সংবাদ শিরোনামঃ

সমুদ্রে এগিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ ** পরবর্তীতে বলবৎ আইন দিয়ে পূর্বে সংঘটিত অপরাধের বিচার করা যায় না ** সরকার জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে ** উপদেষ্টারা সরকার ও দলসহ দেশকে ডুবাতে বসলেও হাসিনার বোধোদয় হচ্ছে না ** বাংলাদেশের ১৭শ’ একর জমি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা ** ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ ** ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে...’ ** মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারা চলছে লুটপাট ** সীতাকুণ্ডে শিপব্রেকিং ইয়ার্ড করতে বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে উপকূলীয় গাছ সাবাড় করার অভিযোগ ** সরকার বাংলাদেশে ইসলাম বিরোধী মতবাদ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে ** চবি সভাপতিসহ ৮ নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে দেশব্যাপী শিবিরের বিক্ষোভ ** দেশ সন্ত্রাস রাজনীতি ** ভারতে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিংশিবির **

ঢাকা শুক্রবার ৯ চৈত্র ১৪১৮, ২৯ রবিউস সানি ১৪৩৩, ২৩ মার্চ ২০১২

ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ
ভাষার জন্য বিলিয়ে দেয়া রক্তকণা থেকেই জন্ম হলো একটি বৃক্ষ। গাছের স্বপ্নময়-কল্পিত ডালপালা এবং পাতার রঙে নেচে ওঠে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব বাংলাদেশী মানুষের হৃদয়ের অনুভূতি। আপন গতিতে বয়ে চলবে ইতিহাসের গর্বিত নদী। গাছের ডালে ডালে পাখিদের মেলা, তাদের কুহুতানে নতুন প্রাণ পাবে জীবনের সেই অথৈ নদী। ফসলের মাঠে থাকবে সবুজের ঢেউ, কৃষকের মুখে উঠবে হাসিমাখা গান। ফাগুনের অপূর্ব ছোঁয়ায় নতুন পাতায় সেজে দুরন্ত কিশোরের মতো উচ্ছ্বলতায় মেতে উঠবে সকল নাগরিকের প্রশান্ত হৃদয়। বুকের মাঝে গেয়ে উঠবে একটি অমর সঙ্গীত; ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।’ বাংলাদেশ আমাদের হৃদয়ের বাংলাদেশ। চল্লিশ বছর পরে আবার এলো সেই মহান স্বাধীনতার মাস। স্বাগতম হে মহান স্বাধীনতা; নতুন প্রজন্মের পক্ষ থেকে নতুন আঙ্গিকে পুরনো স্বপ্নে স্বাগতম।

স্বাধীনতা এখন চল্লিশ পেরিয়ে যাচ্ছে। পরিণত বয়স এখন স্বাধীনতার। কেননা চল্লিশে নাকি মানুষ পূর্ণতায় পৌঁছে। বিবেক বুদ্ধি জ্ঞান গরিমা পরিপক্বতায় ডানা মেলে। তাইতো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদকে (স.) নবুয়ত দেয়া হয়েছিল চল্লিশে এসে। বিবেকের স্থিরত্ব, মানবতার শ্লোগানের মর্মবাণীর গভীরে পৌঁছার উত্তম বয়স এখন স্বাধীনতার। সুতরাং স্বাধীনতাকে নিয়ে সুখ দুখের দুটো কথা শেয়ার করা যায়। আর এ জন্যেই তো তার আগমন; এক সাগর রক্ত, জীবনের ঘাম।

এক. বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা। এ ভাষার জন্যই প্রাণ দিয়েছিল রফিক সালাম বরকত জব্বার শফিউর প্রমুখ মহান ব্যক্তিগণ। আন্দোলনের সিপাহসালার হিসেবে অনেকেই রাস্তার কালো পিচকে রক্তে রঞ্জিত করেছেন কিংবা বুকের ঘামে পিচ্ছিল করেছেন রাজপথ এবং পাকিস্তানি শাসকদের বন্দিশালা। ভাষাশহীদ কিংবা ভাষা আন্দোলনের সিপাহসালারদের নিয়ে কি বড় কিছু হয়েছে? তা আমাদের জানা নেই। বরং ভাষা আন্দোলনের প্রথম সারির অন্যতম নেতা যিনি ডাকসুর জিএস হিসেবে পাকিস্তানি শাসকের সামনে ভাষার দাবিতে স্মারকলিপি পাঠ করেছেন। ভাষার মাসে বিরানব্বই বছরের বার্ধক্য জীবন নিয়ে সেই অধ্যাপক গোলাম আযম আজ জেলের প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ; যেমনটি আবদ্ধ ছিলেন ভাষার জন্যে। এটাই কি তাঁর প্রাপ্য?

