ঝিকরগাছায় গণপিটুনিতে নিহত তিন

যশোর সংবাদদাতা : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগরে কপোতাক্ষের পাড়ে গত ১৫ জুন বুধবার সকালে তিনটি রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী।

পুলিশ বলছে, ডাকাতি চেষ্টার সময় গণপিটুনিতে তারা মারা গেছে।

এদিকে এ ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিলর জানালেন, তার ওয়ার্ডে ডাকাতি বা গণপিটুনির কথা তিনি শোনেননি।

বুধবার সকালে স্থানীয়রা লাশ তিনটি পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। সকাল আটটার দিকে ঝিকরগাছা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, ঝিকরগাছার কৃষ্ণনগর এলাকার কাটাখালের কাছে তিনটি রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের একজনের বয়স ৩০-৩২ এবং অপর দুজনের চল্লিশের কাছাকাছি। মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত থাকায় গুলি না ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে- তা বোঝা যাচ্ছে না। স্থানীয়রা জানায়, কাটাখাল এবং কপোতাক্ষ নদের সংযোগস্থলে ছোট্ট একটি পার্ক করা হয়েছে স্থানীয় পৌরসভার উদ্যোগে। এই পার্কের ভেতরে সামান্য দূরত্বে লাশ পড়ে ছিল।

সকাল থেকে বহু মানুষ লাশ দেখলেও কেউ তাদের পরিচয় জানতে পারেনি।

এ বিষয়ে ঝিকরগাছা থানার ওসি মোল্যা খবির আহমেদ জানান, মঙ্গলবার গভীররাতে ঝিকরগাছার কৃষ্ণনগর এলাকায় ডাকাতের উপস্থিতি টের পেয়ে স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া করে। তাদের মধ্যে তিনজন ধরা পড়ে এবং গণপিটুনিতে তারা মারা গেছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে পুলিশ বলতে পারেনি কোথায় কার বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা হয় এবং কারা তাদের ধাওয়া করে।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম জানান, তিনিও সকালে লোকমুখে তিনজনের মৃত্যুর খবর শুনে এখানে এসেছেন। তবে, গতরাতে কারো বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা বা রাতে গণপিটুনির কথা শোনেননি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঝিকরগাছা পুলিশের এসআই আকরাম হোসেন চৌধুরী জানান, তিনি লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছেন। নিহতদের তিনজনের মাথার সামনে, পেছনে এবং কানের পাশে আঘাতের একাধিক চিহ্ন রয়েছে। এরপর লাশের ময়নাতদন্তের জন্যে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে বলে তিনি জানান।

এর আগে সোমবার মধ্যরাতে সেখানে ডাকাতদের ছুরির আঘাতে তৌহিদ নামে থানার এক উপসহকারী পুলিশ ইনসপেক্টর (এএসআই) গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এর জের ধরে শহরের ওয়াপদাপাড়া জেলেপল্লীতে তাণ্ডব চালায় পুলিশ ও সাদা পোশাকে মুখোশধারী একদল ব্যক্তি। ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয় দরিদ্র জেলেদের বাড়িঘর।

এদিকে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঝিকরগাছায় কথিত গণপিটুনিতে নিহত তিনব্যক্তির মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া বাজারের চা দোকানি খোরশেদ আলম। খোরশেদের মেয়ে ও ছেলে বুধবার দুপুরে জেনারেল হাসপাতালে এসে তাদের বাবাকে শনাক্ত করেন। অন্য দুইজনের লাশ ‘অজ্ঞাত’ হিসেবে দাফনের জন্য নিয়ে গেছে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম। শনাক্ত হওয়া খোরশেদ আলম (৫০) শার্শা উপজেলার কাগজপুকুর গ্রামের আলম আলী সরদারের ছেলে। তিনি বেশ কয়েকবছর ধরে সদর উপজেলার চাউলিয়া গ্রামে সপরিবারে বসবাস করতেন। খোরশেদের মেয়ে সুমি জানান, তার বাবা সোমবার শার্শার নাভারণে এক আত্মীয়বাড়িতে বেড়াতে যান। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। সুমি জানান, তার বাবা খোরশেদ আলম রূপদিয়া বাজারে চায়ের দোকান চালাতেন। তার নামে কোনো মামলা-মোকদ্দমা নেই বলে দাবি করেন সুমি।

কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, খোরশেদের নামে কোতোয়ালী থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ নেই। তবে অন্য কোনো থানায় মামলা আছে কি-না তা এখনই বলা যাবে না। এদিকে, ঝিকরগাছায় নিহত অন্য দুই ব্যক্তির লাশ 'অজ্ঞাত' হিসেবে ১৫ জুন বুধবার দুপুরে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামকে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, ১৫ জুন বুধবার সকালে ঝিকরগাছার কৃষ্ণনগরে কপোতাক্ষ নদীর তীরে রক্তাক্ত অবস্থায় তিনটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। পুলিশ দাবি করেছে, ডাকাতি করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়ে এরা মারা গেছেন। তবে স্থানীয় কেউ ডাকাতি বা গণপিটুনির কথা জানেন না।

যশোরে ফের বন্দুকযুদ্ধে নিহত ১

যশোর সংবাদদাতা : গত ১৪ জুন মঙ্গলবার যশোরে মধ্যরাতে ফের পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এতে অজ্ঞাত এক যুবক নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে যশোর-মণিরামপুর সড়কের সতীঘাটা বাজারের কাছে কামালপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনাটি ঘটে। কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, 'একদল ডাকাত সড়কের দুইধারে গাছে দড়ি বেঁধে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। খবর পেয়ে রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। এ সময় ডাকাতরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ৮-১০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পুলিশও চার রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে পাল্টা জবাব দেয়। পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে এক ডাকাত মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় সহযোগীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতালে আনে।’

তবে থানার ওসি নিহত ব্যক্তির নাম জানাতে পারেননি।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তার মো. ইউসুফ আলী জানান, ‘গুলিবিদ্ধ অবস্থায়  এক যুবককে (২৮) হাসপাতালে এনেছে পুলিশ। তার ডান কানের কাছে গুলি বিদ্ধ হয়ে মাথার অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে।’

হাসপাতালে আনার আগেই গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু হয় বলে জানান ডা. ইউসুফ।

কোতোয়ালী থানা পুলিশ জানায়, সতীঘাটার কাছে ঘটনাস্থল থেকে চারটি গাছিদা, একটি রামদা এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহার্য কিছু দড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহজুড়ে প্রায় প্রতি রাতেই যশোরে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটছে।