সংবাদ শিরোনামঃ

প্রতিযোগিতা তীব্র হয়ে উঠেছে ** প্রকল্পের মেয়াদ-টাকা বাড়ানোর ধারা বন্ধ করুন : প্রধানমন্ত্রী ** বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই : মির্জা ফখরুল ** দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন আল্লামা সাঈদী ** আল্লামা সাঈদীকে অবিলম্বে মুক্তি দিন : ডা. শফিকুর রহমান ** ভোটের অধিকার আদায়ে দরকার বৃহত্তর গণঐক্য ** আওয়ামী লীগ কি আসলেই জনগণের পক্ষে ** স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন : মিয়া গোলাম পরওয়ার ** গুরুত্ব হারাচ্ছে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা ** দেশে কি রাজনৈতিক শূন্যতা চলছে? ** দেশ গড়ার জন্য চাই সৎ যোগ্য খোদাভীরু নেতৃত্ব ** কল্যাণের জন্য প্রয়োজন ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা ** সঙ্কটকালে রাষ্ট্রকে পরিবারের অভিভাবকের মতো ভূমিকা পালন করতে হবে **

রেজি: ডিএ ৫১৭।। ৫৯ বর্ষ : ৩৫তম সংখ্যা ॥ ঢাকা শুক্রবার ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৭ ॥ ২৫ রবি. সানি. ১৪৪২ : Friday 11 December

মুফতি যাকারিয়্যা মাহমূদ মাদানী

ইসলামপূর্ব যুগে নারীরা ছিল অসহায়, নিপীড়িত ও নির্যাতিত। তাদের কোনো সম্মান ও অধিকার ছিল না। ছিল না পিতার উত্তরাধিকারে নারীর কোনো অধিকার ও অংশীদারত্ব। মানবতার মুক্তির মহান দূত বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী জাতির প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতা দিয়েছেন। দিয়েছেন পূর্ণ অধিকার ও মর্যাদা। একমাত্র ইসলামই সর্বপ্রথম নারীদের সমাজে স্বাধীন, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার প্রদান করেছে। এমনকি সূরা নিসা নামে পবিত্র কুরআনুল কারীমে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরাও নাজিল করা হয়েছে।
ইসলাম সবসময়ই নারীকে গুরুত্ব দিয়েছে। কোথাও নারীকে ঘরে বন্দী করে রাখতে বলেনি। চার দেওয়ালের শিকলে আটকে রাখতে নির্দেশ করেনি। ইসলাম সবসময়ই সুস্থ, শালীন ও নিরাপদ পরিবেশে নারীদের শিক্ষা-দীক্ষা, কাজ-কর্ম ও চলাফেরার কথা বলে। সুতরাং শরিয়ত নির্ধারিত গ-ির মধ্যে থেকে নারীরা অবশ্যই চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যেকোনো অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করতে পারে। ইসলাম একজন পুরুষকে যেমন অর্থনৈতিক কর্মকা-ের অনুমতি দিয়েছে, অনুরূপভাবে নারীকেও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে কাজ-কর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্য বা যেকোনো বৈধ উপার্জনের অধিকারও প্রদান করেছে।
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি ব্যবসাকে হালাল করেছি এবং সুদকে হারাম করেছি।’ (সূরা আল বাকারা : ২৭৫)। এই আয়াতে ব্যবসা হালাল হওয়া এবং সুদ হারাম হওয়া নারী-পুরুষ সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। একজন পুরুষ হালাল পন্থায় যেসব ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে, একজন নারীও সেসব ব্যবসা করতে পারে। সে বিবাহিত হোক কিংবা অবিবাহিত হোক এবং সেই সাথে সে তার অর্জিত সকল সম্পদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী। কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই সে তার সম্পত্তির ব্যাপারে সব ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে, যা একজন পুরুষের জন্যও প্রযোজ্য। নারীর অর্জিত অর্থে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কারো হস্তক্ষেপ করার আইনগত কোনো অধিকার বা ক্ষমতা নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যা কিছু পুরুষরা অর্জন করবে, তা তাদেরই অংশ হবে; আবার নারীরা যা কিছু উপার্জন করবে, তাদেরই অংশ হবে।’ (সূরা নিসা : ৩২)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগেও নারীরা পর্দা ও সম্ভ্রম রক্ষা করে বিভিন্ন কাজ-কর্ম করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন, আসমা বিনতে আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন যুবায়ের আমাকে বিয়ে করেন, তখন তাঁর কোনো ধন-সম্পদ ছিল না, এমনকি কোনো স্থাবর জমিজমা, দাস-দাসীও ছিল না; শুধু কুয়া থেকে পানি উত্তোলনকারী একটি উট ও একটি ঘোড়া ছিল। আমি তাঁর উট ও ঘোড়া চরাতাম, পানি পান করাতাম এবং পানি উত্তোলনকারী মশক ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতাম, আটা পিষতাম, কিন্তু ভালো রুটি তৈরি করতে পারতাম না। ...রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুবায়েরকে একখ- জমি দিলেন। আমি সেখান থেকে মাথায় করে খেজুরের আঁটির বোঝা বহন করে আনতাম। ওই জমির দূরত্ব ছিল প্রায় দুই মাইল। একদিন আমি মাথায় করে খেজুরের আঁটি বহন করে নিয়ে আসছিলাম। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে কয়েকজন আনসারও ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ডাকলেন এবং তাঁর উটের পিঠে বসার জন্য উটকে আখ্! আখ্! বললেন, যাতে উটটি বসে এবং আমি তার পিঠে আরোহণ করতে পারি।’ (সহীহ বুখারী)।
অতএব এটি স্পষ্ট যে, পবিত্র কুরআন ও হাদীসের কোথাও নারীর কাজ-কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি-বাকরির ব্যাপারে কোনো বিধিনিষেধ আরোপিত হয়নি। তাই নারীরাও জরুরি প্রয়োজনে কিছু শর্তের আলোকে অনলাইন, অফলাইনে যেকোনো চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি করতে পারে।
১. ব্যবসা বা কর্মটি হতে হবে হালাল ও হালাল পদ্ধতিতে এবং শরিয়ত নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে। ২. সম্পূর্ণ শরয়ী পর্দা রক্ষা করতে হবে। মুখম-ল ঢেকে রাখতে হবে। ৩. বিবাহিত হলে স্বামী আর অবিবাহিত হলে পিতা বা তার স্থলাভিষিক্ত অভিভাবকের অনুমতি লাগবে। ৪.  কর্মস্থলটি শুধুমাত্র নারীদের জন্যই হতে হবে, সেখানে ভিন পুরুষের সাথে মেলামেশার কোনো সুযোগ থাকবে না। ৫. ফিতনা-ফাসাদে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ৬. পরপুরুষের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা যাবে না এবং কোমল কণ্ঠ পরিহার করতে হবে। ৭. বাইরে যাওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। ৮. পরপুরুষের সামনে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না। ৯. অনলাইন ব্যবসা হলে লাইভ করবে না, কারণ এতে ফেতনার আশঙ্কা রয়েছে। ১০. পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকতে হবে। ১১. ব্যবসা বা চাকরি হতে হবে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে। বিনা প্রয়োজনে শুধুমাত্র শখের বশে বা বিলাসিতার জন্য হবে না। ১২. তার কাজ তাকে মাহরাম ছাড়া ভ্রমণে বাধ্য করবে না। ১৩. নারীর ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনে বাধার সৃষ্টি করে এমন কাজ হতে পারবে না। যেমন, গৃহের দেখাশুনা, স্বামীর খেদমত ও সন্তানের যতœ নেওয়া ইত্যাদি।
