সংবাদ শিরোনামঃ

আগাম নির্বাচন দিতে চায় সরকার ** খালেদা জিয়ার সাথে জামায়াত নেতাদের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ** সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী’র মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল ** আওয়ামী সরকারের অধীনে নির্বাচন বেগম জিয়ার প্রত্যাখ্যান ** দেশের স্বার্থ রক্ষায় সোচ্চার থাকতে হবে : শিবির সভাপতি ** বাড়ছে কোটিপতি বাড়ছে বৈষম্য ** সকল ক্ষেত্রে একটি বন্ধ্যাত্ব পরিস্থিতি বিরাজ করছে ** নৈতিক অবক্ষয় প্রধান কারণ ** শুরুর কথা শুনুন ** ফাঁসির মঞ্চে মর্দে মুমিন যুগে যুগে ** ফেলানী হত্যার বিচার না মেগাসিরিয়াল! ** ধেয়ে আসছে বন্যা॥ পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ ** সরকারি গাছ কেটে কর্মকর্তার শখের ফুল বাগান **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ শ্রাবণ ১৪২২, ১৪ শাওয়াল ১৪৩৬, ৩১ জুলাই ২০১৫

নেছার আহমদ নেছার
ব্রিটিশ আমলে বা পাকিস্তান আমলে আনার হিসাব ছাড়া বাজারে কোনো ক্রয় বিক্রয় হতো না। প্রত্যেক পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে আনার হিসাব ছিল অত্যাবশ্যক। কেননা প্রত্যেক পণ্য মূল্যের টাকার পরে আনা জুড়ে থাকতো। হিসাবের অংকটা ছিল এই রূপ। ১ টাকা ১৬ আনা। ১ আনা ছিল ৬ পয়সা। ১ পয়সার মুদ্রাও প্রচলিত ছিল। মুদ্রাগুলো ছিল ১ টাকার মুদ্রা, আট আনার মুদ্রা, চার আনার মুদ্রা, ১০ পয়সার মুদ্রা, ৫ পয়সার মুদ্রা, ২ পয়সার মুদ্রা, ১ পয়সার মুদ্রা, বাজারে পণ্যের মূল্য যদি দুই আনা হতো তবে খরিদদার দোকানদারকে একটি ১০ পয়সার কয়েন মুদ্রা ও একটি দুই পয়সার মুদ্রা মিলিয়ে ১২ পয়সা মিল করে দিতেন। মানে ১২ পয়সা হলো দুই আনা। যদি কোনো পণ্যের মূল্য ৫ আনা হতো, তবে চার আনা মুদ্রার সাথে একটি পাঁচ পয়সার মুদ্রা যোগ করে দিতেন খরিদদার। কোনো কোনো কৃপণ দোকানদার ক্রেতার সাথে বাগবিতণ্ডাও করতেন ৫ আনা মূল্য গ্রহণে। যেমন চার আনা হলে সেটাকে ১ টাকার চার ভাগের এক ভাগ ২৫ পয়সা বুঝতো। চার আনার মুদ্রায় পঁচিশ পয়সা লিখা থাকতো। কাজেই অনেক ক্রেতা ৬ আনা পরিশোধে ১ পয়সা আয় করতে ১টি চার আনা ও একটি পাঁচ পয়সার মুদ্রা দিয়ে পরিশোধ করতেন। তবে কৃপণ দোকানদার তর্ক জুরে বসতো। সে তর্ক হলো ক্রেতাকে তীব্রভাবে আক্রমণ করে বলতেন চার আনা দিয়েছ পাঁচ পয়সার সাথে ১ পয়সা দিয়ে আরও এক আনা তৈরি করে পাঁচ আনা দাও। অনেক দোকানদার ক্রেতার কাছ থেকে ৩১ পয়সাই আদায় করতেন। উনাদের যুক্তিও কোনো কোনো ক্রেতা মেনে দিতে বাধ্য হতেন। কারণ চার আনা দিয়েছেন আরও এক আনা দিতে হলে ৬ পয়সা দিয়ে পরিশোধ করতে হবে। কাজেই পাঁচ পয়সার মুদ্রার সাথে এক পয়সার মুদ্রা দিতে বাধ্য হতেন। আবার দেখা গেছে শিতি ক্রেতাগণ এই রূপ তর্ক বাধা দোকানীদের চার আনার মুদ্রার সাথে পাঁচ পয়সার মুদ্রা দিয়ে ২৫ পয়সা + ৫ পয়সা = ৩০ পয়সা ত্রিশ পয়সায় ৫ আনাই হচ্ছে। যেমন ৬ পয়সা গুণ ৫ আনা = ৩০ পয়সা এই হিসাব দোকানী মানতে বাধ্য হতো। তার পরও অনেক দোকানী ক্রেতা আটকে ফেলতেন। যেমন বলতেন, দেখুন ভাই আপানর কাছ থেকে ৫ আনা রাখলাম একটি চার আনার মুদ্রা ও একটি পাঁচ পয়সার মুদ্রা। আমি কোনো ক্রেতাকে চার আনা ফেরত দিলাম। আমার কাছে রইল পাঁচ পয়সার মুদ্রা। যদি কাউকে এক আনা ফেরত দিতে হয় তবে ঐ পাঁচ পয়সার মুদ্রার সাথে অবশ্যই এক পয়সা দিতে হবে। এই একটি পয়সাই আমার লোকসান হবে। তখন সচেতন ক্রেতার উত্তর থাকতো “আপনি কোনো কাস্টমারকে যখন পাঁচ আনা ফিরত দেবেন তখন ঠিক সেভাবে দিবেন-যেমন একটি চার আনার মুদ্রা ও একটি পাঁচ পয়সার মুদ্রা। তখন অনেক দোকানদার মাথা হেলিয়ে সায় দিয়ে আর তর্ক করতেন না।

