সংবাদ শিরোনামঃ

অন্তিম যাত্রায় রাজনীতি ** বিদেশ নামক সোনার হরিণের পেছনে অন্ধের মতো ছুটবেন না -প্রধানমন্ত্রী ** আমাকে আর কত হয়রানি করা হবে -আদালতে আল্লামা সাঈদী ** আঞ্চলিক দলগুলোর প্রভাব বাড়ছে ** শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সময়োপযোগী নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে : আ ন ম শামসুল ইসলাম ** দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন -ডা. শফিকুর রহমান ** রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে কার্যকর পথ পাচ্ছে না বাংলাদেশ? ** ভোটাধিকার হলো গণতন্ত্রের আত্মা ** মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধপরিকর--নূরুল ইসলাম বুলবুল ** মানুষের দুর্দশা লাঘবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে----সেলিম উদ্দিন ** ক্ষমাপ্রার্থীকে আল্লাহ পছন্দ করেন ** নিরাপদ শিক্ষাকার্যক্রম নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হতে হবে **

রেজি: ডিএ ৫১৭।। ৫৯ বর্ষ : ৩৯তম সংখ্যা ॥ ঢাকা শুক্রবার ২৪ পৌষ ১৪২৭ ॥ ২৩ জমা .আউয়াল ১৪৪২ : Friday 8 January 2021

ঢাকাকে সমর্থন করল না রাশিয়া চীন ভারত মিয়ানমার

রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে কার্যকর পথ পাচ্ছে না বাংলাদেশ?

॥ ফারাহ মাসুম॥
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আনা জাতিসংঘের এক প্রস্তাব ১৩২ ভোট পেয়ে পাস হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের চার কৌশলগত মিত্র চীন-রাশিয়া বা ভারত-জাপান কেউই এর পক্ষে ভোট দেয়নি। জাতিসংঘে ভেটো ক্ষমতার অধিকারী চীন ও রাশিয়া সরাসরি মিয়ানমারকে সমর্থন করেছে আর ভারত ও জাপান ভোট দানে বিরত থেকেছে। এ সম্পর্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, জাতিসংঘের রেজ্যুলেশন নিয়ে বড় দেশগুলোর সিদ্ধান্ত কৌশলগত। এই কথার গভীর যে তাৎপর্য রয়েছে, তা à¦¹à¦²à§‹Ñ à¦°à§‹à¦¹à¦¿à¦™à§à¦—à¦¾ সমস্যা সমাধানে তারা কেউ বাংলাদেশের পাশে থাকছে না।
আর জাতিসংঘের প্রস্তাবে যে পক্ষ বাংলাদেশের অবস্থানের অনুকূলে সমর্থন জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশ সরকারের সে রকম কৌশলগত মিত্র হিসেবে পরিচিত নয়। ওআইসি সদস্য দেশগুলোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র বলয় এই ইস্যুতে বাংলাদেশকে বেশি সমর্থন দিয়েছে। গত সপ্তাহের এই ভোটাভুটিতে স্পষ্ট যে, মিয়ানমারের ওপর কার্যকরভাবে আন্তর্জাতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাধ্য করতে নিরাপত্তা পরিষদ কোনো প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে পারবে না। অধিকন্তু জাতিসংঘ ও আমেরিকান বলয়ের ইচ্ছার বাইরে বিচ্ছিন্ন ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবার উদ্যোগের পর ভবিষ্যতে যারা বাংলাদেশকে নানাভাবে সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, তাতেও অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে। এটি একপর্যায়ে রাষ্ট্রের জন্য কৌশলগত বিপর্যয় ডেকে আনবে বলেও অনেকের অশঙ্কা রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে মর্যাদার সাথে পুনর্বাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে উপস্থাপিত প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে রাশিয়া, চীন, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, জিম্বাবুয়ে এবং মিয়ানমার। আর ভারত, জাপান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, সিঙ্গাপুরসহ ২৬টি দেশ এই প্রস্তাবে বাংলাদেশ বা মিয়ানমার কোনো পক্ষকে সমর্থন করেনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন গত ৩ জানুয়ারি বলেছেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে জাতিসংঘের রেজ্যুলেশনে যেসব দেশ ভোট দিয়েছে এবং যারা এর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে, তাদের প্রতি কোনো অসন্তুষ্টি নেই। এটি দেশগুলোর কৌশলগত সিদ্ধান্ত। আমরা এ ফলাফল নিয়ে খুশি। মোট ১৩২টি দেশ এই রেজ্যুলেশনের পক্ষে ভোট দিয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি সাফল্য।
ড. মোমেন ভারত-জাপানের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, সিদ্ধান্ত দেয়ার আগেই তারা আমাদের সাথে কথা বলেছে এতেই আমরা সন্তুষ্ট। এ সংকট সমাধানের পথ খুঁজতে মিয়ানমারের ওপর তাদের উদ্দেশ্য কাজে লাগাতে জাতিসংঘে তারা নিরপেক্ষ থাকতে চেয়েছিলেন।
