত বছর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ নির্বিচারে বেআইনি হত্যার ঘটনা, গুম, সরকারের নির্যাতন বা নিষ্ঠুরতা, নির্বিচারে গ্রেফতার-আটক, অমানবিক ও অসম্মানজনক আচরণ এবং কারাগারের কঠিন ও জীবনের জন্য হুমকির পরিবেশের বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে। এছাড়া অন্য দেশে থাকা ব্যক্তিদের ওপর নিপীড়ন চালানোর তথ্যও তারা পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আটজনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকাকালে মৃত্যু হওয়ার কথা বলেছে। তবে অন্য একটি মানবাধিকার সংগঠন একই সময়ে ১২ জনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার খবর দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩২ জন গুমের শিকার হয়েছেন। গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং ভিন্নমতাবলম্বী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ঘটনার প্রতিরোধ, তদন্ত বা দোষী ব্যক্তিদের সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার সামান্যই চেষ্টা করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা রয়েছে। দেশটিতে ব্যক্তির গোপনীয়তার ক্ষেত্রে নির্বিচারে বেআইনি হস্তক্ষেপ চালানো হচ্ছে বলে মানবাধিকার প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এছাড়া একজন ব্যক্তির অপরাধের অভিযোগে তার স্বজনদের শাস্তি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলেও এতে বলা হয়েছে। গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার বিষয়ে বলা হয়েছে যে, ২০২২ সালের মতো গত বছরও মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের প্রতি সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি, অহেতুক গ্রেফতার বা বিচার, সেন্সরশিপ এবং ইন্টারেনেটে স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে গুরুতর বিধিনিষেধ আরোপ অব্যাহত ছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এটাও বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ ও সংগঠন করার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ চালানো এবং চলাফেরার স্বাধীনতায় নানান বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এতে ২০২৩ সালে বাংলাদেশে হওয়া দুর্নীতির প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হলে তাদের সাজা দেওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের আইনে রয়েছে। কিন্তু সরকার সেই আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এর ফলে দুর্নীতি করেও সেটির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা প্রায়শ দায়মুক্তি পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কোনো প্রভাব পড়বে?
বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, নানাদিক থেকেই সেটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন,  ‘তাদের এ প্রতিবেদনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুরুত্ব সহকারে দেখে। কাজেই বহির্বিশ্বের কাছে একটি দেশের ভাবমূর্তি নির্মাণের ক্ষেত্রে এটি বেশ গুরুত্ব বহন করে।’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির যে চিত্র ফুটে উঠেছে, দীর্ঘমেয়াদে সেটি দেশটির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি। এছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখিত অভিযোগ আমলে না নিলে ভবিষ্যতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। ‘এ প্রতিবেদনকে একটি সিগন্যাল হিসেবে দেখা যেতে পারে’ বলে উল্লেখ করেছেন হুমায়ুন কবির।
তার মতে,  এটি আমলে না নিলে বাংলাদেশের ওপর নানান নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় বিভিন্ন সময় আরোপ করে থাকে। এক্ষেত্রে ২০২১ সালে র‌্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করেন মি. কবির।
ভারতের ভোট আবহে বাংলাদেশ
ভারতের ভোট আবহে বিজেপি-কংগ্রেস পাল্টাপাল্টিতে আচমকাই ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশ। চলে আসে বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি প্রসঙ্গ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অভিযোগের যে জবাবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। তার কোনো জবাব মোদি দেননি। অথচ বিতর্কের অবসানও ঘটেনি। বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে কচ্চতিভু দ্বীপ, যে ভূখণ্ডটি ১৯৭৪ সালে শ্রীলঙ্কাকে ভারত দিয়েছিল। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। এত বছর পর হঠাৎ কচ্চতিভু দ্বীপ প্রসঙ্গটি রাজনীতির বিতর্কে টেনে আনার পেছনে রয়েছে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক পটভূমি। তামিলনাড়ুতে পায়ের তলার জমি শক্ত করতে বিজেপি এ দ্বীপের হস্তান্তরকে বড় করে তুলে ধরে কংগ্রেসকে দেশদ্রোহী প্রতিপন্ন করতে চাইছে।
রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টির সূত্রপাত এখান থেকেই। মোদির অভিযোগের দীর্ঘ জবাব দেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। সেখানেই টেনে আনেন বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তির প্রসঙ্গ। দীর্ঘ সেই পোস্ট খাড়কে শুরু করেছেন এভাবে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, হঠাৎই আপনি দেশের অখণ্ডতা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। সেই উদ্বেগও ধরা পড়ল শাসনের দশম বছরে। সম্ভবত নির্বাচনের কারণেই। এতে আপনার অসহায়তা প্রকট হলো।’
খাড়গে এরপর স্থলসীমান্ত চুক্তি টেনে লিখেছেন, ‘১৯৭৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী যে চুক্তি করেছিলেন, তার প্রশংসা করে ২০১৫ সালে আপনিই বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পর্কে বলেছিলেন, এ চুক্তি শুধু জমির পুনর্বিন্যাস নয়, এতে দুই দেশের হৃদয়েরও মিলন ঘটেছে। সেই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছিল আপনার সরকারের আমলে। বন্ধুত্বের প্রমাণ রেখে তাতে আপনার সরকার কিন্তু ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশকে দিয়েছিল, বিনিময়ে পেয়েছিল বাংলাদেশের ৫৫টি ছিটমহল।’ স্পষ্টতই খাড়গে বোঝাতে চেয়েছেন, একটি দ্বীপ দেওয়ার জন্য যিনি কংগ্রেসকে দোষারোপ করছেন, তিনিই কিন্তু বাংলাদেশকে ১১১টি ছিটমহল দিয়েছেন!
