সংবাদ শিরোনামঃ

ভারতের নদী হত্যা অব্যাহত ** সরকার দ্রুত নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে ** সারাদেশে জামায়াতের বিক্ষোভ ** মোদি জিতলে ‘হারবে’ ভারত ** ১৮ দল আন্দোলনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে ** বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ; বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য কোনো বিশেষ ধর্ম দায়ী হতে পারে না : সউদী রাষ্ট্রদূত ** বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ ** পহেলা বৈশাখে ‘ফিলদি রিচ’দের তাণ্ডব! ** বাংলা নববর্ষ ** সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশ কুষ্টিয়াবাসী ** আত্রাইয়ে ইটভাটায় নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে উৎপাদন, পরিবেশ হচ্ছে দূষিত ** ক্ষুধার জ্বালায় হনুমানগুলো কাতর **

ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪২১, ১৭ জমাদিউস সানি ১৪৩৫, ১৮ এপ্রিল ২০১৪

সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভার প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গত শনিবার ১২ এপ্রিল মহাখালী ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে সম্প্রীতি সম্মেলনে বক্তৃতা করেন সউদী রাষ্ট্রদুত ড. আব্দুল্লাহ বিন নাসের আল বুসাইরী

স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বের সব ধর্মই শান্তি ও কল্যাণের কথা বলে এবং মানবজাতির মুক্তির লক্ষ্যেই ধর্মীয় নেতারা কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল, আছে এবং থাকবে। ধর্ম নয়, বর্তমানে রাজনৈতিক মনোবৃত্তির কারণে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটছে। বৈষয়িক স্বার্থের কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। আইন প্রয়োগ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী ঐ অসুরদের বিনাশ করতে হবে।

গত ১২ এপ্রিল শনিবার ঢাকায় ‘সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভা’র প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সর্ব ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয়  ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ একথাগুলো বলেছেন। ঢাকার মহাখালী ব্রাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন  সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভা’র আহ্বায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফাতিমা আনোয়ার।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে আরো বক্তব্য রাখেন, শিক্ষা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোবারক আলী আকন্দ, আর্ক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ কর্নেল (অব:) আশরাফ উদ্দিন, লে. কর্নেল (অব:) আলী আহমদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন, এ্যাড. শাহ আলম, ড. দীপঙ্কর মহাথের, এ্যাড. আলাল ইসলাম খান, অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার, প্রকৌশলী দিবেন্দু বিকাশ বড়–য়া, মাইনোরিটি ওয়াচের সভাপতি অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মাওলানা মুফাজ্জল হোসাইন খান, বাংলাদেশ আন্তঃধর্মীয় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ব্রাদার জারলাথ ডি সুজা, আব্দুল হান্নান তফাদার, শাহাদাতুল্লাহ্ টুটুল, প্রমুখ।

সম্মেলনে সভার পক্ষ থেকে উত্থাপিত তিনদফা প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। বাংলাদেশে নিযুক্ত সউদী রাষ্ট্রদূত ড. আব্দুল্লাহ বিন নাসের আল বুসাইরী বলেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি রয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে যেসব ঘটনা ঘটে থাকে তার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দায়ী হতে পারে, এজন্য কোনো ধর্ম দায়ী নয়।

সম্মেলনে সউদী রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, আল-কুরআনসহ কোনো ধর্মগ্রন্থে অন্য ধর্মকে হেয় করার কথা বলা নেই। এজন্য অন্য ধর্মের ব্যক্তির উপর হামলার যে ঘটনা ঘটে তাতে কোনো গোত্র বা দলকে দোষারোপ করা যায় না, এজন্য ওই ব্যক্তিই দায়ী হবে। তিনি বলেন, কোনো বিষয়ে মতপার্থক্য হওয়া দোষণীয় নয়, কিন্তু তাকে পুঁজি করে বিশৃঙ্খলা করা উচিত নয়।

