সংবাদ শিরোনামঃ

আন্তর্জাতিক চাপে সরকার ** গুমের সঙ্গে এই সরকার জড়িত ** যেমন কর্ম তেমন ফল ** শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ** উৎপাদন খরচ কমলেও বাড়লো বিদ্যুতের দাম ** গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : বিএনপি ** প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বিক্ষোভ, উত্তাল মালয়েশিয়া ** দেশ আতঙ্কিত অথচ সরকার বলছে শান্তিপূর্ণ ** রাষ্ট্র ও সরকারকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ** অনুভূতির সাগরে কুরআনের দেশে ** গুম দিবসও গুম হয়ে গেলো! ** ছোটদের বন্ধু নজরুল ** বন্যায় সারাদেশে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি অপর্যাপ্ত সরকারি সাহায্য ** রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ** যশোরের শার্শায় বাণিজ্যিকভাবে বেদানা চাষ **

ঢাকা, শুক্রবার, ২০ ভাদ্র ১৪২২, ১৯ জিলকদ ১৪৩৬, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ডিসেম্বরে আরেক দফা বাড়বে গ্যাসের দাম
॥ সামছুল আরেফীন ॥
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য কমেছে। অথচ উল্টো বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। দাম বাড়ানোর ফলে সর্বমহল থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। সরকারের শরিকদলগুলোও এর বিরোধিতা করছে। এরই মাঝে ডিসেম্বরেই আরেক দফা গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। দাম বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাত থেকে সরকার বছরে ৪ হাজার ১২১ কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করবে। আর সরকারের এই বাড়তি আয়ের মাশুল দিতে হবে সাধারণ মানুষকে।

দেশে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসেরমূল্য আবারো বাড়িয়েছে সরকার। বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ এবং বিশ্বব্যাপী তেলের দাম ক্রমে হ্রাস পাওয়ার মধ্যেই এবার দাম বাড়ানো হলো। আওয়ামী লীগ সরকারের গত দুই মেয়াদে এ নিয়ে বিদ্যুতের দাম ৭ বার এবং গ্যাসের দাম ৩ বার বাড়ানো হয়েছে।

গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং বিদ্যুতের দাম ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়েছে। বর্ধিত মূল্যহার গত পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাস ও বিদ্যুতের এ নতুন মূল্যহার ঘোষণা করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। গত ২৭ আগস্ট কাওরান বাজারে কমিশনের কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এ মূল্যহার বৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করা হয়।

সরকারের ইচ্ছাতেই দাম বাড়লো

বিইআরসি সূত্রে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির গণশুনানিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর বক্তব্যের সারসংক্ষেপ ছিল, চলতি বছর বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করলেও নিজেদের সব ধরনের ব্যয় নির্বাহে সক্ষম কোম্পানিগুলো। কয়েকটি কোম্পানির রাজস্ব আয়ও অনেক বেশি। বিইআরসি আইন অনুযায়ী এসব কোম্পানির দামবৃদ্ধির এখতিয়ার নেই কমিশনের। গণশুনানির পর এ বছরই গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধির পরিকল্পনা ছিল না কমিশনের কিন্তু বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে দাম বাড়ানোর বিষয়ে তাগিদ ছিল। গত ৯ আগস্ট জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসের এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের অনুরোধ জানান। এর আগে জ্বালানি বিভাগ থেকে বিইআরসি চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের অনুরোধ জানানো হয়। গত ২৩ আগস্ট এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী বিইআরসি চেয়ারম্যানকে ‘যত দ্রুত সম্ভব’ মূল্য সমন্বয়ের অনুরোধ জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের মূল্য সমন্বয় নিয়ে এক জরুরি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেও বিইআরসিকে আবারও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের অনুরোধ জানানো হয়। বৈঠকের পর দিনই গ্যাস এবং বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বিইআরসি।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমছে

এক বছর আগে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল কিনতে হতো ১২০ ডলার দিয়ে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৪০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। ২০০৯ সালের মার্চের পর এই প্রথম জ্বালানি তেলের দাম এত নিচে নামল। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কমলেও এখন পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে কমায়নি সরকার। সর্বশেষ ২০১৩ সালে মূল্য সমন্বয়ের সময় বাড়ানো হয়েছিল জ্বালানি তেলের দাম। বর্তমানে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৭ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও কমেছে। কিন্তু এর মধ্যেই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা ও পাইকারি মূল্য বাড়ানো হলো।

দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল না : বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য কমেছে। অথচ বিদ্যুতের দাম না কমিয়ে উল্টো বাড়ানো হলো। বেসরকারি খাতের যেসব বিদ্যুৎ কোম্পানি সরকারের অনুমোদন নিয়ে নিজেরাই জ্বালানি (ফার্নেস) তেল আমদানি করছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে অনেক কম দামে। কিন্তু বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পিডিবির প্রস্তাবে সে দাম দেখানো হয়নি। দেখানো হয়েছে পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সরবরাহ করা তেলের সরকার নির্ধারিত দাম।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার এখন পর্যন্ত ১১টি ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কোম্পানিকে নিজেদের ব্যবহারের জন্য ফার্নেস তেল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ছয়-সাতটি কোম্পানি তেল আমদানি শুরু করেছে। তাদের আমদানি করা তেলে বর্তমানে প্রায় ৭৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় এবং ওই কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জ্বালানি তেলের দাম কমায় ওই কোম্পানিগুলোর ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে পিডিবি প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ পাচ্ছে গড়ে ১০ টাকা করে। এসব কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি লিটার ফার্নেস তেলের দাম পড়ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকার মধ্যে।

অপরদিকে সরকার নির্ধারিত বিপিসির দামে তেল নিয়ে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার তেলের দাম পড়ছে ৬২ টাকা। ফলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে ১৬-১৭ টাকা। ফার্নেস তেলের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হলে ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে গড়ে ১০ টাকায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব, যা কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের দামের প্রায় সমান।

বিদ্যুৎ সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় দেশে বিদ্যুতের উৎপাদনমূল্য কমেছে, অথচ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিদ্যুতের দাম না কমিয়ে উল্টো গড়ে ২.৯৩ শতাংশ বাড়িয়ে দিল। বেসরকারি খাতের যেসব বিদ্যুৎ কোম্পানি সরকারের অনুমোদন নিয়ে নিজেরাই জ্বালানি (ফার্নেস) তেল আমদানি করছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে অনেক কম দামে। কিন্তু বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পিডিবির প্রস্তাবে সে দাম দেখানো হয়নি। দেখানো হয়েছে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) সরবরাহ করা তেলের সরকারের নির্ধারিত দাম। আর এর ভিত্তিতে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া বিইআরসি অন্যায় করেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও বিইআরসি বলেছে, এ ধরনের কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী ম. তামিম বলেন, মাত্র কয়েকটি কোম্পানির তেলের দাম কম হওয়াতেই বিদ্যুতের গড় উৎপাদনমূল্য সাড়ে ছয় টাকা থেকে কমে ছয় টাকার কাছে চলে আসছে। দেশে সব মিলে তেলভিত্তিক কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে আড়াই হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এর সবটার জন্যই তেলের দাম কমানো হলে বিদ্যুতের গড় উৎপাদনমূল্য পাঁচ টাকার কাছাকাছি চলে আসবে। ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো দরকার হতো না। এ ছাড়া সরকার ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার মেয়াদ বাড়িয়ে আগের চুক্তি নবায়ন করায় সেখানেও বিদ্যুতের দাম আগের তুলনায় কমেছে। কাজেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনোই প্রয়োজন ছিল না।

তারপরও কেন বাড়লো? : দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিক কারণ না থাকলেও সরকার বাড়িয়েছে। দাম বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাত থেকে সরকার বছরে ৪ হাজার ১২১ কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করবে। তবে বিতরণ কোম্পানিগুলো এ টাকা পাবে না। সরকারের বাড়তি আয়ের মাশুল দিতে হবে সাধারণ মানুষকে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সিনিয়র সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে তারা এ সেক্টর থেকে বছরে ৪ হাজার ১২১ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারবে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সেক্টর থেকে আয় হবে ৭১৬ কোটি টাকা আর গ্যাস সেক্টর থেকে আয় হবে ৩ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, এ ৪১২১ কোটি টাকা থেকে ১ টাকাও বিতরণ কোম্পানিগুলোর পকেটে যাবে না। এ অর্থ সংশ্লিষ্ট সেক্টরে সরকারের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প, অবকাঠামো উন্নয়ন ও পলিসি বাস্তবায়নে ব্যয় করা হবে। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বিইআরসি ঠিক করে দেবে কিভাবে এ অর্থ ব্যয় হবে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান বলেন, মানুষের আয় বেড়েছে। কাজেই গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনে কোনো ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে না। তার মতে, জ্বালানি নিরাপত্তা ও সরকারি কর্মকর্তাদের বর্ধিত বেতন-ভাতা দিতেই গ্যাস- বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এতটুকু ত্যাগ কী আমরা স্বীকার করতে পারি না?

