সংবাদ শিরোনামঃ

মুজাহিদ ও সালাউদ্দিনের শাহাদাত ** মুজাহিদের বিরুদ্ধে সরকারের করা মামলার ইতিহাস ** দুই জাতীয় নেতাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা ** অপরাজিত শহীদ মুজাহিদ পরাজিত সরকার ** শহীদ মুজাহিদের কবরের পাশে অশ্রুভেজা জনতার ঢল ** প্রতিহিংসা চরিতার্থে মুজাহিদকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে সরকার ** মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন মার্সি পিটিশন করেননি ** মুজাহিদকে হত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী হরতাল পালিত ** বিরোধী নেতাদের ফাঁসি রাজনৈতিক বিভাজন বাড়াবে ** আওয়ামী লীগকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে ** একজন নির্দোষ মানুষকে হত্যার বিচার আল্লাহ করবেন ** দেশকে এগিয়ে নিতে প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করতে হবে ** ধাওয়া-খাওয়াদের খবর ** নতুন উদ্যোক্তা গড়ায় পিছিয়ে বাংলাদেশ ** শহীদ মুজাহিদের রক্ত এদেশের মাটিকে ইসলামী আন্দোলনের জন্য উর্বর করবে ** প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন মুজাহিদ ** শাহাদাতের মৃত্যু গৌরবের **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪২২, ১৪ সফর ১৪৩৭, ২৭ নভেম্বর ২০১৫

মতিউর রহমান আকন্দ
বিশ্বের অগণিত মানুষের বুকফাটা আর্তনাদ, কান্না ও চোখের পানিতে বুক সিক্ত করার মধ্য দিয়ে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে পাড়ি জমালেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক মন্ত্রী বিশ্বনন্দিত নেতা জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে মিসরের ইখওয়ানুল মুসলিমিনের প্রতিষ্ঠাতা মুর্শিদে আম শহীদ হাসানুল বান্নার পর এমন উঁচু পর্যায়ের নেতা পৃথিবীর আর কোথাও রাষ্ট্রযন্ত্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে শাহাদাতবরণ করেননি। জনাব মুজাহিদ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম নেতা। তাঁর রক্তে রঞ্জিত হলো বাংলাদেশের সবুজ জমিন। মহান আল্লাহর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী বান্দা হিসেবে মাথা উঁচু করে তিনি তাঁর রবের একত্ববাদের ঘোষণা দিতে দিতে এ দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে ২২ নভেম্বরের সূচনায় ১২:৫৫ মিনিটে জান্নাতের পথে যাত্রা শুরু করেন।

আমি যখন ছাত্র তখন থেকেই জনাব মুজাহিদের সাথে আমার পরিচয়। ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাকে আমি একজন নেতা হিসেবে পেয়েছি। ছাত্র আন্দোলনে সর্বোচ্চ পর্যায়ের দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে যেভাবে আমাদের গাইড করেছেন তা কখনো ভুলব না। সদা কর্মতৎপর মুজাহিদ ভাই সব সময় ব্যস্ত থাকতেন সংগঠন নিয়ে। সংগঠনের বিস্তৃতি, অগ্রগতি সাধনে তিনি সব সময় পেরেশান ছিলেন। ছাত্রদের কোন অনুষ্ঠানের ডাক আসলে তিনি অন্য প্রোগ্রাম বাতিল করে সে প্রোগ্রামে উপস্থিত হতেন।

কর্মজীবনে আইন পেশায় নিয়োজিত হওয়ার সুবাদে তার বন্দী জীবনের কঠিন মুহূর্তে একান্ত অন্তরঙ্গ পরিবেশে কথা বলার সুযোগ হয়। ২০১০ সালের ২৯ জুন থেকে শাহাদাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর নিয়োজিত একজন আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনার সময় প্রায় প্রতি সপ্তাহে একবার করে সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের মামলার পাশাপাশি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা-মামলার শুনানিতে প্রতি সপ্তাহে তাকে দুই-তিন দিন করে আদালতে হাজির করা হত। এ সময় সাক্ষাৎকালে মামলার পাশাপাশি আনুষঙ্গিক বিষয়ে অনেক কথা হয়।

