সংবাদ শিরোনামঃ

বিএনপি জামায়াতের জনসমর্থন বাড়ছেই ** জামায়াত গণতন্ত্র শান্তি সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে ** বাংলাদেশের ভারত জয় ** মধ্যবর্তী নির্বাচন কতদূর! ** ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় মাহে রমজানের শিক্ষা কাজে লাগাতে হবে : নুরুল ইসলাম বুলবুল ** প্রতিবেশী বন্ধুরা আমাদের গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে না ** কূটনীতিতে চরম ব্যর্থ বাংলাদেশ ** বাংলাওয়াশ : হজম করতে কষ্ট হচ্ছে ভারতের! ** রমজানে সারাদেশে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ** ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চাই রক্ষাকবচ **

ঢাকা, শুক্রবার, ১২ আষাঢ় ১৪২২, ৮ রমজান ১৪৩৬, ২৬ জুন ২০১৫

আবদুর রহিম হারমাছি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম : বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল কেনার খরচ অর্ধেকে নেমে এলেও সার্বিকভাবে আমদানির পরিমাণ বাড়ায় বিদায়ী অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে চলেছে। অর্থবছরের দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৫০ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (জুলাই-জুন) চেয়েও ২৫ শতাংশ বেশি। আর জুলাই-এপ্রিল সময়ের চেয়ে ৫৪ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি।

অর্থবছর শেষে এই ঘাটতি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এক হাজার কোটি ডলার (১০ বিলিয়ন) ছাড়িয়ে যাবে বলে হিসাব করে দেখিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান আমদানি বাড়ার এ চিত্রকে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ‘ইতিবাচক’ বলেই মনে করছেন। জায়েদ বখতও গভর্নরের সঙ্গে এ বিষয়ে একমত। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট) হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে তিন হাজার ৩৪৬ কোটি (৩৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

আমদানির এই আর্থিক পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি।

এর বিপরীতে এই সময়ে বিভিন্ন দেশে পণ্য রফতানি করে দুই হাজার ৪৯৬ কোটি ৬০ লাখ (২৪ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। এ হিসাবে দশ মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ৬৮০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ৭০১ কোটি ডলার।

২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষ হতে আর কয়েকদিন বাকি; এর মধ্যেই গত ৯ জুন মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক এপ্রিল পর্যন্ত পণ্যবাণিজ্যের এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

জুলাই-এপ্রিল সময়ে সেবা খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৮৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত অর্থবছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩২০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ পণ্য রফতানি করে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে, পণ্য আমদানির জন্য তার চেয়ে বেশি বিদেশী মুদ্রা ব্যয় করতে হয় বলে প্রতিবছর এ ঘাটতি দেখা দেয়। পণ্য বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে। সে সময় সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছিল ৯৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৯৩২ কোটি ডলার। 

এ অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে জায়েদ বখত বলেন, “দশ মাসের হিসাবে ৮৫০ কোটি ডলার ঘাটতি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি ব্যয় আরও বেড়েছে। সে হিসাবে মে ও জুন মাসের ঘাটতি যোগ হলে, অর্থাৎ অর্থবছর শেষে বাণিজ্য ঘাটতি ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে- এটা মোটামুটি নিশ্চিত।”

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এই গবেষক বলেন, মূলত শিল্প খাতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম আমদানি বাড়ার কারণেই ব্যয় বাড়ছে।

“খরায় থাকা বিনিয়োগ বাড়াতে এটা সহায়তা করবে”, বলেন তিনি।

গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল এবং খাদ্য পণ্যের দাম বেশ কম থাকার পরও আমদানি ব্যয় বাড়ার অর্থ হচ্ছে, দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বর্তমানে ২৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ মজুদ আছে। এই মজুদ দিয়ে সাত মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

“দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় শিল্প স্থাপনের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারি, শিল্পের কাঁচামাল এবং শিল্প খাতের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য আমদানি বাড়ায় আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এ কারণে ব্যালেন্স অফ পেমেন্টেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

“কিন্তু তাতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত রিজার্ভ আমাদের মজুদ আছে।”

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, “ইউরোর দর পতনে ইউরোপের বাজার থেকে সস্তায় পণ্য আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সুযোগটিই নিচ্ছেন আমাদের শিল্প মালিকরা। যার ফলে বাড়ছে আমদানি ব্যয়, বাণিজ্য ঘাটতি।”

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ইউরোর দর কমায় ইউরোপের দেশগুলো থেকে আমদানি করা পণ্যের খরচ চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। এ সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা। এতে সস্তায় ভালো মানের পণ্য দেশে আসছে।

লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি ১৬৪ কোটি ডলার

সেবা ও পণ্য বাণিজ্যের ঘাটতির কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জুলাই-মে সময়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৬৪ কোটি ডলার। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে ১৫৪ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস (অগাস্ট) পর্যন্তও বাংলাদেশের ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট উদ্বৃত্ত ছিল।  এরপর সেপ্টেম্বর থেকে উল্টোপথে (ঋণাত্মক) হাঁটতে শুরু করে অর্থনীতির এই সূচক।

সাধারণভাবে চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।

এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

বিপিসি ‘সুদিন’

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানিতে মোট ৩৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। বিশ্ববাজারে দাম কমায় এবার (২০১৪-১৫ অর্থবছর) তা ১৭ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসবে।

তেলের দাম কমায় গত ডিসেম্বর থেকে জ্বালানি তেল বিক্রি করে বিপিসি লাভ করছে বলেও বদরুদ্দোজা জানান।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৫ এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত (১ জুলাই থেকে ২২ এপ্রিল) সময়ে বিপিসি তিন হাজার ৪৫৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। গত ২০১৩-১৫ অর্থবছরেও এই সংস্থাটি দুই হাজার ৩২১ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছিল।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর লাভের মুখ দেখতে যাচ্ছে বিপিসি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৩২২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা লাভ করেছিল বিপিসি।

এর বাইরে প্রতিবছরই জ্বালানি তেল ক্রয় ও বিপণনকারী সরকারি এই প্রতিষ্ঠানকে মোটা অংকের লোকসান গুণতে হয়েছে। এ কারণে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে বিপিসির পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এতোদিন বেশি দামে তেল কিনে কম দামে বিক্রি করার কারণে লোকসান দিতে দিতে বিপিসি একটি ‘জঞ্জাল’ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল।

“সেই জঞ্জাল দূর করতেই বিশ্ব বাজারে জ্বলানি তেলের দাম কমার পরও আমরা কমাইনি।”

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।