॥ আসাদ বিন হাফিজ ॥
মানুষের আত্মা বড় অদ্ভুত জিনিস। কেউ তাকে দেখেনি। ধরেনি। কেউ আজো দেখছে না, ভবিষ্যতেও দেখবে না। অথচ সব বাহাদুরী তার। এটাই মানুষ। লোকমুখে শুনে সে জেনেছে, কে তার বাপ-মা। মায়ের পেটে কতকাল কাটালো, কিছুই মনে করতে পারছে না। আপনি জানেন না, মরার পর কোথায় থাকবেন। এতসব না জেনেও আপনি দাম্ভিক।
আত্মা কী
বিজ্ঞানীরা আত্মা আবিষ্কারে অনেক গবেষণা করেছেন। কাচের ঘরে রেখে দেখতে চেষ্টা করেছেন আজরাইল কোন পথে যায় আর আত্মা নিয়ে কোন পথে ফিরে আসে। না লাভ হয়নি কোনো। যত রকম চেষ্টা আছে, কোনোটাই বাদ রাখেনি বিজ্ঞানীরা। তবু রাজা মারা যায়, প্রজাও মরে।
সত্যি এ এক বিস্ময়। মারা গেলে মানুষ আর মানুষ থাকে না, লাশ হয়ে যায়। যার জন্য মানুষ অট্টালিকা বানায়, লাশ হলে তাকেই সেখান থেকে বের করার জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাহলে প্রশ্ন জাগে, আত্মা কী? কীসের বদৌলতে সে মানুষ? শরীর বড় হলেই আত্মা বড় হয় না।
তাহলে আত্মা কী? আপনি মানুন আর নাই মানুন, আত্মা এক অদ্ভুত অশরীরী শক্তি। মানুষ যদি জানতেই পারতো আত্মা কী, তবে কেউ মরতো না। যা কিছু লাগে সব দিয়ে হলেও বেঁচে থাকতো। এ আল্লাহর কুদরতি মহিমা। তারপরও মানুষ মরে।
বলেছি, আত্মা এক অদ্ভুত অশরীরী শক্তি, যা ধর্ম বিজ্ঞান কোনো কিছু দিয়েই আবিষ্কার করা যায়নি। এ এক অব্যাখ্যাত, অলৌকিক কাহিনী দর্শন। মানুষের অবয়ব নয়, এ আত্মাই মানুষ। মানুষ নয়, এ আত্মার একক পরিচালক ও নিয়ন্ত্রণ করেন স্বয়ং আল্লাহ। সব জন্তু-জানোয়ারের জন্য একই নিয়ম।
জন্ম নেবে, জীবন পাবে, মরে যাবে।
মানুষর জীবনক্রমও একই রকম।
সমস্যা বাধালো শয়তান। মানুষ ও জিনকে বিপথগামী করার অনুমতি নিল শয়তান। ফলে মানুষকে নির্দিষ্ট সময় দেয়া হলো স্বাধীনতা। সময়কাল দুনিয়ার জীবন। এ সময় তারা ভালোমন্দ দুটিই করতে পারবে। এদের বলা হলো নফসে আম্মারা ও নফসে মুতমাইন্না। ভালো ও মন্দ প্রবণতা।
কবির ভাষায়- ভালো কাজের ভালো ফল, মন্দ কাজের মন্দ। ফুলের থেকে সুবাস আসে ময়লা থেকে গন্ধ।
স্বাধীন আত্মার বোধ একদলকে নিয়ে গেল ভালোর পথে। ভালো পথ কোনটি? যেটি আল্লাহ পাক কালামে বর্ণনা করেছেন। কুরআনের বাণী পৃথিবীকে শান্তি ও সুখের নিশ্চয়তা দেয়। আর মন্দ আত্মা পথিবীর সব অশান্তির কারণ।
বিশ্বাস কী? আত্মাকে পরিচালনা করে বিশ্বাস। আপনার যা খুশি বিশ্বাস করতে পারেন। আল্লাহ আছে বিশ্বাস করতে পারেন। আল্লাহ নাইও বিশ্বাস করতে পারেন। এ বিশ্বাস করার ফল আপনার জন্য আছে বেহেশত-দোজখ। এটাও আপনি অবিশ্বাস করতে পারেন। মানুষকে সুপথ দেখানোর জন্য আল্লাহ কিতাব নাজিল করলেন। কুরআন পাঠালেন। বললেন, যারা এটা মেনে চলবে তারাই হবে সুপথ প্রাপ্ত। যারা মানবে না, এ কিতাবকে অস্বীকার করবে, তারা হবে জাহান্নামি।
আপনি স্বাধীন, যেকোনো পথ বেছে নিতে পারেন। কিন্তু আপনার অবস্থান হবে কিতাবের বর্ণনা মোতাবেক।
যে আল্লাহর দরবার থেকে যাত্রা করেছিলেন, সফর শেষে চূড়ান্ত আদালতে আপনার বিচার হবে ওখানেই। আপনি কি আল্লাহ না শয়তানের অনুসারী ছিলেন, তার ওপর নির্ভর করবে আপনার ঠিকানা। কথা এখানেই শেষ নয়।
প্রত্যেক মানুষের পেছনে থাকেন একজন অনুখোদা ও অনুশয়তান। তাদের একজনের নাম বিবেক, অন্যজন মন। বিবেক আপনাকে দেবে পথের দিশা, মন আপনাকে টানবে দুনিয়ার নেশায়। মন আপনাকে আরো আরো খ্যাতি, প্রতিপত্তি, যশের দিকে টানবে। বিবেক বলবে, ওদিকে যেয়ো না। খালি হাতে এসেছো, খালি হাতে যাবে, নামের মোহের কি দরকার তোমার?