নেতিবাচক প্রভাব : সরকারের বাড়তি আয়ের মাশুল দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর ব্যয় বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব পড়বে। যা সামাল দেয়া তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর অজুহাতে একটি পক্ষ বছরে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে কমপক্ষে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বের করে নিয়ে যাবে। ফলে জনগণের ব্যয় বাড়বে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের এ সিদ্ধান্ত জ্বালানি নীতিবিরোধী, আইনবিরোধী, গণবিরোধী, ভোটবিরোধী, অর্থনীতির অগ্রগতিবিরোধী, অযৌক্তিক ও বিইআরসির কর্তৃত্ব বহির্ভূত।

গ্যাস- বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে শিল্প উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষ উভয়ই দ্বিমুখী চাপের মধ্যে পড়বে বলে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন। যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তারা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ায় একদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি থেকে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে। যা স্থানীয় বাজারে পণ্যের চাহিদা হ্রাস করবে। অন্য দিকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে দেশীয় এসব শিল্প উদ্যোক্তাদের। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় সেখানে পণ্যমূল্য কমেছে, বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ও কমেছে, তারপরও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর সাধারণ মানুষের কাঁধে একদিকে অতিরিক্ত বিলের বোঝার সঙ্গে সইতে হবে বাড়তি পণ্যমূল্যও। ফলে সব মিলিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। যা বাড়ন্ত মূল্যস্ফীতিকেই উস্কে দিবে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের যখন নাভিঃশ্বাস ওঠেছে ঠিক সেই সময় বাড়ানো হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুৎ উভয় জ্বালানির দাম। অথচ বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ এখন অনেক কম হওয়ার কথা। সরকারের এই উল্টো নীতিতে বিস্মিত হয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা মূল্যবৃদ্ধির এ সিদ্ধান্তকে পুনঃবিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। ব্যবসায়ী নেতা এক্সপার্টারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, আমি মনে করি বর্তমান অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজার প্রেক্ষাপটে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত যৌক্তিক নয়। তিনি বলেন, রফতানিতে ১২ শতাংশের বেশি নেগেটিভ গ্রোথ হয়েছে। কেবল আমরা বড় বড় রাজনৈতিক অস্থিরতার ক্ষতি কাটিয়ে দাঁড়াচ্ছি। এমন সময় এই সিদ্ধান্ত আমাদের ওপর নতুন চাপ তৈরি করবে। সালাম মুর্শেদী বলেন, আমাদের কাছে দাম বড় বিষয় হতো না যদি কোয়ালিটি গ্যাস-বিদ্যুৎ পেতাম। যে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে তা পূর্ণ প্রেসারে পাওয়া যাচ্ছে না। আর বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়ছে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামীন বলেন, সারা বিশ্বে যখন জ্বালানির দাম কমছে, তখন বাংলাদেশে বাড়ানো হচ্ছে। এতে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমবে। আমরা যে পণ্য তৈরি করি, তার উৎপাদন খরচ বাড়বে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টালদের পোয়াবারো হবো।

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে চেয়ারম্যান শেখ মাসুদুল আলম মাসুদের সভাপতিত্বে সভায় শিল্পমালিকেরা বলেন, সম্প্রতি কয়েক দফা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করার পরও অযৌক্তিকভাবে এবং আমাদের শিল্পসহ স্থানীয় প্রায় সব শিল্পের দাবি উপেক্ষা করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা স্টিল ও রি-রোলিং শিল্পসহ স্থানীয় সব শিল্পায়নের পরিপন্থী।

বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত গ্যাস প্রতি ইউনিটে পূর্বের তুলনায় ১.৮৯ টাকা বৃদ্ধি করে ১১.৩৬ টাকা করায় এর অর্থনৈতিক চাপ ব্যবসায় পড়বে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে কল-কারখানায় বিদ্যুতের লোডশেডিং মোকাবেলায় যে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হতো তার মূল্য এক লাফে দ্বিগুণ করা শিল্পোৎপাদনে বড় ধরনের আঘাতের সৃষ্টি হবে। (পূর্বে ৪.১৮ টাকা ইউনিট, ঘোষিত মূল্য ৮.৩৬ টাকা)। এটা কি সরকারের শিল্পবান্ধব নীতি? নাকি শিল্প ধ্বংস করার নীতি? প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিটে গরিব-মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের তুলনায় ধনীক শ্রেণীর ভোক্তাদের বেশি উপশম দেয়া হয়েছে। সর্বনি¤œ ধাপের ব্যবহারকারীদের জন্য যেখানে বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট মূল্য বেড়েছে ০.২৭ পয়সা, পক্ষান্তরে সর্বোচ্চ ধাপে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী-যারা সচরাচর ধনীক শ্রেণীই হয়ে থাকেন, তাদের জন্য প্রতি ইউনিটে বিদ্যুৎ মূল্য বাড়ানো হয়েছে মাত্র ০.০৫ পয়সা (৯.৯৩ টাকা থেকে ৯.৯৮ টাকা)।

এবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতেও সরকারের কৃষক ও কৃষিবান্ধব নীতির পরিহাসের চিত্র ফুটে উঠেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এবার সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রতি ইউনিট মূল্য ১.৩১ টাকা বাড়িয়ে ৩.৮২ টাকা করেছে। সেচ খরচ বেড়ে গেলে কৃষি উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে এবং এর চাপ পড়বে সাধারণ মানুষের উপর। পল্লীবিদ্যুতের বেলায় বিতরণ কোম্পানি ভেদে ৯৬ পয়সা বাড়িয়ে ৩.৮২ টাকা করা হয়েছে-যা  জনগণের জন্য বাড়তি দুর্ভোগ বয়ে আনবে।

বিশেষজ্ঞ অভিমত : এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আইন অনুযায়ী হঠাৎ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোকে অবৈধ ও আইনবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন, ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) পরিচালক ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, মূল্য পরিবর্তনের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে গণশুনানির তিন মাসের মধ্যে। তার আগে সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু হঠাৎ করে ৭ মাস পরে এভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অবৈধ ও আইনবিরোধী।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে এর একটা অংশ সরাসরি ভোক্তার ওপর পড়বে। আর পরোক্ষভাবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণেও ভোক্তাকে চাপ সহ্য করতে হবে। তবে দাম বৃদ্ধির পর গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ানো গেলে এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে।

তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। এমন কোনো কারণ ঘটেনি যার জন্য এগুলোর দাম বাড়াতে হবে। বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অনেক কমে গেছে। এতে দাম কমার কথা। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে তেল ব্যবহার হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামও অর্ধেকে নেমে এসেছে। যুক্তিহীনভাবে সরকার দাম বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, হঠাৎ করে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা জনকল্যাণমুখী সিদ্ধান্ত নয়। সরকার সিস্টেম লস ও অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে খরচ বাঁচাতে পারত। কিন্তু সেটা না করে সহজ উপায়ে দাম বাড়িয়ে জনগণের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের পদক্ষেপ নিল। এ সিদ্ধান্তে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সব জিনিসের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। বরং বিদ্যুতের দাম কমানো উচিত। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়েনি। এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানির দামও কমেছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সাধারণ ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়বে।

রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া : হঠাৎ করে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষমতার বাইরে থাকা সব রাজনৈতিক দল সরকারের এ সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে গ্যাস বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিএনপি মনে করে, দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক। এর ফলে নিম্ন আয় আর মধ্যবিত্ত মানুষ আরেক দফা দুর্ভোগে নিপতিত হবেন। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার পরও দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্ত গণবিরোধী।

