সংবাদ শিরোনামঃ

গভীর সঙ্কটে দেশ ** হরতাল অবরোধে বিচ্ছিন্ন ঢাকা ** খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ** পঙ্গু হাসপাতালে চলছে বোবা কান্না ** আনোয়ার ইব্রাহিম সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ ** সরকার হত্যাকাণ্ড চালিয়ে দেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করেছে : ছাত্রশিবির ** বিচারবহির্ভূত সকল হত্যাকাণ্ড বন্ধ হোক ** মমতা এলেন এবং গেলেন ‘পলিটিক্স’ করে ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** শিশুর প্রতিভা বিকাশে আনন্দময় পরিবেশ ** “ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া গণতন্ত্র গণপ্রতারণা” ** যথাযথ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত ** ভাষার লড়াই ও বাংলা ভাষা সংস্কারের ইতিহাস **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ ফাল্গুন ১৪২১, ৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৬, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

॥ গোলজার আহমদ হেলাল॥
মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মায়ের ভাষায় কথা বলার দাবিতে এদেশের মানুষের আত্মত্যাগকে সম্মান দেখিয়ে জাতিসংঘ এই দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলা ভাষা আন্দোলনের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। ১৯০১ সালের রংপুরের প্রাদেশিক শিক্ষা সম্মেলনে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, ১৯১৮ সালে বিশ্ব ভারতী সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে মাওলানা আকরম খাঁ, ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের সাহিত্য সম্মেলনে বাংলাকে এ অঞ্চলের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনে নিবেদিত ‘তমদ্দুন মজলিস’ নামক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১ অক্টোবর তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে প্রথম ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। এর আহ্বায়ক মনোনীত হন অধ্যাপক এ এস এম নুরুল হক ভূঁইয়া। ১৯৪৮ সালে গণ পরিষদে লিয়াকত আলী (প্রধানমন্ত্রী) ও খাজা নাজিমুদ্দিন (মুখ্যমন্ত্রী)-এর বক্তব্যের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকার পল্টনের জনসভায় ঘোষণা করে ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ এর প্রতিবাদে ঢাকায় ৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় ছাত্র ধর্মঘট। এ জন্য ১১ ফেব্রুয়ারি প্রস্তুতি দিবস এবং ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত বানচালের উদ্দেশ্যে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে টানা ৩০ দিনের ১৪৪ ধারা জারি করে। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে আমতলায় এক বিরাট ছাত্র সমাবেশে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নুরুল আমীন। ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। বিকাল ৩.৩০টার সময় অকস্মাৎ পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে মিছিলের উপর গুলি চালায়। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার আরও নাম না জানা অনেকে। পরে তাদের লাশ নিয়ে শোভাযাত্রা বের হলে তাতেও গুলি চলে। সেখানে শহীদ হন শফিউর রহমান। এ হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভের আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। মিছিলে গুলিবর্ষণ ও ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ২২ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে হরতাল পালিত হয়। এমতাবস্থায় পশ্চিমা শাষকগোষ্ঠী আন্দোলনকে আর কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারলেন না। দাবি মেনে নিতে হলো-বাংলার আপামর ছাত্রজনতার। বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করলো। পুলিশের গুলিতে যে স্থানে ভাষা সৈনিকেরা শহীদ হয়েছিলেন সেখানে গড়ে উঠলো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এই মিনারটি উদ্বোধন করেছিলেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক শাখা ‘ইউনেস্কো’ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্যারিস বৈঠকে অমর শহীদ দিবস একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ইউনেস্কোর সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের একটি বিশিষ্ট অর্জন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করলো এবং বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের উজ্জল অধ্যায়টি বিশ্ব ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়ে পরিণত হয়।

ফলে ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮টি রাষ্ট্রে মাতৃভাষার দাবিতে সংগ্রামকৃত বাংলার দামাল ছেলেদের কথা উচ্চারিত হচ্ছে। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে সেই সব তরুণদের অবদানের কথা।

ঢাকার শহীদ মিনার এখন শুধু ঢাকার নয়, এই শহীদ মিনার এখন সারা বিশ্বের হয়ে উঠেছে নতুন নতুন সংগ্রামের পবিত্র স্মারক, বিজয়ের প্রতীক, অনুপ্রেরণার উৎস। মাতৃভাষা দিবসটি এখন শুধু বিশ্বের ২৫ কোটি বাংলা ভাষীর অমূল্য সম্পদ নয়, প্রায় ৬০০ কোটি মানুষের আস্থার প্রতীক, সংগ্রামী চেতনার স্মারক।

একুশে ফেব্রুয়ারি পূর্ব বাংলায় যে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে এখনো যে সব জনপদে মাতৃভাষার দাবিতে সংখ্যাহীন তরুণ-তরুণীরা সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন-বিশেষ করে বিশ্বায়নের এই কালে ২১ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে কোনো অন্যায়ের নিকট মাথা না নোয়ানোর প্রত্যয়রূপে জাগ্রত রাখবে। একুশের ইতিহাস মূলত সাধারণ ছাত্রজনতার ইতিহাস। দেশের চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবীরা তাদের যুক্তিবাদী সৃজনশীল লেখনী দ্বারা সমাজ জীবনে এর ক্ষেত্র রচনা করেন। বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ ডক্টর মুহাম্মদ এনামুল হকের মতে ‘২১ ফেব্রুয়ারি কোনো বিশেষ দিন, ক্ষণ বা তিথি নয়, একটি জাতির জীবন্ত ইতিহাস’। এ ইতিহাস অগ্নিগর্ভ। যে সজীব ‘লাভা স্রাবক আগ্নেয়গিরি’ কখনও অন্তর্দাহে গর্জন করছে, আবার কখনো চারিদিকে অগ্নি ছড়াচ্ছে। সত্যিই এ ইতিহাস মৃত নয়, একেবারে জীবন্ত।’

৫২ সালের ভাষা আন্দোলন শুধু মাতৃভাষাকে ঠিকিয়ে রাখার আন্দোলনই ছিল না; তা ছিল আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র নস্যাতের এক আপোষহীন সংগ্রাম। সত্যিকার অর্থে বাঙ্গালীর জাতীয়তাবোধ এবং স্বাধিকার চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকেই। সেই ভাষা আন্দোলনে বিজয়ী বাঙালি জাতি রক্তক্ষয়ী বহু আন্দোলনের ধাপ পেরিয়ে ১৯৭১ সালে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে পেরেছে।

স লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি যুব সংস্থার (জাতিসংঘের সদস্য ভূক্ত এনজিও) স্থানীয় প্রতিনিধি।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।