সংবাদ শিরোনামঃ

আইনের ব্যাপকতা ও বাধ্যবাধকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ** সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চায় ** আওয়ামী লীগে প্রবল সাংগঠনিক বিপর্যয়; শীর্ষ নেতৃত্বে বিভাজন অত্যাসন্ন ** ঢাবি জাবি রাবি চবি’র চার ভিসি অবৈধ! ** নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ** জাসদই তাহলে মুজিব হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করেছিল! ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** ৮০০ রাইস মিলের চালের দুনিয়া এখন খাজানগর গ্রাম ** আইনের শাসন পরিপন্থী অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল ** আদর্শ জননীরূপে একজন নারী **

ঢাকা শুক্রবার ৩০ চৈত্র ১৪১৮, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৩, ১৩ এপ্রিল ২০১২

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক; অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির; অধ্যাপক আবদুস সোবহান; অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম

বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর.কম : অবৈধ উপাচার্যদের তত্ত্বাবধানে চলছে দেশের শীর্ষ চার বিশ্ববিদ্যালয়! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চার জন ভিসির ব্যাপারেই এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ এর ধারা ভেঙে নির্বাচন ছাড়া শ্রেফ সরকারদলীয় বিবেচনায় বছরের পর বছর উপাচার্য পদে বহাল রয়েছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ১৯৭৩ সালের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেট সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত এবং আচার্যের মনোনীত একজন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়  পরিচালনা করবেন। কিন্তু বিগত দুই দশক ধরে দলীয় বিবেচনায় নিজেদের পছন্দের উপাচার্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনা করে আসছে সরকারগুলো। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষেত্রেও চলছে একই পদ্ধতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : ২০০৯ সালে অস্থায়ীভাবে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ পান অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। একই বছর নিয়োগ পান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সোবহান। চবিতে ২০০৯ সালে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক আবু ইউসুফকে নিয়োগ দেয়া হয়। তার মৃত্যুর পর ২০১১ সালের ১৫ জুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পান অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ। বিশ্ববিদ্যালয় চারটির আচার্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এই নিয়োগগুলো দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ অনুযায়ী দেশের এ চারটি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়। এ অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি) সিনেট মনোনীত তিনজনের একটি প্যানেল থেকে একজনকে উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেবেন।’ 

১৯৭৪ এর আগ পর্যন্ত এ চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারগুলোই উপাচার্য নিয়োগ করত। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য দ৭৩-এর অধ্যাদেশ গৃহীত হলে দ৭৪ সাল থেকে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়।

১৯৭৩ সালের ওই অধ্যাদেশ অনুযায়ী এ চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ওই অধ্যাদেশের ১১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচিত হবেন সিনেটের মাধ্যমে।

তবে ১১ (২) ধারায় বলা আছে, জরুরি প্রয়োজনে চ্যান্সেলর অস্থায়ীভাবে উপাচার্য নিয়োগ দেবেন। আর যত দ্রুত সম্ভব সিনেট প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে পদটি স্থায়ী করবে। ওই আদেশ অনুযায়ী উপাচার্য প্যানেলের মাধ্যমে নির্বাচিত উপাচার্যের মেয়াদ হবে চার বছর।

এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত অর্থাৎ তিন সদস্যের প্যানেলের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকারীই উপাচার্য হিসেবে মনোনীত হবেন।

’৭৩ এর অধ্যাদেশ অমান্য করে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়েই উপাচার্য নিয়োগ দেয় রাজনৈতিক সরকারগুলো। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজেদের দলীয় শিক্ষক প্যানেল থেকেই নিয়োগ দেয়া হয় উপাচার্যদের।

সিনেটের মাধ্যমে প্যানেল করে সেই প্যানেল থেকে একজনকে মনোনয়ন করেছেন উপাচার্য এমন উদাহরণ চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিতেও নেই।  

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি তাকে নিয়োগ দেন। তিনি দায়িত্ব নেন ১৭ জানুয়ারি। সিনেটের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত না করেই তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলছে তার দায়িত্ব পালন। 