নারীদের উপার্জন সম্পর্কে শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন রহ. বলেন, “নারীদের কর্মক্ষেত্র শুধুমাত্র নারীদের জন্যই হতে হবে। যেমন, মেয়েদের শিক্ষাদান, নারীদের কারিগরি সহায়তা প্রদান, কাপড় সেলাই করা ইত্যাদি। পুরুষদের সাথে মাঠে কাজ করা নারীদের জন্য জায়েজ নয়, কারণ তা মারাত্মক ফিতনা (কুকর্মে প্ররোচনা এবং নানা সমস্যার উৎস), তাই এটা উপেক্ষা করা উচিত।
তবে এখানে এ কথাও মনে রাখতে হবে, ইসলামের পারিবারিক ব্যবস্থায় নারীর আয়ের উৎসের বৈধতা থাকলেও ব্যয়ের বাধ্যতামূলক কোনো খাত নেই। কেননা ইসলাম নারীর ওপর অর্থনৈতিক কোনো দায়-দায়িত্ব আরোপ করেনি। পরিবারের সকল আর্থিক দায়-দায়িত্ব বহন করা পুরুষের ওপর অর্পিত হয়েছে। সেহেতু নারীকে তার জীবিকার জন্য ব্যবসা বা চাকরির প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ, যদি পুরুষের উপার্জিত অর্থে সংসার না চলে, পরিবারে অভাব ও সংকট দেখা দেয়, তখন নারী চাইলে ব্যবসা বা চাকরি করতে পারে, না চাইলে নাও করতে পারে। এজন্য তাঁকে কেউ জোর করতে পারে না। অন্যায়ভাবে তার কাঁধে কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। কারণ এখানে সে স্বাধীন। কোনো কাজ না করেও পুরুষের উপার্জন ভোগ করা তার আইনি ও ধর্মীয় অধিকার। আল্লাহ প্রদত্ত এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তার ঘাড়ে উপার্জনের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া জুলুম ও অন্যায়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘পুরুষ নারীর ব্যবস্থাপক। কারণ আল্লাহ তাদের একজনকে আরেকজনের ওপর মাহাত্ম্য দান করেছেন এবং তারা তাদের ধন-সম্পদ (নারীদের ওপর) ব্যয় করে। সুতরাং সতী সাধ্বী নারীরা হয় অনুগতা এবং আল্লাহ তায়ালা যেসব বিষয় হেফাজতযোগ্য করেছেন, লোকচক্ষুর অন্তরালে তারা তার হেফাজত করে।’ (সূরা নিসা : ৩৪)। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর পিতার কর্তব্য, বিধি মোতাবেক তাদের (স্ত্রীদের) ভরণপোষণ করা। কাউকেও তার সাধ্যাতীত কার্যাভার দেয়া হয় না।’ (সূরা আল বাকারা : ২৩৩)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্ত্রীর প্রতি পুরুষের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, যখন তুমি আহার করবে, তখন তাকেও (স্ত্রী) আহার করাবে। যখন তুমি বস্ত্র পরিধান করবে, তখন তাকেও বস্ত্র পরিধান করাবে। (সুনানে আবু দাউদ)।
অন্য এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো। কারণ তোমরা তাদেরকে আল্লাহর নিরাপত্তা সূত্রে গ্রহণ করেছো এবং তোমরা তাদের সতীত্বকে আল্লাহর বিধানের বিনিময়ে বৈধ করে নিয়েছো। তোমাদের ওপর তাদের সঙ্গত ভরণপোষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। (সহীহ মুসলিম)।
উল্লেখ্য যে, স্বামীর এ সম্মান, শ্রেষ্ঠত্ব অধিকতর ক্ষমতা চর্চা কিংবা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার ও দাপটের কোনো বিষয় নয়; বরং এটা তার নারীকে সযতনে আগলে রাখার দায় ও আবশ্যিক কর্তব্যের বিষয়, তাই পুরুষের প্রজ্ঞাপূর্ণ অভিভাবকত্ব, দায়িত্বপূর্ণ শ্রেষ্ঠত্বকে তার পেশিশক্তির ক্ষমতা ভাবার সুযোগ নেই। হাদীসে নববীর ভাষ্য এ ব্যাপারে বেশ স্পষ্ট ও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমার ওপর তোমার স্ত্রীর পূর্ণ অধিকার রয়েছে। (সহীহ বুখারী)।