সে সময়ে কয়েন মুদ্রার খুব মূল্য ছিল দোকানদার ও ক্রেতাগণ কয়েন মওজুদ করে রাখতেন। কেনা বেচায় একান্ত অপরিহার্য্য ছিল আনা বা পয়সার হিসাব। এখন কি আনা বা পয়সার হিসাব আছে। বিবর্তন ও মুদ্রা মানের লুকোচুরিতে আমরা ভুলতে বসেছি আনা ও পয়সার হিসাব। এখন আনা বা পয়সার হিসাব নেই। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এ নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় নেই। যেখানে স্বয়ং অর্থমন্ত্রী মহোদয় ১ টাকা দুই টাকা পাঁচ টাকার কয়েন উঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। উনি একটুও চিন্তাই করেননি দৈনন্দিন জীবনে কত ঝামেলার সৃষ্টি হতো উনার পদপেটি বাস্তবায়িত হলে। ল ক্রেতা বিক্রেতা প্রতিদিনের নানা ঝামেলা ও বিপাকে পড়ে নাস্তানাবুদ হওয়ার সম্ভাবনাই ছিল বেশি। গণমানুষের দাবির মুখে তিনি পরে সেই কর্মসূচি বাতিল করেন। ব্যবসায়ীগণ যেমন হিসাব-নিকাশ করেন আয়-রোজগারের জন্যে তেমনি ক্রেতা হিসাব-নিকাশ করে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করেন-যেভাবে ক্রয় করলে কিছু টাকা আয় থাকে।

আগেকার সময়ে আনা পয়সার খুব কদর ছিল। ক্রেতা বিক্রেতারা সঙ্গে অবশ্যই এক পয়সা, দুই পয়সা, পাঁচ পয়সা, দশ পয়সা, চার আনা, আট আনা, এক টাকা কয়েন, কাপড়ের তৈরি খতিতে জমিয়ে রাখতেন। সে গুলোর ঝন ঝন শব্দে অনেক শিশুর কান্না নিবারণ করা যেত। লোকেরা খুতিগুলো কোমরে শক্ত করে বেঁধে হাটে বাজারে গিয়ে বাজার সদাই করতেন। তখনকার মানুষের মধ্যে সরলতা ছিল। এখন ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল  প্রতারণা ও অপরাধ ছিল কম। মানুষ যে যেভাবেই ছিল মানসিক প্রশান্তি ছিল। অবৈধভাবে লুটপাট, খুন ও দলবাজী করে দ্রুত বড়লোক হওয়ার তীব্র অনাকাক্সিত মানসিকতা ছিল না। তাই সে সময়ের মানুষের মানবিক মূল্যবোধ প্রবল ছিল। মানবতার বন্ধন ছিল দৃঢ়। অপরাধ করে অন্যায় করলে তাদের বিবেক কাতর হতো। আনা পয়সার হিসাব নিয়েই সে সময়ের মানুষ সন্তুষ্ট ছিল। বর্তমান যুগের মানুষ অপরাধ করলে তাদের মন কাতর হয়না-আরও ফূর্তি করতে চায় এবং করে। তা ছাড়া অবৈধ উচ্চআকাক্সার নেশায় বিভোর হয়ে থাকে।

যাক যে প্রসঙ্গে লিখতে শুরু করেছি সে প্রসঙ্গে আলোকপাত করতে চাই। পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে দেখেছি ১ পেকেট স্টার সিগারেট ৩০ পয়সা মূল্য ৫ আনা, এক সের মুশুরী ডাল ১ টাকা আট আনা দরে বিক্রি হতো। ১ মণ ধান মওসুমে ২০-২২ টাকা দরে বিক্রি হতো। একটা দেশী বড় মুরুগ ১ টাকা থেকে দুই টাকায় পাওয়া যেত। খাটি দুধের মিষ্টি চার আনায় পাওয়া যেত। ১ টাকায় চারটি মিষ্টি একটি প্লেটে সাজিয়ে দেয়া হতো। প্রায় সময় ছোট্ট বেলায় চারটি মিষ্টি এক সাথে খেয়ে শেষ করা যেত না। কি সুস্বাদু মিষ্টি খাটি দুধের ছানার মিষ্টি। ঘ্রাণই ছিল আলাদা।

বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের কাছে পয়সার হিসেব নেই। ওরাতো কোনো দিনই দেখেনি বাজারে ক্রয় বিক্রয়ে আনা পয়সার হিসাব। বর্তমান সময়ের ছেলে মেয়েরা পিতা-মাতা আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ১০ টাকার নোট সর্বনিম্ন ২০ টাকা ৫০ টাকা না নিলে তুষ্টই হতে চায় না। প্রয়োজনে উৎসব অনুষ্ঠানে ১০০/৫০০ চাই। আমাদের সময়ে আমরা ছোট্ট বেলায় ১ টাকা আট আনা পেলে খুশি হতাম উৎসব বা কোনো অনুষ্ঠানে ২ টাকা ৫ টাকা পেলে আনন্দের সীমা ছিল না। পরিবর্তন ও বিবর্তনের কারণে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জিনিষপত্রের দাম বেড়েই চলছে। দ্রব্যমূল্য হ্রাস পাওয়ার সূচকের গতি থেমে আছে আজ যুগ যুগ ধরে। দ্রব্য মূল্যের গতি দিন দিন বৃদ্ধির ফলে মুদ্রার মান কমতে শুরু করেছে সেই কয়েক যুগ পূর্ব থেকেই। এখনও বাড়ছেই কমার কোনো লণ নেই।

শঙ্কার বিষয় হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামবে কখন? ল্য করা গেছে একদিন যেখানে আনা পয়সার হিসাব নিয়ে সাধারণ মানুষ ব্যস্ত ছিল। এখন সেই আনা পয়সার হিসাবের যুগ চলে গেছে। অর্থমন্ত্রী ১ টাকা থেকে পাঁচ টাকার কয়েন তুলে দিতে চেয়েছিলেন। আপে করার কিছুই নেই। এভাবে দিন যাপনে একদিন এমনিতেই ওগুলো তুলে দিতে হবে। যেমন এমনিতেই আনা পয়সার হিসাব উঠে গেছে। আমার মনে হয় এভাবে আর্থিক মূল্যের মানদণ্ড হ্রাস পাওয়ার ফলে ১ টাকা ২ টাকা পাঁচ টাকা দশ টাকার হিসাবও চলে যাবে। যেমন ক্রেতা জিজ্ঞেস করবে ১ কেজি আলুর মূল্য কত? বিক্রেতা বলবে ১ শত ১০ টাকা, ১ শত ২০ টাকা, ১ শত ৩০ টাকা, এভাবে পণ্যের মূল্য থাকবে। তখন ক্রেতা সেই আলু ক্রয়ে বা যে কোনো পণ্য ক্রয়ে ১ থেকে পাঁচ টাকার কোনো নোটের প্রয়োজন পড়বে না।

 à¦¸à¦°à§à¦¬à¦¨à¦¿à¦®à§à¦¨ নোট হবে দশ টাকার নোট। ১ পয়সার মানদণ্ডে যেমন পণ্য ক্রয় বিক্রয় হারিয়ে গেছে তেমনি ১ থেকে পাঁচ টাকার মানদণ্ডে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করার পরিবেশ হারিয়ে যাবে। ১ বস্তা চাউলের মূল্য হয়তো বলতে হবে কত হাজার টাকা। ১ কেজি ডালের মূল্য বলতে হবে কত শত টাকা। এভাবে একপিস (একটি) সার্টের মূল্য বলতে হবে কত হাজার টাকা। এইভাবে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির ফলে আমাদের অর্থের মূল্য একেবারেই হ্রাস পাচ্ছে। এই পরিক্রমায় হয়তো একদিন আসবে পণ্যের ক্রয় বিক্রয়ে মানদণ্ডে শতকের মানদণ্ডও হারিয়ে যাবে হয়তো। তখন হয়তো পৃথিবী কেমন হবে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন হবে, দেশের মানুষের জীবন-যাত্রা কেমন হবে তা স্রষ্টাই ভালো জানেন!

তবে এ নিয়ে অর্থনীতিবিদদের কারো কারো মাথা ব্যথা থাকলেও মতাসীন এবং বিগত সরকারগুলোর মধ্যে মাথা ব্যথা ছিল বলে মনে হয় না। আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মাথা ব্যথা থাকলে বিগত সরকারগুলোর কর্মকাণ্ডে আজ আনা পয়সার হিসাব ও মুদ্রা মুছে যেতে পারতো না।

আমরা বিগত দিনের চরম দুর্দশার দিন ণ পেরিয়ে অর্থনৈতিক বিবর্তনের শঙ্কায় অনেক উদ্রেক উৎকণ্ঠার মধ্যে হারিয়ে এসেছি আনা-পয়সার হিসাব। পরবর্তীতে হয়তো হারিয়ে যাবে ১ টাকা, দুই টাকা, পাঁচ টাকার হিসাব। অর্থের মানদণ্ড কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আল্লাহই ভালো জানেন! এখন হারিয়ে গেছে আনা পয়সার হিসাব “আনা এখন ষোল আনাই মিছে”।                 লেখক : কলামিস্ট ও কবি।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।