এ প্রসঙ্গে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নীল দলের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গণতন্ত্র চর্চার দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা দ৭৩-এর অধ্যাদেশ অক্ষুণœ রাখতে চাই। শিক্ষক সমিতির সভায় এবং সিনেটে আমরা বরাবরই এ দাবি জানিয়ে আসছি।

অধ্যাপক আনোয়ার জানান, শিগগিরই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনসহ বিভিন্ন অনুষদ ও ফোরামের নির্বাচন দেয়ার দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাতে পারি। এখন দায়িত্ব হচ্ছে উপাচার্যের।

‘চলতি বছরের সিনেট নির্বাচনের আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন দেয়া প্রয়োজন’, জোর দিয়ে বলেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন।

বিষয়টিতে উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি এ ব্যাপারে কথা বলছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।’

সরকার থেকেও এ নির্বাচনের ব্যপারে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি বলে জানান অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : গত ২০ বছর ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সিনেট উপাচার্য মনোনয়ন করবে সে সিনেটকেই করে রাখা হয়েছে অকার্যকর। ৭৩-এর এ  অধ্যাদেশকে অমান্য করে ক্ষমতাসীন দলগুলো গত ২০ বছর ধরেই পছন্দের ব্যক্তিকেই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আসছে।

জানা যায়, ১৯৯১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ ১৯৭৩ লঙ্ঘন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দমতো উপাচার্য নিয়োগ দেয় বিএনপি সরকার। এরপর থেকে একই ধারায় উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকারগুলো। সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৫ জুন নিয়োগ পান আওয়ামীপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, তিন বছর পর পর সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ এ নির্বাচন হয় ২০০১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। সর্বশেষ তিন বছর মেয়াদী রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন হয় ১৯৮৬ সালের ২ নভেম্বর। চাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শরিফ এনামুল কবিরকে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে শরিফ এনামুল কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। জাবিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট, ছাত্রলীগের গ্রুপিংয়ে মদত দেয়া, শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ‘শিক্ষক সমাজ’।

শিক্ষক সমাজের কার্যকরী সদস্য দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বাংলানিউজকে বলেন, উপাচার্য শরীফ এনামুল কবির অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখছেন।

জাবিতে এই উপাচার্যের বরখাস্তের দাবিতে তার বাসভবনের সামনে মঞ্চ বসিয়ে আন্দোলন চলছে। এ ব্যাপার অধ্যাপক শরিফ এনামুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, শিগগিরই আমি ভিসি নির্বাচন দেব। দেখব আমার চাইতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রিয় কে আছে?

তিনি বলেন, গুটিকয় শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করুক, কিন্তু আমার বাসার সামনে অবস্থান নেবে কেন?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহানকে নিয়োগ দেয়া হয় ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। সিনেটে নির্বাচনের মাধ্যমে তিনজনের প্যানেল হতে উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া অথবা পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত অধ্যাপক সোবহানের নিয়োগ কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক আবদুস সোবহান ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামীপন্থী ও প্রগতিশীল শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শীর্ষ এ চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এসব দলীয় উপাচার্যরা নিজেদের আসন ঠিক রাখতে সবসময় সরকারকে খুশি করতে ব্যস্ত থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনগুলোকে থামিয়ে দিচ্ছেন দলীয় ছাত্রসংগঠনের ক্যাডারদের ব্যবহার করে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়ার ব্যাপারেও অনাগ্রহ তাদের। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধির কাছে অনির্বাচিত উপাচার্যরা বেকায়দায় পড়বেন।

দেশের এ চারটি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচনের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে  বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার বিধি বিধান অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগ হওয়া বাঞ্ছনীয়। শিগগিরই সিনেটের মাধ্যমে উপাচার্য নির্বাচন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ সকল নির্বাচন দেয়া হবে বলেও তিনি অঙ্গীকার করেন। 

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।