প্রায় ৫ বছর ৫ মাসের বন্দী জীবনে তিনি পরিবার, দল ও সাধারণ মানুষ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলেন। এ পরিস্থিতিতে তার সান্নিধ্যে সময় কাটানোর সুযোগ এক মহা সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহ তায়ালা আমাকে সেই সৌভাগ্য দান করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক তাঁর আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে এবং পূর্বে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে গিয়েছেন। মামলা পরিচালনার সুবাদে দেশের রাজনীতি, সামাজিক অবস্থা, তিনি যে দল করতেন সে দলের সাংগঠনিক অবস্থা, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে সব কথাবার্তা বলেছেন তা এ দেশের মানুষের জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে। অত্যন্ত স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন চিন্তা এবং অনাড়ম্বর জীবনের অধিকারী মুজাহিদ ভাই সবসময় নিজের মতো করেই সবকিছু দেখতে অভ্যস্থ ছিলেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ইতিবাচক। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত আশাবাদী একজন মানুষ। দুশমন ক্ষতি করতে পারে এ ভাবনা কখনো তাঁর মনে ছিল না। মানবিকতা সবসময় তার অন্তরকে তাড়িত করত। তিনি নেতিবাচক চিন্তাকে কখনো পাত্তা দিতেন না। সবসময় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। কোথাও কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা শক্তভাবে ধরতেন। আর এ জন্য অনেকের কাছেই তিনি একজন কঠোর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রকৃত পক্ষে তিনি ছিলেন সরল মনের অধিকারী।

জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে সর্বদাই এক আলোচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে তাঁর নাম কখনো মুছে ফেলা সম্ভব নয়। প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মানবতার মুক্তি আন্দোলনে তিনি আপোষহীন ভূমিকা পালন করেছেন। পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের স্বার্থের চাইতে দল এবং দেশের স্বার্থই ছিল তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো স্মরণীয় হয়ে à¦¥à¦¾à¦•à¦¬à§‡à¦¨Ñ à¦¤à¦¾à¦° বিরুদ্ধে সরকারি ষড়যন্ত্র ও তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার কারণে। তাঁর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিল তা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। বিনা অভিযোগে একজন মানুষকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা ইতিহাসে নজিরবিহীন। জনাব মুজাহিদ সরকারি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত এবং প্রতিহিংসার নির্মম শিকার হয়ে তাঁর জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি কত বড় মজলুম। বাংলাদেশের জনগণের মনের মণি কোঠায় তিনি চিরদিন বেঁচে থাকবেন। রাষ্ট্রীয় অবিচারের ঘটনা অবহিত হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁর প্রতি আরো শ্রদ্ধাশীল হবে। আর ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদেরকে ধিক্কার এবং নিন্দা জানাবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে তিনি মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিলেন। তাঁর আপিল খারিজ হয়ে যাবার পর তিনি রায়ের গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটিসমূহ উল্লেখ করে রিভিউ পিটিশন দায়ের করেছিলেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত জনাব মুজাহিদের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। এ আদেশের পর রাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল গণমাধ্যমে প্রদত্ত বক্তব্যে স্বীকার করেছেন, জনাব মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। এটর্নি জেনারেলের বক্তব্য থেকে আরো স্পষ্ট হয় যে, শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হওয়ার কারণেই জনাব মুজাহিদকে এ শাস্তি দেয়া হয়েছে। আইনি বিবেচনায় তিনি নির্দোষ।

রিভিউ খারিজের সংবাদ দ্রুততার সাথে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পরে। বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ইসলামপ্রিয় জনতার মাঝে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। দেশ-বিদেশ থেকে অবিরতভাবে টেলিফোন আসতে থাকে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীগণ বেদনাহত হয়ে পড়েন।

পবিত্র মক্কা নগরী থেকে কয়েক জন টেলিফোন করলেন। তারা জানালেন এ মুহূর্তে তারা খানায়ে কাবায় তাওয়াফরত অবস্থায় আছেন এবং জনাব মুজাহিদের জন্য কাবা শরীফের গেলাফ ধরে বিশ্ব প্রভুর দরবারে দোয়া করছেন। আরেকজন জানালেন মাকামে সাইয়েদুল ইবরাহীমের পাশে বসে তিনি জনাব মুজাহিদের জন্য সেজদায় পড়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করছেন। কেউবা ওমরা পালন করছেন এবং তার জন্য দোয়া করছেন।

পবিত্র মদীনা নগরী থেকে একজন ফোন করে বললেন, তিনি এখন মসজিদুন নববীতে। রিয়াজুল জান্নাহ নামক স্থানে বসে তিনি আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে জনাব মুজাহিদের জন্য কান্নাকাটি করছেন। আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতারসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের বুকফাটা আর্তনাদ ও হাহাকারের খবর আসছে। তাদের ফোনালাপে উপলব্ধি করলাম জনাব মুজাহিদ মানুষের নিকট কত প্রিয়। এ প্রিয় মানুষটিকে হত্যা করে সরকার মূলত প্রতিটি মানুষের কলিজায় আঘাত করেছে।