সম্প্রতি ভারত রাখাইন রাজ্যে সামরিক স্তরের স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের সর্বোচ্চ সামরিক স্তরসহ প্রতিটি স্তরে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়েছে। জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তারা মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে এবং সরকারি পর্যায়ে সরাসরি যোগাযোগ করছেন। সমাধানের জন্য ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সাথে চেষ্টা করছে চীন।
ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা চলতি বছর প্রত্যাবাসন শুরু করার আশা করছি। এটি আমাদের প্রত্যাশা। প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এ বছর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই। মিয়ানমার বার বার বলে আসছে, যাচাই-বাছাই শেষে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের ফিরিয়ে নেবে। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনো অগ্রগতি নেই, নববর্ষে আমরা আশা করতে চাই যে, তারা কথা রাখবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মনে করে রোহিঙ্গাদের যদি ফিরিয়ে না নেয়া হয়, তবে তারা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে। শান্তি ছাড়া কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সান্ত¡à¦¨à¦¾ পেতে চাইছে যে, জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরের ক্যামেরুন, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, নামিবিয়া, কেনিয়া, লেসেথো, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, পালাউ ও সলোমন à¦¦à§à¦¬à§€à¦ªà¦ªà§à¦žà§à¦œÑ à¦ ৯ দেশ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। যদিও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এবারও অবস্থান নেয়নি ভারত। ২০১৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুবিষয়ক প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো অবস্থান না নিয়ে ভোটদানে বিরত থেকেছিল ওই ৯টি দেশ। আর বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ওই সময়ও নীরব ছিল।
এদিকে বাংলাদেশ জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর আপত্তি উপেক্ষা করে ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সরিয়ে নিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচও। দুটি মানবাধিকার সংস্থাই রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্তটি আপাতত স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ৪ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা তৈরি করেছে, যাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। বাংলাদেশ সরকারের উচিত একটি স্বচ্ছ স্থানান্তর প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শরণার্থীদের বুঝে-শুনে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এবং দ্বীপটিতে যাওয়া-আসার অনুমতিসাপেক্ষে স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। সেই সাথে জাতিসংঘের আহ্বান অনুযায়ী একটি স্বাধীন কারিগরি এবং সুরক্ষা বিষয়ক মূল্যায়ন পরিচালনা করা উচিত।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্র্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘মানবিক পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সম্মতি বা সবুজ সংকেত ছাড়া শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তর না করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের কাছে যে ওয়াদা করেছিল, তা থেকে সরে আসছে।’
যদিও বাংলাদেশ সরকার বলছে, স্থানান্তর প্রক্রিয়া শরণার্থীদের ইচ্ছাতেই হচ্ছে। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দাবি করেছে যে, ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে এমন অন্তত ১২টি পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছে তারা। কিন্তু তারা স্বেচ্ছায় স্থানান্তর হতে চান না বলে মানবাধিকার সংস্থাটিকে জানিয়েছেন। এই তালিকায় থাকা কিছু শরণার্থী জোর করে স্থানান্তরিত হওয়ার ভয়ে পালিয়েছেন বলেও দাবি করেছে সংস্থাটি।