দুই. দেখতে দেখতে ষাট বছর পূর্ণ করলো এ আন্দোলনের স্বর্ণালি ইতিহাস। কি দাবি ছিল এ আন্দোলনের পিছনে? এখনো কি পূর্ণতা পেয়েছে এর মৌলিক ইতিহাস কিংবা এ নিয়ে তৈরি হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কোনো চলচ্চিত্র? সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালুর কথা থাকলেও তা কি হয়েছে? উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো গ্রন্থ কি এ ভাষায় পর্যাপ্ত পাওয়া যায়? পাকিস্তানি আমলে ভাষা চর্চার যে গুরুত্ব আমাদের মধ্যে ছিল তা কি এখনো হৃদয়ে জাগ্রত আছে? ছোটখাটো দোকান থেকে শুরু করে নামি দামি শপিং সেন্টারসমূহের সাইনবোর্ডটাও তো বাংলায় করতে পারিনি। বাংলায় নাকি স্মার্ট হওয়া যায় না। বিশেষ করে পুঁজিবাদী ঘরানা বাংলাভাষাকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে বিদেশি ভাষাকে প্রাণাধিক প্রিয় হিসেবে বুকে ধারণ করেছেন। অবশ্য সেমিনার সিম্পোজিয়ামে অতিথি হিসেবে এসে তারা বক্তব্যে কম যান না। আহারে বাঙালি!! আহারে বাংলাভাষা!!!

তিন. বিনোদনের অন্যতম বাহন ভাষা। বাংলাভাষায় কিছু গল্প কবিতা উপন্যাস রচিত হলেও ইলেকট্্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বায়ন আমাদের ভাষাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা কি কখনো ভেবে দেখা হয়েছে। হিন্দি চ্যানেলের ছড়াছড়িতে আমাদের শিশুরা পাগল ডোরেমন কালচারে আর যুবকরা পাগল হিন্দি গান আর ফিল্মের লারেলাপ্পায়। কোনো অভিজাত পরিবারে বাংলা চ্যানেল চলে না বললেই চলে। অথচ পশ্চিম বাংলার বাংলা ভাষাভাষীরা কি বাংলাদেশের চ্যানেলসমূহ দেখার সুযোগ পাচ্ছেন? তাহলে বাংলায় বিনোদনের সুযোগ কোথায়। ভাষার মর্মকথা কি শুধু সেমিনার সিম্পোজিয়ামের বক্তব্যে?

চার. নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে নিজেকে আগলে রাখার জন্যই তো ভাষা আন্দোলন। স্বাধীনতার চল্লিশ বছরেও কি আমরা নিরাপদ? আজ রাস্তা-ঘাট, অফিস আদালত, হাটবাজার এমন কি নিজের ঘরেও নিরাপত্তা নেই। নির্বিঘেœ ঘুমানোর কোনো পরিবেশ এ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পাচ্ছি না। প্রতিদিন লাশের মিছিল। হত্যা খুন যেন নিত্যদিনের প্রতিচ্ছবি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মানেই বাংলাদেশের পরগাছার মতো বেড়ে ওঠা কোনো প্রাণী। সবচেয়ে আতঙ্কিত অবস্থা হচ্ছে যে, আইনি পোশাকে উপস্থিত হয়ে দিন দুপুরে গুম করা হচ্ছে শত শত মানুষ। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা জাতির বিবেক নামে খ্যাত সাংবাদিক সমাজও কি নিরাপদ? কি অবস্থায় দেখা গেল মেহেরুন রুনী এবং সাগর সারওয়ারকে নিয়ে। স্বাধীন দেশে নিরাপদে ঘুমানোর অধিকারও কি আমরা পেয়েছি? এত বড় একটা হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হলো কি? হত্যাকাণ্ডের পরে পাবলিককে বোকা বানানোর জন্যে চব্বিশ কিংবা আটচল্লিশ ঘণ্টার আলটিমেটাম এখন আটচল্লিশ বছরেও কার্যকর হবে না বলেই মনে হচ্ছে। কোনো প্রতিকার ছাড়াই আমাদের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি বলে ফেলেন, বেডরুম পাহারা দেয়ার দায়িত্ব নাকি তাদের নয়। তাহলে তিনি কি পাহারা দেয়ার জন্যে ঐ আসনে বসেছেন? ভারতীয় অধিকার পাহারা দেয়ার জন্য? আহারে স্বাধীনতা আহারে প্রিয় বাংলাদেশ!