অন্যদিকে পুরুষ যাতে এই সাময়িক শ্রেষ্ঠত্বের অহমিকায় নারীর প্রতি কঠোর ও রূঢ় না হয়,  তার প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফবহির্ভূত অন্যায় আচরণ না করে, তাই তার শ্রেষ্ঠত্বের মানদ- রূপে ঘোষণা করা হয়েছে নারীর স্বীকৃতিকে। নারীর স্বীকৃতির বাইরে পুরুষের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর নিকট শ্রেষ্ঠ, সেই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। (সুনানে তিরমিযী)।
ইসলাম নারীর জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি ও উপার্জনের অনুমতি দিয়েছে। কেননা ইসলাম একটি বাস্তব ও মানবিক ধর্ম। যে নারীটির স্বামী মারা গেছে বা দৈব দুর্ঘটনায় কর্তাপুরুষটি কর্মক্ষমতা লোপ পেয়েছে, আর তার কোনো পুরুষ কর্তাও নেই, সে তার ও তার এতিম সন্তানদের জীবন ধারণের জন্য যেকোনো বৈধ কাজ করতে পারে। যে দরিদ্র মেয়েটির বিয়ে হচ্ছে না, সেও প্রয়োজনে বাইরে কাজ করতে পারে। আবার যে মেয়েটির পিতা মারা গেছে, ভাই না থাকলে বৃদ্ধা মায়ের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেওয়ার অসম সওয়াবের কাজটিও সে করতে পারে। কিন্তু যাদের সংসার সচ্ছল, পিতা, ভাই বা স্বামী ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাকরি করে, তাদের ব্যবসা বা চাকরি করার কী দরকার! তাদের সংসারেই তো প্রচুর কাজ। যেখানে তাদেরই লোক রেখে কাজ সামাল দিতে হয়, সেখানে তাদের বাইরে কাজ করার সুযোগ কোথায়?
এছাড়া মাতা-পিতার সেবা, স্বামীর খেদমত করা, ঘরে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা, বাড়িঘর সুন্দর ও পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখা, ঘরের আসবাবপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, রান্না-বান্না করা, মেহমানদারি করা, কাপড়-চোপড় সেলাই করা ইত্যাদি নানা রকমের গৃহস্থালি কাজের দায়িত্বও প্রকৃতিগতভাবে মূলত নারীর ওপরই ন্যস্ত করা হয়েছে। তাকে সারাদিন এসব কাজেই ব্যস্ত থাকতে হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো একজন নারীর প্রধানতম কাজ। এর বাইরেও তাকে আরো অনেক কাজ করতে হয়। পুরুষের কাজ একসময় শেষ হয়ে গেলেও শেষ হয় না নারীর কাজ। সেই সকাল থেকে অর্ধ রাত পর্যন্ত চলে তার ডিউটি। একটার পর একটা করে যেতে হয় তাকে অবিরামভাবে। তার কাজের যেন শেষই নেই। এতো এতো দায়িত্বের ওপর যদি তার কাঁধে আবার নিজের ভরণপোষণ, পরিবার ও সন্তানাদির উপার্জনের বোঝাও চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে তা হবে নারীর প্রতি একটি চরম অন্যায় ও অবিচার।
দ্বিতীয়ত, ইসলাম বলে নারীদের জন্য তার ঘরই উত্তম। তাই সে তার গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য ছাড়া বাইরে যাবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তোমরা গৃহে অবস্থান করো এবং জাহেলী যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।” (সূরা আহযাব : ৩৩)।