কয়েকজন শরণার্থীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে সংস্থাটি বিবৃতিতে জানায়, তারা ভাসানচরে স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হয়েছে। কারণ মাঝি এবং ক্যাম্প-ইন-চার্জরা তাদের বলেছে যে, সেখানে মাছ ধরা কিংবা কৃষিকাজ করার মতো জীবিকা উপাজর্নের পথ বেছে নিতে পারবেন। সেই সাথে তাদের স্বাস্থ্যসেবা এবং সন্তানদের শিক্ষালাভের সুযোগ থাকবে। পাঁচতলাবিশিষ্ট শেল্টার হোম রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হামাদি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর অনতিবিলম্বে বন্ধ করে সেখানে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশের মূল ভূখ-ে তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে আনা উচিত। দুর্গম ওই দ্বীপটিতে যেখানে মানবাধিকার গ্রুপ ও সাংবাদিকদের আগে থেকে অনুমতি না নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, সেখানে মানবাধিকার পরিস্থিতির স্বাধীন পর্যবেক্ষণ করাটাও হুমকির মুখে পড়বে।
এর আগে ২ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে জাতিসংঘ অবগত থাকলেও শরণার্থীদের স্থানান্তর প্রস্তুতি কিংবা তাদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংস্থাটিকে যুক্ত করা হয়নি। এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে তথ্যও খুবই কম আছে বলে বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
উপরের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থাগুলোর মতের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। এই ব্যবধানের কারণে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে পড়তে পারে।
এদিকে রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। আরাকান আর্মির সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ এখন একটি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ২০০৯ সালে আরাকান আর্মি গঠিত হয় রাখাইন অঞ্চলকে প্রাথমিকভাবে অধিকতর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে। পরে তারা আলাদা রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। আরাকান আর্মি রাখাইনকে মিয়ানমার কর্তৃক দখলকৃত অঞ্চল মনে করে। একসময়ের স্বাধীন আরাকান (রাখাইন) পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য তারা যুদ্ধ শুরু করে। ধারণা করা হচ্ছে যে, তাদের জনবল পাঁচ হাজারের কাছাকাছি এবং কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মির দ্বারা তারা প্রশিক্ষিত। বলা হয়, তারা নতুন স্বয়ংক্রিয় চীনা অস্ত্রে সজ্জিত, যার উৎস উত্তর-পূর্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ওয়া স্টেট আর্মি। ওয়া স্টেট আর্মি পরোক্ষভাবে চীন থেকে প্রচুর অস্ত্রের চালান পেয়েছে। ওয়া স্টেট নামের জায়গাটি সম্পূর্ণভাবে ইয়াঙ্গুন থেকে বিচ্ছিন্ন এবং নিজস্ব বিদ্রোহী সরকার দ্বারা পরিচালিত। এই অঞ্চলে চীনের সহযোগিতায় জলবিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে এবং অস্ত্র ও মাদকের চালানের মাধ্যমে তারা অর্থ উপার্জন করে। মিয়ানমারের অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনও ওয়া অঞ্চলের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে চীনা অস্ত্র পায়।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এবং সু চি সরকার পশ্চিমা দেশ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পুনরায় চীনের মুখাপেক্ষী হয়েছে। চীন এখন আগের থেইন সেইন সরকারের বাতিল করা উত্তরাঞ্চলের মাইটসন বাঁধ নির্মাণে নতুন করে আগ্রহ দেখাচ্ছে আর সু চি সরকারের সঙ্গে নতুনভাবে সহযোগিতার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছে। এ প্রকল্পের ব্যয় হবে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার, যা মিয়ানমারের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। তবে এ প্রকল্প শুরু হলে বিরাট অঞ্চল প্লাবিত হবে এবং সে কারণেই তা বাতিল হয়েছিল। তবে এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জন্য অতীব জরুরি। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৯০ শতাংশ চীনে রফতানি হবে। এছাড়া চীন আটকে থাকা রাখাইনের কিকিয়াপু গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে প্রস্তাবিত অধিক গতিসম্পন্ন রেলপথ তৈরির পুনঃউদ্যোগ নিচ্ছে। বর্তমানে মিয়ানমারের ৪০ শতাংশ বাণিজ্য রয়েছে চীনের সঙ্গে।
এশিয়া টাইমস-এর রিপোর্ট মতে, চীন একদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দিয়ে মিয়ানমারকে এক ধরনের চাপে রাখতে চায়। অন্যদিকে চীনের মধ্যস্থতার কারণেই বর্তমানের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধবিরতি। আরাকান আর্মির তৎপরতাও ওই প্রভাবে প্রভাবিত কি না, তা দেখার বিষয়। তবে মিয়ানমার যে ক্রমেই চীনের ওপর অভ্যন্তরীণ, আন্তর্জাতিক এবং অর্থনৈতিক কারণে পুনরায় ঝুঁকছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
