রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৪র্থ সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ॥ ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী ॥ ১৯ এপ্রিল ২০২৪

এডভোকেট সাবিকুন্নাহার মুন্নী
রমযান মাস- যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। [আল বাকারা : ১৮৫]।
আমরা যেটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখি, সেটা আসল স্বপ্ন নয়,
সত্যিকার অর্থে স্বপ্ন সেটাই, যেটা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।
তেমনি আল কুরআন এমন এক জীয়নকাঠি, যেটা কোনো জাতিকে ঘুমাতে দেয় না ঘুমন্ত থাকলে তাকে জাগিয়ে তোলে। কর্মমুখী ও কর্মতৎপর করে তোলে। কুরআন তো এসেছে অনুধাবনের জন্য শুধু পড়ার জন্য নয়। নিজকে পরিবর্তন ও সমাজ পরিবর্তনের বিপ্লবী স্লোগান নিয়ে কর্তব্য-কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। যুগে যুগে অনেক মনীষী কুরআন পড়ে এর বিপ্লবী বাণী শুনে মুগ্ধ হয়েছেন। কুরআন পড়ে এর  মর্মার্থ অনুধাবন করে ভারতের সাবেক নবম রাষ্ট্রপতি পণ্ডিত ও কবি শঙ্কর দয়াল শর্মা (তিনি ২৫ জুলাই ১৯৯২ থেকে ২৫ জুলাই ১৯৯৭ পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে ছিলেন) হিন্দি ভাষায় এ কবিতাটি লেখেন।
হিন্দি ভাষায়Ñ
-  কুরআন শরীফ
-  আমল কি কিতাব থি,
-  দুয়া কি কিতাব বানা দিয়া।
-  সমঝ্নে কি কিতাব থি,
- পড়নে কা কিতাব বানা দিয়া।
- জিন্দাওঁ কা দস্তুর থা,
-  মুর্দাওঁ কা মনশুর বানা দিয়া।
- জো ইলম্ কি কিতাব থি
- উসে লা-ইলমোঁ কে হাথ থামা দিয়া।
- তশখীর-এ-কয়েনাৎ কা দর্স দেনে আয়ি থি,
- সির্ফ মদ্রাসোঁ কা নিসাব বানা দিয়া।
-  মুর্দা কওমোঁ কো জিন্দা করনে আয়ি থি,
-  মুর্দো কো বখশ্ওয়ানে পের লাগা দিয়া।
- অয় মুসলমানোঁ, ইয়ে তুম নে ক্যা কিয়া।

কবিতাটির বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ হলোÑ

AL Quran!

It was a Command for action.

You turned it into a book of prayer.

আমল করার কিতাব ছিল
দোয়ার কিতাব বানিয়ে ফেলেছো।

It was a Book to understand.

You read it without understanding.

এটা বোঝার কিতাব ছিল
তুমি এটা পড়ার (না বুঝে) কিতাব বানিয়ে ফেলেছো।

It was a code for the living.

You turned it into a manifesto of the dead.

জীবিতদের (জীবনযাপনের) কিতাব ছিল
মৃতদের (পরকালের) কিতাব বানিয়ে ফেলেছো।

That which was a book of knowledge.

You abdicated to the ignorants.
এটা জ্ঞানের কিতাব ছিল
মূর্খদের দখলে ছেড়ে দিয়েছো।

It came to give knowledge of Creation.

You abandoned it to the madrasa.
এটা সৃষ্টির জ্ঞান দিতে এসেছিল
তুমি এটা স্রেফ মাদরাসায় পাঠ্য বানিয়ে নিয়েছ!

It came to give life to dead nations.

You used it for seeking mercy for the dead.
এটা মৃত জাতিকে জাগাতে এসেছিল।
তুমি এটাকে মৃতের জন্য দোয়ার কাজে লাগিয়েছ।