জনাব মুজাহিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলাটি বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর নিকট একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারি ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ায় দিশেহারা হয়ে সরকার তাঁর মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকরের জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। ফেইসবুকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিডিয়া বন্ধ করে দেয়। যাতে মানুষ সরকারের কুকর্ম জানতে না পারে। সারা দেশে চলতে থাকে ব্যাপক ধরপাকড়। পরিবারের সদস্যগণ এ পরিস্থিতিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জনাব মুজাহিদের সাথে সাক্ষাতের জন্য ছুটে যান। কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে পরিবারের সদস্যগণ তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সাক্ষাৎকালে ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পূর্বে পরিবারের সাথে শেষ সাক্ষাতে জনাব মুজাহিদ যে সব কথা বলেছেন তা যুগ যুগ ধরে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে অনুপ্রাণিত করবে। নি¤à§‡œ তার বক্তব্যের কতিপয় দিক তুলে ধরা হলোÑ

প্রাণভিক্ষার প্রশ্নই আসে না

জনাব মুজাহিদ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন এ জালেম সরকারের নিকট ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। প্রাণের মালিক আল্লাহ। সুতরাং আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে আত্মসমর্পণ ও ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া আমি কোন দোষ করিনি। সরকার বিনা দোষে আমাকে ফাঁসি দিচ্ছে। আমি এর বিচারের ভার মহান আল্লাহর ওপর অর্পণ করলাম। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক।

আমি বেঈমান নই

জনাব মুজাহিদ তার পরিবারের সদস্যদেরকে বলেন, আমি বেঈমান নই। আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসী একজন অনুগত বান্দা। আমি দল এবং দেশের প্রতি কখনো বেঈমানী করিনি। আমার ওপর দল যখন যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে আমি তা নিষ্ঠার সাথে পালন করেছি। আমার দায়িত্ব পালনে কখনো গাফিলতি ছিল না। দলের স্বার্থে যখন যা উত্তম বলে মনে করেছি নির্দ্বিধায় তাই করেছি। রাষ্ট্র আমার ওপর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পণ করেছিল। আমি অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে সে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। কোন ধরনের অসৎ ও অসাধুতা আমার নিকট প্রশ্রয় পায়নি। আমি কোন ধরনের নৈতিকতা বিরোধী কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত করিনি। আমার বিরুদ্ধে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দূরবীণ দিয়ে তালাশ করেও দুর্নীতির কোন প্রমাণ পেশ করতে পারেনি।

আমার মাথা উঁচুই থাকবে : পরিবারের সদস্যদের নিকট জনাব মুজাহিদ বলেন, আমি অন্যায়, অসত্য, মিথ্যার নিকট কখনো মাথা নত করিনি। এখনও করব না। আমি মাথা উঁচু করেই মহান রবের দরবারে গিয়ে উপস্থিত হব, ইনশাআল্লাহ।

একটি বিশেষ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকর্ষণ : জনাব মুজাহিদ বলেন, রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষা চাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। তবে আমি মনে করি রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অভিভাবক। সেই হিসেবে তিনি আমারও অভিভাবক। আমার ওপর বিগত সাড়ে ৫ বছর যাবত যে সরকারি জুলুম-নির্যাতন এবং অবিচার করা হয়েছে ও বিনা অপরাধে আমাকে সরকারি পরিকল্পনায় যেভাবে ফাঁসানো হয়েছে তার প্রতিকারের জন্য আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ক্ষমা চাওয়ার অপপ্রচার পরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্র : পরিবারের সদস্যগণ কারা কর্তৃপক্ষের আহ্বানে জনাব মুজাহিদের সাথে শেষ সাক্ষাতের জন্য গেলে তিনি পরিবারের সদস্যদেরকে জানান আমি রেডিওর খবরের মাধ্যমে অবহিত হয়েছি যে, আমি রাষ্ট্রপতির নিকট ক্ষমা চেয়েছি মর্মে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করতে চাই, আমি রাষ্ট্রপতির নিকট ক্ষমা চাইনি। জালেম সরকারের নিকট ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমার ওপর অবিচারের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করাটা ক্ষমা চাওয়া হিসেবে যারা প্রচার করেন তারা জঘন্য মিথ্যাচারে নিয়োজিত। এ সরকার বিগত সাড়ে ৫ বছর যাবত আমি ও আমার দলের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালিয়েছে এটা তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। তারা আমাকে আমার দেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর নিকট অসম্মানিত করার জন্য ও আমার দলকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এ অপপ্রচার চালিয়েছে। এটা তাদের রাজনৈতিক দেওলিয়াত্ব ছাড়া আর কিছুই নয়। এ অপপ্রচারে জনগণ বিভ্রান্ত হবে না। আমার শাহাদাতের পর অপপ্রচারের জন্য জনগণ সরকারকে ধিক্কার জানাবে।