ড. বুসাইরী জানান, সউদী বাদশাহ সারাবিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে একটি উদ্যোগ নেন। তার দাবির প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে জাতিসংঘে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। পরে ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সব সময় সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ ধারা অব্যাহত রাখলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। তিনি সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভার কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, তারা সঠিকভাবে কাজ করে গেলে আগামীতে এ কার্যক্রম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হলে ব্যক্তি নয়, আইনের শাসন শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী অসুরদের বিনাশ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, দেশের যেকানো অর্জন সম্ভব হয়েছে সব ধর্মের লোকের যৌথভূমিকা থাকার কারণে।  বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব অধ্যাপক মাওলানা মো. সালাহউদ্দীন বলেন, মানবধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম। সবার পিতা এক আদম (আ.) এবং সবার মাতা এক মা হাওয়া (আ.)। এজন্য সকল মানুষ আমরা ভাই ভাই। আমাদের মধ্যে বিরোধ থাকবে কেন। তিনি আরো বলেন, সত্যিকার ধার্মিক মুসলিমরা কখনো মানুষের শত্রু হতে পারেনা। ধর্মের নামে অনেক অধর্মের কাজ হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী অমেয়ানন্দের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মাঝে মাঝে এর ব্যতিক্রম সম্প্রীতিকেই আরো গ্রহণযোগ্য করে তোলে।  আর্চবিশপ পৌলিনুস কস্তা বলেন, সমাজে সম্প্রীতি খুবই প্রয়োজন। এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিলো, থাকবে। দেশে যে হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে তা ধর্ম নয়, ব্যক্তিগত বৈষয়িক স্বার্থের কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। এ থেকে মুক্তি চাই। সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভা সে পথ দেখাবে বলে আশা করি। স্বাগত বক্তব্যে বিচারপতি আবদুর রউফ বলেন, ইসলাম একটি সার্বজনীন ধর্ম। কিন্তু মুসলমানরা এটিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারছেনা। তিনি আরো বলেন, শত্রু সম্পত্তি নিয়ে নির্বাচনের আগে পরে দেশে হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এজন্য আইনের সংস্কার প্রয়োজন। তিনি ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় সমাজের সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। মুক্ত আলোচনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ইউসুফ আলী বলেন, বর্তমানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা হচ্ছে রাজনৈতিক মনোবৃত্তির কারণে। তিনি এও বলেন, উগ্রবাদীতার জন্য ধর্মকে দায়ী করা যাবে না, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই দায়ী।

চট্টগ্রাম বৌদ্ধ মহাবিহারের অধ্যক্ষ ড. দীপংকর থেরো বলেন, কোনো ধর্মই খারাপ কথা বলে না। মানুষের জন্য ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। একশ্রেণীর মানুষ দানবীয় মনোবৃত্তি নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে।

সাবেক মন্ত্রী এডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী বলেন, ধর্ম মানুষকে সত্যের সন্ধান দেয়, হৃদয়কে পুতঃ পবিত্র করে। কিছু খারাপ লোক অপকর্ম করে ধর্মের নাম দিচ্ছে। তাদের রুখতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে কোনো ধর্মই নিরাপদ নয়। রামু থেকে মালোপাড়া, মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান সবাই রাজনৈতিক কারণে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জন্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মী দায়ী, ধর্ম নয়।

বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী দিব্যেন্দু বিকাশ চৌধুরী বলেন, কায়েমী স্বার্থবাদী ব্যক্তিরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ফায়দা লুটছে। বাংলাদেশ মাইনোরিটি ওয়াচের প্রেসিডেন্ট এডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ধর্মীয় উম্মাদনা বেড়েছে। সংখ্যালঘু নির্যাতন কেন হচ্ছে তা খুঁজে বের করতে হবে।

সম্মেলনে সর্ব সম্মতিক্রমে তিন দফা প্রস্তাব গৃহিত হয়। প্রস্তাব তিনটি হল: (১) সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভার সাংগঠনিক কাঠামো সারাদেশে গড়ে তোলা হবে (২) এই সংগঠনের একটি ত্রৈমাসিক মুখপত্র “সম্প্রীতি” প্রকাশ করা হবে এবং (৩) যে সব আইনের কারণে, জমি সংক্রান্ত বিরোধ সারাদেশে সম্প্রীতি নষ্ট করছে, সেই আইনগুলো সংস্কারের জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানানো হয়। সম্মেলনে ‘সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভা’র স্মারক গ্রন্থ’ “সম্প্রীতি” এর মোড়ক উন্মোচন ও ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করা হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনে সাংগঠনিক সেশনে প্রতিনিধিদের উম্মুক্ত আলোচনা শেষে ৭টি বিভাগের ম্যানেজিং কমিটি ঘোষনা করা হয়। যারা তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে স্ব স্ব বিভাগে পূর্নাঙ্গ কমিটির প্রস্তাবনা কেন্দ্রীয় সংগঠনের কাছে পেশ করবে। কেন্দ্রীয় সংগঠন আনুষ্ঠানিক ভাবে বিভাগীয় কমিটি ঘোষনা করবেন।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।