খাড়গে এরপর লিখেছেন, ‘ওই বছর, সেই ১৯৭৪ সালে আরও একটি বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়েছিল ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে, কচ্চতিভু দ্বীপ নিয়ে। তামিলনাড়ুর নির্বাচনের প্রাক্কালে এখন আপনি ওই স্পর্শকাতর বিষয়টির অবতারণা করছেন অথচ আপনার সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টে বলেছিলেন, চুক্তির মাধ্যমে কচ্চতিভু শ্রীলঙ্কার কাছে গেছে। সেটা ফিরিয়ে নিতে হলে যুদ্ধ করতে হবে। আপনার সরকার ওই দ্বীপ ফেরত নিতে কোনো উদ্যোগই কি নিয়েছিল?’
দেশের সর্বনাশের কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মোদি ১০ বছর শাসনের পরও এখনো নেহরু-গান্ধী পরিবারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। সেই প্রসঙ্গের অবতারণা করে খাড়গে লিখেছেন, ‘গান্ধীজি, নেহরু, প্যাটেল, ইন্দিরা, রাজীবের মতো নেতা দেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতার জন্য জীবন দিয়েছেন। সরদার প্যাটেল ৬০০ জন রাজার রাজত্বকে দেশের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন। অথচ কী বিপুল বৈপরীত্য দেখুন, গালওয়ান উপত্যকায় ২০ জন সেনা শহীদ হওয়ার পর আপনি চীনকে ক্লিনচিট দিলেন! চোখ খুলে দেওয়ার মতো কিছু থাকলে তা আপনারই দান। নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপের মতো বন্ধুদেশের সঙ্গে বৈরিতার মাত্রাও আপনি বাড়িয়ে দিয়েছেন। আপনার পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার দরুন এই প্রথমবারের মতো রাশিয়া থেকে পাকিস্তানও অস্ত্র সম্ভার কিনল!’
নরেন্দ্র মোদি নিজেই এবারের নির্বাচনের প্রচার সভায় বাংলাদেশ, অনুপ্রবেশ, মুসলিম ইত্যাদি ইস্যু তুলে আনছেন। তিনি রাজস্থানের এক জনসভায় ইঙ্গিত দিয়েছেন মুসলিমরা অধিক সন্তান গ্রহণ করে এদেশে হিন্দুদের সংখ্যালঘু বানাতে চাইছেন। কংগ্রেস এ দেশের সম্পদ সে সব অনুপ্রবেশকারীদের বণ্টন করে দিচ্ছে যে সম্পদ এদেশের মানুষ কষ্ট করে তৈরি করেছেন। মোদির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী সভায় এসে বাংলাদেশের মুসলিমরা ভারতে অনুপ্রবেশ করছে বলে মন্তব্য করে তাদের ‘উইপোকা’ বলে উল্লেখ করেছেন। আসামে নাগরিকত্ব আইন করে বেশ কয়েক লাখ বাঙালিকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। দিলিপ ঘোষসহ অন্য বিজেপি নেতারা পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশকারী সংখ্যা ২ কোটি বলে উল্লেখ করেছেন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে তাদের ঘাড় ধরে বাংলাদেশে ঠেলে দেবেন বলেও তারা মন্তব্য করেন।
ভারতের লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে শাসকদলের নেতারা এমন একসময় এসব কথাবার্তা বলছেন, যখন বাংলাদেশে তৃতীয়বারের মতো একটি গণতন্ত্রবিমুখ একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভারত পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভারতীয় কূটনীতিক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন গর্ব করে বলেছেন, এ সরকারকে ক্ষমতায় আনতে ভারত আমেরিকাকে চাপ দিয়ে তাদের নেতিবাচক কাজ বন্ধ করতে বাধ্য করেছে। এমন গল্পও এখন সামাজিক গণমাধ্যমে রয়েছে যে, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলকে ৬০ ব্যক্তির একটি তালিকা দিয়ে তাদের এমপি মনোনয়ন দিতে বলেছে। এদের মধ্যে ৪০ জন মনোনয়ন পেয়ে এমপি হয়েছেন। স্বতন্ত্র হিসেবে এসেছেন অনেকে। ২০ জন কম মনোনয়ন দেয়ার জন্য মন্ত্রিসভার তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোয় প্রতিবেশীদের পছন্দের ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশে ভারতের এ ভূমিকার জন্য জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ভারতবিরোধী নীতি নিয়ে মালদ্বীপে ড. মুইজ্জু বিপুল ভোটে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সেখানকার সংসদের দুই-তৃতাংয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন। নেপালের সংসদেও ভারতবিরোধী কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা সরকার গঠন করেছে। বাংলাদেশে জনগণের মধ্যে একই প্রবণতা থাকায় প্রতিবেশী দেশটি এখানে নির্বাচন ব্যবস্থাটাকেই অকার্যকর করে রেখেছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। তাদের আশঙ্কা, জনগণের মতের কোনো মূল্য রাষ্ট্র শাসনে না থাকলে সে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা বিপন্ন হয়ে পড়ে। ভারতের আসন্ন নির্বাচনে তেঁতুলিয়াসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান দিয়ে ভারতের এক প্রান্তÍ থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার করিডোরের দাবি তোলা হয়েছে। রাষ্ট্র শাসন এবং সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ বাইরের দেশের হাতে চলে গেলে জাতীয় স্বার্থবিরোধী এসব দাবি প্রতিরোধ করুণানির্ভর সরকারের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।



এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।