পাঁচ, স্বাধীনতা মানে বেঁচে থাকার সকল উপযোগ নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় নির্বিঘেœ ভোগ করার অধিকার নিয়ে বাঁচা। কিন্তু আমরা কি তা পাচ্ছি! আজ কথা বলার কণ্ঠও রোধ করার জন্য সকল আয়োজন সুসম্পন্ন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নিয়মতান্ত্রিক পন্থাগুলোকেও রুদ্ধ করা হচ্ছে। ১২ মার্চে বিরোধী দলের মহসমাবেশকে ঘিরে সরকারি দলের পক্ষ থেকে একটি দীর্ঘ হরতাল পালন করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হলো। বিরোধী দল হরতাল করলে পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক জনগণ আগে থেকেই সতর্ক হয়ে কর্মপন্থা ঠিক করে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির তালিকা চোখে পড়লেও অন্তত জনদুর্ভোগ এতটা বাড়ে না যেমনটি দেখা গেল সরকারের অঘোষিত হরতালের সময়। সরকারের এ আচরণ দেখে দেশের সচেতন মানুষ অবলীলায় বলতে শুরু করেছেন, যে সরকার একটি দলের সভা সমাবেশ করতে দেয় না সে সরকারের অধীনে নির্বাচন করে বিরোধী দল ক্ষমতায় আসবে এটা কল্পনাও করা যায় না। আর নির্বাচনের ফলাফল যাতে আগেই জেনে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে এ জন্যই ডিজিটালের নামে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন চালু করার জন্য সরকার এত উঠে পরে লেগেছে বলেও তারা মন্তব্য করছেন।

ছয়, যুদ্ধ অপরাধ বর্তমান সরকারের একটি হট ইস্যু। এই বিচারের নাম করে সমস্ত ব্যর্থতাকে জনসম্মুখ থেকে সরিয়ে নেয়ার অপকৌশল হিসেবে সরকারের সকল পর্যায়ে একই বক্তব্য প্রতিদিন শোনানো হচ্ছে। যার বিচার প্রক্রিয়া চলমান সে বিষয় নিয়ে এত বক্তব্যের কোনো প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা অবশ্যই ভাবার বিষয়। সাবজুডিশ কোনো বিষয় নিয়ে প্রতিদিন উল্টেপাল্টা বক্তব্য প্রদান কতটা যৌক্তিক তা অবশ্যই বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আজ বিরোধী দল কিংবা যে কেউ তার মৌলিক চাহিদার কথা বললেও তাতে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার গন্ধ খুঁজে পান সরকারি দল। তাইতো মহান সংসদেও আলোচিত হচ্ছে নতুন আইনের। যুদ্ধ অপরাধের বিচারে বাধাদানের প্রতিরোধে আইন করার কথাও উঠছে মহান সংসদে। এ ধরনের আইনের আড়ালে নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল করা এবং বিরোধী মতকে দমনপীড়ন ছাড়া সরকারের আর কোনো টার্গেট নেই বলে অভিজ্ঞজন মনে করছেন। আজকে যেখানে গণতান্ত্রিক আচরণের দাবিতে আন্দোলন করাকেও যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার কথা বলা হয় সেখানে এ ধরনের আইন মানুষের স্বাধীনতাকে কতটা খর্ব করতে পারে তা অনেকের কাছেই প্রশ্ন! ১৯৫ জন আসল যুদ্ধাপরাধীকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র রাজনৈতিক মত পার্থক্যের কারণে দেশের সম্মানিত কয়েকজন নাগরিককে কাঠগড়ায় কেন দাঁড় করানো হয়ে, এ বিষয়টিও সচেতন জনগণদের ভাবনায় ফেলেছে।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে জাতি আজ ব্যাপকভাবে উৎকণ্ঠিত। এ প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চাল ডাল তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এখন আকাশ চুম্বি। বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং জ্বালানি সংকটে শুধু কলকারখানাই নয় সেচ ব্যবস্থাও মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সংসারের ঘানি টানাই যেখানে কষ্টকর সেখানে সার আর কীটনাশক ওষুধের চড়া মূল্যে কৃষক একেবারে দিশেহারা। এর উপরে সরকারি দলের লোকদের বাহাদুরী আচরণে গ্রাম-গঞ্জ যেন রক্ষীবাহিনীর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। ‘ভাই মরদ ভাবির কাছে’ এ প্রবাদ তাদের আচরণে মনে হলেও সীমান্তে শত শত মানুষকে খুন করা হচ্ছে পাখির মতো, এ নিয়ে কোনো সাহসী উচ্চারণ কারো মুখে নেই। তাই মহান স্বাধীনতার মাসে নতুন করে স্বাধীনতার সংজ্ঞা জাতির সামনে উন্মোচিত হচ্ছে। কিন্তু এ অসহনীয় অবস্থা আর কত দিন চলবে? এ জন্যই কি রক্ত ঢেলে স্বাধীনতা নামক একটি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়া হয়েছিল? এ কালো অধ্যায়কে আর দেখতে চাই না। এ অমানিশার অবসান চাই। তাই তো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো বলতেই পারি ‘গাহি সাম্যের à¦—à¦¾à¦¨Ñ à¦®à¦¾à¦¨à§à¦·à§‡à¦° চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।’ শুধু এ অধিকারটুকু নিশ্চিত করার জন্যেই জেগে উঠতে হবে। আবারও চার দশক পূর্তিতে নতুন করে শপথ নিতে হবে স্বাধীনতার আসল রূপ নিশ্চিত করতে।

[লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সৎধশযধহফধ@মসধরষ.পড়স]

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।