Muslims! What have you done?
হে মুসলমান, তুমি এটা কী করেছ?
সারা লরেন। একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক, ব্রডকাস্টার এবং মানবাধিকার কর্মী। ইউকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের শ্যালিকা।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সারা দেখলেন, এ মানুষগুলো ইহুদিদের এত জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে। কারো সন্তান নিহত হয়েছে, কেউ বাবা-মা হারিয়েছে, কেউ হাত পা হারিয়ে পঙ্গু হয়ে আছে, কারো ভাগ্যে জুটেছে কারাগার। এত কিছু সত্ত্বেও তারা আশাবাদী। হতাশা কী- তারা জানেই না! সারার মনে হলো, এরা তারচে অনেক সুখী ও স্বচ্ছন্দময় জীবনের অধিকারী।
তিনি জানতে চাইলেন, এর রহস্য কী?
তারা বলল, ‘কুরআন আমাদের জীবনকে এভাবে পরিচালিত করেছে।’ সব মুসলিমের বাড়িতে এ বইটি (আল কুরআন) দেখতে পেতাম! কঠিন বিপদেও আমি তাদের মাঝে কোনো হতাশা দেখতে পাইনি। তখন আমার মনে হলা, এ বই ভালো মানুষ হওয়ার একটি গাইডবুক। আমি জানতাম, ‘আমি কোনো ভালো মানুষ নই।’
আমি কুরআনুল কারীম সংগ্রহ করি এবং ঘরে ফিরে এসে ‘কুরআনে কী আছে দেখার জন্য হাতে নিয়ে খুললাম। আমি সূরা হুদের ১০২ নম্বর আয়াত পড়লামÑ এমনই হয় আপনার রবের পাকড়াও, যখন তিনি জনপদসমূহকে এ অবস্থায় পাকড়াও করেন যে, তা অন্যায় অপরাধে লিপ্ত। নিশ্চয় তাঁর পাকড়াও যাতনাদায়ক, কঠোর।’
আমি ভয় পেয়ে যাই। কুরআনের প্রতিটা পৃষ্ঠা যেন আমাকে বলছিল, ‘আমি একজন পাপী। আমাকে জাহান্নামের শাস্তি পেতে হবে। আল্লাহ আমার প্রতি অসন্তুষ্ট। তখন ২০০৬ সাল। আমি মদ পান করতাম, ধূমপান করতাম। আমি ছিলাম স্বার্থপর, বিলাসী।’
‘দুই বছর পরে রমযান মাসে এক বান্ধবীর সাথে একটি মসজিদে প্রবেশ করি। রমযানে মুসলমানরা কী করেন তা জানার জন্য। রমযান মাস, মসজিদ মুসল্লিতে ভরপুর। বসে বসে দেখতে থাকি। মনে হলো যেন শান্তির এক ঝর্ণার নিচে তিনি বসে আছি।’
তিনি বুঝতে পারলেন, ইসলামেই শান্তি। ইসলামই সত্য। এর এক সপ্তাহ পর লন্ডনের আরেকটি মসজিদে যান এবং কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করেন। কুরআনের ব্যাপারে তার অনুভূতি হল, ‘দুইদিন কুরআন থেকে দূরে থাকলে তার জীবন চলা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ধারালো কাচের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মতো।’
প্রথমে শুধু জাহান্নামের শাস্তির আয়াত দেখে ভয় পেলেও এখন তার সামনে কুরআনের সৌন্দর্য প্রকাশ পেয়েছে। কুরআন এখন তার জীবনের ভালোবাসা।
আফসোস! একজন বিধর্মী পণ্ডিত শঙ্কর দয়াল শর্মা এবং একজন নও-মুসলিম সারা লরেন আল কুরআনকে যেভাবে অনুধাবন করতে পেরেছেন, আমরা জন্মসূত্রে মুসলিমরা আল কুরআনকে কি তার ছিটেফোঁটাও অনুধাবন করতে পেরেছি?
একবার ইসলামিক দেশগুলো কতখানি ইসলামিক- এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হুসেন আসকারী। ইসলাম ধর্মে রাষ্ট্র ও সমাজ চলার যে বিধান দেয়া হয়েছে, তা যে দেশগুলো প্রতিদিনের জীবনে মেনে চলে, তা খুঁজতে গিয়ে দেখা গেলÑ যারা সত্যিকারভাবে ইসলামিক বিধানে চলে, তারা কেউ বিশ্বাসী মুসলিম দেশ নয়।
স্টাডিতে দেখা গেছে, সবচেয়ে ইসলামিক বিধান মেনে চলা দেশ হচ্ছে নিউজিল্যান্ড এবং দ্বিতীয় অবস্থানে লুক্সেমবার্গ। তারপর এসেছে পর্যায়ক্রমে আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ষষ্ঠ ও কানাডা সপ্তম অবস্থানে। মালয়েশিয়া ৩৮তম, কুয়েত ৪৮তম, বাহরাইন ৬৪তম এবং অবাক করা কাণ্ড সৌদি আরব ১৩১তম অবস্থানে। গ্লোবাল ইকোনমি জার্নালে প্রকাশিত এ গবেষণায়, বাংলাদেশের অবস্থান সৌদিদেরও নিচে।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, মুসলমানরা নামায, রোজা, সুন্নাহ, কুরআন, হাদিস, হিজাব, দাড়ি, লেবাস নিয়ে অতি সতর্ক, কিন্তু রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে ইসলামের আইন মেনে চলে না।  একজন জাপানি নও-মুসলিম বলেছেন, আমি পশ্চিমা দেশগুলোয় অমুসলিমদের ইসলামের বিধান পালন করতে দেখি, আর পূর্বের দেশগুলোয় ইসলাম দেখি, কিন্তু কোনো মুসলিম দেখি না। মুসলিমদের এমন চরিত্র দেখে লর্ড বার্নার্ড’ শ একবার বলেছিলে, ‘ইসলাম হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং মুসলমানরা হচ্ছে সর্বনিকৃষ্ট অনুসারী।’ কুরআন নাজিলের পবিত্র দিনগুলোকে মনে করে কিছুটা হলেও আল কুরআন অনুধাবন করে পড়ার চেষ্টা করি, মানার চেষ্টা করি। কুরআনের আয়নায় নিজের চরিত্রটা দেখে নিই। মহান রব আমাদের হিদায়াতের আলোয় ধন্য করুন, আলোকিত করুন প্রতিটি হৃদয়, প্রতিটি মন। আমিন

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।