রফিকুল আলম রঞ্জু, পাবনা : পেঁয়াজের রাজধানীখ্যাত পাবনার সুজানগর-সাঁথিয়ার কৃষকদের বাড়িতে চলছে এখন পেঁয়াজ ঘরে উত্তোলনের উৎসব। জেলার এসব উপজেলায় এখন পেঁয়াজ নিয়ে চলছে উৎসব। জমি থেকে পেঁয়াজ তোলা নিয়ে এখন চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছে। অন্যদিকে চাষির বাড়ি বাড়িতে চলছে এখন পেঁয়াজ কাটার ধুম। পেঁয়াজ কাটা বলতে এখানে পেঁয়াজের গা থেকে কাণ্ডকে বিচ্ছিন্ন করে সংরক্ষণ করা হয়। এ সময় পেঁয়াজ দ্রুত জমি থেকে উত্তোলন করে ঘরে ওঠাতে না পারলে বৃষ্টির পানিতে জমির পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। কৃষকেরা এলাকার শ্রমিকের স্বল্পতার কারণে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে শ্রমিক সংগ্রহ করে দ্রুত জমি থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন করে চলেছে। অন্যদিকে চাষি বাড়িতে এখন চলছে পেঁয়াজ কাটার উৎসব। এ কাজে চাষিরা মহিলা শ্রমিকের সহযোগিতা নিয়ে থাকে। এজন্য পার্শ্ববর্তী এলাকার মহিলাদের প্রতি মণ চুক্তিতে পেঁয়াজ কাটানো হয়। সুজানগর, সাঁথিয়ার প্রায় প্রতিটা এলাকার বাড়িতে এখন এ ধরনের উৎসব চলছে। মহিলারা চারদিকে গোল হয়ে পেঁয়াজ কাটায় অংশগ্রহণ করে। পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে এসব নিম্নআয়ের মহিলারা এ কাজে অংশগ্রহণ করে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করে থাকে, যা দিয়ে তারা সংসারের খরচ মেটাতে পারছে। সরেজমিন দেখা গেছে, সুজানগর উপজেলার বামুন্দি, রাইসিমিল, চিনাখড়া, চরদুলাই, আহাম্মেদপুর, সাঁথিয়ার গৌরীগ্রাম, চরপাইকড়ি বিভিন্ন এলাকার প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতেই চলছে পেঁয়াজ কাটার উৎসব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, জেলায় এ বছর ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর জেলায় ৪৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টন। গতবারের তুলনায় এবার জেলায় ৯ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে হালি পেঁয়াজের চাষ হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২৫-২৬ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে পাবনা জেলা থেকেই উৎপাদন হয় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন, যা মোট উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশ। আবার জেলার সাঁথিয়া-সুজানগর উপজেলা থেকে উৎপাদন হয় প্রায় পৌনে ৫ লাখ টন পেঁয়াজ। সে হিসাবে সারা দেশে মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের এক-পঞ্চমাংশ উৎপাদিত হয় পাবনার এ দুটি উপজেলা থেকে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জেলার চাষিরা দুটি পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ করে থাকেন। এর একটি কন্দ (মূলকাটা বা মুড়ি) ও অন্যটি চারা (হালি) পদ্ধতি। মূলকাটা পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ও হালি পদ্ধতিতে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। মূলকাটা পদ্ধতিতে আবাদ করা নতুন পেঁয়াজ ডিসেম্বর মাসে হাটে উঠতে শুরু করে। আর হালি পদ্ধতিতে চাষ করা পেঁয়াজ হাটে ওঠে মার্চের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে এপ্রিল মাস পর্যন্ত।
স্থানীয় চাষিরা বলেন, হাটে প্রতি মণ নতুন হালি পেঁয়াজ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে নিম্নমানের পেঁয়াজ ১ হাজার ৫০০ টাকা দরেও পাওয়া যাচ্ছে। আর খুব ভালোমানের কিছু পেঁয়াজই শুধু ২ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বেচা কেনা হচ্ছে। এ বছর মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজ চাষে চাষিরা কিছুটা লাভবান হয়েছেন। এজন্য হালি পেঁয়াজ আবাদে চাষিরা ঝুঁকেছেন।
এবার পেঁয়াজ উৎপাদন ভালো হলেও চাষিরা পেঁয়াজের দাম নিয়ে রয়েছে আতঙ্কে। কারণ মৌসুমের শুরুতে সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে পেঁয়াজের দাম ওঠানামা করছে আকাশ-পাতাল হিসেবে। পেঁয়াজ মৌসুমির শুরুতে দাম ছিল প্রতি মণ ৩৫০০ থেকে ৩৭০০ টাকা। এ সময় সরকার পেঁয়াজ আমদানি করার কথা বললে পরদিন থেকে পেঁয়াজের দাম নেমে আসে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। প্রথম দিকে কৃষকেরা দামে খুশি থাকলেও পরবর্তী সরকার সিদ্ধান্তের কারণে দাম নিয়ে কৃষকেরা রয়েছে আতঙ্কে। বর্তমানে প্রতি মণ পেঁয়াজের দর ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পাবনায় দুই জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়। একটি মুড়িকাটা জাতের আগাম পেঁয়াজ, অপরটি হালি পেঁয়াজ। চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন। এ পেঁয়াজ ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। অন্যদিকে হালি পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে এ পেঁয়াজ বাজারে আসছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- জনতার ইস্পাতকঠিন ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা. শফিকুর রহমান
- ভিন্ন জাতের ড্রাগন চাষই সমাধান
- দখল-দূষণের কবলে ঘাঘট নদী
- কুরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে -ড. খলিলুর রহমান মাদানি
- পঞ্চগড় জেলা জামায়াতের শূরা সদস্য এডভোকেট আজিজুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন
- শাহজাদপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত ৫টি পরিবারকে জামায়াতের আর্থিক সহায়তা
- পাবনার জামায়াত নেতা শরিফুল ইসলাম আজাদের দাফন
- সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার পাইকগাছা সংবাদদাতা রবিউল ইসলামের ইন্তিকাল