লক্ষাধিক ভোটে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেতের শিশুকন্যা তাজমিন

ওরা কেন বোঝে না আব্বুকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না

রংপুর (মিঠাপুকুর) : উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেতের স্ত্রী পুত্র কন্যা [ইনসেটে চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত]

মো. গোলাম আযম সরকার, (রংপুর) থেকে : ‘ওরা কেন আমার কষ্ট বোঝে না। আব্বুকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না।’ বাবার জন্য এই আর্তি দেশের একজন জনপ্রতিনিধির শিশুকন্যার। তিনি স্বঘোষিত কিংবা বিনা ভোটে নির্বাচিত তথাকথিত কোনো গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল নয়। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জনগণ তাকে এক লাখ ৬ হাজার ভোটে নির্বাচিত করেন। এই জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধির নাম আব্দুল বাছেত মারজান। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এই জনপ্রিয়তাই তার কাল হয়েছে। বিরোধীদল নির্মূল অভিযানে সরকারের দোসর অতিউৎসাহী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতারের আট মাস পর তাকে আটকের কথা স্বীকার করলো। বিগত উপজেলা নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ফয়জার রহমান। তিনি পেয়েছিলেন ৭৪ হাজার ভোট।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতা আব্দুল বাছেত মারজানকে গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়ার ৭ মাস পর গত ২৬ আগস্ট তাকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।

তাকে গ্রেফতারের পর পরই তার স্ত্রী রোকাইয়া খানম লুকি ঢাকা প্রেস কাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে তার মুক্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমীর মাওলানা এ টি এম আজম খান জনপ্রিয় এই নেতার মুক্তি দাবি করেন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমসহ সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় প্রকাশিত হয়। সেই সময় এই জনপ্রিয় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত মারজানের এ নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে মিঠাপুকুর থানা, রংপুর ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো পই কোনো দায়িত্ব নেয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিঠাপুকুর থানার ওসি হুমায়ুন কবির সাপ্তাহিক সোনার বাংলাকে বলেন, গত ১৯ আগস্ট ভোরে জামায়াত নেতা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত মারজানকে মিঠাপুকুরের গড়ের মাথা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলার ওয়ারেন্ট আছে। ছয়টি চার্জশিট দেয়া হয়েছে। তিনটি মামলার শুনানি চলছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে মারজানের পরে আইনজীবী মো. জয়নুল আবেদীন সোনার বাংলাকে বলেন, এই জননেতাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে বিনা অপরাধে দীর্ঘদিন বন্দী করে রাখার পর গ্রেফতার দেখিয়েছে। আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে মুক্ত করবো ইনশাআল্লাহ।

অন্যদিকে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি উপজেলার বরিশাল ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি শামীম প্রধানকেও প্রায় ৭ মাস নিখোঁজ রাখার পরে একইদিনে গত ২৬ আগস্ট ভোরে পলাশবাড়ি থানায় হাজির করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল ইউনিয়নের সাববিন নতুন বাজার এলাকায়। তাকে রাতে জুনদহ এলাকা থেকে আটকের কথা জানিয়েছে পলাশবাড়ি থানার পুলিশ। পরে তাকে গাইবান্ধার আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

 à¦¯à§‡à¦­à¦¾à¦¬à§‡ গ্রেফতার করা হয় জনপ্রিয় এই নেতাকে : মারজানের স্ত্রী রোকাইয়া খানম লুকি সাপ্তাহিক সোনার বাংলাকে বলেন, মিঠাপুকুরের জনপ্রিয় এই নেতাকে গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে ঢাকায় মোহাম্মদপুরের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে সাদা পোশাকের কয়েকজন লোক নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তখন থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। সন্ধানের দাবিতে জাতীয় প্রেস কাবে সংবাদ সম্মেলনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে তিনি চিঠি দিয়ে তাকে থানায় সোপর্দ কিংবা তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেছিলেন। আমাদের রব মহান আল্লাহর রহমতে তাকে পাওয়া গেছে। যদিও পুলিশ তাকে ১৪টি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছেন। যা ভাবতে অনকে কষ্ট লাগে, আমার স্বামী অনেক ভালো আমি আমার স্বামীকে অনেক কাছ থেকে চিনি। আমি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে অনুরোধ করবো ভালো এই মানুষটিকে কোন প্রকার কষ্ট না দিয়ে মুক্তি দিন। আমি তার নিঃর্শত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। রোকাইয়া খানম লুকি আরো জানান, তার স্বামী উপজেলা পরিষদের কাজে ঢাকায় গিয়েছিলেন ।

মিঠাপুকুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেদ মারজানের স্ত্রী রোকাইয়া খানম লুকি আরো জানান, তিনি মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। কাজ শেষ করে তিনি বাড়ি আসার কথা। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দিবাগত ভোর রাত আনুমানিক সাড়ে ৫টা থেকে ৫টা ৪০ মিনিটের মধ্যে আমি ফোন পাই, সাদা পোশাকের কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক তাকে আটক করে নিয়ে গেছে। তারা উপস্থিত লোকজনদের পরিচয় দিয়েছেন ডিবির লোক।

প্রত্যদর্শী বাসার মালিকের স্ত্রী জানান, ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে বাড়ির দারোয়ানকে সাথে নিয়ে ৫/৬ জন লোক প্রথমে আমার বাসায় নক করে। আমার স্বামী দরজা খুলে দিলে তারা বলে, ‘আমরা ডিবি পুলিশের লোক। আপনার মেহমান কোথায়। তার নামে মামলা আছে। এরপর তারা মারজান ভাইকে আটক করে নিয়ে যায়।’

ওই সময়ে ওই বাসায় কর্তব্যরত দারোয়ান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমি ফজরের নামাজের জন্য ওজু করবো, ঠিক এসময় ৫/৬ জন লোক গেটে আসে। আমি তাদের পরিচয় জানতে চাই। তারা বলে আমরা গেস্ট। তখন আমি তাদের বলি এতো সকালে গেস্ট যাওয়ার নিয়ম নেই। তখন তারা আমাকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দেন ও পরিচয় পত্র দেখান এবং আমাকে নিয়ে উপরে যান। সেখানে গিয়ে তারা মোবাইল ট্রেকিং করে ঘরে প্রবেশ করে ওই মেহমান (মারজানকে) আটক করে নিয়ে যায়। তবে এসময় তারা মারজানের সাথে কোন খারাপ আচরণ করে নাই।

মারজানের স্ত্রী রোকাইয়া খান লুকি সোনার বাংলাকে আরো বলেন, আমার স্বামীকে ডিবি পরিচয়ে নিয়ে যাওয়ার পর আমি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেয়া কিংবা আদালতে সোপর্দ করার দাবি জানাই। একই দাবিতে আমি গত ৫ মার্চ জাতীয় প্রেস কাবে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আমার স্বামীকে আদালতে সোপর্দ করার দাবি জানাই। বিভিন্ন জায়গায় লিখিত আবেদন করি। মিডিয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। অবশেষে সাত মাস পর তাকে থানায় সোপর্দ করা হলো। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার স্বামীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।