গ্যাস ও বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির অন্যায় এবং অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত দেশের দরিদ্র জনগণের ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের শামিল। আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে কমে গিয়েছে, সেখানে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কোনো যুক্তি নেই।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বর্তমান সময়ে মানুষের খেয়ে পরে বেঁচে থাকাই অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে। দ্রব্যমূল্যের আকাশচুম্বি। এরমধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবন চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার ছায়েদুল হাসান এবং মহাসচিব এম এ তাহের বলেন, সরকার খোঁড়া অজুহাতে বিদ্যুৎ ও গ্যসের মূল্য বাড়িয়েছে। এটা অযৌক্তিক। দাম বৃদ্ধি জনগণের উপর জুলুম।

আলীগের শরিকরাও ুব্ধ : কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ুব্ধ শাসক দল আওয়ামী লীগের শরিকরা। এমনকি এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতাও।

জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দলীয়ভাবে আমরা গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিপক্ষে। ব্যক্তিগতভাবে আমিও এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারাও গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে তারা কেউ মুখ খুলতে নারাজ। তবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টি ‘পুনর্বিবেচনার’ আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে বাড়াবেন আর দাম কমলে কমাবেন না, এটা ন্যায়-নীতি বিরুদ্ধ। এটা হতে পারে না। এক দেশে দুই নীতি চলতে পারে না।

বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ বলেন, দেশে একসঙ্গে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে জনগণ দুর্ভোগে পড়বে।

গ্যাস ও বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, এতে জনগণের সমস্যা বাড়বে। মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হায়দার আকবর খান রনো বলেন, হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খেটে খাওয়া গরিব, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমেছে। তারপরও মূল্যবৃদ্ধি এ সরকারের অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী আচরণের বহিঃপ্রকাশ।

জাতীয় পার্টি (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি যুক্তিসঙ্গত হলেও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে অযৌক্তিক। অর্থাৎ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। শিল্প কলকারখানায় উৎপাদনের ক্ষতি হবে।

ডিসেম্বরে আবারো বাড়বে দাম : এ অবস্থায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক দফা গ্যাসের দাম বাড়নোর ইঙ্গিত দিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। দাম বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধিতে জনগণের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যারা এখন ২শ’ টাকা বিল দেন, তাদের এখন বাড়বে ২ টাকা। যারা ৪শ’ টাকা বিল দিতেন তাদের বাড়বে ৪ টাকা।

ভারতে ৩ দফা কমলো তেলের দাম, এখনই কমছে না বাংলাদেশে : গত এক মাসে তিনবার জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছে ভারত। সর্বশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে ভারতে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ২ রুপি (২ টাকা ৩৪ পয়সা) আর ডিজেলে কমছে ৫০ পয়সা। এনডিটিভি এ খবর দিয়েছে। এর ফলে দিল্লিতে পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি পড়বে ৬১.২০ রুপি (৭২ টাকা) আর ডিজেলের দাম হবে লিটার প্রতি ৪৪.৪৫ রুপি (৫২ টাকা)। এক বিবৃতিতে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ানঅয়েল জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোল ও ডিজেলের দর ও ডলারের বিপরীতে রুপির মান কমে যাওয়ায় নতুন দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কমানোর চাপে রয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের এক পক্ষ এখনই জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করার পক্ষে রয়েছেন। তবে অপর পক্ষ এখনই দাম সমন্বয় করার পক্ষে নন। কারণ বিপিসি গত ১৯ বছর যাবৎ লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করায় যে মুনাফা হচ্ছে তা দিয়ে লোকসান সমন্বয় করা হচ্ছে। এ লোকসান সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম কমার পক্ষে নন তারা। তবে কেউ কেউ বলেছেন, যেহেতু বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে ভোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের মূল্য সামান্য কমালে ভোক্তাদের ক্ষোভ কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে।

উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি। কিন্তু এর প্রায় দুই বছর পর থেকে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও দেশের মধ্যে আর কমানো হয়নি। বিপিসি এখন অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি করে লাভ করছে সবচেয়ে বেশি, প্রতি লিটারে প্রায় ৪০ টাকা। আর ডিজেল, ফার্নেস তেল ও গরিবের জ্বালানি কেরোসিন তেল বিক্রি করে মুনাফা করছে ২০ টাকা পর্যন্ত।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।