বুকে হাত দিয়ে বলুন, বিবেক কি ডাকে না আপনাকে? মন আর বিবেকের রশি টানাটানিতে কখনো আপনি যান বিবেকের ঘরে, কখনো পড়েন শয়তানের ফাঁদে।
এটাই বিবেক ও মনের খেলা।
যখন আপনি পিতার শিরদাঁড়ায় ছিলেন, যখন মায়ের পেটে, আপনি কিছুই জানেন না, কিন্তু পৃথিবী সব জানতে পারে। তেমনি পৃথিবীতে কী করছেন, কেরামান কাতেবিন সব লিখে রাখছেন, যা হাজির করা হবে।
কুরআন এসেছে ফরজ কায়েমের জন্য, এ বিশ্বাস না থাকলে কেউ মুসলমান হতে পারে না। ফরজ করে নফল ইবাদত না করলে আপনার কোনো পাপ হবে না। কিন্তু ফরজ ছাড়লে খবর আছে। আগে ফরজ জানুন। পরে নফল পড়ুন। মনে রাখবেন, ফরজ রেখে নফলের গুণ গায় যারা, তারা জাতির শত্রু, উম্মাহর দুশমন। এসব আবু জেহেলের উত্তরসূরিদের বয়কট নয়, দমন করা আপনার ঈমানী দায়িত্ব।
অনেকে বলেন, ভালো কাজ করলে অমুসলমান কি পুরস্কার পাবে না।
জবাবটা আপনিই দেন, ভার্সিটিতে ভর্তি না হলে কেউ কি সার্টিফিকেট পাবে?
যে আত্মা দেখা যায় না, যে বিশ্বাস দেখা যায় না, জীবন চালাতে হয় অদেখা আত্মা ও বিশ্বাস দিয়েই। এটা এখন আপনার অধীন। আপনি চাইলে কুরআনের ইচ্ছেমতো একে চালাতে পারবেন, ইচ্ছের বিপরীতও চালাতে পারবেন।
কুরআন বলে মা-বাপের খেদমত করো, মন চাইলে বৃদ্ধাশ্রমেও পাঠাতে পারেন। ফল পাবেন কাজের অনুরূপ। কুরআন বলে, পড়শির খবর নাও, আত্মীয়ের সাহায্যে হাত বাড়াও, যাকাত দাও। দেয়া না দেয়া আপনার ইচ্ছা। পুণ্য করলে পাবেন পুণ্যফল। না করলে মন্দফল।
সেজন্যই আপনাকে চলতে হবে বিবেকের রায় মেনে। মনকে শাসন করুন। মন চাইলেই সব কাজ করতে নাই। শেষ ডেস্টিনেশনে কোথায় থাকতে চান, সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন। দুনিয়া হবে বেহেশত-দোজখের কাজের জায়গা। ফল পাবেন সেখানে। অদেখা আত্মা ও ভাবনা যেহেতু মানবের মূল, তাই তার সঠিক ব্যবহারই নিশ্চিত করবে আপনার ঠিকানা। লেখক : কবি।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- ‘সাপ্তাহিক সোনার বাংলা’ ভোটাধিকার গণতান্ত্রিক ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করে যাচ্ছে
- ‘সাপ্তাহিক সোনার বাংলা’র বহুল প্রচার উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করছি
- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি
- সাংবাদিকতার সর্বজনীনতা ও সংবাদমাধ্যমের প্রভাব
- সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদীর সাংবাদিক জীবন
- অনুভূতি
- কেউ ভালো নেই
- ফজলুল হক তুহিন-এর দুটি কবিতা
- কবি আল মাহমুদের সাংবাদিক জীবন
- সাপ্তাহিক সোনার বাংলার ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী : আগামী দিনের করণীয়
- সাংবাদিক কবি কাজী নজরুল ইসলাম
- অপরাধ দমনে সংবাদমাধ্যম
- ইসলামী ধারার রাজনীতির বিকাশ ও সোনার বাংলার ভূমিকা
- আর নয় আত্মহত্যা : আল কুরআনে আছে শান্তির বারতা
- প্রচার, অপপ্রচার ও সংবাদমাধ্যম