সংবাদ শিরোনামঃ

আইনের ব্যাপকতা ও বাধ্যবাধকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ** সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চায় ** আওয়ামী লীগে প্রবল সাংগঠনিক বিপর্যয়; শীর্ষ নেতৃত্বে বিভাজন অত্যাসন্ন ** ঢাবি জাবি রাবি চবি’র চার ভিসি অবৈধ! ** নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ** জাসদই তাহলে মুজিব হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করেছিল! ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** ৮০০ রাইস মিলের চালের দুনিয়া এখন খাজানগর গ্রাম ** আইনের শাসন পরিপন্থী অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল ** আদর্শ জননীরূপে একজন নারী **

ঢাকা শুক্রবার ৩০ চৈত্র ১৪১৮, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৩, ১৩ এপ্রিল ২০১২

চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ

মা কথাটি বা শব্দটি এই পৃথিবীর সবচেয়ে আপন। এই ধরণীর সকলে মায়ের আদরেই বেড়ে উঠতে চায়। সন্তানের প্রতি মায়েরই থাকে অকণ্ঠ ভালোবাসা- সন্তানের জন্য ব্যাকুল থাকে মায়ের মন। ঠিক তেমনিভাবে মায়ের আদর, স্নেহ, আর অকুণ্ঠ ভালোবাসা সকলের মানব হৃদয়কে উদ্বেলিত করে তোলে। একজন মা অনেক চড়াই উৎরাই পাড়ি দিয়ে সন্তানকে আদর, মমতা আর সোহাগে মানুষ করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করে থাকেন। মা ইচ্ছা করলে স্বীয় সন্তানকে ইসলামের পথে ধাবিত করতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে অন্য কোনো বাতিল ধ্যান-ধারণার উপর গড়ে উঠাতে পারেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন :

প্রতিটি নবজাতক ইসলামের সুন্দর প্রকৃতির উপর জন্মগ্রহণ করে, অতঃপর তার বাবা-মা তাকে ইহুদি বানায়, অথবা খ্রিস্টান কিংবা অগ্নিপুজক বানায়।

একজন মা তাঁর সন্তান জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হতে পারেন, আবার তাকে আদর-যতেœà¦° মাঝে দ্বীনি পথে পরিচালনা করে জান্নাতুল ফেরদাউসে স্বীয় পদতলে স্থান দিতে পারে। তাই আসুন আদর্শ জননী হওয়ার জন্য আমরা মায়ের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করি।

পারিবারিক জীবনে মায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য

মুসলিম পারিবারিক কাঠামো পিতৃতান্ত্রিক হলেও বাস্তবে নারী-পুরুষ যেন একই বৃক্ষমূলের দুটি শাখা। মহান আল্লাহ বলেন-

আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের ঘরকে শান্তির আবাসস্থল বানিয়েছেন। (নাহল-৮০)

অন্যদিকে আদর্শ পরিবার গঠনে মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার বাণী ও মহান আল্লাহই শিখিয়েছেন- 

আর তারা বলে : হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন, যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। (ফুরকান-৭৪)

পারিবারিক জীবনের পূর্ণতা আসে সন্তানের জন্ম ও লালন-পালনের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতনতার নির্দেশ দিয়ে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, কারো সন্তান হলে তার উত্তম নাম রাখবে, উত্তম শিক্ষা দিবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক হলে বিয়ে দিবে। (বায়হাকী) এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) আরো বলেন, তোমরা সন্তানের বিপক্ষে কখনো বদ-দুআ করো না। (মুসলিম)

পারিবারিক জীবনে মাতার ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত। সন্তান গর্ভে ধারণ ও লালন-পালনের সামগ্রিক দায়িত্ব মাতার একার ওপর নির্ভরশীল। মহান আল্লাহ বলেন-

মাতা সন্তানকে অতি কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেন এবং প্রসব করেন। (লুকমান-১৫) এখানেই শেষ নয়। মায়ের দায়িত্ব প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,

মা সন্তানকে পূর্ণ দু’বৎসর মাতৃদুগ্ধ দান করবে। (বাকারা-২৩৩)

ইসলামী পরিবার ব্যবস্থা দায়িত্ববোধ ও কর্তব্য চেতনায় সুসমন্বিত। এখানে ভাইবোন পারস্পরিক সম্পর্কেও অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ জন্যই হাদিসে আছে- ছোট ভাইদের ওপর বড় ভাইয়ের অধিকার ঠিক তেমন যেমন সন্তানের ওপর পিতার। (বায়হাকী)

অন্যদিকে পারস্পরিক সম্মান ও মর্যাদার গুরুত্ব প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.)-এর বিখ্যাত বাণী- যে আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং বড়দের সম্মান করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়।

বস্তুত পারিবারিক জীবনদর্শন মানবিক পূর্ণতা ও শ্রেষ্ঠত্বের অনুপম নিদর্শন। আর ইসলাম এ ব্যবস্থাকে আদর্শ শিক্ষায় করেছে পবিত্রতম।

একজন আদর্শ জননীকে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে হবে :

মা সন্তানকে যে আদর্শে বড় করতে চান প্রথমে তাঁকে সে আদশে গড়ে উঠতে হবে।

সর্বদা সন্তানদেরকে আল্লাহর ভয় দেখাবে।

সন্তানের সাথে মায়ের সম্পর্ক নীবিড় হওয়া উচিত। মাকে সন্তান যেমন শ্রদ্ধা-সম্মান দেখাবে, তেমনি মায়েরও উচিত সন্তানের ব্যক্তিত্বের প্রতি লক্ষ্য রাখা।

