গাজীপুরে সাংবাদিকের ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা : অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসানের গ্রামের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত ১৬ জুলাই শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ঘরের ভিতরে থাকা সকল প্রকার আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

ঘটনার পর কাপাসিয়া থানার পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ এলাকার ইউপি সদস্য (মেম্বার) আফজাল হোসেন ফরাজী ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজগর হোসেন খাঁন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি এলাকাবাসী ওই বাড়িতে ভিড় করছে। এরকম ঘটনা ওই এলাকায় এটাই প্রথম ঘটেছে। ঠিকানা পাবুর ব্যবহার করে জঙ্গি সংগঠনের নামে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উপজেলা ও থানা ধ্বংস করার সর্তক বার্তা দিয়ে চিঠি দেয়ার পাঁচদিন পরের এঘটনায় ওই এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার উপজেলার আমরাইদের ইয়াকুব আলী সিকদার উচ্চ বিদ্যালয়ে পটকার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। জঙ্গি সংগঠনের সতর্ক বার্তা পাঠানোর পর দ্বিতীয় ঘটনা এটি।

কে বা কারা রাতের আঁধারে বাড়ির লোকদের অবরুদ্ধ করে আগুন দিয়ে বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে তা জানতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের ধারণা পূর্ব শত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। প্রতিবেশী আশরাফ আলী জানান, বাড়ির লোকজন রাত তিনটার দিকে আমাদের ফোন দিয়েছে এবং ডাকাত এসেছে বলে জানিয়েছে। পরে আমরা এলাকাবাসী মিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়ির দক্ষিণ পাশে থাকা মাটির তৈরি একটি ঘরে আগুন জ্বলতে দেখি এবং সকলে মিলে তা নিভানোর চেষ্টা করে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই।

সাংবাদিক মাহমুদুল হাসানের মা মনোয়ারা বেগম জানান, আমরা যে ঘরে থাকি সে ঘরসহ সকল রুমের দরজা বাইরে থেকে আটকানো ছিল। এমনকি বাইরে থেকে বাড়িতে ঢোকার সদর গেইটও দুর্বৃত্তরা বন্ধ করে রেখেছিল। যার কারণে বাইরে কি হচ্ছে তা বুঝতে পারিনি। তিনি বলেন, আমার তিন ছেলে রয়েছে তারা কেউ বাড়িতে না থাকায় এমনটি ঘটানোর সুযোগ পেয়েছে তারা। এর আগেও প্রায় দুই বছর আগে আমাকে বাড়িতে একা পেয়ে তিন মুখোশধারী গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়েছে।

সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান জানান, আমি পেশাগত কাজের জন্য বাড়ির বাইরে (গাজীপুরে) থাকি। বাড়িতে আসলে এই ঘরটায় থাকতাম। কেউ শুধু বাড়ি  পোড়ানোর জন্য এখানে এসেছে এটা আমার বিশ্বাস হয় না। তাদের (দুর্বৃত্তদের) টার্গেট ছিল আমার কোনো ক্ষতি করা। তারা হয়তো ভেবেছিল আমি বাড়িতে আছি এবং আমাকেসহ আমার পরিবারের সদস্যদের পুড়িয়ে হত্যা করার চেষ্টা এটি। বিষয়টি ছোট করে দেখার কিছু নেই কারণ দুর্বৃত্তরা এখানে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে এঘটনা ঘটিয়েছে। কারা এঘটনা ঘটিয়েছে তা আমাদের বুঝতে বাকি নেই। আমরা পুলিশের পরামর্শে ও তদন্তের স্বার্থে বিষয়টি এখন প্রকাশ করবো না।

ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন ফরাজী জানান, আমি খুব ভোরে এঘটনা শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তবে যারাই কাজটি করেছে খুব খারাপ করেছে। এখানে ডাকাতি বা শুধু ঘরে আগুন দেয়া দুর্বৃত্তদের আসল উদ্দেশ্য ছিলনা, তাদের মনে অন্য কিছু ছিল। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন কেননা রাতে ঘুমিয়ে থাকলে কেউ এসে বাড়ি পুড়িয়ে দিবে এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। সাংবাদিক মাহমুদুল হাসানের চাচা পাবুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক আব্দুল আলিম মাস্টার বলেন, সর্বপ্রথম বিষয়টি আমি আচ করতে পেরে ডাকাত এসেছে মনে করে ঘরের ভেতরে থেকে মোবাইলের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে বিষয়টি জানাই। স্থানীয়রা খবর পেয়ে সঠিক সময়ে না আসলে এরচেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি বা বড় ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিল। পরে আমিসহ সকলে মিলে আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও ততক্ষণে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, বাইরে অনেক লোকজনের সমাগম ছিল এবং ঘরের বাইরে থেকে কোনো শব্দ শোনা গেছে। পরে এলাকাবাসীর উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে গেছে। কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আগুন লাগার পর ভোর সাড়ে চারটার দিকে আমাকে জানালে সাথে সাথেই পাঁচ পুলিশ সদস্যকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, ১২ জুলাই মঙ্গলবার কাপাসিয়া উপজেলা ও থানা ধ্বংস করার হুমকির সতর্ক বার্তা দিয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পাবুর গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করে ডাকযোগে চিঠি দেয় একটি জঙ্গি সংগঠন। চিঠি দেয়ার এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।