যদিও এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পতœà§€à¦¦à§‡à¦° সম্বোধন করা হয়েছে, তবে এটি  মুমিন নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এখানে নবীপতœà§€à¦¦à§‡à¦° সম্বোধন করার কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে তাদের সম্মান ও অবস্থান জড়িত এবং তাঁরা মুমিন নারীদের জন্য উদাহরণস্বরূপ। নিম্নোক্ত হাদীসগুলোও এ বিষয়ে খুবই প্রাসঙ্গিক। প্রত্যেক নারী তার স্বামীর গৃহের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। আর কিয়ামতের দিন সে তার এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (সহীহ বুখারী)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নারীরা হচ্ছে চাদর এবং যদি সে গৃহের বাইরে যায় তবে শয়তান খুশি হয় (তাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে বলে)। সে (নারী) আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে না, যতটা সে গৃহে থেকে করতে পারতো।” (ইবনে হিব্বান ও ইবনে আবী খুযাইমাহ, শায়খ আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন, সিলসিলা আস সহীহাহ)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, “আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বড় আর কোনো ফিতনা রেখে যাচ্ছি না। আর বনী ইসরাইলের প্রথম ফিতনা ছিলো নারী সংক্রান্ত। সুতরাং লোকদের উচিত তাদের পরিবারকে ফিতনা এবং ফিতনার উপকরণ থেকে দূরে রাখা। (ফাতাওয়া আল-মার’আহ আল মুসলিমাহ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নারীদের মসজিদে সালাত আদায়ের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন, “তাদের গৃহই তাদের জন্য উত্তম।” (আবু দাউদ)। ইসলামের অসাধারণ সৌন্দর্যগুলোর মধ্যে এটিও একটি যে, পুরুষকে উপার্জন, রক্ষণাবেক্ষণ ও নারীর ভরণপোষণের কাজে নিয়োজিত রেখে নারীকে এ সকল দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আর পুরুষের ঘর-সংসার রক্ষণাবেক্ষণ, বাড়িতে শান্তিপূর্ণ আবহ সৃষ্টি, সন্তান জন্মদান ও সুচারুরূপে তাদের পরিপালন, চরিত্র গঠন ও শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে তাদের আদর্শ মানুষ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা ইত্যাদি কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নারীকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ভোগবাদী পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা ইসলামের মজবুত পারিবারিক ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে তথাকথিত নারী স্বাধীনতার নামে নারীকে ঘর থেকে বের করে আনতে চায়। বস্তুবাদীরা নারীকে ব্যবসার পণ্য বানাতে চায়। বস্তুত তারা স্বাধীনতার নামে নারীকে উপভোগ করতে চায়। নারীবাদীরা নারীদের এ কথা বোঝাতে চায় যে, নারীকে কেন একজন লোকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে? কেন একজনের উপার্জনে গোটা পরিবার চলবে? পুরুষ বাইরে বেরোতে পারলে, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি করতে পারলে নারী কেন নয়? নারীরাও ভাবছে ঠিকই তো, মেয়েরা কি পড়াশোনা করছে ঘরে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার জন্য? আর  হিজাব পরে মেয়েরা কেন বাইরে কাজ করতে পারবে না? আমরা এতো পড়াশোনা, এতো ডিগ্রি অর্জন করেও কিছু করবো না, তা কী করে হয়! আমাদেরও তো কিছু করা উচিত। এতে করে একদিকে পারিবারিক প্রয়োজন পূরণে পুরুষকে যেমন সহযোগিতা করা হবে, অপরদিকে জীবনযাত্রার মানও হবে উন্নত। এ হচ্ছে বর্তমান নারীদের ভাবনা।
ইদানীং অনলাইন, বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে নারী ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। দীনদার নারীরাও এ ময়দানে পিছিয়ে নেই। সর্বত্রই চলছে অনলাইন ব্যবসার এক নীরব প্রতিযোগিতা। বোরকা, থ্রিপিস, ওড়না, জামা, জুতা, বইপুস্তক, মধু, সরিষার তেল, কালোজিরার তেল, বাদাম, ঘি, হোম মেড ফুডসহ প্রায় সবকিছুই এখন নারীরা অনলাইনে বিক্রি করছেন। নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। সবখানেই তারা অবদান রাখছে ভালো।