ছেলে-মেয়েদেরকে ইসলামী সহি আকিদা শেখাবে।

ছেলে-মেয়েদের নিদ্রা ও জাগ্রত অবস্থা সম্পর্কে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

খারাপ বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত থেকে সন্তান হেফাজত করতে হবে।

ছেলে-মেয়েদের উপস্থিতিতে কখনো স্বামীর সাথে তর্ক-বিতর্ক বা ঝগড়া করবে না।

ঘরে কোনো কুকুর অথবা খারাপ ছবি ঝুলিয়ে রাখা যাবে না।

মাঝে মাঝে সন্তানদের নিয়ে চরিত্রগঠনমূলক সত্য ও উন্নত কাহিনীর মাধ্যমে গল্প করবে।

ছেলেদের বাবা, ভাই অথবা বন্ধুদের সাথে পাঁচওয়াক্ত নামাজে মসজিদে পাঠাবে।

স্নেহ, মমতা, আদর ও ভালোবাসা আদান-প্রদানের জন্য সময় নির্ধারণ করে তাদের নিয়ে বসবে। এ ব্যাপারে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না।

বিভিন্ন ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে মত-বিনিময় হওয়া উচিত। অনেক মা আছেন, যিনি নিজের সন্তান বলে, কিংবা ছোট্টবেলা থেকে বড়ো করে তুলেছেন বলে সন্তানকে বড়ো ভাবতে নারাজ। কেবল নারাজই নন, বরং কখনো কখনো এমনও বলে বসেন ‘‘সেদিনের ছেলে তুই, কী আর জানিস” বড়দের ব্যাপারে নাক গলাবে না ইত্যাদি। এরকম আচরণের ফলে সন্তানের ব্যক্তিত্বে আঘাত লাগে। পরিণতিতে মাকে সে অশ্রদ্ধা করে বসতে পারে। অথচ উচিত হলো, সন্তানের ব্যক্তিত্ব-বিকাশে মায়ের আচরণে ছেলের যেন সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। এ বয়সটা সন্তানের চিন্তার স্বাধীনতা ও ব্যক্তিত্ব গঠনের বয়স।

সন্তান যত ছোটই হোক না কেন, সেও কিন্তু পরিপূর্ণ একটি মানুষ। তার বোধ-বুদ্ধি, মেধা-মনন, চিন্তা ও বিবেক এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব রয়েছে। তার ঐ ব্যক্তিত্ব তথা সত্তাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা ঠিক নয়। সন্তানের ব্যক্তিত্বকে খর্ব করা হলে সন্তানও মায়ের ব্যক্তিত্ব খর্ব করতে দ্বিধা করবে না। ফলে সন্তান হয়ে যাবে মায়ের অবাধ্য।

মাকে এমনভাবে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সন্তান ধর্মীয় বিধি-বিধান, আইন-অনুশাসন পুরো মেনে চলে। সন্তানের সকল সঙ্গতি-অসঙ্গতির ব্যাপারে প্রথমত মা-ই দায়ী। ফলে সন্তানের পরিশুদ্ধি, ধর্মের অনুশীলন ইত্যাদির ব্যাপারে প্রথমে মাকেই পরিশুদ্ধ হতে হবে, তাকে ধর্ম চর্চা করতে হবে। মা যদি ধর্মীয় ব্যাপারে উদাসীন হন তাহলে সন্তান কিছুতেই এ ব্যাপারে মায়ের নির্দেশ মানবে না। তাই মায়ের মধ্যে ধর্মীয় ব্যাপারে কোনো ত্রুটি থাকলে দ্রুত তা ঠিক করে ফেলা উচিত। নিজেরা ত্রুটিমুক্ত হলে সন্তানও ত্রুটিমুক্ত হবে। আর এটা তো খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার যে, মা যা করে না, তা সন্তানকে করতে বললে সন্তান সাথে সাথেই প্রতিক্রিয়া দেখাবে। সন্তানের এই প্রতিক্রিয়া দেখানো থেকে মুক্ত থাকা প্রত্যেক মায়ের কর্তব্য। কারণ এই প্রতিক্রিয়া না সন্তানের জন্যে মঙ্গলজনক, না মায়ের জন্য।

মায়ের উচিত সন্তানের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। তাদের সাথে আচার আচরণ, কথাবার্তা, চলাফেরায় সচেতন ও সতর্ক হওয়া। আর এই সচেতনতার জন্যে মাকে সন্তানের ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। সন্তানের মন-মানসিকতা বুঝতে হবে। তাদের চাহিদাগুলো পূরণের ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। তাদের ব্যক্তিত্বকে সম্মানের সাথে দেখতে হবে। তবেই সন্তানও মাকে শ্রদ্ধা করবে, তাঁর প্রতি নির্ভরতা, বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করবে। নিজের মনের কথা, সমস্যা, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি সকল ব্যাপারে মায়ের সাথে আলাপ আলোচনা করবে, পরামর্শ করবে।

মহান আল্লাহ আমাদের সমাজের মা জননীকে ইসলামী আদর্শ সমুন্নত রাখার শক্তি দান করুন। আমীন। (ইসলাম হাউস ডট কম, সৌদি আরব এর সৌজন্যে

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।