রাখাইনে চীন-ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষণীয় হলেও চীনের পাল্লা এখনো ভারী। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এসব কারণেই চীনের সদিচ্ছা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশ চীন ও রাশিয়াকে অনেক বড় বড় প্রকল্প দিলেও কৌশলগত একটি ইস্যুতে সমর্থন পাচ্ছে না। একই সাথে আরাকান আর্মির উত্তর রাখাইনে ক্রমবর্ধমান শক্তি প্রদর্শন এবং তৎপরতায় যে দেশটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করা হয়, সেটি হলো ভারত। আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রাখাইনে মিয়ানমারের অভিযান পাল্টা-অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে রাখাইন অঞ্চল যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, তাতে সন্দেহ নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যতই আশাবাদ ব্যক্ত করুক না কেন, প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা যে সহজে তাদের নিজস্ব জন্মভূমিতে ফিরে যেতে à¦ªà¦¾à¦°à¦¬à§‡Ñ à¦¬à¦°à§à¦¤à¦®à¦¾à¦¨ পরিস্থিতি তেমন ইঙ্গিত দেয় না। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সামনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এটাই এখন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকদের ধারণা, রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার অঞ্চলে অনিশ্চিতকালের অবস্থান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃসীমান্ত নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। অনেকের মতে, রোহিঙ্গা ইস্যু হয়ে উঠতে পারে ‘প্রাচ্যের ফিলিস্তিন’ সঙ্কট।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু হিসেবে মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেয় না এবং তারা কয়েকটি অধিকার বা স্বাধীনতা ভোগ করে। যদিও বাংলাদেশ ও মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তিতে সম্মত হয়েছে, তবে মিয়ানমারে চলমান সহিংসতা এবং শরণার্থীদের দেশে যাওয়ার বিষয়ে ব্যাপক অনীহা দেখিয়ে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া অচল করে রেখেছে।
মিয়ানমারে সঙ্কট নিরসনে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অগ্রগতি একবারেই সামান্য। চীন এবং রাশিয়া জাতিসংঘে পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা দিয়েছে এবং আসিয়ান একটি সুসংগত অবস্থান বিকাশ করতে সক্ষম হয়নি।
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে, একবার কোনো শরণার্থী ছয় মাসের জন্য বাস্তুচ্যুত হয়ে গেলে তারা বছরের পর বছর নির্বাসনে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বলা হচ্ছে, এই শরণার্থী সঙ্কট যে কোনো আলাদা বিষয় হবে, তা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। এখন দীর্ঘ সময়কালীন বাস্তুচ্যুতির প্রভাবের জন্য অপারেশনাল সংস্থাগুলো দাতা এবং বাংলাদেশ সরকারের জন্য প্রস্তুতি শুরু করার কথা বলছে। জরুরি মানবিক প্রয়োজনের অবিচ্ছিন্ন প্রতিক্রিয়া, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নমূলক প্রতিক্রিয়ার সমর্থনের জন্য সংস্থানসমূহের সংহতকরণ এবং শরণার্থীদের অধিকার ও স্বাধীনতা বৃদ্ধিতে নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার সাথে একটি ত্রি-পক্ষীয় পদ্ধতির প্রয়োজন বলে মনে করছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, রোহিঙ্গাদের দুর্দশার সমাধান আসলেই রয়েছে মিয়ানমারে আর রাখাইন রাজ্য সম্পর্কিত উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশগুলো ব্যাপকভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকার যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
জাতিসংঘ মনে করে, রোহিঙ্গা জনগণের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের পক্ষে উপযুক্ত এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে সংলাপটি পুনরায় শুরু করা উচিত। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বিশ্বাসকে অনুপ্রাণিত করতে সহায়তা করবে এমন অন্যান্য পদক্ষেপের প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে তাদের চলাচলের স্বাধীনতার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ গ্রামে ফিরে আসতে দেয়া এবং নাগরিক অধিকার প্রদান নিশ্চিত করা।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।