তবে যখন এ ব্যবসাকে নিজেদের মনগড়া খোঁড়া যুক্তি দিয়ে, হালাল মোড়কের আবরণ পরিয়ে ধর্মীয় ফ্লেভার মিশিয়ে প্রচার করা হয়, তখন আর তা বিতর্কমুক্ত থাকে না। যেমন কিছু কিছু নারীকে বলতে দেখা যায়, আমরা উপার্জন করছি দান-সদকা করার জন্য। গরিব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এটা তো দোষের কিছু নয়। আমিও বলছি না যে এটা দোষের কিছু, কিন্তু এটা বলবো যে, নারীকে উপার্জন করে এভাবে দান-সদকা করার কথা ইসলাম বলেনি। নবী ও সাহাবীপতœà§€à¦—ণ কেউ এ কাজ করেননি। পরবর্তী সালাফদের থেকেও এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তা হলো, নারী তার ব্যক্তিগত সম্পদ থাকলে সেখান থেকে দান করবে। স্বামীর অনুমতিসাপেক্ষে তার সম্পদ থেকেও দান করতে পারে, এতে করে দু’জনেই সওয়াবের অধিকারী হবে। সম্পদ না থাকলে সবর করবে। ব্যক্তিগত আমলে মনোযোগী হবে। সালাফদের অনুসরণার্থে গরিব, এতিমদের দান-সদকা করার অন্তরালে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে না।  
 à¦†à¦®à¦¾à¦¦à§‡à¦° মনে রাখতে হবে, মানবতার মুক্তির কা-ারি রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে কোনো সম্পদ ছিল না। তথাপিও তাঁর স্ত্রীরা ঘরে থাকতেন। মাসকে মাস তাদের উনুনে আগুন জ্বলত না, তবুও তারা কেউ উপার্জন করতেন না। চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সংসার পরিচালনায় সাহায্য করেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের জন্য যা ব্যবস্থা করতেন তাতেই তাঁরা সন্তুষ্ট থাকতেন। কিন্তু বর্তমান নারীরা ইসলামের এই সুন্দরতম পারিবারিক ব্যবস্থায় বোধ হয় সন্তুষ্ট হতে পারছে না। ফলে আজ দেখা যাচ্ছে, নারীরা ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ছে। অফিসে, কল-কারখানা, মিল-ইন্ডাস্ট্রি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিপণিবিতান, পরিবহন, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উড়োজাহাজ, রেডিও-টিভিসহ সর্বত্রই আজ নারীদের প্রচ- ভিড়। এভাবে নারীরা যখন শান্তির ঘর ছেড়ে বাইরে ভিড় করছে, তখন ঘর, পরিবার ও সমাজে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে, তা আমাদের একটু গভীরভাবে ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।
নারীরা নিজেদের অবুঝ শিশুসন্তানকে ঘরে রেখে ব্যবসায়, চাকরিতে, অফিসে যাচ্ছে। ফলে শিশুরা মায়ের আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা প্রকৃত পক্ষে লালিত-পালিত হচ্ছে, চাকর-চাকরানির হাতে। সঠিক পরিচর্যা, তত্ত্বাবধান ও শিক্ষা-দীক্ষার অভাবে শিখছে নিম্ন মানসিকতা, ভাষা ও কালচার। প্রভাবিত পরিবর্তন হচ্ছে দারুণভাবে। মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা হ্রাস পাচ্ছে। হ্রাস পাচ্ছে সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা। অপরদিকে স্বামীও উপার্জনের জন্য বের হয়ে যাচ্ছে, যাচ্ছে স্ত্রীও। স্বামী এক অফিসে, স্ত্রী অপর অফিসে, স্বামী এক কারখানায়, স্ত্রী অপর কারখানায়। স্বামী এক দোকানে, স্ত্রী অপর এক দোকানে। স্বামী এক জায়গায় ভিন মেয়েদের সঙ্গে পাশাপাশি বসে কাজ করছে, স্ত্রী কাজ করছে