ইলিয়াস আলীসহ সিলেটের গুম হওয়া নেতারা কি ফিরে আসবেন!

আব্দুল হাই ইদ্রিছী কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) থেকে : ১৭ এপ্রিল ২০১২ গুম হন বৃহত্তর সিলেটের নেতা, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। তিনি ছাড়াও  আওয়ামী লীগের শাসনামলে বৃহত্তর সিলেটের ৬ জন গুম হয়েছেন তারা হলেন, এইচ এম সাইদুল ইসলাম, কামাল উদ্দিন, ইরা মিয়া, রহিম মিয়া, বেলাল আহমদ চৌধুরী, মরিয়ম আখতার। বিগত বছরগুলোতে গুম হওয়া বিরোধীদলের কয়েকজন নেতা কর্মীর পরিবারের বর্তমান অবস্থা প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হলো।

১. এইচ এম সাইদুল ইসলাম

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বিএনপির উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে ২০১১ সালের ১০ জানুয়ারি বিরোধীদলীয় ষড়যন্ত্র আর রাজনীতিতে সক্রিয়তার ফলে তাকে গুম করা হয়। পরবর্তিতে তার স্ত্রী দিরাই পৌর শহরের সিংকাপন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা স্বামীর সন্ধানে বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করতে গেলে আওয়ামী লীগ নেতারা তাকে চাকরিচ্যুত করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই পরিবার তাদের অবিভাবক এইচ এম সাইদুল ইসলামকে ফিরে পায়নি।

২. কামাল উদ্দিন

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলাধীন কামাল উদ্দিন ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গুম হয়ে যান। তিনি বিএনপির সাতগাঁও ইউনিয়ন সভাপতি থাকাকালীন আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে নিখোঁজ হন। পরবর্তিতে তার সন্ধানে বড় ভাই আব্দুর রহমান প্রতিবাদ করতে গেলে তাকেও রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় নাম ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত কামাল উদ্দিন ছাড়া পায়নি। খোঁজ মেলেনি তার ভাইয়ের।

৩. ইরা মিয়া

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম কমিটির সেক্রেটারি, শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইরা মিয়াকে গত ২৬ আগস্ট ২০১২ সালে সন্ত্রাসীরা গুম করে। পরবর্তিতে উনার কলেজ পড়ুয়া ছেলে তার বাবার সন্ধানে বিভিন্ন সংবাদ কর্মী ও মানবাধিকার সংস্থার সাথে যোগাযোগ করলে সন্ত্রাসীরা তাকে বিভিন্নভাবে হামলা, মামলা দিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে। বর্তমানে সে আত্মরক্ষার জন্য দেশের বাইরে আত্মগোপনে আছে।

৪. রহিম মিয়া

সিলেট শহরের দক্ষিণ সুরমা বরইকান্দি গ্রামের রহিম মিয়াকে ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে নিজ বাড়ি থেকে গভীর রাতে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। পরে তার স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যরা তার সন্ধানে প্রতিবাদ করতে গেলে দক্ষিণ সুরমার নামকরা সন্ত্রাসী ও কমিশনার আসুক এর নেতৃত্বে রহিম মিয়ার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়।

৫. বেলাল আহমদ চৌধুরী

হবিগঞ্জ জেলার বহুবল উপজেলার লংলা গ্রামের করিম চৌধুরীর বড় ছেলে পৌর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক বেলাল আহমদ চৌধুরী গত ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ সালে নিখোঁজ হন। করিম চৌধুরী তার ছেলেকে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও আজ পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান মিলেনি। তিনি তার ছেলের জন্য বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার সাথে যোগাযোগ করলে সন্ত্রাসীরা তাকে জীবন নাশের হুমকি প্রদান করে।

৬. মরিয়ম আক্তার

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের জব্বার আলীর স্ত্রী কাঁঠালতলী ইউনিয়ন বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা বিশিষ্ট সমাজ সেবিকা মরিয়ম আক্তারকে গত ১২ মে ২০১৪ কথিত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা গুম করে। তার স্বামী জব্বার আলী অনেক খোঁজাখুঁজির পর আজ পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাননি ।

তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কয়েক দফায় সংবাদ সম্মেলন করার পরেও আজ অবধি তার কোনো হদিস মিলেনি। ছেলেমেয়েরা মায়ের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।

সর্বোপরি দেশে আজ একনায়কতন্ত্র চলছে। মানুষের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারছেন না সাধারণ মানুষসহ বিরোধী দলের নেতারা। সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের সাধারণ নাগরিক এমন অবস্থা থেকে ফিরে এসে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে চায়। গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা তাদের হারিয়ে যাওয়া মানুষকে ফিরে ফেতে চায়। এমন প্রত্যাশা দেশের সুশীল সমাজের।