আমি শহীদী মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চাই : শাহাদাত এক মহাসৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহ তায়ালা যাকে পছন্দ করেন তাকেই শহীদী মৃত্যু দেন। সবার ভাগ্যে শাহাদাতের মৃত্যু জোটে না। আল্লাহ তায়ালা যদি আমাকে পছন্দ করেন এবং শহীদী মৃত্যু দেন সে মৃত্যু আলিঙ্গনের জন্য আমি প্রস্তুত আছি। শহীদী মৃত্যু পরকালে আমার জন্য মহাসৌভাগ্য ও মহাপুরস্কারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

আমার রক্ত ইসলামী আন্দোলনকে বেগবান করবে : আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণেই সরকার আমার বিরুদ্ধে এ ষড়যন্ত্র করেছে। আমি ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করার কারণে আমাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই আমাকে সরকার হত্যা করছে। ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস সাক্ষী শহীদী রক্ত আল্লাহর দ্বীনকে আরো বেগবান করে। আমি বিশ্বাস করি আমার রক্ত এ জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে আরো মজবুত এবং বেগবান করবে ও ষড়যন্ত্রকারীদের সকল চক্রান্ত বানচাল হয়ে যাবে এবং চক্রান্তকারীরা নির্মূল হয়ে যাবে। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশে আল্লাহর দ্বীন বিজয় লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ জমিনকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করে নিয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের রক্ত বৃথা যাবে না : জনাব মুজাহিদ আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে পরিবারের সদস্যদেরকে বলেন, জামায়াত ও ছাত্রশিবির এ জমিনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত। এত বড় নেয়ামত কখনো হাতছাড়া করা উচিত নয়। তোমরা সবসময়ই এ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে। তিনি আরো বলেন, ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা বিগত ৬ বছর যাবত যে জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তার বদলা আল্লাহ তায়ালা একদিন দিবেন। এই কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় শত শত তরুণ এবং যুবকদেরকে জুলুমের শিকার হতে দেখে আমার মনে এই আশার সৃষ্টি হয়েছে যে, এ জমিনে একদিন এ তরুণদের নেতৃত্বে আল্লাহর দ্বীন বিজয় লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ। এতটুকু আশা নিয়ে আমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারছি। এ জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া।

আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ : আমি জালেম সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কারারুদ্ধ হওয়ার পর দেশের জনগণ কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের জনতা আমার মুক্তি আন্দোলনে যে ভূমিকা রেখেছেন ও আমার জন্য যে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সে জন্য আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সর্বোত্তম বদলা দান করুন। দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্র এবং প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকগণ আমার প্রতি যে সহানভূতি প্রদর্শন করেছেন এবং মামলা পরিচালনায় বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন আমি তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার আইনজীবীগণ রাত-দিন পরিশ্রম করে মামলা মোকাবেলায় যে ভূমিকা পালন করেছেন তাদের সকলের প্রচেষ্টাকে আল্লাহ কবুল করুন এবং সর্বোত্তম বদলা দান করুন।

দেখা হবে জান্নাতে : জনাব মুজাহিদ বলেন, মহান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান ও দৃঢ় এবং অবিচল অবস্থায় আমি যেন আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে পারি আমি দেশবাসীর কাছে সে দোয়া চাই। দলীয় ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকালে আমার আচরণে ও  কোন কথায় কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে তা ক্ষমা করে দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আমি আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থাশীল হয়ে যেন পরিতৃপ্ত আত্মা নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে পারি সে জন্য দেশবাসীর দোয়া চাই। এ জালেম সরকার আমাকে আমার প্রিয় ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। আমি আশা করি কিয়ামতের ময়দানে সকলের সাথে সাক্ষাৎ হবে।

জনাব মুজাহিদ দেশবাসীর প্রতি ছালাম জানান ও দোয়া করতে বলেন।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।