অপর এক স্থানে ভিন পুরুষের সঙ্গে। এভাবে জীবনের বড় একটি সময় স্বামী আর স্ত্রী বিচ্ছিন্ন থাকছে। বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি ও দাম্পত্য কলহ। স্বামী স্ত্রীকে বিশ্বাস করছে না, স্ত্রী স্বামীকে বিশ্বাস করছে না। পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। সম্পর্কগুলো ঠুনকো হয়ে যাচ্ছে। সম্ভাবনাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যখন নারী-পুরুষ উভয়ই নিজেদেরে চাকরি-বাকরি, উপার্জন, অবস্থান ও ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত, দুজনেই যখন স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আত্মনির্ভশীল হতে মরিয়া, তখন দু’জনের মধ্যে স্বতন্ত্র চিন্তা-চেতনা, ব্যক্তিত্ব ও ইমেজ গড়ে ওঠে, সেই সাথে বাড়তে থাকে উভয়ের মাঝে দূরত্ব। এই সুযোগে অনেকেই জড়িয়ে পড়ে পরকীয়ার মতো ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধিতে। ফলে পারস্পরিক ভালোবাসা, হৃদ্যতা ও আকর্ষণ হারিয়ে যায়। একজনকে আরেকজনের ভালো লাগে না। মেজাজ খিটখিট হয়ে যায়। সংসারে সারাক্ষণ ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে। যারা কোনরকমে পরকীয়ার এই অভিশাপ থেকে বেঁচে যায়, তারাও যখন নিজেকে ঘিরেই মশগুল থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই একে অন্যের প্রতি প্রীতি, সম্মান ও দায়বদ্ধতার জায়গাটা হারিয়ে ফেলে। সব শেষে বাকি থাকে শুধু শারীরিক চাহিদা পূরণের কাজটুকু। কিন্তু কথা হলো অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভের পর এ সাধারণ কাজে পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল হওয়া কতটুকু সম্ভব? বিশেষত বাইরে যখন অবারিত সুযোগ। পকেটে যখন টাকা। মূলত যখন অবস্থা এমনই হয়, তখন পরিচয়ের ক্ষেত্রে তারা পরস্পর স্বামী-স্ত্রী হলেও কার্যত তারা এক ঘরে রাত্রিযাপনকারী দুইজন নারী-পুরুষমাত্র। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে এ সম্পর্কও একসময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া তাদের ক্ষেত্রে বিচিত্র কিছু নয়।
শেষ কথা, আল্লাহ্র চিরাচরিত বিধানের বাইরে গিয়ে যারা ইচ্ছেমতো নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে চায়, তারা দৃশ্যত সাময়িক ভালো থাকলেও পক্ষান্তরে আল্লাহ্র অবারিত রহমত ও সুখ-শান্তি থেকে বঞ্চিত হয়। পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলা, সম্প্রীতি, বন্ধন, গভীর প্রেম ও ভালোবাসাশূন্য অর্থোপার্জনের বিশেষ এই যন্ত্রমানবদের কর্মফলের এ এক করুণ পরিণতি বৈ কিছুই নয়!
সূত্র: আল কুরআন, সহীহ বুখারী, সুনানে আবু দাউদ, সহীহ ইবনে হিব্বান, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১১৭, আলবাহরুর রায়েক ১/২০০, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৫, ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৫৯, ফাতাওয়া আল-মার’আহ আল মুসলিমাহ ২/৯৮১, আল মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আল কুয়েতিয়্যাহ, ৭/৮২।
লেখক: পরিচালক, ভয়েস অব ইসলাম; প্রধান গবেষক, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন; সম্পাদক ও প্রকাশক, ডেইলি মাই নিউজ।

এ পাতার অন্যান্য খবর

এ বিভাগ বা পাতায় আর কোন সংবাদ, কবিতা বা অন্যকোন ধরণের লেখা পাওয়া যায়নি।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।